তারকাদের বিলাসবহুল জীবনযাপন স্বাভাবিকভাবেই ঈর্ষান্বিত করে আশেপাশের মানুষদের। তবে আর অন্যসব মানুষের মতোই অমসৃণ ছিলো সেসব তারকার শুরুর জীবনও। জীবিকার তাগিদে তারাও তখন করে বেড়াতেন ছোটখাট যেকোনো ধরনের কাজ। আজ আমরা জানবো এমন কিছু তারকা সম্পর্কে, যারা খ্যাতি অর্জনের আগে জীবিকার জন্য করেছিলেন সাধারণ সব কাজ।
জনি ডেপ – কলম বিক্রেতা
পাইরেটস অফ দ্য ক্যারিবিয়ান খ্যাত জনি ডেপ গত কয়েক দশক ধরে মাতিয়ে রেখেছেন হলিউড। তার সহজাত অভিনয় প্রতিভার খ্যাতি দুনিয়াজোড়া।
একসময় জীবিকার জন্য কলম বিক্রি করতেন তিনি। তবে সরাসরি কলম বিক্রি করতেন, বরং টেলিফোনের মাধ্যমে কলমের মার্কেটিং করতেন। তবে সেই কাজেও নিজের অভিনয় প্রতিভাকে কাজে লাগিয়েছিলেন ডেপ। এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, প্রতিদিন বিভিন্ন ছদ্মনামে এবং গলার স্বর পরিবর্তন করে ডায়ালের অপর প্রান্তের লোকজনকে কলম কিনতে প্রলুব্ধ করতেন। যদিও তিনি জানিয়েছেন, কাজটাতে খুব কম সময়েই সাফল্যের মুখ দেখেছেন।
গোয়েন স্টেফানি – আইসক্রিমের অর্ডার নেওয়া
‘কুল’, ‘ইয়ার্লি উইন্টার’, ‘ডোন্ট স্পিক’ গানের জন্য খ্যাত আমেরিকান গায়িকা ও গীতিকার গোয়েন স্টেফানির প্রথম পেশা ছিলো আইসক্রিমের অর্ডার নেওয়া। দ্য ভয়েসের এই বিচারক বিখ্যাত হবার আগে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। তবে টিনএজার থাকাকালে আইসক্রিমের অর্ডার নেওয়া ছিলো স্টেফানির জীবনের প্রথম কাজ। অথচ ৪৮ বছর বয়সী এই গায়িকার বর্তমান সম্পত্তির মূল্যমান প্রায় ১০০ মিলিয়ন ইউরো।
মেগান মার্কেল – ক্যালিগ্রাফিস্ট
বিখ্যাত অভিনেত্রী ও পরবর্তীতে ব্রিটিশ রাজকীয় পরিবারের সদস্য হওয়ার আগে মেগান মার্কলের কাজ ছিলো ক্যালিগ্রাফি করা। বিভিন্ন বিয়ে ও অনুষ্ঠানে ক্যালিগ্রাফির কাজ করতেন তিনি। ক্যালিগ্রাফির কাজ ছাড়াও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্যালিগ্রাফি কীভাবে আঁকতে হয় তা-ও শেখাতেন তিনি। উল্লেখ্য, মার্কলের হাতের লেখাও চমৎকার। আগে থেকেই ক্যালিগ্রাফির উপর প্রশিক্ষণ নেওয়া এই অভিনেত্রী ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত কাজ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে। সেখানে ক্যালিগ্রাফির প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন তিনি।
মজার ব্যাপার হলো, বিখ্যাত দম্পতি রবিন থিকি ও পলা পাটনের বিয়ের অনুষ্ঠানের ক্যালিগ্রাফির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো ডাচেস অফ সাসেক্স খ্যাত এই মেগান মার্কলকেই।
টম ক্রুজ – বেলবয়
মিশন ইম্পসিবল ফ্র্যাঞ্চাইজি সিরিজে দুর্দান্ত সব স্ট্যান্ট করা টম ক্রুজ ছোটবেলায় ছিলেন একজন বেলবয়। বেলবয়দের কাজ মূলত হোটেলে কোনো অতিথি আসলে তাদের স্যুটকেস কিংবা লাগেজ বহন করা। ক্রুজ একটি সামুদ্রিক খাবারের রেস্টুরেন্টে ঠিক এই কাজটিই করতেন। তবে সেই সময়ে যাজক হওয়ার স্বপ্নও দেখেছিলেন বিখ্যাত এই অভিনেতা। তবে সেটি আর হয়ে ওঠেনি। বরং বেলবয় থেকে হয়ে উঠলেন সময়ের অন্যতম হার্টথ্রব তারকা।
ব্র্যাড পিট – চিকেন
হলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় ও কাঙ্ক্ষিত এই অভিনেতা অভিনয় জগতে আসার আগে কাজ করতেন একটি রেস্টুরেন্টে। তবে রেস্তোরাঁর পরিচারক হিসেবে নয়, বরং তার কাজ ছিলো আরো বেশি অদ্ভুত। মুরগির কস্টিউম পরে রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়িয়ে পথচারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই ছিলো ব্র্যাড পিটের কাজ। তবে কাজটি অবশ্য তিনি করতেন হলিউডেই। হলিউডের বিখ্যাত এল পোলো লোকো রেস্তোরাঁয় কাজটি নিয়েছিলেন এই ফাইট ক্লাব তারকা।
মেগান ফক্স – সতেজ ফল প্রোমোটার
ফ্লোরিডার এক দোকানে এই কাজটি করতেন ট্রান্সফর্মার অভিনেত্রী মেগান ফক্স। তার কাজ ছিলো ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের কাছে দোকানের ফলগুলোর গুণগান করা। এলেন ডিজনেরাস শো-তে এসে মেগান ফক্স তার জীবনের প্রথম কাজ নিয়ে কথা বলেন। সেখানে তার মতো আরো অনেকেই এই কাজ করতেন। প্রতিদিন যেকোনো একজনকে ফলের কস্টিউম পরে রেস্তোরাঁর বাইরে দাঁড়িয়ে ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হতো।
ফক্সের জন্য বরাদ্দ ছিলো শুক্রবার। সেদিন বিশালাকারের কলার কস্টিউম পরে রাস্তায় দাঁড়াতে হতো এই মডেল ও অভিনেত্রীকে।
কেনি ওয়েস্ট – দোকানের পরিচারক
আপনি যদি কেনি ওয়েস্টের ভক্ত হয়ে থাকেন, তাহলে দেখবেন যে, তার বিখ্যাত গান ‘স্পেসশিপ’ এ তিনি দোকানের পরিচারক হিসেবে কাজ করার কথা তুলে এনেছেন। বিখ্যাত ব্র্যান্ড গ্যাপ এর একটি শপিং মলে পরিচারক হিসেবে কাজ করেছিলেন এই র্যাপার। পেপার ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, কাজটি তিনি মোটেও পছন্দ করতেন না। কারণ সেখানে কাজ করার ফলে কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য ডিসকাউন্টের জন্য বাড়তি সময়ই পেতেন না ওয়েস্ট। তবে সেসব কঠিন সময় ফেলে ওয়েস্ট এখন অন্যতম ধনী র্যাপার। তার বর্তমান সম্পত্তির মূল্যমান প্রায় ১৬০ মিলিয়ন ডলার।
ম্যাথিউ ম্যাকনাহে – আর্মাডিলো খুন
ডালাস বায়ার্স ক্লাবের জন্য অস্কারজয়ী এই গুণী অভিনেতার প্রথম কাজ শুনতে অদ্ভুত শোনালেও কাজটি বেশ উপভোগ করেছেন বলে জানিয়েছেন ম্যাথিউ ম্যাকনাহে। টেক্সাসের কান্ট্রি ক্লাবে এই কাজটি করতেন তিনি। সেখানে আর্মাডিলোগুলো কান্ট্রি ক্লাবের ঘাস খেয়ে ফেলতো বিধায় গুলি করে এই প্রাণীগুলোকে হত্যার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। রাত তিনটা থেকে ভোর সাড়ে সাতটা পর্যন্ত সেখানে কাজ করতেন তিনি। ভোরে আর্মাডিলো হত্যার উপর ভিত্তি করে অর্থ দেওয়া হতো তাকে। কিম্ভূতকিমাকার এই কাজটি বেশ উপভোগ করতেন ইন্টারস্টেলার মুভিতে অভিনয় করা এই তারকা।
জেনিফার অ্যানিস্টন – কুরিয়ার পিয়ন
ফ্রেন্ডস সিরিজে র্যাচেল চরিত্রে অভিনয় করার আগে জেনিফার অ্যানিস্টনের পেশা ছিলো কুরিয়ার পিয়ন। মাত্র ১৯ বছর বয়স থেকেই এই কাজের সাথে জড়িত হন তিনি। নিউ ইয়র্ক শহরের এক কুরিয়ার অফিসের হয়ে কাজ করতেন তিনি। সাইকেল চালিয়ে কুরিয়ারের জিনিসপত্র সঠিক স্থানে পৌঁছানোই ছিলো তার কাজ।
র্যাচেল ম্যাকঅ্যাডামস – ম্যাকডোনাল্ডের কর্মচারী
দ্য নোটবুক খ্যাত অভিনেত্রী র্যাচেল ম্যাকঅ্যাডামসের প্রথম পেশা ছিলো ম্যাকডোনাল্ডসের কর্মচারী। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই এই বিখ্যাত ফাস্টফুড রেস্তোরাঁতে কাজ নেন র্যাচেল। সেখানে তিন বছর ধরে তার ভাই ও বোনের সাথে কাজ করেন তিনি। তার বড় বোন ছিলেন সেই ম্যাকডোনাল্ডসের ম্যানেজার। তবে তখন থেকেই এই কাজের পাশাপাশি বাচ্চাদের একটি থিয়েটারও চালাতেন র্যাচেল। মূলত এই থিয়েটারের অর্থ জোগানের জন্যই ম্যাকডোনাল্ডসে কাজটি নেন তিনি
সিন্ডি ক্রফোর্ড – ভূট্টার খোসা ছাড়ানো
৫২ বছর বয়সী এই বিখ্যাত মডেল গত তিন দশক ধরে মডেলিং এর দুনিয়া কাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন। তবে মডেলিং জগতে আসার আগে ক্রফোর্ড কাজ করতেন একট্টি ভূট্টার দোকানে। তার কাজ ছিলো ভূট্টার খোসা ছাড়ানো। নিজের শহর ইলিনয়ের একটি দোকানে এই কাজের বিনিময়ে ঘন্টায় ৪ ডলার করে পেতেন তিনি। ১৬ বছর বয়সে কাজ করার সময়েই তাকে আবিষ্কার করে মিডিয়ার লোকজন। এরপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। এই মডেলের বর্তমান সম্পত্তির মূল্য প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার।
শন কনারি – দুধ বিক্রেতা
জেমস বন্ড হওয়ার আগে এই বিখ্যাত অভিনেতার পেশা ছিলো দুধ বিক্রি করা। ১৯৪৪ সালের দিকে এই কাজ করতেন কনারি। ১৪ বছর বয়সী কনারি ছোট ঠেলাগাড়িতে ফেরি করে দুধ বিক্রি করতেন। সেই সময় এই কাজ করে তিনি সপ্তাহে আয় করতেন ২১ শিলিং।
This article is about the celebrity who did odd jobs before got famous. Necessary references are hyperlinked in the article.
Feature Image : Ask Opinion