Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সমাজকে ভুল বার্তা দেয়া হয়েছে যেসব বলিউড চলচ্চিত্রে

চলচ্চিত্রকে কেবলই বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা উচিত, নাকি এর ভেতর দিয়ে সমাজের সাধারণ মানুষের কাছে শিক্ষণীয় বার্তাও পৌঁছে দেয়া আবশ্যক- এ নিয়ে দ্বন্দ্ব ও বিতর্ক চিরন্তন।

এ কথা সত্য যে সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর খেটে খাওয়া মানুষজন যখন গাঁটের পয়সা খরচ করে সিনেমার টিকিট কেনে, তাদের কাছে বিনোদন লাভের বিষয়টিই সর্বোচ্চ প্রাধান্য পায়, শিক্ষার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঊহ্য থাকে। কিন্তু তারপরও, চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একটা দায়বদ্ধতা তো থাকেই যেন তারা দর্শককে জ্ঞান বিতরণ না করলেও, অন্তত তাদের কাছে যেন কোনো ভুল বার্তা প্রেরণ না করেন।

তবু চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সমাজের কাছে ভুল বার্তা প্রেরণের প্রবণতা থেমে নেই, বরং ক্রমশই যেন বেড়েই চলেছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিগুলোর একটি হলো বলিউড। শুধু ভারতীয় উপমহাদেশই নয়, বরং গোটা বিশ্বজুড়েই রয়েছে বলিউডি চলচ্চিত্রের ভক্ত-অনুরাগী। অথচ বেশিরভাগ বলিউডি চলচ্চিত্রের যুক্তি-তর্কের তোয়াক্কা করা হয় না, অবাস্তব ও অসম্ভব সব বিষয় অবলীলায় দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা হয়। দর্শকরাও বিনা বাক্যব্যয়েই সেসব ছবি দেখে হাসিমুখে হল থেকে বের হয়।

বলিউডের অনেক চলচ্চিত্রই ধার ধারে না যুক্তি-তর্কের; Image Source: Tales Cart

অবশ্য সব দর্শকই তো আর একরকম নয়। আজকাল দর্শকদের মধ্যেও সচেতনতা অনেক বেড়েছে, এবং ইন্টারনেটের কল্যাণে তারা তাদের মত প্রকাশেও আগের চেয়ে অনেক বেশি সোচ্চার হয়েছে। ইতিপূর্বে চলচ্চিত্রে ভুল বার্তা পরিবেশিত হতে দেখলেও তারা মুখ বুজে থাকত। কিন্তু অনলাইনে স্বাধীন মত প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম পাওয়ার কারণে, আজকাল চলচ্চিত্রের যেকোনো ছোটখাট ভুলেরই সমালোচনা করছে তারা। অনেকে তো রীতিমতো ধুয়েও দিচ্ছে ভুলে ভরা চলচ্চিত্রগুলোকে। আর তাদের প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে সেসব চলচ্চিত্র, যেগুলো অনেক মানুষ দেখেছে, এবং যেসব চলচ্চিত্র তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এমন চলচ্চিত্রগুলো যদি সমাজকে কোনো ভুল বার্তা দিয়ে থাকে, তবে সেগুলো চিহ্নিত করে, চলচ্চিত্রগুলোকে কাঠগড়ায় তুলছে তারা।

এখন আপনাদেরকে বলব বলিউডের সাম্প্রতিক সময়ের তেমনই কিছু জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের কথা, সচেতন নেটিজেন কর্তৃক সমাজকে ভুল বার্তা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে যেগুলোর বিরুদ্ধে।

সমকামী পুরুষদেরকে মজার ছলে উপস্থাপন করা হয়েছে দোস্তানায়; Image Source: YouTube

পার্টনার, ডিশুম, দোস্তানা ইত্যাদি – সমকামী পুরুষরা সবসময় কেবল যৌনতার ব্যাপারেই লালায়িত থাকে

সাম্প্রতিক সময়ে বলিউডে সমকামী পুরুষ চরিত্রদের কেন্দ্র করে বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। কিন্তু সেসব চলচ্চিত্রে সমকামী পুরুষদেরকে যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, বাস্তবতার সাথে তার কোনো মিলই নেই। এসব চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে যে, সমকামী পুরুষেরা সবসময়ই যৌনতার প্রতি লালায়িত থাকে, এবং কোনো সুদর্শন বিষমকামী পুরুষকে দেখলেই তাদেরকে আকৃষ্ট করতে তারা ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তাছাড়া প্রায় সকল চলচ্চিত্রেই সমকামী পুরুষদেরকে কমিক রোলে রাখার মাধ্যমে সমাজকে এই বার্তা দেয়া হচ্ছে যে, সমকামী পুরুষেরা বুঝি খুবই হাস্যকর ব্যক্তি। এভাবেই বাস্তব সমকামী পুরুষদের ব্যাপারে অসংবেদনশীলতার পরিচয় দিচ্ছে এসব চলচ্চিত্র।

পুরুষের মন জয় করতে নারীত্বের গুরুত্ব দেখানো হয়েছে কুচ কুচ হোতা হ্যায় ছবিটিতে; Image Source: YouTube

কুচ কুচ হোতা হ্যায় – পুরুষের মন জয়ে নারীকে প্রকৃত ‘নারীত্ব’ অর্জন করতে হবে

দারুণ জনপ্রিয় এ ছবিটিতে পুরুষতান্ত্রিক দ্বিমুখীতার বিষয়টি খুব মোটা দাগেই ফুটে উঠেছে। এখানে আমরা দেখতে পাই, একজন পুরুষ একজন নারীর প্রতি তার অনুভূতির বিষয়টি তখনই বুঝতে পারে, যখন নারীটি তার বাস্কেট খেলোয়াড়সুলভ টমবয় চেহারা থেকে শাড়ি-চুড়ি পরা, ভজন গাওয়া চিরাচরিত নারীতে রূপান্তরিত হয়। এর মাধ্যমে সমাজকে এমন বার্তাই দেয়া হয়েছে যে, পুরুষের মন জয় করতে গেলে একজন নারীর ‘প্রকৃত নারী’ হয়ে ওঠার কোনো বিকল্প নেই।

সালমানকে খুশি করতে নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছিল আনুশকা; Image Source: YRF

সুলতান – স্বামীকে খুশি করতে একজন নারীকে তার নিজের ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিতে হবে

ব্লকবাস্টার এ ছবিটিতেও পুরুষতান্ত্রিকতার নিদারুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। এখানে দেখা যায়, একজন পুরুষ মাত্র কয়েক মাসের প্রশিক্ষণেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন কুস্তিগিরে পরিণত হয়, যেখানে একজন নারীকে ২০ বছর পরিশ্রমের মাধ্যমে সেই দক্ষতা অর্জন করতে হয়। এখানেই শেষ নয়। সেই নারী যখন গর্ভবতী হয়ে পড়ে, তখন সে তার ২০ বছরের ক্যারিয়ারকে তাৎক্ষণিকভাবেই বিসর্জন দিয়ে দেয় তার ‘স্বামীকে খুশি করার’ উদ্দেশ্যে, কেননা স্বামীর সুখই নাকি তার জন্য ‘আসল মেডেল’!

রোমান্সের খাতিরে সোনাক্ষিকে অনুসরণ শুরু করেছিল অক্ষয়; Image Source: india.com

হলিডে – রোমান্সের খাতিরে মেয়েদের পিছু নেয়া যায়

একজন আর্মি অফিসারের দায়িত্ব ও কর্তব্যনিষ্ঠার কাহিনী উঠে এসেছে এ ছবিতে, যে কি না ছুটি কাটাতে এসেও নিজের মূল কাজকে ভুলে যায় না। এ পর্যন্ত সবই ঠিক আছে। কিন্তু সমস্যাটা হয় তখনই, যখন সে একটি মেয়েকে দেখে অদ্ভুত অঙ্গভঙ্গি ও কার্যকলাপ করতে শুরু করে, এবং মেয়েটিকে অনুসরণও করতে থাকে। বলিউডের ছবিতে রোমান্সের সমার্থক হিসেবে মেয়েদেরকে অনুসরণের বিষয়টি সেই ৯০’র দশক থেকেই ব্যাপকভাবে চিত্রিত হচ্ছে। কিন্তু চলতি দশকেও একজন আর্মি অফিসার চরিত্র যখন রোমান্সের নামে এমন কাজ করতে শুরু করে, সেটি স্রেফ মানা যায় না।

শাড়ি নিয়ে একটি গানও ছিল আর…রাজকুমার ছবিতে; Image Source: YouTube

আর… রাজকুমার – নারীরা পুরুষের খেলার পুতুল

নারী কি কোনো খেলার পুতুল, যাকে যে হাতে পাবে, সে-ই খেলতে শুরু করবে? এই ছবি দেখলে এমন প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাওয়া স্বাভাবিক। একদিন নায়ক নায়িকার বেডরুমে ঢুকে পড়ে, এবং তাকে ধরে তার কুর্তা খুলে ফেলে। এরপর সে নিজের শার্টও খুলে বলে, “এখন আমরা সমান সমান! আমার সবকিছু তুমি দেখে নিয়েছ!” নায়িকা তখন নায়ককে চলে যেতে বলে, কিন্তু নায়ক তা না করে নায়িকার বিছানায় শুয়ে পড়ে। এভাবেই সৃষ্টি হয় একটি তথাকথিত রোমান্টিক দৃশ্য। অন্য আরেকটি দৃশ্যে দেখা যায় নায়ক খলনায়কের উদ্দেশ্যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে যে, সে-ই নায়িকার শাড়ি খুলবে, এবং তাকে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট তারিখে হানিমুনেও যাবে! এভাবেই নায়ক ও খলনায়কের মধ্যে শুরু হয় নায়িকার শাড়ি খোলার নিমিত্তে লড়াই। চলচ্চিত্রটিতে শাড়ি নিয়ে পুরো একটি গানও আছে!

স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছিল কঙ্গনা; Image Source: Scroll.in

তানু ওয়েডস মানু রিটার্নস – স্ত্রী চাইলেই স্বামীকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসাতে পারবে

সমালোচকরা ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন এই চলচ্চিত্রটির। অথচ এই চলচ্চিত্রেই দেখানো হয়, নায়িকা তার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে, তাকে মানসিক হাসপাতালে যেতে বাধ্য করছে। পরবর্তীতে স্বামীকে দেশ পর্যন্ত ছাড়তে হয়, তার জীবন হয়ে ওঠে বিভীষিকাময়। অথচ এসবের তোয়াক্কা না করে, নায়িকা তখন অন্য এক পুরুষের সাথে রোমান্স করতে শুরু করে দেয়। এ চলচ্চিত্রে যেভাবে দেখানো হয়েছে যে সম্পর্কে সমস্যা চললে একজন নারী ইচ্ছা করলেই স্বামীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মিথ্যা মামলা দায়ের করে দিতে পারে, তা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়।

বহুবিবাহকে খুব স্বাভাবিকভাবে দেখানো হয়েছিল বাজিরাও মাস্তানিতে; Image Source: Mashable

বাজিরাও মাস্তানি – সত্যিকারের ভালোবাসার জন্য বহুবিবাহ করা যেতে পারে

বাজিরাও কাশি বাই ও মাস্তানিকে বিয়ে করেছিল, এ তথ্য নিয়ে কোনো দ্বন্দ্ব না থাকলেও, ‘সত্যিকারের ভালোবাসা’-কে স্বীকৃতি দিতে বহুবিবাহকে মেনে নেয়া, এমনকি নেচে-গেয়ে সেটিকে উদযাপনও করা যাবে, এ বিষয়টিই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেওয়ার মতো।

সন্তানের উপর বাবার নিজের ইচ্ছা চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টি দেখানো হয়েছিল দাঙ্গালে; Image Source: Hindustan Times

দাঙ্গাল – নিজের মনস্কামনা পূরণে সন্তানের উপর চাপ প্রয়োগ করা যেতে পারে

অনেকেই হয়তো এ তালিকায় দাঙ্গালের নাম দেখে রেগে যাবেন। কারণ এ চলচ্চিত্রে তো শেষ পর্যন্ত নারীত্বের জয়গানই গাওয়া হয়েছে। কিন্তু যেভাবে একজন বাবা তার কন্যাদের সামনে দুটি অপশন দিয়ে একটিকে বেছে নিতে বলে, হয় কুস্তি নয় ঘরের কাজ, এই বিষয়টি মেনে নেয়া যায় না। আমরা কেউই চাই না মেয়েরা কেবল ঘরের কাজেই সীমাবদ্ধ থাকুক। তাই বলে অভিভাবকেরা যদি ঘরের কাজের বিকল্প হিসেবে নিজেরাই অন্য কিছু বেছে দেয় এবং সন্তানদের সেটি করতে বাধ্য করে, তাহলে সেটিও সন্তানদের জন্য খুব সুখকর কিছু হয় না। তাছাড়া এ চলচ্চিত্রে আমির খানের চরিত্রটি যা করেছিল, তা যতটা না সন্তানদের ভালোর জন্য, তার চেয়ে ঢের বেশি নিজের জীবনের অপ্রাপ্তির অপূর্ণতা ঘোচাতে, নিজের জেদ মেটাতে। বিষয়টি অনেকটা সেসব বাবা-মায়েদের মতো, যারা নিজেরা ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারেনি বলে, ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে বলতে থাকে, তোমাকেই আমার না পারা কাজটি করে দেখাতে হবে।

This article is in Bengali language. It is about the Bollywood movies that sent wrong messages to society. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © YouTube

Related Articles