ইন্টারনেট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কিছু অতি পরিচিত বিড়াল আছে, যাদেরকে সবসময় দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এদের ফলোয়ার সংখ্যাই এদের জনপ্রিয়তা সম্পর্কে বলে দেয়। পরিচিত এই বিড়ালগুলোই ইন্টারনেটের 'ক্যাট ইনফ্লুয়েন্সার' বা তারকা বিড়াল। এদের চলাফেরা বা ফলোয়ারদের উদ্দেশ্যে দেওয়া ছবিগুলো কোনো তারকাদের চেয়ে কম নয়।
গ্রাম্পি ক্যাট
ইন্টারনেটে বিখ্যাত গোমড়ামুখী এই বিড়ালটি সবার কাছে পরিচিত গ্রাম্পি ক্যাট হিসেবে, যার আসল নাম টারডার সস। ৭ বছর বয়সী টারডার ইন্টারনেট জগতে পেট ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিড়ালটির মালিক ট্যাবাথা বুন্ডেসেন ২০১২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর টারডারকে ঘরে নিয়ে আসেন। ট্যাবাথার ভাই ব্রায়ান তারপর একদিন বিড়ালটির সেই গোমড়ামুখী অভিব্যক্তি খেয়াল করলেন। সেটি ছবি তুলে রেডিট (reddit.com)-এ ছেড়ে দিলেন। ৪৮ ঘণ্টার মাঝেই তুমুল সাড়া পেল টারডারের ছবি। এরপর মজাদার সব ছবি আর ক্যাপশনের জোয়ারে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ভেসে বেড়াতে শুরু করল বিখ্যাত এই গ্রাম্পি ক্যাট।
রাতারাতি তারকা বনে যাওয়া টারডার, মডেলিং ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রায় ১১.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। বিশ্বের প্রথম বিড়াল হিসেবে মাদাম তুসোর যাদুঘরে টারডারের মোমের মূর্তি উন্মোচন করা হয়েছিল। গ্রাম্পি ক্যাটের জনপ্রিয়তা তখন আকাশছোঁয়া। এরই মাঝে হুট করে টারডারের ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন ধরা পড়ে। চিকিৎসা চললেও ধকল সহ্য করতে না পেরে একপর্যায়ে মারা যায় ইন্টারনেটের বিখ্যাত এই গ্রাম্পি ক্যাট।
তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শোকের ছায়া নেমে আসে। ইন্সটাগ্রামে প্রায় ১১ মিলিয়ন ফলোয়ার শেয়ার করে এই শোক বার্তাটি। রাগী বা গোমড়ামুখী অভিব্যক্তির জন্য পরিচিত হলেও অসখ্য ইন্টারনেটবাসীর মুখে হাসি ফুটিয়েছে এই গ্রাম্পি ক্যাট।
স্মাজ ক্যাট
খাবার টেবিলে বসে সবজি পাতে নেওয়া একটি বিড়াল, অপরদিকে দ্য রিয়েল হাউজ-ওয়াইভস অফ বেভারলি হিলসে অভিনীত টেইলর আর্মস্ট্রং- এর অভিব্যক্তি; বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ছবিটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু এই ছবিটির আসল রহস্য কী?
এই বিড়ালের নাম স্মাজ ক্যাট। ৬ বছর বয়সী এই ক্যানাডিয়ান বিড়ালের মালিক মিরিন্ডা স্টিলাবাওয়ার। তিনি ২০১৮ সালে সর্বপ্রথম এই ছবিটি টাম্বলারে (tumblr.com) প্রকাশ করেন। তার ক্যাপশন ছিল "সে সবজি পছন্দ করে না"। সেখান থেকেই এর শুরু, এরপর স্মাজের জনপ্রিয়তা সারা বিশ্বব্যাপী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে, মাঙ্গা এবং কজপ্লে পর্যন্ত তার এই জনপ্রিয়তা। তার এই জনপ্রিয়তা দেখে মিরিন্ডা স্মাজের নামে একটি ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট খোলেন, বর্তমানে ইন্সটাগ্রামে স্মাজের ফলোয়ার ১ মিলিয়ন। স্মাজের এই তারকা খ্যাতি স্মাজ এবং মিরিন্ডা উভয়েই উপভোগ করছেন।
স্মাজ খুবই লাজুক এবং আদুরে স্বভাবের বিড়াল। যদিও সবজির সুবাদেই তার এই জনপ্রিয়তা, কিন্তু তার প্রিয় খাবার মাছ এবং টার্কি।
লিল বাব ক্যাট
ইন্টারনেট জগতের আরেক তারকা বিড়াল হচ্ছে মার্কিন লিল বব বা লিটল বব। আদুরে চেহারার এই বিড়ালকে দেখলে মনে হবে, যেন জিভ বের করে ভেংচি কাটছে। বব জন্মেছিল জিনগত কিছু ত্রুটি নিয়ে, আর এই ত্রুটিই তাকে সবার মাঝে জনপ্রিয় করে তুলে। লিল ববকে বলা হতো পারমা কিটেন। অর্থাৎ চিরস্থায়ী বিড়ালছানা, যে কিনা সারাজীবন ছোটই থাকবে। ববের এই জিনগত অসংগতিকে বলা হয় 'ওয়ান অফ ন্যাচারস হ্যাপিয়েস্ট অ্যাকসিডেন্ট' অর্থাৎ প্রকৃতির অন্যতম সুখকর দুর্ঘটনা। কারণ, এই দুর্ঘটনাই ববকে সবার থেকে আলাদা করে তুলেছে।
ববের ওজন মাত্র ৩.৯ পাউন্ড। ববকে দত্তক নেওয়া মাইক ব্রাইডেভস্কি বলেন, "ববকে যখন ভেটের কাছে নিলাম, ভেটের মতে ববই ছিল তার দেখা সবচেয়ে অদ্ভুত বিড়াল।" জন্মগত ত্রুটির কারণে ববের নিচের চোয়াল অতিরিক্ত ছোট, যার ফলে সে জিভ ভেতরে নিতে পারে না। আর এই ত্রুটিই ববকে দিয়েছে আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা। বব সম্পর্কে মাইক কিছু মজার তথ্য দিয়েছেন। তারকা খ্যাতি লাভের পর থেকে বব প্রায় ১০০০ মাইল ভ্রমণ করেছেন নিউইয়র্কের বিভিন্ন শহরে। বিমানে ভ্রমণকালে বব সাধারণত ঘুমিয়েই কাটায় এবং বিমানবন্দরে সে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ববের প্রিয় খাবার দই। যখনই সে নিজে ভালো কিছু খেয়ে চায়, তখন মিষ্টি দই খায়। লিল ববের বর্তমান ইন্সটাগ্রাম ফলোয়ার সংখ্যা ২.১ মিলিয়ন।
নালা ক্যাট
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনপ্রিয় আরেকটি বিড়ালের নাম নালা ক্যাট। ক্যালিফোর্নিয়ার একটি পশু আশ্রম থেকে ৫ মাস বয়সে নালাকে দত্তক নেয় ভারিসিরি। নীল চোখের লানা ইন্সটাগ্রামের সবচেয়ে বড় ক্যাট ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে নিজের নাম লিখিয়েছে। ৯ বছর বয়সী লানার ইন্সটাগ্রামে ফলোয়ার সংখ্যা ৪.১ মিলিয়ন, লানা শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই জনপ্রিয়তা পায়নি, বরং গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তার নাম উঠিয়েছে।
বিভিন্ন ব্র্যান্ড প্রমোশন এবং অনুষ্ঠানে লানার উপস্থিতি দেখা যায়। মার্কিন এই ক্যাট ইনফ্লুয়েন্সারের এ পর্যন্ত আয় প্রায় ৬ লক্ষ পঁচিশ হাজার মার্কিন ডলার। লস এঞ্জেলসের পশু আশ্রম থেকে তারকা বিড়াল হিসেবে খ্যাতি পাওয়া বিড়ালের পেছনে তার মালিক ভারিসিরির অবদান রয়েছে। তিনি যখন লানাকে প্রথম দেখেছিলেন, তাকে কোলে তুলে নিয়েছিলেন। লানাও আদরের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তার গাল চেটেছিল। ভারিসিরি শুধুমাত্র বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের উদ্দেশ্যেই লানার ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতেন, কিন্তু লানাকে যে সমগ্র ইন্টারনেটবাসী এত ভালোবাসা দেবেন, তা তিনি আগে ভাবতে পারেনি।
শিরোনেকো ক্যাট
বিড়ালেরা স্বভাবতই অলস এবং ঘুমকাতুরে প্রাণী। কিন্তু এদের মধ্যে ঘুমের রাজা বলা হয় শিরোনেকো-কে। এ বিড়ালটি প্রায় ২৪ ঘণ্টাই তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকে। ২০০৬ সালে প্রথম শিরোনেকোর ছবি প্রকাশ পায়। এর পর থেকেই এর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। বিভিন্ন ব্লগে 'বাস্কেট ক্যাট' হিসেবে তার ছবি প্রকাশ হতে থাকে।
ঘুমন্ত অবস্থায় বিড়ালটির মাথায় রাখা বিভিন্ন জিনিস আর আদুরে অভিব্যক্তির জন্য সকলের কাছে শিরোনেকো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বারো বছর বয়সী এই সাদা বিড়ালটি অত্যন্ত আরামপ্রিয়। জাপানি এই তারকা বিড়ালের ইন্সটাগ্রাম ফলোয়ার সংখ্যা ১৬.২ হাজার। তার ঘুমানোর ভঙ্গি এবং আয়েশি স্বভাবের জন্য শিরোনেকো-কে পৃথিবীর সুখিতম বিড়ালও বলা হয়ে থাকে।
প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘বিনোদন’ বিভাগে এখন থেকে নিয়মিত লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/
This Bengali article is about the famous cats of internet. These cats rule the social media. They have many funny facts and features which attracts people.
Featured Image: Reddit
RB-RF/SM