Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ডিজনি ও ওয়ার্নার মিডিয়ার স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম: নেটফ্লিক্সের শীর্ষস্থান হুমকির মুখে?

ফ্রেন্ডস – কোনো বিতর্ক ছাড়াই ইতিহাসের সবচেয়ে দর্শকপ্রিয় টিভি সিরিজ। ২০০৪ সালেই শেষ হয়ে গেছে এটি। তবু এখনো বিশ্বের অনেক দেশের টিভি চ্যানেলেই প্রতিদিন পুনঃপ্রচার হয় এই সিরিজটি। একে তো ১৫ বছরের পুরনো একটি সিরিজ, তার উপর আবার ফ্রিতেই টিভিতে দেখা যাচ্ছে, তাই অনেকের কাছেই সিরিজটিকে অতি সুলভ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু বাস্তবতা মোটেই সেরকম নয়। অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স যখন সিরিজটি নামিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিল, তখন বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দর্শকরা ক্ষোভের ঝড় তুলতে শুরু করল। তাদেরকে শান্ত করতে ২০১৯ সালের পুরোটা জুড়েই সিরিজটিকে রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল নেটফ্লিক্স। কিন্তু এ তো আর কেবল মামাবাড়ির আবদার না যে সিদ্ধান্ত নিলাম আর হয়ে গেল! এর জন্য সিরিজটির স্বত্বাধিকারী ওয়ার্নার মিডিয়াকে নেটফ্লিক্সের কত দিতে হয়েছে, জানেন? পুরো ১০০ মিলিয়ন ডলার! কিন্তু এরপরও নেটফ্লিক্স নিজেদেরকে লাভবানই ভাবতে পারে। কারণ এত বিপুল পরিমাণ অর্থ তারা একটি সিরিজের পেছনে ব্যয় করেছে বটে, তবে তার ফলে লক্ষ লক্ষ সাবস্ক্রাইবার হারানোর হুমকি থেকে বেঁচে গিয়েছে তারা। কেননা অনেকেই এমন আছে যারা কেবল ফ্রেন্ডস দেখার জন্যই নেটফ্লিক্সে সাবস্ক্রাইব করে রেখেছে, মাসে মাসে ৯ থেকে ১৬ ডলার পর্যন্ত গুনছে।

অনেকেই নেটফ্লিক্সে সাবস্ক্রাইব করেছে কেবল ফ্রেন্ডস দেখতে; Image Source: Netflix

এখন আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, কেন টিভিতে ফ্রি দেখার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দর্শক গাঁটের পয়সা খরচ করে নেটফ্লিক্সে সিরিজটি দেখতে চায়? এর কারণ খুবই সহজ। টিভিতে ফ্রিতে দেখা যায় বটে, কিন্তু প্রতিদিন কেবল একটি পর্ব,  তা-ও আবার একটি নির্দিষ্ট সময়ে। কিন্তু নেটফ্লিক্সে দর্শক নিজের ইচ্ছে মতো, যখন খুশি, যতগুলো খুশি পর্ব দেখে ফেলতে পারছে। আজকের দিনে মানুষের জীবন এত বেশি ব্যস্ত হয়ে গেছে যে, প্রতিদিন রুটিন করে একটি নির্দিষ্ট সময় পছন্দের টিভি শোয়ের জন্য নির্ধারিত রাখা তাদের জন্য বিলাসিতা বৈ আর কিছুই নয়। ফলে টিভিতে পছন্দের অনুষ্ঠান দেখার প্রবণতা তাদের ক্রমশই কমছে। অথচ নেটফ্লিক্সের মতো ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোয় কত সুবিধা চিন্তা করুন। কাজের ফাঁকে কিছুটা সময় রিল্যাক্স করে নিতে, জ্যামে আটকে থাকার বিরক্তি ভুলে যেতে, ওয়েটিং রুমে বসে অপেক্ষা করার সময়টুকুকে আনন্দময় করে তুলতে, কিংবা দৈনন্দিন জীবনের যেকোনো পরিস্থিতিতে বিনোদনের অন্বেষণে মানুষ তার হাতে বা সাথে থাকা ডিভাইসটিতে (মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব, গেমিং কনসোল) নিজের পছন্দের চলচ্চিত্র বা অনুষ্ঠানটির এক বা একাধিক পর্ব দেখে ফেলতে পারছে। আর এ কারণেই অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের জনপ্রিয়তা তরতর করে বাড়ছে। এবং সবকিছু দেখে শুনে যা মনে হচ্ছে, তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বিনোদনের প্রধান প্ল্যাটফর্ম হিসেবে অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং-ই বিবেচিত হবে।

অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক, বহুজাতিক ও আঞ্চলিক অসংখ্য প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। তবে সাধারণভাবে যে প্ল্যাটফর্মগুলোর কথা সবচেয়ে বেশি শোনা যায়, সেগুলো হলো: নেটফ্লিক্স, অ্যামাজন প্রাইম, হুলু, এইচবিও নাউ ইত্যাদি। এগুলোর মধ্যে আবার সবচেয়ে জনপ্রিয় কোনটি, তা বেছে নিতে গেলে বলতে হবে নেটফ্লিক্সের কথা। আন্তর্জাতিক অন্যান্য যেকোনো ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের চেয়ে যোজন যোজন ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে নেটফ্লিক্স।

এই মুহূর্তে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে শ্রেষ্ঠত্ব নেটফ্লিক্সের; Image Source: CNBC

নেটফ্লিক্সের এত জনপ্রিয়তার কারণ কী?

অন্যান্য প্ল্যাটফর্মের চেয়ে নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে থাকার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। চলুন সেগুলোই আপনাদের সামনে একে একে তুলে ধরি:

কনটেন্ট: বলা হয়ে থাকে, কনটেন্ট ইজ দ্য কিং। খুবই বাস্তবসম্মত কথা। আজকের দিনে মানুষ কনটেন্টকেই সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেয়। আর সেক্ষেত্রে নেটফ্লিক্সের চেয়ে এগিয়ে নেই আর কেউই। কনটেন্ট, কোয়ান্টিটি দুই ক্ষেত্রেই নেটফ্লিক্সের একচেটিয়া আধিপত্য। ফ্রেন্ডস ছাড়াও আরো অসংখ্য দর্শকপ্রিয় টিভি শো ও চলচ্চিত্র রয়েছে নেটফ্লিক্সের লাইব্রেরিতে। তবে তাদের সবচেয়ে বড় ট্রাম্পকার্ড হলো অরিজিনাল কনটেন্ট। হাউজ অফ কার্ডস এমি অ্যাওয়ার্ড জয়ের পর থেকেই নেটফ্লিক্স অরিজিনাল কনটেন্ট নির্মাণকে তাদের প্রায়োরিটি লিস্টের একদম শীর্ষে রাখছে। প্রতি সপ্তাহেই তারা বিভিন্ন দেশ ও ভাষার একাধিক অরিজিনাল কনটেন্ট যুক্ত করছে। বছরে তারা কনটেন্টের পেছনে ব্যয় করছে ১৩-১৪ বিলিয়ন ডলার করে, যার সিংহভাগই ব্যবহৃত হচ্ছে অরিজিনাল কনটেন্টের পেছনে। আর এসব অরিজিনাল কনটেন্টের মান এতটাই ভালো হচ্ছে যে, দর্শক খুব সহজেই আকৃষ্ট হচ্ছে। অথচ কনটেন্টের ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে আছে অ্যামাজন, হুলু ও এইচবিও। তাদের লাইব্রেরিতে দুই একটি হয়তো খুব ভালো ও জনপ্রিয় কনটেন্ট আছে, যেমন হুলুর আছে দ্য হ্যান্ডমেইডস টেল এবং এইচবিওর গেম অফ থ্রোনস, কিন্তু নেটফ্লিক্সের মতো এত বৈচিত্র্যময় কনটেন্টের সম্ভার তাদের নেই।

প্রায় সকল ডিভাইসেই সচল নেটফ্লিক্স; Image Source: Digital Trends

সাপোর্টেড ডিভাইস: আজকাল প্রায় সব ধরণের ডিভাইসেই নেটফ্লিক্স চালানো যায় (কেবল নিনতেন্দো বাদে, যেটি কেবল হুলু সাপোর্ট করে)। অনেক ডিভাইসে তো বিল্ট-ইন নেটফ্লিক্স অ্যাপ্লিকেশনও থাকে, আর অনেক স্মার্ট টিভির রিমোটে নেটফ্লিক্সের জন্য একটি ডেডিকেটেড রেড বাটনও দেখা যায়। হুলুও প্রায় সব ডিভাইসেই সচল। কিন্তু অ্যামাজন সব ডিভাইসে পাওয়া যায় না, যেমন গুগলের ক্রোমকাস্ট ও ক্রোমকাস্ট আল্ট্রা। অবশ্য অ্যামাজনের রয়েছে নিজস্ব ফায়ার টিভি স্টিক। তারপরও মোটের উপর নেটফ্লিক্স ও হুলু চালানোর ক্ষেত্রেই দর্শককে প্রায় কোনো ভোগান্তিই পোহাতে হয় না।

সাবটাইটেল: সাবটাইটেল দর্শকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এমন অনেকেই আছেন যারা ইংরেজি চলচ্চিত্র ও টিভি সিরিজের সংলাপ পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেন না। সাবটাইটেল থাকলে তাদের বুঝতে একটু সুবিধা হয়। তাছাড়া অন্যান্য বিদেশী ভাষার অনুষ্ঠান বুঝতেও সাবটাইটেলের কোনো বিকল্পই নেই। ২০১৪ সালের এক চুক্তি মোতাবেক, নেটফ্লিক্সের সকল কনটেন্টেই সাবটাইটেল রয়েছে। কিন্তু অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে অনেক সাবটাইটেলহীন কনটেন্টও রয়েছে, যার ফলে সেগুলো সব দর্শকের পক্ষে উপভোগ করা সম্ভব হয় না।

ভিডিও ও অডিও কোয়ালিটি: আজকের দিনের দর্শকেরা অনেক বেশি খুঁতখুঁতে। ভিডিও ও অডিও সেরা কোয়ালিটির না হলে তারা কোনো অনুষ্ঠান দেখে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয় না। আর এক্ষেত্রেও তাদেরকে সবচেয়ে বেশি সন্তুষ্ট করতে পারে নেটফ্লিক্সই। তারা সব কনটেন্ট ১০৮০পি কোয়ালিটিতে স্ট্রিম তো করছেই, পাশাপাশি অনেক কনটেন্টের জন্য রয়েছে ৪কে আল্ট্রা এইচডি রেজোলিউশন ও এইচডিআর সাপোর্টও। এছাড়াও অডিওর ক্ষেত্রে তাদের অনেক কনটেন্টের জন্যই রয়েছে ৫.১ ও ৭.১ সারাউন্ড সাউন্ড ছাড়াও ডোলবি অ্যাটমোস সুবিধা। অ্যামাজনও ভিডিও কোয়ালিটির দিক থেকে নেটফ্লিক্সের মতো হলেও, অডিও কোয়ালিটিতে তারা খানিকটা পিছিয়ে আছে। অপরদিকে হুলুতে এখনও দর্শকরা সেরা ভিডিও ও অডিও কোয়ালিটি পাচ্ছে না।

সেরা ভিডিও ও অডিও কোয়ালিটিও রয়েছে নেটফ্লিক্সেই; Image Source: Digital Trends

মূল্য: এদিক থেকে অবশ্য নেটফ্লিক্সকে সবচেয়ে এগিয়ে রাখা যায় না। কারণ অতি সম্প্রতিই মূল্য বৃদ্ধি করেছে তারা। এখন সাধারণ মানের এসডি কনটেন্ট একসাথে কেবল একটি ডিভাইসে দেখতেই দর্শককে মাসে খরচ করতে হচ্ছে ৯ ডলার করে। একসাথে দুইটি ডিভাইসে এইচডি দেখার জন্য খরচ পড়ছে ১২ ডলার, আর একসাথে চারটি ডিভাইসে ৪কে আল্ট্রা এইচডি দেখার ক্ষেত্রে ১৬ ডলার করে। কেবল এইচবিও নাউয়েরই মূল্য এর কাছাকাছি, মাসে ১৫ ডলার করে। অথচ অ্যামাজনে সেরা ভিডিও ও অডিও কোয়ালিটির কনটেন্ট দেখতে মাসে খরচ হয় ১৩ ডলার, কিংবা বছরে ১১৯ ডলার। শিক্ষার্থীদের জন্য আবার বিশেষ ছাড় আছে। ভ্যালিড স্টুডেন্ট মেইল আইডি দিয়ে সাবস্ক্রাইব করলে বছরে খরচ পড়ছে মাত্র ৫৯ ডলার। ওদিকে হুলুর সাধারণ অ্যাকাউন্টের মাসিক মূল্য মাত্র ৬ ডলার, এবং বিজ্ঞাপনবিহীন সংস্করণ ১২ ডলার করে। এছাড়া তাদের মাসিক টিভি স্ট্রিমিংয়ের মূল্য ৪৫ ডলার। সুতরাং মূল্যের দিক থেকে অ্যামাজন ও হুলুর তুলনায় নেটফ্লিক্সকে একটু দামিই মনে হয়, তবে ভুলে গেলে চলবে না, নেটফ্লিক্সের কনটেন্টের সংখ্যা অ্যামাজন, হুলু ও এইচবিওর মোট কনটেন্ট সংখ্যার চেয়ে বেশি। সুতরাং বেশি দাম দিয়ে নেটফ্লিক্স চালালেও দর্শকের কিন্তু লাভই হচ্ছে।

উপর্যুক্ত সকল কারণেই অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিংয়ের ক্ষেত্রে শীর্ষস্থানে এখন নেটফ্লিক্সই। গত বছরের ১৬ অক্টোবর প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১৩৭ মিলিয়ন। অপরদিকে গত বছরের এপ্রিল মাসে অ্যামাজনের সিইও জেফ বেজোস দাবি করেছিলেন অ্যামাজনের প্রাইম সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ১০০ মিলিয়নের অধিক, তবে তা কেবল ভিডিও স্ট্রিমিং সার্ভিসেই সীমাবদ্ধ নয়, তাদের অন্য সকল সুবিধা মিলিয়ে। আর হুলুতে এই মুহূর্তে সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২৩ মিলিয়নের বেশি। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, নেটফ্লিক্সের এমন একচেটিয়া আধিপত্য কতদিন অব্যহত থাকবে? গবেষকরা মনে করছেন, ২০১৯ সালেই হয়তো নেটফ্লিক্সের শীর্ষস্থান হারানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।

এই বছরের শেষ দিকে আসবে ওয়ার্নার মিডিয়ার নিজস্ব স্ট্রিমিং সার্ভিস; Image Source: Variety

কেন নেটফ্লিক্সের শীর্ষস্থান হুমকির মুখে?

নেটফ্লিক্সের শীর্ষস্থান হারানোর সম্ভাবনার পেছনে প্রধান কারণ প্রতিদ্বন্দ্বীর সংখ্যা বৃদ্ধি। এতদিনও অ্যামাজন, হুলু, এইচবিওর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর অস্তিত্ব ছিল বটে, কিন্তু সেগুলো নেটফ্লিক্সের জন্য কখনোই দুর্ভাবনার কারণ হয়নি। কিন্তু দৃশ্যপট বদলে যাবে ডিজনি ও ওয়ার্নার মিডিয়ার মতো দুইটি শীর্ষস্থানীয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব অনলাইন ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চালু করলে।

নতুন প্ল্যাটফর্মগুলো আসায়, নেটফ্লিক্সের কনটেন্ট লাইব্রেরিতে বড় ধরণের ধস নামবে। যেসব কনটেন্ট নেটফ্লিক্সের নিজস্ব নয়, যেমন মনে করুন ফ্রেন্ডস সিরিজটির কথাই, এ বছরের পর আর নেটফ্লিক্সে থাকবে না। যেহেতু ওয়ার্নার মিডিয়ার নিজস্ব স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম আসবে, ফ্রেন্ডস সিরিজটিকে তারা সেখানেই রাখবে, সেটিই তো স্বাভাবিক। এভাবে ওয়ার্নার মিডিয়া একে একে তাদের সকল কনটেন্টই নেটফ্লিক্স থেকে নিয়ে নেবে। তাদের হাতে থাকবে হ্যারি পটার, ব্যাটম্যানের মতো ব্লকবাস্টার ফ্যাঞ্চাইজি এবং ফ্রেন্ডস ও বিগ ব্যাং থিওরির মতো আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তার টিভি শো।

একই সমস্যা হবে ডিজনি প্লাসের কারণেও। তারা নিজেদের প্রযোজিত কনটেন্টগুলো তো লাইব্রেরিতে রাখবেই, পাশাপাশি থাকবে পিক্সার, স্টার ওয়ার্স, ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, এবিসি নেটওয়ার্ক ও মারভেলের শত শত কনটেন্টও। বেশি ঝামেলা হবে মারভেলের কনটেন্ট নিয়ে। এতদিন মারভেলের সাথে জুটি বেঁধে অনেকগুলো অরিজিনাল শো প্রযোজনা করেছে নেটফ্লিক্স। কিন্তু সেগুলোর পূর্ণাঙ্গ স্বত্ব তাদের কাছে নেই। ফলে ভবিষ্যতে মারভেল ওইসব শোয়ের চরিত্র ও কাহিনীর উপর ভিত্তি করে ডিজনি প্লাসের জন্যও নতুন নতুন অনেক শো তৈরী করবে। এ কথা চিন্তা করে নেটফ্লিক্স ইতিমধ্যেই মারভেলের সাথে জুটিবদ্ধ হয়ে নতুন আর কোনো শো প্রযোজনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। আরেকটি বড় ব্যাপার হলো, খুব শীঘ্রই ডিজনি হুলুর ৬০% মালিকানা নিজেদের দখলে নিয়ে নেবে (এই মুহূর্তে হুলুর ১০% মালিকানা ওয়ার্নার মিডিয়ার)। তাই ভবিষ্যতে হয়তো ডিজনি প্রকল্প হাতে নেবে হুলুকেও ডিজনি প্লাসের সাথে একীভূত করার, যার ফলে বিশাল এক লাইব্রেরির সৃষ্টি হবে।

কনটেন্টের পেছনে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করবে ডিজনি প্লাস; Image Source: Disney

নতুন কনটেন্টের ক্ষেত্রেও নেটফ্লিক্স এ বছর পিছিয়ে পড়বে ডিজনি ও ওয়ার্নার মিডিয়ার থেকে। এ বছর কনটেন্টের পেছনে নেটফ্লিক্সের মোট বাজেট ১৪ বিলিয়ন ডলার। ওদিকে ওয়ার্নার মিডিয়ারই বাজেট ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার। আর ডিজনি খরচ করবে ১৬.৩ বিলিয়ন ডলার। যেহেতু ডিজনির বাজেট বেশি, তাই তারা কনটেন্ট সংখ্যা ও গুণগতমানের দিক থেকে যে নেটফ্লিক্সকে পেছনে ফেলে দেবে, তা পূর্বানুমান করতে বিশেষ কষ্ট হয় না।

শুধু ডিজনি ও ওয়ার্নার মিডিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা হলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু নেটফ্লিক্সের আরেক প্রতিপক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হবে অ্যাপলও। এই বছরের প্রথমার্ধেই নিজস্ব ভিডিও সার্ভিস চালু করবে অ্যাপল। অ্যাপলের ডিভাইসগুলোতে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই এটি ইনস্টল করা থাকবে, যেখানে ব্যবহারকারীরা ফ্রিতেই অসংখ্য ফ্রি ও অরিজিনাল কনটেন্ট দেখতে পারবে। এ কারণেও অ্যাপল ব্যবহারকারীদের মধ্যে আলাদা করে অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে সাবস্ক্রাইব করার প্রবণতা কমে যাবে।

শেষ কথা

সব মিলিয়ে সামনে কঠিন সময়ই অপেক্ষা করছে নেটফ্লিক্সের জন্য। এতদিন নির্বিঘ্নে নিজেদের কাজ চালিয়ে যেতে পেরেছে তারা। তেমন কোনো প্রতিযোগিতারই মুখোমুখি হতে হয়নি। কিন্তু এ বছর থেকেই তাদেরকে সব সময় আতঙ্কে থাকতে হবে শীর্ষস্থান হারানোর। তবে শীর্ষস্থান তারা খুব শীঘ্রই হারাবে বলে মনে হয় না। কেননা ইতিমধ্যেই তারা বিশ্বের প্রায় সকল অঞ্চলে পৌঁছে গেছে, যে কারণে তাদের নিজস্ব একটি গ্রহণযোগ্যতা গড়ে উঠেছে, যা অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর অর্জন করতেও বেশ খানিকটা সময় লাগবে। তাছাড়া স্বাধীন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথেও নেটফ্লিক্সের সুসম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে, যা তাদেরকে প্রতিযোগিতার বাজারে এগিয়ে রাখবে। ডিজনি বা ওয়ার্নার মিডিয়া যদি টিকে থাকতে চায়, তাহলে তাদেরকে নিজস্ব স্টুডিওর বাইরে গিয়ে অন্যান্য প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সাথেও কাজ করতে হবে। কিন্তু এই জায়গাটিতে তারা নেটফ্লিক্সের চেয়ে অনেকটাই অনভিজ্ঞ। ফলে স্বাধীন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানসমূহ বেশি লাভের আশায় নতুন কারো সাথে কাজ করার চেয়ে নেটফ্লিক্সের সাথে কাজ করা অব্যহত রাখাকেই হয়তো অপেক্ষাকৃত অধিক সুবিধাজনক মনে করবে।

তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো, নেটফ্লিক্স শীর্ষস্থানে থাকুক বা না থাকুক, নিঃসন্দেহে লাভবান হবে সাধারণ দর্শক। যেহেতু প্রতিযোগিতা বিস্তৃত হচ্ছে, তাই নেটফ্লিক্স যেমন আরো ভালো ভালো কনটেন্ট তৈরী করে নিজেদের অবস্থান সুসংহত রাখতে চাইবে, অন্যান্য প্ল্যাটফর্মগুলোও কনটেন্ট নির্মাণকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেবে। এর ফলে ভবিষ্যত বছরগুলোতে পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়েও সংখ্যায় বেশি ও গুণে-মানে এগিয়ে থাকা কনটেন্টের আবির্ভাব ঘটবে। এতে করে সাধারণ দর্শকদেরকে এক মধুর সমস্যায় পড়তে হবে: কোনটা ছেড়ে কোনটা দেখব! এবং এভাবেই, বিনোদন জগতে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about the futute of Netflix following the arrival of Disney and Warner Media's streaming services. Necessary references have been hyperlinked inside. 

Featured Image © Yahoo! 

Related Articles