Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিখ্যাত সব ব্যক্তির অটোগ্রাফ নিয়ে মজার কাহিনী

সাধারণত বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাদের ভক্তদের অনুরোধ রক্ষার জন্য অটোগ্রাফ দিয়ে থাকেন। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে তাদের অটোগ্রাফ দিয়ে থাকেন। কেউ শুধু সই করে দেন, কেউ হয়তো সইয়ের সাথে লিখে দিলেন দু’ছত্র কবিতা, আবার কেউ এঁকে দিলেন চটজলদি একটি স্কেচ বা ছবি। বিশ্বের বিখ্যাত সব ব্যক্তিদের অটোগ্রাফ নিয়ে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা নিয়ে আজকের এই আয়োজন।

বালক সত্যজিতের নতুন কেনা অটোগ্রাফের খাতায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সইয়ের সাথে একখানি কবিতা

সত্যজিত রায়ের বয়স তখন দশ। মায়ের সাথে গিয়েছেন শান্তিনিকেতনেরে পৌষমেলায়। হাতে নতুন কেনা অটোগ্রাফের খাতা। ইচ্ছে ছোট্ট বেগুনি সে খাতার প্রথম সইটি থাকবে স্বয়ং কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। সে আশায় মাকে নিয়ে বালক সত্যজিৎ উপস্থিত হলেন উত্তরায়ণে, যেখানে সেসময় অবস্থান করছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

Pinterest
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে বালক সত্যজিৎ; Image Source: Pinterest

বিশ্বকবির সাথে সাক্ষাতের পর সই নেয়ার ইচ্ছের কথা ছেলের হয়ে মা-ই কবিগুরুর কাছে পেশ করলেন। কবিগুরু অটোগ্রাফের খাতাটি নিলেন এবং সত্যজিতকে পরের দিন খাতাটি নিয়ে যেতে বললেন। কবিগুরুর কথামতো পরদিন সকালে খাতা আনতে গিয়ে সত্যজিৎ আনন্দে আত্মহারা। কারণ কবিগুরুর অটোগ্রাফের সাথে পেয়ে গেলেন আট লাইনের একটি কবিতা, যা আজও অমর হয়ে রয়েছে আমাদের মাঝে।

 ‘বহুদিন ধরে’ বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়াছি পর্বতমালা,
দেখিতে গিয়াছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশির বিন্দু।’

সত্যজিৎ রায়ের এই অটোগ্রাফ প্রাপ্তির মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের এক অসমান্য কবিতা উপহার পাওয়ার গল্পই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়।

অটোগ্রাফের বিনিময়ে মহাত্মা গান্ধীর অর্থ সংগ্রহ

সাংবাদিকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ’র জন্য। কখন তিনি মহাত্মা গান্ধীর ঘর থেকে বের হবেন। ঘর থেকে বের হতেই সাংবাদিকরা ছেঁকে ধরলেন বার্নার্ড শ’কে। সাংবাদিকেরা একে একে প্রশ্ন করতে শুরু করে দিলেন। “কেমন দেখলেন মহাত্মাকে?” “ গান্ধীজিকে দেখে আপনার কী মনে হলো?” প্রশ্নবানে জর্জরিত বার্নার্ড শ’ গম্ভীর হয়ে বললেন, “হিমালয় প্রথম দেখার পর কি কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো যায়?”

সাহিত্যিক জর্জ বার্নার্ড শ; Image Source: IrishCentral

এহেন মানুষকে একবার চোখের দেখা দেখতে সেই বার্নার্ড শ’র দেশ থেকে ছুটে এসেছেন এক ইংরেজ দম্পতি। তারা মনের আনন্দে দেখলেন মানবতার পূজারীকে। কত কী জানার ছিল, লজ্জায়, সঙ্কোচে, শ্রদ্ধায় জিজ্ঞেসই করা হলো না। নির্ধারিত সময় শেষ হলো। উঠে আসার সময় এই দম্পতি সলজ্জ ভঙ্গিতে বাড়িয়ে দিলেন অটোগ্রাফের খাতা। গান্ধীজি স্মিত হেসে সই করে দিলেন। তারপর বাড়িয়ে দিলেন ডান হাত। বিস্মিত ইংরেজ দম্পতি ভাবলেন মহাত্মা বোধ হয় করমর্দন করতে চাইছেন।

মহাত্মা গান্ধী; Image Source: Wealthy Gorilla

পরমুহূর্তে তাদের সেই ভুল ভেঙে দিয়ে যখন গান্ধীজির সহকারী জানালেন যে, তিনি অর্থ সাহায্য চাইছেন। বিস্মিত সেই দম্পতি আবেগে আপ্লুত হয়ে গেলেন যখন তারা জানতে পারলেন হরিজন কল্যাণ তহবিলে জমা দেওয়ার জন্য গান্ধীজি সই-পিছু পাঁচ টাকা নিচ্ছেন। শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে গেল তাদের। ফিরে গেলেন তারা। সাথে নিয়ে গেলেন দুই অমূল্য সম্পদ। সবরমতী আশ্রমের গোধূলি বেলায় মহাত্মা-দর্শনের স্মৃতি আর তার অমূল্য অটোগ্রাফ।

পাবলো পিকাসোর কাছে এক ক্ষুদে ভক্তের আর্জি, “আমি কি আপনার একটি সই পেতে পারি?”

বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো তার “আর্টোগ্রাফের” এর মূল্য সম্পর্কে বেশ সচেতন ছিলেন। সইয়ের চেয়ে তার স্কেচ করা সইয়ের বেশ কদর ছিল ভক্তদের মাঝে। প্রায় ক্ষেত্রেই ভক্তরা সেই দাবীই করতেন। একবার পিকাসো ফ্রান্সের দক্ষিণের এক সমুদ্র উপকূলে অবকাশযাপন করছিলেন। একদিন সমুদ্রের তটে বসে থাকার সময় এক ছোট্ট ছেলে একটা কাগজের টুকরো নিয়ে এসে তার সামনে উপস্থিত হলো। 

চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো; Image Source: Crown & Caliber Blog

ছেলেটি পিকাসোর কাছে সেই কাগজে তার স্কেচ করা সই চাইলো। পিকাসো বেশ অবাক হলেন। কারণ তার আঁকা ছবি এই ছোট্ট ছেলের ওই বয়সে বোঝার কথা না। তিনি ছেলেটির কাছে জানতে চাইলেন, সইটি তার জন্য না অন্য কারো জন্য। তখন ছেলেটি দূরে অপেক্ষমান তার বাবা-মাকে দেখিয়ে জানায়, তার বাবা-মা তাকে পাঠিয়েছে এই সই নেয়ার জন্য। তখন পিকাসো সেই কাগজের টুকরোয় সই না করে ছেলেটির পিঠে একটি স্কেচ এঁকে দিয়ে তাতে সই করে দেন। এক সাক্ষাৎকারে এই ঘটনার কথা স্মরণ করে পিকাসো মন্তব্য করেন,

“আমার জানার ইচ্ছে এই দম্পতি কতদিন আমার এই সই সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন।”

পাবলো পিকাসোর স্কেচ সহ সই; Image Source: roboticsandautomationnews.com

আরেকবার এক রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে রেস্টুরেন্টের মালিক পিকাসোকে চিনতে পেরে তার অটোগ্রাফের বিনিময়ে সেই রেস্টুরেন্টে বিনামূল্যে খাবার অফার দেন। পিকাসো হেসে তাকে জবাব দিয়েছিলেন,

আমি কেবল আমার খাবারের বিল পরিশোধ করতে চাই, রেস্টুরেন্ট কেনার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। “

রসিক সাহিত্যিকের তার ভক্তকে দেয়া মজার অটোগ্রাফ

একবার এক কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়ের কাছে গিয়েছিলেন অটোগ্রাফ চাইতে। অটোগ্রাফের খাতা নিয়ে বিভূতিভূষণ হঠাৎ মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করলেন, বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেদিনকার তারিখটা কত। যেমনটা হয়, সচরাচর ইংরেজি তারিখটাই সবাই ব্যবহার করে। বাংলা তাারিখটা যেহেতু কালে ভদ্রে ব্যবহৃত হয়, তাই অনেকেই বাংলা তারিখটা খুব একটা মনেও রাখেন না। এক্ষেত্রে কলেজ পড়ুয়া মেয়েটির বেলায়ও তেমনটিই ঘটে। মেয়েটি কাঁচমাচু মুখে দাঁড়িয়ে রইলো। রসিক বিভূতিভূষণ একটি হেসে বলে উঠলেন, “বাঙালিকে বাংলাটাও তো জানতে হবে।” -এই বলে লেখক মেয়েটিকে বাংলা সন তারিখ লিখে সই করে দিলেন।

সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়; Image Source: RadioBanglaNet

সন্ধান পাওয়া শেক্সপিয়রের দুর্লভ ছয়টি সই

কয়েকজন গবেষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে বের করা সম্ভব হয়েছে শেক্সপিয়রের ছয়টি সই। সারা পৃথিবীতে শেক্সপিয়রের সাকুল্যে এই ছ’টা সইয়েরই সন্ধান আজ অবধি পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে দুটি সই আছে ১৬৩১ সালে লন্ডনের ব্ল্যাকফ্রায়াস অঞ্চলের একটি বাড়ি হস্তান্তরের দলিলে। তিনটি রয়েছে ১৬১৬ সালে তার করা উইলের তিনটি আলাদা আলাদা পাতায়, আর ষষ্ঠটি রয়েছে ১৬১২ সালের একটি মামলার সাক্ষী হিসেবে এক সরকারি নথিতে। ১৯১০ সালে ‘পাবলিক রেকর্ডস অফিস’ এর ফাইলপত্র পরিষ্কার করতে গিয়ে এক কর্মচারী শেক্সপিয়রের এই অমূল্য অটোগ্রাফটি আবিষ্কার করেন। 

শেক্সপিয়রের দুর্লভ সই; Image Source: Getty Images

বন্ধুকে দেয়া কাফকার জীবন সম্পর্কিত আবেগমাখানো অটোগ্রাফ

অস্তিত্ববাদী লেখক ফ্রানৎস কাফকার সাহিত্যে যেমন মানব জীবনের বিষণ্নতা, সামাজিক দ্বন্দ্ব, অন্ধকারচ্ছন্নতা ও জীবনের নানা উত্থান-পতনের ছবি দৃশ্যায়িত হতো, ঠিক তেমনি কোনো অটোগ্রাফ দেওয়ার ক্ষেত্রেও প্রচ্ছন্নভাবে তা প্রকাশিত হতো বলে অনেক বিশেষজ্ঞেরই অভিমত।

লেখক ফ্রানৎস কাফকা; Image Source: IMDb

একবার তার এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে বন্ধুর অটোগ্রাফ খাতায় সই দিতে গিয়ে বিখ্যাত সাহিত্যিক কাফকা অটোগ্রাফ খাতায় লিখেছিলেন,

“There is a coming and going- a parting, often for ever.”

জীবনের মিলন, বিচ্ছেদ ও মৃত্যু সম্পর্কে এত গভীর কথা তাৎক্ষণিকভাবে লিখে দেওয়ার ক্ষমতা কাফকার অসাধারণ প্রতিভাকেই আমাদের সামনে চিনিয়ে দেয়।

ফিচার ইমেজ- YouTube.com

তথ্যসূত্র:

১. গান্ধীজি: হিজ লাইফ অ্যান্ড ওয়ার্ক – গান্ধীজির কর্মজীবন নিয়ে তার ৭৫তম জন্মদিনে এই বইটি প্রকাশিত হয়

২.   সত্যজিৎ রায় রচিত ‘যখন ছোট ছিলাম’

Related Articles