বীরদর্পে লাখো দর্শকের সামনে শার্লক হোমসের চরিত্রকে উপস্থাপন করে সবার মন কেড়ে নেয়ার পর প্রায় ৮ বছর পেরিয়ে গেছে বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচের। সামাজিকতার ধার ধারে না এমন চৌকস এক গোয়েন্দার রূপায়ন করা খুব একটা সহজ নয়। বিবিসির ‘শার্লক হোমস’ সিরিজে তুখোড় অভিনয় করে শুধুমাত্র ছোট পর্দায়ই নয়, হলিউডেও নিজের স্বর্ণালী ক্যারিয়ার গড়ে নিয়েছেন তিনি। থিয়েটার, ফিল্ম, টেলিভিশন- সব ক্ষেত্রেই দর্শক হৃদয়ে এককাধিপত্য বিস্তার করে চলেছেন প্রতিভাবান এই অভিনেতা।
বিনয়ী এবং কাজের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল বেনেডিক্টকে যে চরিত্রে দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়, সেটিই তিনি এমনভাবে উপস্থাপন করেন যেন আদতে তার জন্মই হয়েছিল এই চরিত্রের জন্য। ২০১৩ সালে ‘স্টার ট্রেক ইনটু ডার্কনেসের’ খান চরিত্রে, ‘দ্য হবিট’ সিরিজের স্মগ দ্য ড্রাগন এবং দ্য নেক্রোম্যান্সার চরিত্রে, মার্ভেলের ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’ সিনেমায় ড. স্টিফেন স্ট্রেঞ্জ চরিত্রে কিংবা ‘দ্য কারেন্ট ওয়ার’ মুভিতে টমাস আলভা এডিসনের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করা বেনেডিক্টের কোনো জবাব নেই।
১৯৭৬ সালের ১৯ জুলাই লন্ডনে জন্মগ্রহণ করা এই তারকার বয়স বর্তমানে ৪২ বছর। বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচকে বলা হয় এই প্রজন্মের সবচেয়ে মার্জিত, পরিণত এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষী অভিনেতা। ‘ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন’ এবং ‘দ্য টকস’ ম্যাগাজিন চলতি বছরের মার্চে তার কয়েকটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। ব্যক্তিজীবন, ক্যারিয়ার, অভ্যাসসহ বেনেডিক্টের জীবনের অনেক না জানা বিষয়ই উঠে এসেছে সেখানে। সেই সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য অনুবাদ করা হলো।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: আমি ঠিক ধরা-বাঁধা কোনো ছক কষে প্রশ্ন করতে পছন্দ করি না। যখন যেটা মনে পড়বে, তখন তা-ই জিজ্ঞেস করবো। শুরুটা করা যাক দার্জিলিংয়ের মনেস্ট্রি থেকে। ১৯ বছর বয়সে সেখান থেকে দীক্ষা নিয়েছিলেন আপনি। কেমন ছিল সেখানকার অভিজ্ঞতা?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: ওটা ছিল নির্বাসিত এক তিব্বতীয় সমাজ, দার্জিলিং সীমান্তের ঠিক পাশেই। ছোট একটা পাহাড়ি শহর। ওখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাঁচজন শিক্ষকের মধ্যে আমিও ছিলাম। অভিজ্ঞতা তো দুর্দান্ত ছিল, কিন্তু সত্যি বলতে পুরো সময়টা বেশ একা কেটেছে।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: কতদিন ছিলেন সেখানে?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: পাঁচ মাস ছিলাম। ছ'মাস ধরে নানা রকম অড জব (প্রচলিত ধারণায় সম্মানিত হিসেবে অস্বীকৃত কোনো চাকরি, যেমন- রেস্টুরেন্টের ওয়েটার বা রাস্তা ঝাড়ুদারের চাকরি) করে বিমান ভাড়া এবং কোর্সের জন্য টাকা জমিয়েছিলাম। এখানে প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য অর্থ দিতে হয় না, দিতে হয় অভিজ্ঞতা। আপনাকে সর্বক্ষণ ঘিরে রাখবে সাধু-সন্ন্যাসীরা এবং তাদের জীবনযাপন প্রণালী। ছোট একটা আশ্রম ছিল ওটা, একদম উপরের তলায় ছিল মন্দির। আমি থাকতাম নিচতলায়। ঠাণ্ডা স্যাঁতস্যাঁতে জায়গাটায় আমার সঙ্গী ছিল ঢাউস সাইজের একেকটা মাকড়সা।
তখন বোধহয় বর্ষাকাল সবে শেষ হচ্ছিলো, ঠিক মনে নেই, কিন্তু শীত পড়তো অনেক। ভূপৃষ্ঠ থেকে এতটাই উপরে ছিল বাড়িটা, জানালা খুললেই গুঁড়ো গুঁড়ো মেঘ এসে বরফকুচির মতো নাকে-মুখে আছড়ে পড়তো। ঘরের সব আসবাবপত্র ভিজিয়ে ফেলতো। প্রকৃতির এতটা কাছে বসবাস করা সত্যিই দারুণ একটা অনুভূতি। সন্ন্যাসীদের আত্মিক আর দার্শনিক জীবনের সাথে তাল মিলিয়ে প্রকৃতিও যেন এখানে শিক্ষার ডালি খুলে বসেছে।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: আপনার কাছে সুখ মানে কী?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: আমার কাছে সুখ মানে বেঁচে থাকা, যেকোনো পরিস্থিতিতে হাসি মুখে টিকে থাকা। সুখ যদি আপনাকে খুঁজে বের করতে হয়, তবে আপনি কখনোই সুখী নন।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: বাহ! নিগূঢ় এক উত্তর পাওয়া গেল।
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: কথাটা কিন্তু সত্যি। রংধনু আকাশেই থাকে, আমরা তাকে খুঁজতে খুঁজতে দিশেহারা হয়ে পড়ি। কিন্তু আমার মনে হয় যেকোনো বাস্তবতাকে ইতিবাচক রূপ দেয়ার ক্ষমতা আমাদের অন্তরেই লুকিয়ে আছে। পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক না কেন, মনকে কখনো হারতে দেয়া যাবে না।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মতো ধ্যান করেন আপনি। সেখান থেকেই কি এই শিক্ষা এসেছে?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: একদম। জীবনে আমরা সবাই কমবেশি ভুক্তভোগী। এর নামই তো জীবন। খুশি মনে কষ্টটুকু মেনে নিয়ে এগিয়ে চলার মধ্যে আছে অসীম আনন্দ।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: বৌদ্ধধর্মের প্রথম সত্যই হলো প্রতিটি প্রাণী দুঃখ-জরা ভোগ করে। আপনি কি এই বাণীর সাথে একমত?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: হ্যাঁ, সবকিছু ক্ষয়িষ্ণু নয়, কিন্তু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। নিরন্তর পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই আমরা এগিয়ে চলি। বিবেক-বুদ্ধি, অনুভূতি খাটিয়ে চলতে গেলে সহসাই দুঃখ পেতে হয়। অনেকেই মনে করেন গাড়ি দুর্ঘটনা, গুলিবিদ্ধ হওয়া, হাত-পা ভেঙে যাওয়া- এমন সহিংসতার নামই হয়তো দুঃখ। কিন্তু দুঃখ অনেক ছোট কিছুও হতে পারে। পায়ে সামান্য আঘাত লাগলে বা হাত একটু কেটে গেলে সারা শরীরে যে কষ্ট হয়, তার মধ্যেও রয়েছে দুঃখ। মনের দুঃখ তো আরও অনেক বিস্তৃত। না কাউকে বলা যায়, না কাউকে দেখানো যায়। কিন্তু জীবন তো এটাই।
এসব দুঃখ থেকে নিজেকে মুক্তি দিতে পারাই সবচেয়ে বড় সফলতা। ছোট ছোট অনেক বিপদ আমাদের একাত্ম হতে শেখায়। আজকে যিনি খুব ভালো কোনো অবস্থানে আছেন, কাল তিনি পথের ফকির বনে যেতে পারেন। দুঃখ যেমন আসে, তারপরেই আসে সুখ। জীবনটা খুব সহজ। একটু ধৈর্য ধরে জীবনকে তার মতো করে চলতে দেয়ার অনুশীলন করতে হবে। শুনতে সহজ মনে হলেও এই অনুশীলন প্রক্রিয়াটা কিছুটা জটিল। তবে জীবন নিয়ে হতাশ হয়ে থাকলে যতটা জটিলতার সৃষ্টি হয়, তার তুলনায় এটি কিছুই নয়।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: আপনি কীভাবে এই মেডিটেশন করেন?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: মেডিটেশন তো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত একটি থেরাপি। বছরের পর বছর ধরে মানুষ সাধনা করে একে আত্মস্থ করেছে। ক্যান্সার রোগী বা যেকোনো দুর্ঘটনার রোগী অথবা মানসিকভাবে অস্থিতিশীল কারো কথাই ধরুন, মনকে শান্ত করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় মেডিটেশন বা ধ্যান। যাবতীয় হতাশা থেকে আপনাকে দূরে রাখতে সহায়তা করবে এটি, আপনার মনকে কুচিন্তা থেকে মুক্ত করে শরীরকে রাখবে চাঙা।
মাদকের সাহায্য নিয়ে যারা জাগতিক দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে চায়, তারা যদি এই সোনার খনির সন্ধান একবার পায় তবে দ্বিতীয়বার আর কখনো মাদক ছুঁয়েও দেখবে না। বিটলসের মতো নামীদামী ব্যান্ডের সদস্যরা ধ্যান করে বলে এটা খুব ‘কুল’ কোনো জিনিস, তা কিন্তু নয়। এরচেয়েও বড় কথা হলো বৈজ্ঞানিকভাবেই ধ্যানের উপকারিতা প্রমাণ করিয়ে দেখিয়েছেন চিকিৎসকরা। এখন আর নিয়মিত ধ্যান করতে পারি না, একটা সময় এটা ছিল আমার প্রাত্যহিক রুটিন।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: হলিউডের অভিনেতা হিসেবে হাজারো ঝামেলার ভিড়ে মনকে শান্ত করতে এটি নিশ্চয়ই খুব কাজে দেয়।
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: ঝামেলা, হ্যাঁ, আসলেই কাজে দেয় এটা। ক্যারিয়ার শুরু করার আগে থেকেই এটি আমার সঙ্গী, এই বিষয়টি আমার খুব উপকারে এসেছে। জীবনে যখনই ভারসাম্য হারাতে শুরু করেছি, নতুন করে জীবন শুরু করার তাগিদ পেয়েছি, নিশ্চিন্তে নিজেকে মেডিটেশনের হাতে সঁপে দিয়েছি। যেখানে আছি মন-প্রাণ দিয়ে সেখানকার প্রতিটি জিনিস অনুভব করা, নিজের মধ্যে ধারণ করা একজন অভিনেতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। শুটিংয়ের ফাঁকেও তাই সময় পেলে একটু মেডিটেশন করে নেই। জিমের চেয়ে বরং এটিই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: আচ্ছা এবার একটু অর্থহীন প্রশ্ন করা যাক। ১৭ বার দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে ফিরেছেন। নিজেকে কি দক্ষ ড্রাইভার হিসেবে দাবী করবেন?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: (হেসে) আমার তো মনে হয় আমি ভালোই গাড়ি চালাই। লোকে যখন রাস্তায় নামে, কোন জন্মের ক্রোধ যে তাদের মাথায় চেপে বসে! নিজেকে স্মার্ট জাহির করতে গিয়েও অনেকে বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে। আমি আসলেই বেশ ভাগ্যবান।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: বিপদ দেখলে দৌড়ে পালান না বীরের মতো সামনে গিয়ে তার মোকাবিলা করেন?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: মাঝে মাঝে এমন আবেগী হয়ে যাই, হাঁটু কাঁপতে শুরু করে উত্তেজনায়। না ভেবেই উল্টোপাল্টা অনেক কিছু বলে বসি। দেখা যায়, বিপদের সময় আবেগ আমার বিচারবুদ্ধিকে ভুল দিকে পরিচালিত করে।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: আপনার কাজের কথায় আসি এবার। কখনো কোনো চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে এমন মনে হয়েছে যে এই শেষ, আমাকে দিয়ে আর হবে না বা এটা আমি করতে পারব না? বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন কোনো চরিত্র থেকে?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: অসংখ্যবার হয়েছে এমন। ভেঙে না পড়লে কখনো দৃঢ়ভাবে আবার শুরু করা যায় না। আমি এগুলোকে ব্যর্থতা ভাবি না, এটা আমার কাজের উদ্যম বাড়িয়ে দেয়। সব সময় যে ভালো কিছু হয় তেমনটাও কিন্তু না। মঞ্চে যখন প্রথম কাজ করতে যাই, দুর্দান্ত এক পরিচালকের নির্দেশনায় দারুণ একটি চরিত্র পেয়েছিলাম সেবার। কিন্তু কোনোভাবেই চরিত্রটা আলিঙ্গন করতে পারিনি। অনেক যুঝতে হয়েছিল সেবার।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: রিডিং গ্লাস ব্যবহার করেন?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: না, তবে চোখে কম দেখি। মুভি দেখতে গেলে বা কনসার্টে অবশ্যই চশমা পরতে হয়। নিজেকে কুল ড্যুড বা স্মার্ট গাই প্রমাণ করতে চশমা পরি না, দেখতে অসুবিধা হয় বলেই চশমার আশ্রয় নিতে হয়। আমি কতটা খ্যাত তা এই ঘটনাটা শুনলেই বুঝতে পারবেন, কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার করার জন্য একবার আধা দিন ঘুরেও কোনো চোখের ডাক্তার খুঁজে পাইনি!
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: (হেসে) সারা ঘর হেঁটে হেঁটে ডায়লগ মুখস্ত করার অভ্যাস আছে?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: ওহ, হ্যাঁ আছে!
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: হাসি বা কান্নার কোনো দৃশ্য আগে থেকে রিহার্সাল করতে হয়? আমরা কি ধরে নেব বেনেডিক্টের বাথরুম থেকে মাঝে মাঝে ‘হা হা হা’ করে অট্টহাসির শব্দ ভেসে আসে?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: বাথরুমে গিয়ে মাঝে মাঝে কান্নার অনুশীলন করতে হয়, আমি চেষ্টা করি না করতে। কিন্তু আমার বাসায় এমন কিছু বাচ্চাকাচ্চা আছে যারা বাবার চোখে পানি দেখে হতভম্ব হয়ে যাবে। বদ্ধ ঘরই তাই আমার বেশি পছন্দ। হাসি-কান্না দুটো একই রকম। চরিত্র আর গল্পের সাথে মিশে যেতে পারলে কণ্ঠ থেকে শুরু করে প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিই মনমতো করা যায়।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: মঞ্চে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছে আছে?
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: তা তো আছেই। কিন্তু নিকট ভবিষ্যতে এমন কোনো সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি না।
ইন্টারভিউ ম্যাগাজিন: আপনি কি লেখেন? কেন জানি মনে হয়, আপনি নীরবে-নিভৃতে লেখেন তবে কাউকে তা জানতে দেন না।
বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ: একদম ঠিক ধরেছেন। আমার ধারণা আমার লেখাগুলো এতটাই বিক্ষিপ্ত যে এসব নিয়ে কোনো উপন্যাস বা স্ক্রিপ্ট বানানো সম্ভব না। লিখতে লিখতে মাঝে মাঝে ভাবি, কেন লিখছি? কার জন্য লিখছি? তবুও মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে থাকা অবিন্যস্ত ভাবনাগুলোকে কাগজে-কলমে ঠাঁই দিতে পেরেও অদ্ভুত এক প্রশান্তি কাজ করে।
This is article is in Bangla language. It is a recent interview of Benedict Cumberbatch. Sources have been hyperlinked inside the article.
Feature Image: julietinparis.net