Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দেশ বিদেশের কয়েকটি জনপ্রিয় সার্কাস দলের ইতিকথা

সার্কাস মানে আনন্দ, সার্কাস মানে বিনোদন। ছেলে-বুড়ো সকলের কাছেই ভালোলাগার একটি নাম। এই সাকার্সের উৎপত্তি ১৭৭০ সালে। ইংল্যান্ডের ফিলিপ অ্যাশলেকে বলা হয়ে থাকে আধুনিক সার্কাসের জনক। ফিলিপ সেনাবহিনীতে ঘোড়ার প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করতেন। এই দায়িত্ব পালনের সময় ফিলিপ ঘোড়ার পিঠে চড়ে নানা রকম কসরত দেখাতেন। চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর ঘোড়ার পিঠের এই কসরত দেখিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নতুন নতুন কসরত দেখিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতেন। সকলের প্রশংসা পাওয়ার সাথে সাথে ভালো রোজগারও হতে থাকে।

ফিলিপ অ্যাশলেকে বলা হয়ে থাকে আধুনিক সার্কাসের জনক; Image Source: circopedia.org

ইউরোপের বিভিন্ন জায়গায় অ্যাশলে আর তার ঘোড়ার কেরামতির কথা ছড়িয়ে পড়তে থাকে। পরবর্তীকালে লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার ব্রিজের কাছে একটা অশ্বারোহণ শেখার স্কুল খোলেন অ্যাশলে। সেখানে সকালবেলা ছোট ছেলেমেয়েদের তিনি ঘোড়ায় চড়া শেখাতেন আর বিকেলে খেলা দেখাতেন। ঘোড়ায় চড়া আর খেলা দেখানোর জন্য তিনি মাঠের মাঝখানে গোলাকার একটা মঞ্চ তৈরি করেন। এই মঞ্চই পরবর্তী সময় সার্কাসের রিং নামে পরিচিতি পায়।

১৭৭০ সালের দিকে অ্যাশলে তার শো’তে বৈচিত্র্য আনার জন্য কয়েকটি ভিন্ন ধরনের খেলা যোগ করেন। ব্যায়াম, দড়ির উপর হেঁটে যাওয়ার খেলা, জাগলিং, নাচ-গান ইত্যাদি। এক খেলা শেষ হওয়ার পর আর একটি খেলা শুরু হওয়ার সময় যে প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়, সে সময়টাতে দর্শকরা যাতে বিরক্ত হয়ে না পড়ে, তার জন্য ফিলিপ পরিচিত এক থিয়েটার কোম্পানি থেকে একজন ক্লাউন ভাড়া করে আনেন। সেই ক্লাউনের কাজ ছিল বিরতির সময় দর্শকদের মাঝে নানান কৌতুকভঙ্গি করে দেখানো। অষ্টাদশ শতকে এভাবেই জন্ম নিলো আধুনিক সার্কাসের। 

ফিলিপ অ্যাশলের তৈরি গোলাকার স্টেজই পরবর্তীকালে সার্কাসের রিং নামে পরিচিতি পায়; Image Source: circopedia.org

বর্তমানে বিনোদনের নানা মাধ্যম থাকা সত্ত্বেও প্রায় দু’শো বছর আগে জন্ম নেয়া সার্কাসের জনপ্রিয়তা আজও কমেনি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চমক দেখানো খেলা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে এই সার্কাস আজও সারা বিশ্বের মানুষকে মাতিয়ে রেখেছে। বিশ্বজুড়ে এমনই কয়েকটি জনপ্রিয় সার্কাস দলের গল্প শুনবো আজ।

মস্কো স্টেট সার্কাস, রাশিয়া

ক্যাথারিন দ্য গ্রেটের শাসনামলে, সার্কাস রাশিয়ার এক অন্যতম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। একসময় দেশটিতে সার্কাসকে অপেরার সমতুল্য এক শিল্প মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হতো। চার্লস হিউজেস নামের এক ব্যক্তির হাত ধরে রাশিয়ায় সার্কাস জনপ্রিয়তা লাভ করে। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর তৎকালীন শাসকেরাও সার্কাসের জনপ্রিয়তা দেখে বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে একে স্বীকৃতি না দিয়ে পারেননি।

রাশিয়ার জনপ্রিয় মস্কো স্টেট সার্কাস; Image Source: info.gov.hk

১৯২৭ সালে সার্কাসকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়। এ সময় মস্কো শহরে গড়ে তোলা হয় সার্কাসের স্কুল। রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সার্কাস বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। এভাবেই রাশিয়ান সার্কাসের খ্যাতি বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরও রাশিয়ান সার্কাসের মর্যাদা বিন্দুমাত্র খাটো হয়নি। আজও রাশিয়ার  মস্কো শহরে ‘মস্কো স্টেট সার্কাস’ নামে রয়েছে এক বিশ্ববিখ্যাত সার্কাস দল।

জন্তুদের নিয়ে খেলা, স্প্রিং বোর্ড, প্যারালাল বার, ট্র্যাপিজের খেলা, চোখ ধাঁধানো সব ভেলকি, জাগলিং, শরীরের নানা কসরত আর জোকারদের ক্যারিকেচার, ব্যালে- কিছুই বাদ নেই সেখানে। এখানে একটি সার্কাস স্কুলও রয়েছে। দেশ-বিদেশের নানা জায়গায় গিয়ে শো করে বেড়ায় জনপ্রিয় এই সার্কাস দলটি।

সির্ক জু সোলাই, কানাডা

‘সার্কাস অফ দ্য সান’ বা সির্ক জু সোলাই সার্কাসের খ্যাতি জগৎজোড়া। ১৯৮৪ সালের ৭ জুলাই কানাডার খুবই পরিচিত এই সার্কাস কোম্পানিটি খোলেন দুই বন্ধু গাই লালিবার্টি এবং জিলি স্টে ক্রোইক্স। কোম্পানিটি খোলার আগে এই দুই বন্ধু কানাডার পথে পথে জাগলিংয়ের খেলা দেখিয়ে বেড়াতেন। বর্তমানে এই সংস্থায় বিশ্ব জুড়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি কর্মী রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৫০০ জন হলেন সার্কাসের শিল্পী। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের শো আয়োজন করে থাকে। এদের এক-একটি শো এক থেকে দেড় ঘণ্টার হয়ে থাকে।

সির্ক জু সোলাই সার্কাস গ্রুপের খ্যাতি জগৎজোড়া; Image Source: grandvalira.com

বিশটিরও বেশি বিভিন্ন ধরনের খেলা রয়েছে সির্কের ঝুলিতে। সার্কাস শোয়ে নাচ, গান, থিয়েট্রিক্যাল ব্যালে, জিমন্যাস্টিক, কল্পনার দুনিয়া, সব মিলিয়ে অদ্ভুত এক মায়াজাল তৈরী হয় তাদের প্রত্যেক শোতেই। রঙিন পোশাক আর মায়াবী আলোর ঝলকানিতে সার্কাসের রিং আর দর্শকদের মন ভরিয়ে তোলেন কলাকুশলীরা।

সোয়াম্প সার্কাস, ইংল্যান্ড

ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সার্কাস দলগুলোর মধ্যে অন্যতম সোয়াম্প সার্কাস। ১৯৮৬ সালে স্থানীয় শেফিল্ড অঞ্চলের কয়েকজন জিমন্যাস্ট এবং নৃত্যশিল্পী মিলে এই দলটি তৈরী হয়। এই সার্কাসের বিশেষত্ব হচ্ছে, তাদের প্রত্যেকটি শো-তে সমসাময়িক ভাবনা লেজার শোয়ের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। ভূত নিয়ে খেলা এই সার্কাসের আরও একটি জনপ্রিয় খেলা । ভূত বা ‘স্পিরিট’ ইংল্যান্ডের মানুষের কাছে খুব জনপ্রিয় একটা বিষয়।

আধো-অন্ধকার রিঙে ‘ভূতেরা’ নেমে আসে মানুষদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য। এই আত্মাদের সাহায্য করার জন্য আসে ড্রাকুলা, ভ্যাম্পায়ার। শুরু হয় ভয়ানক যুদ্ধ। লাইভ মিউজিক আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকে পুরো পরিবেশটা করে তোলা হয় রোমহর্ষক। শেষ পর্যন্ত মানুষের কাছে ভূতেদের পরাজয় ঘটে। পুরো গল্পটা এমনভাবে নির্মাণ করা হয় ছোট-বড় সবধরনের দর্শক ভয় এবং আনন্দ নিয়ে উপভোগ করতে থাকে এই ভূতুড়ে খেলা।

ইংল্যান্ডের বিখ্যাত সার্কাস দলগুলোর মধ্যে অন্যতম সোয়াম্প সার্কাস; Image Source: YouTube.com

এসব জনপ্রিয় খেলার বাইরেও অ্যাক্রোবেটিক জিমন্যাস্টিক, মাইম শো, ট্রাপিজ শো, কমেডি শো, জাগলিং এগুলো তো আছেই। এভাবে প্রায় বিশ বছরেরও অধিক সময় ধরে অত্যন্ত সুনামের সাথে দর্শকদের মনোরঞ্জন করে চলেছে সোয়াম্প সার্কাস।     

সার্কাস ভার্গাস, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গড়ে ওঠে এই সার্কাস কোম্পানি। এই দলের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখনও তারা বিশাল তাঁবুর মধ্যে সার্কাসের আসর বসায়। তাদের এই বিশেষ তাঁবুতে একসাথে ১৫০০ দর্শক সার্কাসের বিনোদন উপভোগ করতে পারেন।

সাবেকিয়ানাই এদের সার্কাসের মূল ভাবনা। ট্র্যাপিজের খেলা, মোটর বাইকের খেলা ‘ডেথ গ্লোব’, জিমন্যাস্টিকের ‘হুইল অফ ডেথ’, ৩০ ফুট উঁচু দড়ির উপর ভারসাম্যের খেলা, নাচ-গান দিয়ে সাজানো থিয়োট্রিক্যাল ব্যালে, ম্যাজিক, এরিয়াল স্ট্র্যাপ আর তার সাথে রয়েছে ক্লাউনদের মজার কাণ্ড-কারখানা। প্রতিটি শোতেই সাবেকি সব খেলার আইটেম রাখা হয়। প্রাচীনত্বের মাঝে নতুনত্বকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা তাদের সবকিছুতেই। প্রাচীন এসব খেলার মাঝে আধুনিকতার ছোঁয়া যে একেবারেই নেই, তাও বলা যাবে না।

১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় গড়ে ওঠা সার্কাস ভার্গাসের মূল ভাবনা সাবেকিয়ানা; Image Source: santaclaritamagazine.com

সার্কাস ভার্গাস নিজেদের ‍বিশেষ কোনো স্থায়ী জায়গায় শো করে না। এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ঘুরে ঘুরে এই দল খেলা পরিবেশন করে। এজন্য যেখানে শোয়ের ব্যবস্থা করা হয়, সেখানে তাঁবু খাটানোর জন্য দলে রয়েছে ৩০ জনের উপর পৃথক কর্মী। তাঁবু খাটানোর দায়িত্বটা তাদের হাতেই ন্যস্ত করা থাকে। সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে এত বড় তাঁবু খাটাতে। এই তাঁবু লাগানো আর খোলা এই দু’টো নিয়েই করা যেতে পারে সার্কাসের পুরো একটি শো।

ফ্লাইং ফ্রুট ফ্লাই সার্কাস, অস্ট্রেলিয়া

অস্ট্রেলিয়ার এই সার্কাস কোম্পানি ৮-১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের নিয়ে নির্মিত। ১৯৭৯ সালে আন্তর্জাতিক শিশুবর্ষে এই স্কুলের জন্ম। এ সময় আলবেরিতে, স্থানীয় কয়েকজন সার্কাস শিল্পী এবং ‘মুরে রিভার’ নামের এক পারফরমিং গ্রুপের সহায়তায় ছুটির দিনগুলোতে শিশুদের জন্য সার্কাস প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। তারা ছ’ সপ্তাহে ৮০ জন স্কুলপড়ুয়া শিশুদের প্রশিক্ষণ দেন। আর এই শিশুদের নিয়ে ‘মুরে রিভার’ পারফরমিং গ্রুপের আর্থিক সহায়তায় গড়ে তোলা হয় ফ্লাইং ফ্রুট ফ্লাই সার্কাস প্রতিষ্ঠান।

অস্ট্রেলিয়ার জনপ্রিয় ফ্লাইং ফ্রুট ফ্লাই সার্কাস; Image Source: YouTube.com

আসলে এটা যতটা খেলা দেখানোর সার্কাস দল, ঠিক ততটাই একটি সার্কাস স্কুলও বলা যায়। নিউ সাউথ ওয়েলস আর ভিক্টোরিয়ার মাঝামাঝি অলব্রিউডঙ্গা শহরের মারি নদীর ধারে এই স্কুল অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সরকারি শিক্ষা এবং শিশু বিকাশ দফতরও এই উদ্যোগের সাথে যুক্ত।

এদের মূল মন্ত্রই হচ্ছে “একজন সাধারণ শিশু করে দেখাতে পারে অসাধারণ কিছু”। অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩-৯ বছরের বাছাই করা ছাত্র-ছাত্রীরা ফ্লাইং ফ্রুট ফ্লাই সার্কাস স্কুলে ভর্তি হতে পারে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ছোটরা এখানে সার্কাসের ট্রেনিং নিতে আসে। 

শিশুদের অংশগ্রহণই এই সার্কাস দলের প্রধান আকর্ষণ; Image Source: littledayout.com.au

তিন ধাপে প্রশিক্ষণ নেয়ার পরে আট বছর বয়সী শিশুদেরকে সার্কাসের ময়দানে পারফর্ম করার অনুমতি মেলে। ছোটদের সার্কাস বলে কিছুতেই এদের অবহেলা করার উপায় নেই। কারণ, এক একজন শিশুর জিমন্যাস্টিক, জাগলিংয়ের খেলা বড়দেরও মাৎ করে দিতে পারে। তাই দেশের বিভিন্ন জায়গা তো বটেই, বিদেশেও এদের জনপ্রিয়তা প্রচুর। বিভিন্ন দেশ থেকে খেলা দেখানোর জন্য ফ্লাইং ফ্রুট ফ্লাই সার্কাসের কাছে আমন্ত্রণ আসে। প্রতি বছর বিশ্বের কোনো না কোনো প্রান্তে দলটি দর্শকদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের জনপ্রিয় সব আইটেম প্রদর্শন করে থাকে।

This article is a bengali article. This is story about some of the interesting and popular circus groups in the world. All the sources are hyperlinked into the article.

 Featured Image: smithsonianmag.com

Related Articles