Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একজন গ্লেন বেল এবং টাকো বেলের জন্মকথা

গ্লেন ডব্লিউ বেল জুনিয়র। নামটা শুনে কি চেনা চেনা মনে হল? হয়তো নামটা ঠিক কার তা মনে করতে পারছেন না। কিন্তু এই মানুষটির তৈরি খাবার দিয়ে প্রতিনিয়ত নিজের রসনা তৃপ্ত করছেন বাকি সবার মতো আপনিও। ভাবছেন কে এই মানুষটি? টাকো নামক যে খাবারটি আপনি খেতে ভালোবাসেন, সেই টাকো বেলের প্রতিষ্ঠাতা হলেন গ্লেন ডব্লিউ বেল জুনিয়র। আমেরিকানদের ফাস্ট ফুডের প্রতি আগ্রহ দেখে মেক্সিকানদের রসনাও নতুন কিছু খুঁজছিল সেই সময়। টাকো টিয়া, এল টাকোর পাশাপাশি ১৯৬২ সালে টাকো বেল তৈরি করে সেই চাহিদা পুরোপুরি মিটিয়েছিলেন মিস্টার গ্লেন। চলুন আজ এই অসাধারণ মানুষ এবং তার নির্মিত টাকো বেল সম্পর্কে জেনে আসি।

টাকো বেল; Source: Chicago Tribune

বাচ্চা থেকে বুড়ো, মেক্সিকান থেকে বাংলাদেশী- সবাই এখন যে খাবারটিকে একনামে চেনে সেটি হলো টাকো। অন্য দেশের কথা বাদ দিলেও, আমাদের দেশেই প্রায় প্রতিটি রেস্টুরেন্টে, রাস্তার পাশে, শপিং মলে খুঁজে পাওয়া যাবে টাকো বেলকে। তবে এই টাকোর শুরুটা কিন্তু আজকে নয়। অনেক অনেক আগে থেকেই নিজের উদ্ভাবনীকে নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন মিস্টার গ্লেন

১৯৬২ সালে টাকো বেল তার প্রথম রেস্টুরেন্ট খোলেন। এরপর ১৯৭০ সালে সেটাকে জনগণের কাছে পাকাপাকিভাবে পৌঁছে দেন। টাকো মূলত বেশ শক্ত একটি মোড়ক বা টাকো শেলের মধ্যে মাংস, সব্জি, সালসা এবং অন্যান্য উপাদানের মিশ্রণে তৈরি করা একটি খাবার। পুরো পৃথিবীর হিসাব না থাকলেও প্রতি বছর শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই ৪.৫ বিলিয়ন টাকো খায় আমেরিকানরা। মেক্সিকান টাকোর মূল খাবারে ছিল মাছের সমাহারও। সেইসাথে ছিল শূকরের মাংস এবং আনারস। তবে বর্তমানে টাকো নিজস্ব রূপ পেয়েছে ভিন্ন ভিন্ন দেশে। মিশে গিয়েছে প্রত্যেকটি দেশের মানুষের রসনার সাথে। প্রশ্ন হলো, টাকো শব্দটি কোথা থেকে এলো?

মিস্টার গ্লেন ডব্লিউ বেল জুনিয়র; Source: Business Wire

টাকোর নামের উৎপত্তি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। ২০০৯ সালে ‘টাকো’ নামক বইটিতে নিউ মেক্সিকোর সান্তা ফে-তে অবস্থিত কয়োতে ক্যাফের শেফ ও প্রতিষ্ঠাতা মার্ক মিলার লেখেন যে, টাকো নামটি এসেছে নাওটো শব্দ ac  থেকে। অন্যদিকে এই বিষয় নিয়ে প্রায় ২০ বছর ধরে গবেষণা করে ইতিহাসের অধ্যাপক জেফরি এল. পিলচার জানান যে, টাকোকে মূলত হাতে মোড়ানো কাগজ এবং বিস্ফোরক গানপাউডারের নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে। টাকো শব্দটি প্রথম ব্যবহার করার উদাহরণ হিসেবে তিনি দেখান ‘টাকো দ্য মাইনরস’কে।

১৯ শতকে এই নাম প্রথম ব্যবহার করা হয়। আর দ্রব্যটি ছিল খনিতে পাথর ভাঙ্গার জন্য ব্যবহৃত বিস্ফোরক। তবে কেবল নাম নয়, টাকো নামক খাবারটিতে মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাব আছে বলে মনে করেন অনেকে। কেবল টাকো নয়, মেক্সিকোর অনেক খাবারেই মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাব আছে। এর কারণ মূলত, এই অঞ্চলে বহিরাগতদের প্রবেশ। কেবল টাকো নয়, মেক্সিকোর সাব স্যান্ডউইচের ক্ষেত্রেও মধ্যপ্রাচ্যের ছায়া দেখতে পাওয়া যায়। এতে অন্য দেশের রসনার প্রভাব থাকলেও টাকোকে সম্পূর্ণ নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়েছিলেন মিস্টার গ্লেন। নিজের তৈরি এই খাবারটি নিয়ে লেখেন তিনি- “আমরা একটি পুরো জাতির খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করে দিয়েছি।” ‘টাকো টাইটাইন: দ্য গ্লেন বেল স্টোরি’ বইটিতে এ কথা বলেন তিনি।

গ্লেন বেলের বার্গারের দোকান; Source: Intelligent Fanatics

শুরু থেকেই টাকো নিয়ে আশাবাদী ছিলেন মিস্টার গ্লেন। তবে টাকো বেল তৈরির চিন্তা তার মাথায় আসে যখন খুব সহজ কোনো খাবারের চাহিদা বাড়তে থাকে। সেটা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক পরবর্তী সময়। আমেরিকান সৈনিকরা খুব সস্তা এবং সহজেই তৈরি করা যায় এমন কোনো খাবার খুঁজছিলো। মিস্টার গ্লেন তখন এই চাহিদা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। নতুন কিছু চিন্তা করতে গিয়েই তার মাথায় আসে টাকো বেলের কথা।

শুরু হয় টাকোর যাত্রা। মিস্টার গ্লেনের কপাল খুলে যায়। এতদিন আশেপাশে থাকা খাবারটিকে নিয়ে কাজ করছিলেন তিনি। এবার সেটা রূপ নেয় টাকো বেলের আর ছড়িয়ে যায় পুরো পৃথিবীতে। পরবর্তীতে টাকোকে দেশের বিভিন্ন স্থানে নানারকম রসনামাফিক তৈরি করেন তিনি। কেবল টাকো নয়, এর সাথে বারিটো, চিলি বার্গার, ফাজিতা ইত্যাদি খাবারগুলোকেও পৌঁছে দিতে থাকেন তিনি সবখানে। সেই সময় টাকো ছিল একেবারে ছিমছাম একটি খাবার যেটি কিনা খুব সহজেই দ্রুত তৈরি করে ফেলা যায়। আর এর দাম ছিল মাত্র ১৯ সেন্ট।

টাকো বেল (দোকান); Source: Odyssey

খাবার নিয়ে সবসময়েই আগ্রহ ছিল মিস্টার গ্লেনের। ১৯২৩ সালে ৩ সেপ্টেম্বর ক্যালিফের লিনউডে জন্ম নেন তিনি। জন্ম হয়েছিল নির্মাণের কাজে জড়িত বাবার ঘরে। তবে মাত্র ৫ বছর বয়স থেকেই মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে পনির বিক্রির কাজ শুরু করেন তিনি। এর কিছুদিন পর নানীর কাছে চলে যান তিনি আর সেখানে খামারে আপেল, ডিম, ফুল ইত্যাদি উৎপাদনের কাজে জড়িত থাকেন। হাই স্কুলে থাকাকালীন ওয়াশিংটনে চলে যান মিস্টার গ্লেন আর সেখানে বেকারিতে কাজ নেন। কীভাবে পাই বানাতে হয় তা শেখেন।

জীবনে খারাপ সময় এসেছে অনেক। তবে সবসময় খাবার তৈরি করতে, নতুন কিছু নিয়ে ভাবতে ভালোবেসেছেন তিনি। যুদ্ধের সময়েও তিনি কাজ করেন সবাইকে খাবার পরিবেশন করে। ১৯৪৮ সালে হ্যামবার্গার আর হট ডগ বিক্রির জন্য বেল’স হ্যামবার্গার এন্ড হট ডগ তৈরি করেন তিনি। খুব বেশি ভালো না করলেও বেশ চলে যাচ্ছিল তার দোকান। সেখান থেকেই নতুন আরেকটি দোকান আর টাকো তৈরি চিন্তা আসে তার মাথায়। বদলে যায় মিস্টার গ্লেনের পুরো জীবন। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে নিজের এই উদ্ভাবনীকে আরো ভিন্ন মাত্রা দেন তিনি। তবে এর আগে ম্যাক ও ডিক ম্যাকডোনাল্ডকে হারানোর জন্য টাকো বানান তিনি। এল টাকো ও টাকো টিয়া আসে এভাবেই। আর এরপর টাকো বেল কী করে আসলো সেটা তো আগেই বলেছি।

টাকো বেল ভিন্ন ভিন্ন স্থানের রসনা অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়েছে বর্তমানে; Source: Cambio

১৯৬৪ সালে প্রথম ৮০টি ফ্র্যাঞ্চাইজি খোলার কথা ভাবেন মিস্টার গ্লেন। আর এ জন্য অনেক বেশি প্রচারণা চালাতে হয় তাকে। কী দিয়ে টাকো তৈরি করা হচ্ছে, কীভাবে তৈরি করা হচ্ছে- এর সবকিছু। ১৯৬৯ সালে প্রচন্ড সাফল্য পাওয়ার পর শেয়ার বিক্রি করা শুরু করেন মিস্টার গ্লেন নিজের টাকো বেলের। ১৯৭৮ সালে পেপসিকো টাকো বেলকে ১২৫ মিলিয়ন ডলারের বিনিময়ে কিনে নেয়। পরবর্তীতে এটি ট্রিকন গ্লোবাল রেস্টুরেন্ট নামে পরিচিত হয়। ২০০২ সালে এই রেস্টুরেন্ট নিজেদের নাম আবার বদলে দিয়ে পরিচিত হয় ইয়াম নামে। কিন্তু প্রশ্ন উঠে আসে মিস্টার গ্লেনের কাছে। কেন এভাবে নিজের উদ্ভাবনীকে বিক্রি করে দিলেন তিনি?

নিজের আত্মজীবনীতে এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মিস্টার গ্লেন। তিনি জানান যে, তিনি একজন উদ্যোক্তা মাত্র, কোনো প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দক্ষ মানুষ নন। তাই তিনি টাকো বেলের জন্ম দিয়েছেন, খাবারটিকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য এবং এর বিস্তৃতির কথা ভেবে দায়িত্ব অন্য কারো হাতে দিয়েছেন এবং শেষপর্যন্ত সঠিক সময়ে ছেড়ে দিয়েছেন পুরো ব্যাপারটিকে। এমনটা না করলে হয়তো কখনোই টাকো এমন পরিচিত হতে পারতো না যতটা না আজ হয়েছে। অন্তত মিস্টার গ্লেন তা-ই মনে করতেন।

শেষ জীবনে ক্যালিফের ভ্যালি সেন্টারের কাছে জমি কেনেন তিনি। সেখানে বেল’স গার্ডেন তৈরি করেন তিনি। খামারে নিজেই শাক-সবজি উৎপাদন করতেন মিস্টার গ্লেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেখানে ঘুরতে যেতে পারতো। দেখতে পারতো কীভাবে শস্য উৎপাদিত হয়। ২০০৩ সালে বন্ধ হয়ে যায় খামারটি। অনেকদিন ধরেই পারকিনসন্স ডিজিজে ভুগছিলেন তিনি। অবশেষে ৮৬ বছর বয়সে ২০১০ সালের ১৬ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন টাকোর এই উদ্ভাবক।

ফিচার ইমেজ: Cambio

Related Articles