Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ভারত জুড়ে ফুচকার বাহারি যত নাম

ফুচকা খেতে কে না ভালবাসে বলুন! মুখের সামনে এক প্লেট ফুচকা আর তার সাথে তেঁতুলের টক-মিষ্টি জিভে পানি এনে দিতে যথেষ্ট। বাংলাদেশে মোটামুটি তেঁতুল পানি সহযোগে ফুচকা আর দই ফুচকাই জনপ্রিয়তার আসনে রয়েছে। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই ফুচকা অঞ্চলভেদে হয়ে যায় ভিন্ন। নামে পরিবর্তন যেমন আসে, তেমনি এর  তৈরিতে, পরিবেশনেও বৈচিত্র্য পরিলক্ষিত হয়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের এই ফুচকার বাহারি নাম এবং সেসব অঞ্চলে ফুচকার পরিবেশনগত পার্থক্য নিয়ে আজ জানানো হবে।

গোল গাপ্পে, হরিয়ানা

হরিয়ানার গোল গাপ্পে; Image Source: eattreat.in

ভারতের উত্তরে হরিয়ানা রাজ্যে ফুচকা ‘গোল গাপ্পে‘ হিসেবে পরিচিত। হরিয়ানার বিভিন্ন শহরে এর জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। শহরের প্রতিটি ফুটপাত ধরে এগিয়ে চললেই চোখে পড়বে গোল গাপ্পের বাহারি নানা স্টল। এই অঞ্চলে যে গোল গাপ্পে তৈরি হয়, তা কিন্তু মোটেই গোলাকার নয়, বরঞ্চ একটু লম্বাটে ধরনের। তাতে দেয়া হয় আলু, মটর আর সাথে মিষ্টি চাটনি, আবার কোথাও এই মিষ্টি চাটনি টক জলে মিশে মাখামাখি হয়ে থাকে। এই টক-মিষ্টি পানিতে থাকে বিশেষ ধরনের মশলা এবং হালকা পুদিনার সমাহার।

পকোড়ি, গুজরাট

গুজরাটের পকোড়ি; Image Source: recipes.timesofindia.com

ভারতের গুজরাট রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে ফুচকাকে ‘পকোড়ি’ হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। পকোড়ি অনেকটা ফুচকার মতোই পরিবশেন করা হয় এবং স্বাদেও প্রায় একই রকম। তবে খাবারে সামান্য বৈচিত্র্য আনতে পকোড়িতে দেওয়া হয় ঝুরি ভাজা। আবার অনেকে এর মধ্যে পেঁয়াজকুচিও দিয়ে থাকেন। তবে এখানে পকোড়ির সাথে মিষ্টি চাটনি দেয়ার পরিবর্তে পুদিনা ও কাঁচা মরিচের কুচি তেঁতুলের টক-ঝাল পানিতে মিশিয়ে পরিবেশন করা হয়।

ফুলকি, উত্তর প্রদেশ

উত্তর প্রদেশের বাহারি ফুলকি; Image Source: allrefer.com

গুজরাটসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় রুটিকে অনেকে চাপাতি বা ফুলকা বলে থাকলেও মূলত উত্তর প্রদেশের অনেক স্থানেই ফুচকাকে ‘ফুলকি’ হিসেবে ডাকা হয়ে থাকে। আর রমজান মাসে উত্তর প্রদেশের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোতে বিশেষভাবে তৈরি ‘দহি ফুলকি’ তৈরি করা হয়ে থাকে, যা কিনতে ক্রেতাদের বিশাল লাইন পড়ে যায়। মটরের তৈরি দই বড়া দিয়ে বানানো হয় এই বিশেষ দহি ফুলকি।

পানি পুরি, মহারাষ্ট্র

ভারতে ফুচকার সবচেয়ে প্রচলিত নাম ‘পানি পুরি’। মহারাষ্ট্রে এটি বেশ জনপ্রিয়। তবে শুধু মহারাষ্ট্রেই নয়, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, এমনকি ভারতের অনেক অঞ্চলে পানি পুরির জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বি। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে এর নাম একই হলেও রন্ধন উপকরণ, পরিবেশন ও স্বাদে বেশ পার্থক্য দেখা যায়।

মহারাষ্ট্রের জনপ্রিয় পানি পুরি; Image Source: recipes.timesofindia.com

 মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে পানি পুরিতে থাকে ঝাল ঝাল করে মটরের তৈরি রাগড়া এবং তেঁতুলের মিষ্টি চাটনিতে তা ডোবানো থাকে। কিন্তু মধ্য প্রদেশের কিছু স্থানে তৈরি পানি পুরিতে থাকে আলু সেদ্ধ ঝাল করে মাখানো এবং তা মিষ্টি চাটনি সহযোগে পরিবেশন করা হয়। আবার গুজরাটের কিছু কিছু স্থানে মিষ্টি চাটনি তৈরিতে ব্যবহৃত হয় খেজুর, বোঁদে দেয়া মিষ্টি এবং তাতে ডোবানো পানি পুরিতে থাকে টুকরো করে কাটা আলু সেদ্ধ এবং সিদ্ধ মুগ ডালের মিশ্রণ। কর্ণাটকের পানি পুরিতে পেঁয়াজ কুচিও যুক্ত করা হয়।

ফুচকা, বাংলা ও আসাম

বাংলাদেশের মতোই ভারতের আসাম ও বাংলার মানুষের পছন্দের এক খাবার ফুচকা; Image Source: recipes.timesofindia.com

ভারতের পশ্চিম বাংলা ও আসামে বাংলাদেশের মতোই ফুচকাই এখানকার পরিচিত এক নাম। এছাড়া বিহার, ঝাড়খণ্ডেও এই ফুচকা বেশ জনপ্রিয়। এসব অঞ্চলের ফুচকা তৈরির উপকরণ, পরিবেশন আর স্বাদ পানি পুরির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। এখানাকার ফুচকায় আলু মাখা ও সেদ্ধ ছোলারে মিশ্রণ দেয়া হয় এবং তা বেশ ঝাল করে তৈরি করা হয়। আর সেই ফুচকা মিষ্টি চাটনিতে নয়, তেঁতুলের টক জলে ডুবিয়ে পরিবেশন করা হয়। এই ফুচকা পানি পুরির থেকে আকারে কিছুটা বড় হয়ে থাকে। আর কড়া করে ভাজার কারণে রঙও বেশ লালচে হয়।

টিক্কি, হায়দ্রাবাদ

হায়দ্রাবাদের ফুচকার এক বিশেষ পদ টিক্কি; Image Source: recipes.timesofindia.com

হায়দ্রাবাদ এবং মধ্য প্রদেশের বেশ কিছু অঞ্চলে ফুচকার আরেক নাম ‘টিক্কি’। এই টিক্কি তৈরির উপকরণ, পরিবেশন ও স্বাদ অনেকটা পানি পুরির মতোই। এখানে টিক্কিতে সেদ্ধ মটর ও আলুর মিশ্রণ দেয়া হয়, আর তা তেঁতুলের টক জলে ডোবানো থাকে। তবে ক্রেতার চাহিদামতো টক আর ঝালের তারতম্য করা হয়। 

দহি পুরি, দিল্লি

দিল্লিতে ফুচকার এক জনপ্রিয় সংস্করণ দহি পুরি; Image Source: eattreat.in

দিল্লিতে ফুচকার এক জনপ্রিয় সংস্করণ ‘দহি পুরি’। দিল্লি ছাড়া মুম্বাইয়ের কিছু অঞ্চলে এই দহি পুরি বেশ জনপ্রিয়। গোল গাপ্পের মতো এখানে পুরিতে সিদ্ধ আলু ও মটরের ঝাল মিশ্রণ তৈরি করা হয়। গোল গাপ্পে যেমন টক-মিষ্টি চাটনি সমেত পরিবেশন করা হয়, এখানে তার পরিবর্তে দইয়ের তৈরি মিষ্টি চাটনি সহযোগে এই পুরি পরিবেশন করা হয়।

সেভপুরি, মধ্য প্রদেশ

মধ্য প্রদেশসহ মুম্বাই, পুনের আকর্ষণীয় এক পদ সেভপুরি; Image Source: eattreat.in

সেভ বা ভুজিয়া, বাংলাদেশে যা শুধু চিকন চানাচুর ভাজা হিসেবে পরিচিত। এই সেভ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বেশ পরিচিত এক জলখাবার। আর মধ্য প্রদেশসহ মুম্বাই, পুনের অনেক স্থানেই এই সেভ সহযোগে তৈরি ফুচকা ‘সেভপুরি’ হিসেবে পরিচিত। মূলত মুম্বাইয়ে এটির উৎপত্তি হলেও আজ অনেক জায়গায় এই সেভপুরি এক জনপ্রিয় খাবার হিসেবে তার জায়গা করে নিয়েছে।

এই সেভপুরিতে পেঁয়াজ কুচি আর আলুর সাথে নানা মশলা সহযোগে এক মিশ্রণ তৈরি করা হয়। এর সাথে কাঁচা মরিচের কুচি, মিহি করে কাটা রসুন তেতুঁলের জলে মিশিয়ে তার ওপর ছড়িয়ে দেয়া হয় সেভ। এই চাটনির সাথে সেভপুরি পরিবেশন করা হয়।

গুপ চুপ, উড়িষ্যা

উড়িষ্যায় গুপ চুপ; Image Source: recipes.timesofindia.com

উড়িষ্যায় ফুচকা ‘গুপ চুপ’ নামে অধিক পরিচিত। উড়িষ্যা ছাড়াও দক্ষিণ, ছত্তিসগড়, তেলেঙ্গানা এবং হায়দ্রাবাদের বেশ কিছু অঞ্চলে ফুচকাকে এই মজার নামে ডাকা হয়ে থাকে। তবে ফুচকার মতো এখানে আলু ব্যবহার করা হয় না, তার পরিবর্তে গুপ চুপে থাকে ছোলা বা মটর সেদ্ধ আর তার মাঝে শোভা পায় পেঁয়াজ কুচি। তবে এই পেঁয়াজ কুচি সাধারণত ক্রেতার অনুরোধে পরিবেশন করা হয়। তেঁতুলের টক-ঝাল-মিষ্টি পানি সহযোগে গুপ চুপ পরিবেশিত হয়। 

পাতাশি বা পানি কে বাতাশে, রাজস্থান

রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গার জনপ্রিয় এক খাবার পানি কে বাতাশে; Image Source: recipes.timesofindia.com

রাজস্থানের বিভিন্ন জায়গায় পাতাশির স্বাদ অনেকটা গোল গাপ্পের মতোই। তবে পাতাশিতে আলু এবং মটরের মিশ্রণ দেয়া হয় এবং পাতাশির জলে তেঁতুলের পরিবর্তে শুকনো আম ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে হরিয়ানার কিছু কিছু স্থানে আবার এই ফুচকাকে ‘পানি কে পাতাশি’, আবার উত্তর প্রদেশের বেশ কিছু স্থানে একে ‘পানি কে বাতাশে’ হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। আলু, ছোলা, মটরের মিশ্রণ ভরা পানি কে বাতাশে ডোবানো হয় বেশ মশলাদার জলে। লক্ষ্ণৌতে আবার পানি কে বাতাশে পাঁচটি আলাদা স্বাদের জলে ডোবানো হয়, যাকে ‘পাঁচ সোয়াদ কে বাতাশে’ বলে ডাকা হয়। লক্ষ্ণৌর হজরতগঞ্জে এই বাতাশে বেশ বিখ্যাত।

ফিচার ইমেজ- salebhai.com

Related Articles