Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

একনায়কদের পছন্দের যত খাবার

পোলাও, বিরিয়ানি, কোর্মা, গরুর মাংস ভুনা, মুরগির রোস্ট, ইলিশ মাছ, আলু ভর্তা, টাকি মাছ ভর্তা, বেগুন ভর্তা, আম, কাঁঠাল, কমলা, তরমুজ ইত্যাদি নানা রান্না করা খাবার ও ফলমূল রয়েছে আমাদের পছন্দের তালিকায়। ছুটির দিনগুলোতে তাই প্রায় সময়ই মায়ের কাছে আমরা আবদার করে বসি প্রথমে উল্লেখ করা খাবারগুলোর কোনোটা রান্না করে দিতে। আবার যখন যে ফলের মৌসুম, তখন সেই ফল নিয়ে আসতে বারবার বলে দেই বাবা-মাকে। এভাবেই পছন্দের খাবারগুলো খেয়ে পেটের পাশাপাশি আমাদের মনও পরিতৃপ্তি লাভ করে।

একনায়করাই বা বাদ যাবেন কেন? তাদের বিরুদ্ধে জনগণের যত অভিযোগই থাকুক না কেন, দিন শেষে তারাও তো মানুষ, তাদেরও তো খেয়েই বাঁচতে হবে। তাই খাবারের ব্যাপারে ভালো লাগা-মন্দ লাগের মতো বিষয়টি ছিলো তাদের মাঝেও। অ্যাডলফ হিটলার পছন্দ করতেন নিরামিষ, কিম জং উন ভালোবাসতেন হাঙরের ডানার স্যুপ, ওদিকে ইদি আমিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো নরমাংস ভক্ষণের!

বিশ্বের বিভিন্ন একনায়কের পছন্দের বিভিন্ন খাবারের কথা দিয়েই সাজানো হয়েছে আজকের এ লেখাটি।

অ্যাডলফ হিটলার

জার্মান রাইখের শাসক অ্যাডলফ হিটলার ১৯৩৪-১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির নেতার আসনে ছিলেন। ১৯৩৯ সালে পোল্যান্ডে আক্রমণের মধ্য দিয়ে ইউরোপে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সূচনা এবং পরবর্তীতে চালানো হলোকাস্টের পেছনেও মূল কারিগর হিসেবে ধরা হয় তাকেই।

ইতিহাস হিটলারকে একজন নিরামিষাশী হিসেবে মনে রাখলেও তিনি যে এটা একেবারে পুরোপুরি মেনে চলতেন, সে কথা বলার উপায় নেই। কারণ গত শতকের ত্রিশের দশকে বেশ কয়েকবার তাকে কবুতরের সাথে অন্য প্রাণীর জিহবা, কলিজা এবং পেস্তা বাদাম একসাথে মিশিয়ে একটি খাবার খেতে দেখা গেছে। এমনকি একবার তিনি এমনটাও নাকি বলেছিলেন যে, “কলিজার পুডিংয়ের চেয়ে মজা আর কিছুই হতে পারে না!”

হাস্যরত হিটলার

হিটলারের নিরামিষাশী বনে যাবার পেছনে তার স্বাস্থ্যগত কারণকেই দায়ী করে থাকেন অধিকাংশ ইতিহাসবিদ। ক্রমাগত পেট ফাঁপার সমস্যা আর কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতেই তিনি নাকি এ খাবার বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে তার খাদ্য তালিকায় ছিলো কেবল আলু ভর্তা ও তরকারি সিদ্ধ করে বানানো স্যুপ।

হিটলার সব সময় ভয়ে থাকতেন এই ভেবে যে, কেউ বুঝি তার খাদ্যে বিষ প্রয়োগ করেছে। এজন্য তিনি ১৫ জন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিয়েছিলেন যাদের কাজ ছিলো তিনি খাওয়ার আগে তার খাবারের কিছুটা অংশ টেস্ট করা। যদি ৪৫ মিনিট পরেও তাদের কিছু না হতো, কেবলমাত্র তখনই হিটলার খেতে বসতেন!

কিম জং-ইল

১৯৯৪ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো উত্তর কোরিয়ার এ শাসকের শাসনামল। ভোজনবিলাসী এ নেতার বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রতি মোহ এবং তা মেটানোর উপায় জানলে বিস্মিত না হয়ে থাকা যায় না।

কিম জং-ইলের ব্যক্তিগত লাইব্রেরীতে ছিলো রান্নার বইয়ের সমাহার। বাইরের দেশগুলোতে দায়িত্ব পালনরত উত্তর কোরীয় প্রতিনিধিবর্গকে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন সেখানকার বিশেষ কোনো খাবার থাকলে তার নমুনা পাঠাতে। এছাড়া ব্যক্তিগত বাবুর্চিকে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠাতেন নতুন কোনো খাবারের সন্ধানে।

কিম জং-ইল

কিমের মদের সংগ্রহশালাটাও ছিলো বেশ সমৃদ্ধ। তাতে প্রায় ১০,০০০ বোতল উন্নতমানের ওয়াইন ছিলো। প্রতি বছর প্রায় ৫,০০,০০০ পাউন্ডের বেশি খরচ হতো তার জন্য সবচেয়ে ভালো মানের Cognac ব্র্যান্ডি কিনতে।

এছাড়াও হাঙ্গরের ডানা এবং কুকুরের মাংসের স্যুপ ছিলো কিমের খুব পছন্দের খাবার। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, এ খাবারগুলো তার পুরুষত্ব বৃদ্ধি করতে এবং পাশাপাশি শরীরকে রোগমুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

পোল পট

পোল পট

কম্বোডিয়ার একনায়ক পোল পটের পছন্দের খাবারের তালিকার দিকে তাকালে অবশ্য অবাক না হয়ে উপায় নেই। হরিণের মাংস, বন্য শূকর, এমনকি সাপও খেতেন তিনি। এরপরই টেবিলে চলে আসতো তাজা ফলমূল, যেগুলো কিনা ব্র্যান্ডি আর চাইনিজ ওয়াইন দিয়ে ধোয়া হতো!

পোল পটের সাবেক এক রাঁধুনি তার কোবরা খাওয়ার চমৎকার এক বর্ণনা দিয়েছেন। এজন্য প্রথমে কোবরাটিকে মেরে এর মাথা কেটে ফেলা হতো। এরপর এটাকে এমনভাবে গাছে ঝুলিয়ে রাখা হতো যেন কোনো বাচ্চাকাচ্চা সেটির নাগাল না পায়। এভাবে রেখে সাপটিকে বিষমুক্ত করা হতো।

সাপটির রক্ত আবার আরেকটি কাপে সংগ্রহ করে পান করা হতো। সাপটিকে এরপর কেটে টুকরো টুকরো করে বাদাম সহ ভর্তা করা হতো। এরপর লেবু পাতা, লতা জাতীয় গাছের পাতা এবং আদা সহ সেই সাপের ভর্তাকে পানিতে সিদ্ধ করা হতো যতক্ষণ না সেটা টগবগ করে ফুটতে থাকে!

ইদি আমিন

উগান্ডার ৩য় প্রেসিডেন্ট ইদি আমিন ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৭১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত। তার ব্যাপারে একটা কথা শোনা যায় যে, ক্ষমতা দখলের পর তিনি নাকি সামরিক সকল প্রতিপক্ষকে গ্রেফতার করান এবং শিরশ্ছেদের আদেশ দেন। এরপর তাদের সেই কাটা মুন্ডুগুলোর উপর বসেই নাকি তিনি তাদের মুখের মাংস খেয়েছিলেন। আমিনের কাকওয়া গোত্রের বিশ্বাস মতে, যদি শত্রুর মাংস খাওয়া যায়, তাহলে তার প্রেতাত্মা নাকি আর কখনোই তার হত্যাকারীকে খুঁজতে আসতে পারে না।

ইদি আমিন

অবশ্য এ কথাগুলোর সত্যাসত্য যাচাই করার উপায় নেই। একবার তাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেছিলেন, “আমি মানুষের মাংস পছন্দ করি না। ওগুলো আমার কাছে বেশি নোনতা লাগে!

আমিনের কমলাপ্রীতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। ‘প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা’ বলে মনে করা হতো বিধায় দিনে তিনি ৪০টির মতো কমলা খেতেন একাই। এছাড়া ছাগলের রোস্ট, কাসাভা ও মিলেটও ছিলো তার পছন্দের তালিকায়।

বেনিতো মুসোলিনি

ইতালির ২৭তম প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেনিতো আমিলকেয়ার আন্দ্রেয়া মুসোলিনি। ১৯২২ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ২১ বছর ধরে বিস্তৃত ছিলো তার শাসনামল।

বেনিতো মুসোলিনি

মুসোলিনির প্রিয় খাবারটি ছিলো অতি সাধারণ। তেল ও লেবু দিয়ে মাখানো কুচি কুচি করে কাটা কাচা রসুনই ছিলো তার সবচেয়ে পছন্দের খাবার। আর বসলে একেবারে এক গামলা সাবাড় করে তবেই উঠতেন তিনি। তার স্ত্রী রাচেল জানিয়েছিলেন যে, যেদিন মুসোলিনি এই খাবারটি খেতেন, সেদিন তিনি তার ধারেকাছেও যেতেন না। রাতের বেলা স্বামীর সঙ্গ এড়াতে ঘুমোতেন বাচ্চাদের সাথেই!

খাবারদাবারের পেছনে বেশি সময় দেয়া খুব একটা পছন্দ করতেন না মুসোলিনি। তিনি মনে করতেন যে, প্রতি বেলার খাবার খেতে বড়জোর ৩ মিনিট সময় লাগানো উচিত এবং খাওয়াদাওয়ার পেছনে দিনে ১০ মিনিটের বেশি ব্যয় করা কোনোভাবেই উচিত না।

মু’আম্মার গাদ্দাফি

মু’আম্মার গাদ্দাফি

লিবিয়ার একনায়ক মু’আম্মার গাদ্দাফির পছন্দের পানীয় ছিলো উষ্ট্রীর দুধ। তার শাসনামলের শুরুর দিকে যদিও লিবিয়ায় ইতালীয় খাবার নিষিদ্ধ করা হয়েছিলো, তবে গাদ্দাফির পছন্দের তালিকাতে সবসময়ই সেগুলো ছিলো। এছাড়া উটের মাংস দিয়ে তৈরি লিবিয়ান একটি রেসিপিও ছিলো তার বেশ পছন্দের।

নিকোলাই চাউসেস্কু

নিকোলাই চাউসেস্কু

রোমানিয়ান একনায়ক নিকোলাই চাউসেস্কুর পছন্দের খাবার ছিলো দেশী ঘরানার। সেই ছোটবেলায় খাওয়া একটি খাবারের স্বাদ তিনি কোনোদিনই ভুলতে পারেন নি। ঠোট, পা ইত্যাদি অঙ্গসহ আস্ত মুরগিকে পানিতে সিদ্ধ করে বানানো হতো সেই খাবারটি। এছাড়া সবজি দিয়ে তৈরি এক ধরনের স্যুপও ছিলো তার বেশ প্রিয়।

আন্তোনিও সালাজার

আন্তোনিও সালাজার

পর্তুগিজ শাসক আন্তোনিও ডি অলিভিয়েরা সালাজার ১৯৩২-১৯৬৮ মেয়াদকালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার পছন্দের খাবারের তালিকাটি ছিলো একেবারেই সাদামাটা। মাছের কাটা দিয়ে প্রস্তুতকৃত এক প্রকার স্যুপ এবং মাখনবিহীন টোস্ট বিস্কুট ছিলো তার বেশ পছন্দের। এছাড়া সার্ডিন মাছ খেতেও খুব পছন্দ করতেন সালাজার, কারণ এ মাছটি তাকে তার শৈশবের দারিদ্র্যে পরিপূর্ণ দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিত।

জোসেফ স্টালিন

১৯২২ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩০ বছর সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন ক্ষমতায় ছিলেন জোসেফ ভিসারিওনোভিচ স্টালিন। ‘সাতসিভি’ নামে একটি ঐতিহ্যবাহী জর্জিয়ান খাবার তিনি খুব পছন্দ করতেন।

জোসেফ স্টালিন

সাধারণত কোনো ভোজনোৎসবের শুরুতে পরিবেশন করা হতো এ খাবারটি। মুরগি, আখরোট, আলুবোখারা, রসুন, ওয়াইন ইত্যাদি অনেকগুলো উপাদান দিয়ে তৈরি এ খাবারটি রান্না করতেও বেশ সময় লাগতো।

মজার ব্যাপার হলো, স্টালিনের ব্যক্তিগত বাবুর্চিদের মাঝে একজনের নাম ছিলো স্পিরিদন পুতিন। বর্তমান সময়ের কোনো বিখ্যাত নেতার নামের সাথে মিল খুঁজে পাচ্ছেন, তাই না? হ্যাঁ, তিনি ছিলেন ভ্লাদিমির পুতিনের দাদা!

সাপার্মুরাত আতায়েভিচ নিয়াজভ

সাপার্মুরাত নিয়াজভ

সাপার্মুরাত নিয়াজভ ছিলেন তুর্কমেনিস্তানের প্রথম প্রেসিডেন্ট। ১৯৯০ থেকে ২০০৬ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন তিনি। মায়ের হাতের বানানো রুটি তার এতটাই পছন্দ ছিলো যে, রুটি শব্দটাকেই তার মায়ের নামানুসারে নতুন নাম দেন তিনি- ‘Gurbansoltanedzhe’।

তথ্যসূত্র

১) telegraph.co.uk/foodanddrink/11282463/Dictators-dinners-Hitler-Kim-Jong-Ilss-foodie-foibles-revealed.html

২) foodbeast.com/news/youll-never-believe-what-these-dictators-loved-to-eat/

৩) thrillist.com/eat/nation/the-definitive-list-of-dictators-favorite-foods

৪) msn.com/en-in/foodanddrink/foodnews/dictators-favourite-foods/ss-BBgFMB9#image=1

৫) businessinsider.com/favorite-foods-of-dictators-2017-5/#koreas-kim-jong-il-loved-shark-fin-soup-and-dog-meat-soup-1

Related Articles