Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চিনিমুক্ত থাকুন সহজেই

আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভাসের সবচেয়ে খারাপ জায়গাটি হলো চিনি খাওয়া। এর চেয়ে ক্ষতিকর কিছু এত বেশি ভালোবেসে আপনি খান না। ওবেসিটি, টাইপ টু ডায়াবেটিস, হৃদযন্ত্রের অসুস্থতা, দাঁতক্ষয়- সবকিছুই আপনাকে দিতে পারে চিনি। চিনি প্রক্রিয়াজাতকরণে ব্যবহৃত রাসায়নিকের কারণে হতে পারে ক্যান্সার। ফল-সবজিতে যে চিনি পাওয়া যায় তাকে স্বাস্থ্যকর মানা হয়, কারণ এতে প্রাকৃতিক চিনির সাথে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও মিনারেল থাকে। প্রক্রিয়াজাত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবারের চিনিই শরীরের জন্য বেশি ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞদের মতে, নারীদের জন্য সর্বোচ্চ ২৫ গ্রাম, পুরুষদের জন্য ৩৭ গ্রাম চিনি গ্রহণ করা যেতে পারে। কিছু বুদ্ধি খাটিয়ে রোজকার খাবারে চিনি গ্রহণের পরিমাণ কমানো যেতে পারে।

চিনি ভর্তি পানীয় ছাড়ুন

পানীয়ের সাথে যে চিনি আমরা গ্রহণ করি তা দ্বিগুণ ক্ষতিকর; image source: ausleisure.com.au

সোডা, এনার্জি ড্রিংক, কোমল পানীয়, ফলের কৃত্রিম রসে প্রচুর পরিমাণ চিনির ব্যবহার করা হয়। পানীয়ের সাথে যে চিনি আমরা গ্রহণ করি তা দ্বিগুণ ক্ষতিকর। কারণ চিনি তো শরীরে যাচ্ছেই, উল্টো পানীয়তে পেট ভরে না। ফলে পেট ভরাতে আরো ক্যালরি গ্রহণ করা হয়। বাড়তি এই ক্যালরি আমাদের ওজন বাড়ায়। পানীয়ের বদলে অন্য অনেক স্বাস্থ্যকর উপায় আছে তৃষ্ণা মেটানোর। খাওয়ার পর অনেকের কোমল পানীয় পান করতে মন চায়। এক্ষেত্রে ঠান্ডা পানি পানেও প্রায় একই কাজ হবে, পানীয় গ্রহণের ইচ্ছা কমে যাবে। লেবুর শরবত, কম চিনি অথবা চিনি ছাড়া খাওয়া যেতে পারে। এছাড়া গরমের দিনে শসা, পুদিনার রসের মতো অনেক পানীয় সুস্বাস্থ্যের সাথে তরতাজা বোধ করাতে পারে আমাদের। দিনে যে কয়বার চা পান করেন, তাতে ধীরে ধীরে কমিয়ে দিন চিনির পরিমাণ। এতটাই ধীরে যে একেবারে চিনি ছাড়া চায়ের সাথে একমাসেই অভ্যস্ত হয়ে যেতে কষ্টই হবে না।

ডেজার্টকে না বলুন

ডেজার্টকে না বলুন; image source: health magazine

বেশিরভাগ ডেজার্টেই পুষ্টিগুণ বলতে তেমন কিছু থাকে না। চিনি ভর্তি এই মজার খাবারগুলো আমাদের শরীরের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে চোখের পলকে। বাড়িয়ে দিতে পারে ক্লান্তির পরিমাণ, ক্ষুধা ও আরো বেশি ডেজার্ট খাওয়ার ইচ্ছা। ডেজার্ট খাওয়ার খুব বেশি ইচ্ছা হলে তাজা ফল খাওয়া যেতে পারে। পুষ্টিতে পরিপূর্ণ, সুস্বাদু, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও আঁশসমৃদ্ধ ফল শরীরে ডেজার্টের উল্টো ভূমিকা রাখবে। খাওয়া যেতে পারে খেজুর। বেশ মিষ্টি হওয়ার কারণে এটি ডেজার্ট খাওয়ার ইচ্ছা পূর্ণ করে দেবে।

চিনি দেওয়া সস বাদ দিতে হবে 

এক টেবিল চামচ সসে এক চা চামচ চিনি থাকে; image source: Youtube

কেচাপ, বারবিকিউ সস, চিলি সসের মতো সসগুলো প্রতিদিনের রান্নাঘরের উপাদান। খাবার সুস্বাদু করে তুলতে এদের জুড়ি নেই। কিন্তু এক টেবিল চামচ সসে যখন এক চা চামচ চিনি থাকে, তখন তা পরিহার করাই ভালো। সস কেনার সময় লেবেলে কতটুকু চিনি আছে দেখে নিতে হবে। একদম না খাওয়াই ভালো, তবু ছাড়তে না পারলে কম খাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। সসের বদলে কাঁচামরিচ, ভিনেগার, কাসুন্দি, মেয়নেজ ব্যবহার করা যেতে পারে। যদিও মেয়নেজে প্রচুর চর্বি থাকে, তাই সাবধান হওয়া ভালো।

পূর্ণ ননীযুক্ত খাবার

ওজন কমাতে চাইছেন এমন কেউ নিঃসন্দেহে পূর্ণ ননীযুক্ত খাবারের নামে চমকে উঠবেন। কিন্তু বেশি অবাক হওয়ার মতো তথ্য এটাই যে, কম ননীযুক্ত খাবারে অধিক পরিমাণে চিনি আর ক্যালরি থাকে। যেহেতু শুধু ননী আর চর্বি নয়, চিনিও ওজন বাড়তে পারে। যারা খাদ্যতালিকা থেকে চিনি ঝেড়ে ফেলতে চাইছেন, তাদের জন্য ভালো হবে পূর্ণ ননীযুক্ত খাবার বেছে নেওয়া।

প্রক্রিয়াজাত খাবারকে ছুটি দিন

ভালোবাসুন প্রাকৃতিক খাবারের সৌন্দর্য; image source: newswire.com

প্রক্রিয়াজাত খাবারে চিনি, লবণ, তেলের পাশাপাশি আপনার চোখের আড়ালে স্বাদবর্ধক ও বিষাক্ত রঙ দেওয়া হচ্ছে। কৃত্রিম এই খাবারগুলো খাওয়ার চেয়ে আস্ত শস্য ও সবজি কিনে খাওয়া শরীরের জন্য ভীষণভাবে উপকারী। কখনো দেখা যায় তথাকথিত স্বাস্থ্যকর নাস্তার প্রতিশ্রুতি দেওয়া খাবার। যেমন- ড্রাই ফ্রুট বা শুকনো ফল। এদের অনেকগুলোতেই চিনি থাকে তাদের অস্বাস্থ্যকর বিপরীত খাবারগুলোর চেয়ে বেশি। ফলের চিনিও অন্য চিনির মতোই। কিন্তু কাঁচা ফল আর ড্রাই ফ্রুটের মাঝে পার্থক্য হলো, কাঁচা ফলে পানি ও আঁশ থাকে, আর শুকনো ফলে এসব থাকলেও পরিমাণে খুব কম। নাস্তা হিসেবে সেদ্ধ ডিম, বাদাম, খেজুর বা অন্যান্য ফলকে বেছে নেওয়া যেতে পারে স্বাস্থ্যকর বিকল্প হিসেবে।

টিনজাত খাবারে চিনির পরিমাণ

প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপাদানগুলো দেখে নিতে হবে; image source: better languages

টিনজাত বলতে এখানে প্যাকেটজাত সব খাবারের কথা বলা হচ্ছে। যেকোনো ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবার যদি খেতেই হয়, তবে তার উপাদানগুলো দেখে নিতে হবে। টিনজাত ফল বেশিরভাগ সময় চিনির সিরায় সংরক্ষিত থাকে, যেমন হয় মিষ্টি আচারের বেলায়। যদি এমন টিনজাত ফল কিনতেই হয়, তবে খাওয়ার আগে ধুয়ে নেওয়া ভালো।

বেশি আমিষ ও স্নেহজ খাবার গ্রহণ

বেশি আমিষ ও স্নেহজ খাবার গ্রহণ করুন; image source: naturallivingideas.com

বেশি বেশি চিনিযুক্ত খাবার ক্ষুধা ও ওজন বৃদ্ধি করে। অপরদিকে চিনি কম অথচ আমিষ বেশি এমন খাবার ক্ষুধা কমিয়ে দেয়। মাংস খাওয়ার পর খুব তাড়াতাড়ি আপনার ক্ষুধা না লাগলেও, একটি আইসক্রিম বা মিষ্টি সন্দেশ খেয়ে যেমন পেটও ভরবে না, তেমনি শরীরে বাড়তি ক্যালরি যোগ হবে। শুধু মাংস নয়, খাওয়া যেতে পারে মাছ, কিংবা ডিম অথবা পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ।

চিনির নেশা ছাড়াতে

চিনি কারো কারো জন্য নেশায় পরিণত হয়। আর এই নেশা ছাড়ানো খুব সহজ নয়। অনেকেই এই নেশা ছাড়াতে গিয়ে বিষণ্নতার সাথে লড়াই করতে থাকেন। ইঁদুরের উপর গবেষণায় দেখা গেছে, কিছুদিন অতিরিক্ত চিনি খাওয়ানোর পর চিনি কমিয়ে দিলে তারা বিষণ্ন তার শিকার হয়েছে। ফলে নেশা ছাড়ানোর জন্য এমন কিছু চিনি ব্যবহার করা যেতে পারে, যেগুলো আসলে চিনি নয়, অর্থাৎ বাজারে পাওয়া ক্যালরিবিহীন মিষ্টি, যেমন- স্টিভিয়া, এরাইথ্রিটল, জাইলিথল ইত্যাদি।

বাড়িতে চিনি রাখা বন্ধ করে দিন

কত কাজই তো আলসেমি করে করা হয় না। যদি আপনি খাদ্য তালিকার চিনি ঝেড়ে ফেলতে চান, আর আগামীবার আপনার বাসায় চিনি শেষ হয়ে যায়, সাথে সাথে কিনে না এনে দুই-চারদিন আলসেমি করুন। মিষ্টি নাস্তা খাওয়ার ইচ্ছা যেকোনো সময় হতে পারে, বিশেষ করে রাতে খাওয়ার পর। এ সময় নিজের মনকে বিভ্রান্ত করার উপায় বের করুন। চিনির বয়ামের দিকে হাত না বাড়িয়ে বরং পত্রিকার সুডোকু মেলাতে বসুন। গবষণায় দেখা যায়, এ ধরনের ধাঁধায় মাথা ঘামানোতে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছা কমে যায়।

ক্ষুধা নিয়ে কেনাকাটা বাদ দিন

ক্ষুধাপেটে যখনই আপনি দোকানে ঢুকবেন, আপনার মন চাইবে সুস্বাদু সব খাবার কিনে ফেলতে। আর সাধারণত সুস্বাদু খাবারের অর্থ প্রচুর লুকানো চিনিযুক্ত খাবার। ক্ষুধার সময় পেট ভরাতে বেশি পরিমাণে একের পর এক অস্বাস্থ্যকর চিনিযুক্ত খাবার আপনার চিনির গ্রহণ বাড়িয়ে দেবে অনেকখানি। আর ভয়ংকর বিষয় হলো, কিছুক্ষণের মাঝেই আপনার আবার খেতে ইচ্ছা করবে।

পর্যাপ্ত ঘুম

সুস্বাস্থ্যের জন্য অপর্যাপ্ত ঘুম বিশাল এক বাধা। ঘুম কম হলে বিষণ্নতা বাড়ে, মনোযোগ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে। শরীরে অন্যান্য পরিবর্তন আনার সাথেই কম ঘুম আমাদের খাদ্যাভ্যাসেও পরিবর্তন আনে। কম ঘুমানো মানুষেরা বেশি ক্যালরি, চিনি ও লবণযুক্ত খাবারের প্রতি আকৃষ্ট হন। অবশ্য এটা পরিপূরক ঘটনাও হতে পারে। অর্থাৎ যারা অস্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করছে তারা দেরিতে ঘুমাচ্ছে।

আট সপ্তাহ অভ্যাস ধরে রাখুন

গবেষণা বলে, যেকোনো অভ্যাস বন্ধ করতে ৬০ দিন সময় লাগে। তাই চিনির সাথে দৃঢ় যে বন্ধন তৈরি করা হয়, তা ছাড়িয়ে আসতে ৬০টি ধৈর্য ধরা দিন লাগবে। এরপর শরীর নিজেই বুঝে যাবে তার ঠিক কতটুকু চিনির প্রয়োজন। দৈনন্দিন কতটুকু চিনি খাবেন ঠিক করে নিন। সেটা চামচে করে কাঁচা চিনি হতে হবে এমন কথা নেই। ডেজার্টে থাকা চিনিও রুটিনের চিনির মাঝে ধরুন।

চিনিকে বলা হয় ‘সাদা মৃত্যু’। এই মৃত্যুকে আমরা গ্রহণ করবো, নাকি এর থেকে বেঁচে চলবো, তার পূর্ণ স্বাধীনতা আমাদের আছে। কিন্তু কেউ যদি সত্যিই চিনির অভ্যাস থেকে বেরিয়ে এসে স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকায় নির্ভরশীল হতে চান, উপরের পদ্ধতিগুলো তার জন্য সমাধানের মতো কাজ করতে পারে।

ফিচার ইমেজ: Medical news Today

Related Articles