Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রেড বানানা কি স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?

বিশ্বের সকলের কাছে বেশ পরিচিত এবং সহজলভ্য ফলের যদি একটি তালিকা তৈরি করি, তাহলে ‘বানানা’ বা ‘কলা’র নামটা কোনোভাবেই বাদ পড়ার মতো নয়। সকলেই কম-বেশি এই মিষ্টি এবং সুস্বাদু ফলটির ভক্ত। আসলে শুধু স্বাদের জন্য নয়, বরং কম দামে সুলভ ফলটি বিভিন্ন খাদ্য উপাদানে সমৃদ্ধ হওয়ায় সবার কাছেই গ্রহণযোগ্য।

বিশ্বজুড়ে নানা প্রকার কলা পাওয়া গেলেও হলুদ রঙের কলাই সবচেয়ে বেশি পরিচিত। আর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং মধ্য আমেরিকায় মূলত এই লাল-বেগুনী রঙের খোসায় ঘেরা ‘রেড বানানা’ পাওয়া যায়। এই লাল রঙের কলা সাধারণ কলার তুলনামূলক কম জনপ্রিয় হলেও গুণে ও উপকারিতার দিক থেকে এর অবদান ভোলার মতো নয়।

রেড বানানার স্বাদ কেমন?

লাল রঙের কলার স্বাদ একটু অন্যরকম। এর মধ্যে কিছুটা আমের মতো স্বাদ পাওয়া যায়। অনেকের মতে, এই কলা খেতে সাধারণ কলা এবং লাল রাস্পবেরির কোনো মিশ্রণ বলে মনে হয়। তবে ঘ্রাণ অনেকটা স্ট্রবেরির মতো। পাকা রেড বানানা হলুদ রঙের কলার তুলনায় অধিক মিষ্টি এবং ঘন হয়। তবে ভেতরের অংশটা দেখতে প্রায় একই।

লাল রঙের কলার ভেতরের অংশ; Image source: reddit.com

পুষ্টিবিদ টরি টেড্রো এ সম্পর্কে বলেন, “একটি হলুদ কলার তুলনায় একটি লাল কলায় ৮ গ্রাম অধিক চিনি এবং ৩০ ক্যালরি বেশি থাকে।” এজন্যই লাল রঙের কলা স্বাদে বেশি মিষ্টি।

বিভিন্ন খাদ্য উপাদানে সমৃদ্ধ

গড়ে একটি লাল কলা ৯৯ গ্রামের হয়ে থাকে, যার মধ্যে ৯০ ক্যালরি থাকলেও কোনো প্রকার স্নেহ জাতীয় পদার্থ থাকে না। তবে একটি সাধারণ হলুদ কলায় এই স্নেহ জাতীয় উপাদান থাকে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন প্রায় ২২৫-৩২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট দরকার। আর এই পরিমাণের শতকরা ৮-৯ ভাগ, তথা প্রায় ২৩-২৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেটই আপনাকে দিতে পারবে মাত্র একটি ‘রেড বানানা’। এই ২৩ গ্রামের মধ্যে ১৬ গ্রামই চিনি এবং ১ গ্রাম ফাইবারও থাকে। এই ধরনের কলায় শুধু ১ গ্রাম প্রোটিন বিদ্যমান।

লাল-বেগুনী খোসায় আবৃত এই কলায় রয়েছে ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের প্রাচুর্য। মাত্র কয়েক গ্রামের এই রেড বানানায় প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এ এর শতকরা ২ ভাগ এবং ভিটামিন সি এর প্রায় ১৫ ভাগ পাওয়া যায়। অন্যান্য কলার মতো এই কলাতেও পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিন থাকে। এই ফলে সোডিয়াম এবং ক্যালসিয়ামের কোনো অস্তিত্ব না থাকলেও শতকরা ২ ভাগ আয়রন বিদ্যমান।

কিডনির পাথর হ্রাস করা

কিডনির পাথর হ্রাস, যেকোনো হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ হলো পটাসিয়াম। আর রেড বানানা খুব সহজেই এই পটাসিয়ামের চাহিদা পূরণ করতে পারে। শিশুদের এবং বয়স্কদের দিনে একটি করে লাল কলা গ্রহণ করা উচিত।

Image source: niddk.nih.gov

এর ফলে শরীরে ক্যালসিয়ামের সঞ্চার ঘটবে, যা দেহের হাড় মজবুত করে। পঞ্চাশ বছরের পর একজন মানুষের কিডনিতে পাথর হওয়া বা শারীরিক দুর্বলতা বেড়ে যায়। এমন অবস্থায় খাবারের উপর, বিশেষ করে মিষ্টি জাতীয় যেকোনো খাবার গ্রহণ করার ক্ষেত্রে ডাক্তারের নিষেধাজ্ঞা থাকে। এই পরিস্থিতিতে লাল কলাই বেশ উপকারে আসে।

হিমোগ্লোবিন তৈরি

রেড বানানা বিভিন্ন ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, যা দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরি ও রক্ত সঞ্চালনের ক্ষেত্রে সহায়তা করে। ভিটামিন বি৬ প্রোটিন এবং লাল রক্তকোষ ভাঙতে সহায়তা করে। একটি লাল কলা দেহের জন্য দরকারি ভিটামিন বি৬ এর ২০℅ চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এই উপাদান রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণ করে।

Image source: ft.edu

দেহে যদি ভিটামিন বি৬ বা পাইরিডক্সিনের অভাব দেখা যায়, তাহলে তা অ্যানিমিয়ার সৃষ্টি করতে পারে। অ্যানেমিয়া হলো এমন এক অবস্থা যখন দেহে হিমোগ্লোবিন তৈরির প্রয়োজনীয় উপাদান থাকে না। কেউ এই রোগে আক্রান্ত হলে প্রতিদিন দুই থেকে তিনটি লাল কলা সেই ব্যক্তির জন্য কিছুটা লাভজনক হতে পারে।

শক্তির তাৎক্ষণিক উৎস

খেলোয়াড়েরা বিভিন্ন খেলায় বিরতির সময় বেশি করে এ ধরনের কলা খায়। কারণ তাদের খুব অল্প সময়ের মধ্যে ক্লান্তি কাটিয়ে অনেক বেশি শক্তির সঞ্চার করার প্রয়োজন হয়। লাল রঙের এই কলাগুলো প্রাকৃতিক চিনিকে সহজেই ভেঙে শক্তিতে পরিণত করতে পারে। যাদের সাধারণত দৈহিক পরিশ্রম বেশি করতে হয় কিংবা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করার সময় পান না, তাদের জন্য এই ফলটি আশীর্বাদই বলা যায়। ঝটপট করে একটা কলা খেয়ে নিলেই শরীরে শক্তির সঞ্চার হয়ে যায়। এই কলা মস্তিষ্কের বিকাশ এবং বাড়ন্ত শিশুদের জন্য বেশ কার্যকরী।

ধূমপান বন্ধ করা

কোনো ব্যক্তি যখন হঠাৎ করে ধূমপান করা বন্ধ করে দেয়, তখন তার দেহে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন দেখা যায়। এছাড়া তার শারীরিক দুর্বলতা এবং নিকোটিনের প্রতি অবাধ আসক্তিও ধরা পড়ে। বিশেষ করে ধূমপান ছেড়ে দেয়ার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ একজন সাবেক ধূমপায়ীর জন্য বেশ কষ্টদায়ক।

ধূমপান করার ইচ্ছা, তবে করতে না পারার বিষয়টা তার মনে হতাশা এবং চিন্তার বিস্তার ঘটায়। তার মধ্যে বমি বমি ভাব, রাগ, আক্রমণাত্মক মনোভাব, মাথা ব্যথা, তন্দ্রার মত লক্ষণ দেখা যায়। এমন অবস্থায় লাল কলা অনেকটা ঔষধের মত কাজ করে। কেননা এই ফল ভিটামিন-সি, বি৬, পটাসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের উপাদান দ্বারা সমৃদ্ধ। আর এসকল খাদ্য উপাদান দেহে শুধু নিকোটিনের অপসারণকেই আয়ত্তে আনে না, বরং শরীরে আকস্মিক পরিবর্তনের কারণে যে দুর্বলতা সৃষ্টি হয় তাও নিয়ন্ত্রণ করে।

চুলের ক্ষেত্রে উপকারিতা

পটাসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, ভিটামিন এবং প্রাকৃতিক তেলের মতো উপাদান চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয়। এ সকল উপাদান চুলকে খুশকি মুক্ত করতে এবং চুলকে উজ্জ্বল ও ঝরঝরে করতে সহায়তা করে। চুলের জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপাদান একত্রে এই লাল কলার মধ্যে জমা থাকে।

কলার মিশ্রণ; Image source: food.ndtv.com

এই কলা খেলে যেমন এর ইতিবাচক প্রভাব চুলে পড়বে, আবার এর একটি মিশ্রণ তৈরী করে চুলে লাগালেও এর উপকারিতা ভোগ করা যাবে। এছাড়া কারও চুলে বিভিন্ন রকমের কেমিক্যাল বা ঔষধের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে থাকলে তা দূর করার জন্যও এই লাল কলার মিশ্রণ লাগানো যেতে পারে।

উত্তেজনা কমাতে

একটি গবেষণা অনুসারে, দুটি রেড বানানা দেহে প্রচুর শক্তি উৎপাদন করতে পারে, যা একজন ব্যক্তির মনে ইতিবাচক অনুভূতি সৃষ্টি করে। আবার এই কলায় ট্রাইটোফ্যান প্রোটিন থাকে, যা সেরোটোনিন নামক আরেক ধরনের প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে। এই প্রোটিন একজনকে নিরুদ্বেগ এবং খুশি করতেও কাজ করে থাকে। এই কলায় তিন ধরনের প্রাকৃতিক শর্করা- গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ এবং সুক্রোজ রয়েছে, যা ফাইবারের সাথে বিক্রিয়া করে শরীরে শক্তির যোগান দেয়। এছাড়াও কলার মধ্যে থাকা পটাসিয়াম হৃদস্পন্দন এবং দেহে পানির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে।

চোখের যত্নে

হলুদ রঙের কলার তুলনায় প্রায় ১৭৫% বেশি ভিটামিন এ এবং ১০০% বেশি লুটেন এই লাল কলায় থাকে। এছাড়া আরও পুষ্টিকর খাদ্য উপাদান থাকে এই ফলে, যা চোখের জন্য প্রয়োজনীয়। এ ধরনের কলার লাল-বেগুনী খোসার মধ্যেও চোখের জন্য উপকারী উপাদান রয়েছে।

Image source: superfoodly.com

এখন ভাবার বিষয় হলো এই খোসা কিভাবে খাওয়া যায়। এক্ষেত্রে একটা সহজ উপায় হলো এই কলার খোসাগুলোর চা বানিয়ে। শুনতে উদ্ভট ও অরুচিকর মনে হলেও এর উপকারিতা কথা মনে করে চুপচাপ পান করে ফেলাটাই শ্রেয়!

রেড বানানার উপকারিতার তালিকা এখানেই শেষ নয়। ওজন কমাতে, দেহে পুষ্টির যোগান দিতে, রূপচর্চায়, এমনকি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। সাধারণ হলুদ রঙের কলার তুলনায় এই লাল কলার উপকারিতা অবশ্যই বেশি এবং দরকারি।

ফিচার ইমেজ: videoblocks.com

Related Articles