Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

জনপ্রিয় রেস্তোরাঁগুলোর নামকরণের কাহিনী

ম্যাকডোনাল্ড কিংবা ডমিনোজের নাম শুনলেই জিভে জল চলে আসাটাই স্বাভাবিক। ফাস্ট ফুডের বর্তমান যুগে বার্গার, পিজ্জার চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রেস্টুরেন্টও। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন ‘স্টারবাক’ নামটাই বা কোত্থেকে আসলো আর ‘ওয়েন্ডিজ’ নামেরই বা রহস্য কী? চলুন দেখে আসা যাক পৃথিবীর কিছু বিখ্যাত ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টের নামকরণের আদ্যোপান্ত।

চিক-ফিল-এ

১৯৪৬ সালে ট্রুয়েট ক্যাথি নামের এক ভদ্রলোক আটলান্টায় একটি ফাস্ট ফুডের রেস্টুরেন্ট খুলে বসেন। সামান্য কিছু লাভের আশায় টুকিটাকি খাবার বিক্রয় করা শুরু করেন ক্যাথি। মূলত গরু আর শূকরের মাংসের পণ্যগুলোকেই প্রাধান্য দেওয়া হতো। তিনি রেস্টুরেন্টের নাম দিয়েছিলেন ‘দ্যা ডোয়ার্ফ গ্রিল’। এভাবে ১৮ বছর চলার পর ১৯৬৪ সালে ক্যাথি নতুন রেসিপি হিসেবে মুরগীর তৈরী স্যান্ডউইচ বানিয়ে বিক্রয় শুরু করেন। আর তাতেই হঠাৎ করে ক্রেতার সংখ্য বেড়ে যায় কয়েকগুণ। নতুন এই চিকেন স্যান্ডউইচের জন্য সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে ক্যাথির দোকানে। এই স্যান্ডউইচের জন্য রেস্টুরেন্টের প্রসারও বেড়ে যায় অনেক। সেই দিক চিন্তা ১৯৬৭ সালে ক্যাথি দোকানের নাম পরিবর্তন করে ফেলেন। প্রথমে ‘দ্যা চিকেন স্যান্ডউইচ’ দিতে চাইলেই তা অনেকটা মূলধারার মতো হয়ে যায় বিধায় তিনি রেস্টুরেন্টের নাম দেন চিক-ফিল-এ

চিক-ফিল-এ এর বিখ্যাত সেই স্যান্ডউইচের রেসিপিটি আটলান্টায় অবস্থিত রেস্টুরেন্টের মূল হেডকোয়ার্টারে গোপন ভাবে সংরক্ষিত রয়েছে। বাজফিডের তথ্যমতে, প্রতি বছর এই স্যান্ডউইচ তৈরির জন্য ব্যবহৃত করা মুরগীগুলোকে দাঁড় করিয়ে দিলে পুরো পৃথিবী একবার প্রদক্ষিণ করা সম্ভব। জনপ্রিয় এই রেস্টুরেন্টের প্রতি বছর লাভ হয় প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার।

চিক ফিল এ রেস্তোঁরার বার্গার; Image Source: Chick fil a.com

স্টারবাকস

st’ এই দুটি অক্ষরের উপর ভিত্তি করেই স্টারবাকসের নাম এসেছে। যখন স্টারবাকসের সহ প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন বাওকার বন্ধুদের নিয়ে নাম নিয়ে আলাপ আলোচনা করছিলেন তখন কেউ একজন বলে ওঠে যে ‘st’ দিয়ে শুরু হওয়া নামের মধ্যে একটা গাম্ভীর্য আছে। কথাটি মনে ধরে বাকি সবার। তৎক্ষনাৎ একটি পুরোনো ম্যাপ খুলে বসেন সবাই মিলে। ম্যাপে স্টারবো নামের একটি শহর দেখেন গর্ডন। পরবর্তীতে তা খানিকটা পরিবর্তন করে নিজের প্রিয় উপন্যাস মবি ডিকের স্টারবাক নামের একটি চরিত্রের নামে রেস্টুরেন্টটির নামকরণ করেন তিনি।

তার আগে অবশ্য গর্ডনের চিন্তায় ছিলো মবি ডিক উপন্যাসের ‘পিকুড’  নামের জাহাজের কথা। ১৯৭১ সালে ওয়াশিংটনের সিয়াটলে কফির জন্য বিখ্যাত এই রেস্টুরেন্টের জন্ম হয়।

কফির জন্য জগদ্বিখ্যাত কোম্পানি স্টারবাকস; Image Source: Life News

হোয়াটাবার্গার

হ্যামবার্গারের জন্য বিখ্যাত হোয়াটাবার্গার সর্বপ্রথম চালু হয় ১৯৫০ সালে। আমেরিকার টেক্সাসে বসবাসরত বার্গারপ্রিয় হারমন ডবসন ও পল বার্টন এই রেস্টুরেন্টের প্রতিষ্ঠাতা। সেই সময়ের বার্গারগুলো তুলনামূলক ভাবে বর্তমানের বার্গার থেকে কিছুটা ছোট ছিলো। সাধারণত বার্গারের মাঝের পেটিটি বড়জোর দুই ইঞ্চি পুরো ছিলো। কিন্তু ডবসনের চিন্তা-ভাবনা ছিলো কমপক্ষে চার ইঞ্চি পুরুত্বের পেটির বার্গার বিক্রি করার। যাতে করে ক্রেতাকে দুই হাত দিয়ে ধরে বার্গার খেতে হয় এবং বার্গারের সাইজ তাকে বিস্মিত করে বলতে বাধ্য করে “হোয়াট আ বার্গার!”  ডবসনের এই স্বপ্নের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দুই প্রতিষ্ঠাতা মিলে রেস্টুরেন্টের নাম ঠিক করেন হোয়াটাবার্গার

হোয়াটাবার্গারের জনপ্রিয় সেই বার্গার; Image Source: Change.com

ওয়েন্ডিজ

ছোটবেলা থেকেই ডেভ থমাসের স্বপ্ন ছিলো একটি রেস্টুরেন্টের মালিক হওয়া। ২০ বছর ধরে ব্যবসা করার পর তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়। ১৯৬৯ সালে ওহাইওর কলম্বাসে প্রথম ওয়েন্ডিজ খোলেন ডেভ থমসন। ওয়েন্ডি নামটি তার মেয়ে মেলানির ডাকনাম ছিলো। তার মানে এই নয় যে সন্তানদের মধ্যে মেলানিই তার সবচেয়ে প্রিয়। রেস্টুরেন্টটির নামকরণে থমাসের পাঁচ সন্তানের নামই ব্যবহার করা হয়েছিলো। সবশেষে ব্যবহার করা হয় ওয়েন্ডি। পরবর্তীতে এটিই হয়ে যায় স্থায়ী নাম। আমেরিকা জুড়ে প্রায় ৬৫০০ এর উপর ওয়েন্ডিজ কোম্পানির শাখা রয়েছে। বর্তমানে ফাস্ট ফুডের জগতে ওয়েন্ডিজ এক জনপ্রিয় নাম।

ওয়েন্ডিজ কোম্পানির লোগো; Image Source: Daily Mail

ম্যাকডোনাল্ড

১৯৫৪ সালের কথা। রিচার্ডস ও ম্যাক ম্যাকডোনাল্ড নামের দুইভাই কিছু যন্ত্রপাতি কিনে হ্যামবার্গার বানানো শুরু করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার সান বার্নার্ডিনোতে একটি ছোট রেস্টুরেন্টে হ্যামবার্গার ছাড়াও তারা মিল্কশেক বিক্রি করতেন। রে ক্রক নামের এক ভদ্রলোক একদিন খেয়াল করলেন ছোট হওয়া সত্ত্বেও রেস্টুরেন্টের আয় চোখ ছানাবড়া করে দেওয়ার মতো। ভবিষ্যতে এর প্রসারের কথা উপলব্ধি করে রে ক্রক ম্যাকডোনাল্ড ভাইদের কাছে থেকে রেস্টুরেন্টটি কিনে নেন। সাথে দুইভাইকে সাথে নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি প্রোগ্রাম খোলার অফার দেন। তার দরুন রে ক্রক রেস্টুরেন্টটির নামও ঠিক করেন ম্যাকডোনাল্ড। ১৯৫৫ সালের ১৫ এপ্রিল রে ক্রক ইলিনয়তে প্রথম ম্যাকডোনাল্ড ফ্যাঞ্চাইজি  ও কর্পোরেশন চালু করেন। ১৯৬১ সালে পুরো ম্যাকডোনাল্ড দুই ভাই থেকে কিনে নেন রে ক্রক।

বর্তমানে ম্যাকডোনাল্ড পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলোর একটি। এক সমীক্ষা মতে ২০১৭ অর্থবছরে ম্যাকডোনাল্ডের রাজস্ব অস্ট্রেলিয়ার জিডিপি থেকেও চারগুণ বেশি ছিলো।

ম্যাকডোনাল্ডের কিছু পণ্য; Image Source: Newyork Times

ডমিনোজ

পিজ্জার জন্য জগৎ জোড়া খ্যাতি রয়েছে বিখ্যাত আমেরিকান ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্ট ডমিনোজের। ১৯৬৩ সালে দুই ভাই টম এবং জেমস মনাহান মিশিগানের ক্রস স্ট্রিটের সামনের একটি ছোট দোকান কিনে নেন। ইচ্ছা ছিলো নিজেদের কাজের পাশাপাশি পিজ্জা বিক্রয় করা। আগের মালিক ডমিনিক ডাইভার্টি থেকে দোকানটি কিনে নিলেও দোকানের নাম পরিবর্তন করেননি তারা। ডমিনিক পিজ্জা নামেই রেস্টুরেন্টটি চালাতে শুরু করেন। প্রথম প্রথম দুই ভাই আলাদা আলাদা শিফটে কাজ করলেও পরবর্তীতে টম চেয়েছিলেন নিজেদের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসায় পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে। কিন্তু জেমস নিজের চাকরি হারাতে চাচ্ছিলেন না। তাই নিজের অর্ধেক অংশ বিক্রয় করে দেন তার ছোট ভাই জেমসের কাছে।

পিজ্জার জন্য বিখ্যাত ডমিনো রেস্তোঁরা; Image Source: Dominos.com

১৯৬৫ সালের মধ্যে তিনটি শাখা খুলে ফেলেন জেমস। ব্যাবসার প্রসার হয় আমেরিকা জুড়ে। সেই সময় এসে ডমিনিক পিজ্জা নামে ব্র্যান্ডিংয়ে বাধ সাধেন আগের মালিক ডমিনিক ডাইভার্টি। নিজের দেওয়া নাম ব্যাবহার করতে সাফ মানা করে দেন তিনি।

একদিন পিজ্জা ডেলিভারি দেওয়া জিম কেনেডি নামে এক কর্মচারী টম মনাহানকে ডমিনোজ নামটি সুপারিশ করেন। তখনই নামটি পছন্দ হয়ে যায় টমের। ফলে ১৯৬৫ সালে নিজের ব্যাবসার নতুন নামকরণ করে দুনিয়া জোড়া খ্যাতি নিয়ে আসেন টম মনাহান।

চিপটোলে

চিপটোলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ ইলিস ছিলেন একজন পেশাদার বাবুর্চি। সান ফ্রান্সিসকোতে থাকাকালীন অবস্থায় তিনি খেয়াল করেন যে আমেরিকানদের কাছে মেক্সিকান গ্রিল এবং বারিতোস অসম্ভব জনপ্রিয়। এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগানোর চিন্তায় ইলিস ঠিক করলেন বারিতোস এবং গ্রিলের একটি রেস্টুরেন্ট দেবেন। ১৯৯৩ সালে নিজের বাবার কাছ থেকে ৮৫ হাজার লোন নিয়ে ব্যাবসায় নামেন ইলিস। বাবা ছেলে মিলে হিসেব করে দেখেন যে ব্যবসাকে লাভজনক করতে হলে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০৭ টি বারিতোস বিক্রি করতে হবে তাদের। কিন্তু তাদের অবাক করে দিয়ে এক সপ্তাহের মাথায় ১০০০ এর উপর বারিতোস বিক্রয় হতে শুরু করলো। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি স্টিভ ইলিসকে।

রেস্টুরেন্টটির নামকরণ অনেকটা ‘ইউরেকা’র মতোই পেয়েছেন বলে জানান স্টিভ ইলিস। যখন পরিবারের সবাই চিন্তা করছিলেন কী নাম দেওয়া যায়, ঠিক তখনই ইলিসের মাথায় ‘চিপটোলে‘ নামটি আসে। প্রথমে পরিবারের বাকীরা কঠিন উচ্চারণ বলে তাতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু এই নাম দেবেন বলেই মনস্থির করেন ইলিস। বর্তমানে চিপটোলের শাখার সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে শ’ কয়েকের উপর।

চিপটোলের বিখ্যাত বারিতোস; Image Source: Go Dairy Free

This Bangla article is about the cause of the name of the famous restaurants. Necessary sources are hyperlinked in the article.

Feature Image: Getty Image

Related Articles