Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বব্যাপী ইফতার আয়োজনের রকমফের

مولاي صلّ وسلم دائما أبدا 
على حبيبك خير الخلق كلهم

O My Master, send your salutations and blessings forever 
Upon your beloved, the best of the whole of creation. 

হে আমার প্রভু, চিরকালের জন্য আপনার ভালোবাসা এবং আশীর্বাদ বর্ষিত করুন
আপনার প্রিয় বন্ধুর উপর, যিনি সৃষ্টি জগতের সেরা। 

পৃথিবী জুড়ে নানান জাতি, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র আর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষদের বসবাস। এত এত মানুষদের ধর্ম, কৃষ্টি আর ঐতিহ্য এমনকি জীবনধারা ভিন্ন হলেও, একটা নির্দিষ্ট ধর্মের সকল জাতি, বর্ণ আর গোত্রের মানুষেরা কিন্তু পুরো একটা মাসের জন্য একদম একই ধরনের জীবনধারা আর সংস্কৃতি বহন করে একই নিয়মে। হয়তো সময়ের হেরফের হয় কিন্তু নিয়মের বিন্দুমাত্র হেরফের হয় না। ইসলাম হচ্ছে, সেই জীবনধারা বা বিধান যা এই একটা মাসের জন্যে হলেও পুরো বিশ্বের কমবেশি সকল মুসলমানদের একটা জীবনধারার মধ্যে নিয়ে আসে। 

রোজা মুসলমানদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ইবাদত এবং রমজান মাস মুসলমানদের জন্যে বছরের অত্যন্ত প্রিয় একটি মাস। রোজার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ই হচ্ছে নিজেকে সংযমে রাখা। যার জন্য দৈনন্দিন জীবনের রুটিনটা এই একটা মাসের জন্য ভিন্ন হয়ে যায়। এই যেমন ভোর রাতে উঠে সেহরি খাওয়া, সারাদিন দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি ধর্মীয় ইবাদত এবং সংযমকে প্রাধান্য দেয়া; সন্ধ্যার সময় পরিবার, আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধুপরিজনের সাথে ইফতার করা এবং এরপর তারাবীহ নামাজ আদায় করা। 

ইফতারে খেজুর খাওয়া সুন্নত; Image Source: islamic-relief.org

সারাদিন রোজা রেখে এবং ইবাদত করে একজন রোজাদারের কাছে ইফতারের সময়টাই প্রধান আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। কমবেশি সবাই চায় ইফতারটাকে আরো একটু বর্ণাঢ্য সাজে সাজাতে। আবার, ইফতারেরও আছে নিজস্ব কৃষ্টি আর সংস্কৃতি। যেমন- ইসলামের প্রবর্তক মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ খেজুর দিয়ে ইফতার পালন করতেন; তাই মুসলিমদের কাছে ইফতারের আয়োজনে খেজুর রাখাটা শুধুমাত্র ঐতিহ্য কিংবা সংস্কৃতিই নয় বরং এটা নবীর সুন্নত। সাধারণত আমাদের এই মুসলিম প্রধান দেশে খেজুর বা পানি দিয়ে ইফতার শুরু করার চল। 

স্বাস্থ্যকর আর  পুষ্টিসম্পন্ন এবং শরীরের জন্য উপকারী ফলগুলোই থাকে ইফতারের আয়োজনে। আবার বিভিন্ন ফলের শরবতও থাকে। এছাড়া, ইফতারের তালিকায় থাকে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, হালিম, বিভিন্ন রকমের কাবাব, জিলাপি সহ আরো রকমারি আয়োজন। বিশেষ করে পুরান ঢাকার চকে গেলে দেখা যায় আরো হরেক পদের ইফতার। তবে বাংলাদেশের ইফতার আয়োজনে অনেক খাবারের পদের মধ্যে মুড়িমাখা অন্যতম জনপ্রিয়। আমাদের দেশের ইফতার সম্পর্কে ধারণা নেই, এমন মানুষ হয়তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না এই তল্লাটে। তাই আজ আমাদের দেশের ইফতার নিয়ে নয়, বরং বিশ্বের মুসলিমপ্রধান বা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্যান্য দেশ সমূহের জনপ্রিয় ইফতার আইটেম নিয়ে আলোচনা করবো। 

সৌদি আরব  

ইসলাম ধর্মের জন্ম হয়েছিল এই দেশে। আর তাছাড়া এখানেই আছে কাবা শরীফ, মুসলমানদের আল্লাহ্‌র ঘর। তাই, সৌদি আরবের চাইতে ইফতারের বড় আয়োজন অন্য কোনো দেশে হয় না বললেই চলে। মসজিদে হারাম এবং মসজিদে নববীতে প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষ একত্রে ইফতার করে থাকেন প্রতিদিন। তবে স্থানীয় সৌদিরা নিজ ঘরেই পরিবার পরিজনের সাথে ইফতার করতে পছন্দ করেন। সৌদিদের ইফতার আয়োজনে বিভিন্ন ধরণের খেজুর, ভিমতো (আঙুরের শরবত), সালাতা (সবজির সালাদ), তামিজ/খমুজ (বিশেষভাবে তৈরি রুটি), সানবুসা (মাংসের সমুসা), বোরাক (মাংসের পিঠা), কাতায়েফ সহ আরো বিভিন্ন ধরণের আইটেম। 

মাটন খাবসা; Image Source: recipesaresimple.com

তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সৌদিদের ইফতারে ভেড়া আর মুরগির মাংস দিয়ে তৈরি খাবসা (আমাদের দেশের বিরিয়ানির মতোই) এবং লুকাইমাত (আমাদের দেশের তালের পিঠার মতোই) সবচাইতে বেশি প্রসিদ্ধ এবং জনপ্রিয়। আরবদের সবচাইতে জনপ্রিয় এই লুকাইমাত, বাইরে দিয়ে যতটা মুচমুচে, ঠিক ততটাই নরম আর চটচটে এর ভেতরের দিকটা। মিষ্টি খেজুরের সিরাপে পুডিংটাকে বেশ অনেকক্ষণ ডুবিয়ে রাখা হয় এবং পরে তিলের বীজ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। শুধু সৌদিই নয় বরং আরব বিশ্বে এই লুকাইমাত অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবারের পদ। 

লুকাইমাত; Image Source: popsugar.com

ইন্দোনেশিয়া

মুসলিম কথাটার সাথে ইন্দোনেশিয়া দেশটিও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কেননা, সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিক থেকে ইন্দোনেশিয়া মুসলিম বিশ্বের সর্ববৃহৎ দেশ। ইন্দোনেশিয়ার লোকজন খাবার-দাবারের ব্যাপারে বেশ সচেতন, আর মসলাদার খাবারও এড়িয়ে চলে ইন্দোনেশিয়ানরা। যার জন্য ইফতারের আইটেমে বেশিরভাগই সময়ই ফলমূল, জুস, শরবত এবং মসলাবিহীন খাবার-দাবার দেখা যায়। তা বলে যে ভারি খাবার একদমই থাকে না তা কিন্তু নয়। ভারি খাবারের মধ্যে থাকে- কিস্যাক (সেদ্ধ ভাত দিয়ে তৈরী), পাকাত (সালাদের মতো), সোতো পাং কং (সামুদ্রিক মাছের তৈরি), সাতে সুসু (অনেকটা আমাদের দেশে বটের মতো) এবং এস তিমুন সুরি (ফল দিয়ে বানান পানীয় বিশেষ) সহ আরো নানান পদ। 

এস কেলাপা মুদা বা কচি ডাবের শরবত; Image Source: hellosehaat.com

তবে ইন্দোনেশিয়ার ইফতার আয়োজনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে আছে এস কেলাপা মুদা এবং বিফ রান্ডাং নামক দুটি খাবার। এস কেলাপা মুদা বা কচি ডাবের শরবত হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার সবচাইতে বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় পানীয়। ঠাণ্ডা ডাবের পানির সাথে, ডাবের শাঁস এবং চিনির শরবত মিশিয়ে বানান হয়ে থাকে এই পানীয়। বিফ রান্ডাং হচ্ছে মশলাদার এবং ইন্দোনেশিয়ান স্টাইলে তৈরী গরুর তরকারি বিশেষ। 

বিফ রান্ডাং; Image Source: sortedfood.com

তুরস্ক

ইউরোপের সর্ববৃহৎ মুসলিম দেশ তুরস্ক। ইউরোপ এবং এশিয়ার সংযোগস্থল খ্যাত এই দেশটি মিশ্র সংস্কৃতিসম্পন্ন হলেও ধর্মীয়ভাবে তুর্কিরা বেশ রক্ষণশীল। আর তাই দুই মহাদেশের মিশ্র সংস্কৃতির ছোঁয়ায় তুর্কির ইফতার থাকে বর্ণাঢ্য আয়োজনে। তুর্কিদের নিত্যদিনের ইফতারে যেসব খাবারের আইটেম না থাকলেই নয়, সেগুলো হচ্ছে- মেজ্জুল জাতের খেজুর, পাইড রুটি, কালো এবং সবুজ জলপাই, ফলমূল, মধু, মিষ্টি জাতীয় খাবার, টমেটো, সসা, শরবত বা জুস, ৩/৪ পদের পনির, মাখন, সুজুক (ঝাল সসেজ), পাস্তিরমাহ (মসলাদার গরুর মাংস) সহ আরো নানান ধরনের পদ। তবে তুরস্কের কিছু কিছু জায়গায় রমজান উপলক্ষে রমজান কিবাবি নামক একধরনের বিশেষ কাবাবের প্রচলন দেখা যায়। 

রমজান কিবাবি; Image Source: freepik.com

তবে ঐতিহ্যগত এবং জনপ্রিয়তার বিচারে তুরস্কের রামাদান পিডেসি এবং বোরাক নামক খাবারের কথা উল্লেখযোগ্য। রামাদান পিডেসি ইস্ট কিংবা ময়দা দিয়ে বানানো একধরনের রুটি বিশেষ, যেটিকে হাত দিয়ে আকৃতি দেয়া হয় এবং চাইলে এটাতে সবজি অথবা মাংসের কিমাও ব্যবহার করা যায়। তুর্কির বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের বোরাক বানাতে দেখা যায়। বাইরের দিকটা ইয়ুফকা পেস্ট্রি দিয়ে বানান হয়ে থাকে এবং ভেতরের দিকটাতে ফিলো পেস্ট্রির একটা পরত দেয়া হয় আর মধ্যে মসলাদার মাংস, পনির, শাকসবজি এমনকি আলু কিংবা সসেজ দিয়েও বানানো হয়ে থাকে। 

রামাদান পিডেসি। Image Source: recipesmaking.com

ইরান 

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের লোকেরা নিজেদের ইফতার আয়োজন যেমন বনাঢ্যভাবেই সাজায়, ঠিক তেমনি ইফতার আয়োজনে লোকেদের আতিথেয়তা করাটাও ইরানের লোকেদের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। ইরানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফলমূল, মিষ্টি জাতীয় খাবার এবং বিভিন্ন ধরনের পানীয় দিয়ে রোজাদাররা ইফতার করে থাকেন। তবে খাদ্যতালিকায় যে সব জিনিস না রাখলেই নয়, সেগুলো হচ্ছে- খেজুর, আখরোট, তরমুজ, তলেবি (বাঙ্গি ফল), আপেল, চেরি, টমেটো, লেটুস পাতার বিশেষ সালাদ, সুগন্ধিযুক্ত পাতা, মধু, পনির, হালুয়া, জুলভিয়া ও বামিয়া (পারস্যের ঐতিহ্যবাহী খাবার),  ইরানি জিলাপি ও ইরানি হালিম, রুটি, কাবাব, শামি লেপি (শামি কাবাব দিয়ে বানান খাবার), শোলে জার্দ (বিশেষ ধরনের ক্ষীর বা পায়েস) সহ আরো অসংখ্য পদ। 

শোলে জার্দ; Image Source: tourismofparsia.com

তবে ঐতিহ্যের দিক থেকে আশ-ই-রিস্তের জনপ্রিয়তা সবচাইতে বেশি। এটা একধরনের ইরানি নুডলসের দিয়ে তৈরি স্যুপ জাতীয় খাবার, যেটা বানানো হয়ে থাকে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি জাতীয় উপাদান দিয়ে। নুডলসের সাথে ছোলা, মটরশুঁটি এবং পুষ্টিকর শাকসবজির মিশ্রণে তৈরি করা হয় এ খাবার। 

আশ-ই-রিস্তে; Image Source: Con Poulos for The New York Times

ইরাক

ইরাক মুসলিম রাষ্ট্র হলেও শিয়া ধর্মের অনুসারীদের সংখ্যাই এখানে বেশি। তবে তা সত্ত্বেও ইফতার আয়োজনে শিয়া বা সুন্নিদের মধ্যে কোনো বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায় না। আর কেবলমাত্র ইফতারের ক্ষেত্রেই ইরাকের প্রাচীন সংস্কৃতিকে এখনো আগলে ধরে রেখেছে। 

সামুন; Image Source: tasteatlas.com

শুকনো এবং তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করেই শিনেনা নামক টক দই দিয়ে বানান শরবত থাকে ইরাকের খাদ্যতালিকায় সবার উপরে। এরপর নাওয়াসিফ (মূলত শুকনো, অথচ ভারি খাবারের পদ), কাবাব, উরুগ (বিশেষ ধরনের কাবাব), কুব্বা, কুব্বা হালাব (ভাত দিয়ে তৈরী বড়া), আলুর চপ, সামুন বা খুবুজ টানুর (রুটি), মাহাল্লাবি (দুধের তৈরি পুডিং) এবং হালাওয়াত শারীয়াহ (নুডলস জাতীয় খাবার) সহ আরো নানা আয়োজন। 

হালাওয়াত শারীয়াহ; Image Source: 196flavours.com

সংযুক্ত আরব আমিরাত 

সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং সৌদি আরবের ইফতার আয়োজনের মধ্যে বেশ মিল লক্ষ করা যায়। দুধ এবং খেজুরবিহীন ইফতার কখনোই করা হয় না সংযুক্ত আরব আমিরাত বা দুবাইয়ের লোকেদের। ভেড়ার মাংস এবং মসুরির ডাল দিয়ে বানান হারিরা নামক স্যুপ অতি সুস্বাদু এবং জনপ্রিয় ইফতার আইটেম। এরপর মালফুফ (মাংস এবং সবজির দিয়ে তৈরি রোল), ওউজি (ভেড়ার মাংস দিয়ে তৈরী বিশেষ খাবার), সায়াদায়া ফিশ (সমুদ্রের মাছ ভাজা), কউশা মাহাশি (মাছ দিয়ে বানান খাবার) এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার হিসেবে নাফেহ, বাকলাভাহ (পেস্ট্রি জাতীয়) এবং উম আলী (পুডিং জাতীয় খাবার) নামক খাদ্য দিয়ে শেষ হয়। 

নাফেহ; Image Source: arabacademy.com

তবে ঐতিগ্যগত খাবার হচ্ছে হারিস। বিভিন্ন শস্যদানা হাল্কা আঁচে গরু কিংবা মুরগীর মাংস দিয়ে রান্না করা হয়, যতক্ষণ না এটি গলে একেবারে জাউ হয়ে যায়। এরপর নামিয়ে বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করা হয়। 

হারিস; Image Source: chowcation.com

মিশর 

মিশরের ইফতার আয়োজন অন্যতম প্রধান খাবার হচ্ছে লেটুস পাতা। রমজানে এই পাতার কদর আরো বাড়ে। সাধারণত শরবত, দুধ, নানা রকমের ফল, ঐতিহ্যবাহী কেক এবং পিঠা দিয়েই মিশরের লোকেরা ইফতার আয়োজন করে থাকে। আবার, তায়েফ পিঠারও বেশ কদর আছে যেটা বাদাম, কিসমিসসহ আরো নানা উপকরণ সুস্বাদু করে তোলা হয়। এছাড়া, কাবাব, ছোলা, বিরিয়ানি, ফাত্তাহ (ভাত, মাংস, টমেটো দিয়ে তৈরী) এবং মসলাদার মাংসসহ বিভিন্ন ধরনের ভাজাপোড়া তো থাকেই। তবে আঙুর পাতা দিয়ে বানানো এক পদের খাবার এবং কাতায়েফ সবচাইতে প্রসিদ্ধ খাবার। 

ফাত্তাহ; Image Source: Andrew Crowley

আঙুর পাতার ভেতরে ভাত এবং মাংস পুরে দেয়া হয় এবং পরিবেশনের সময় সাথে লেবুর শরবত এবং জলপাই তেলও ব্যবহার করা হয় স্বাদের জন্য। আর কাতায়েফ হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সবচাইতে ঐতিহ্যবাহী প্যানকেক। যেটা ভেতরটা পনির, কাজু বাদাম এবং কিসমিস দিয়ে বেশ সুস্বাদু করে বানানো হয়ে থাকে। 

কাতায়েফ; Image Source: theworldinapocket

আলজেরিয়া 

আফ্রিকার এই দেশটিতে ইফতারকে বেশ গুরুত্বসহকারে পালন করা হয়ে থাকে এবং সেজন্য আলজেরিয়ানরা সাধ্যমতো চেষ্টা করে, ইফতারের আয়োজনে যেন কমতি না থাকে। খেজুর, শরবত আর বিভিন্ন ফলমূল, জিলাপি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবারের সমারোহের পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী আলজেরিয় স্যুপ, খাবজ এদ্দার নামক শুকনো রুটি বিশেষ, মাকুদা (আলু দিয়ে তৈরী চপ বিশেষ), দাজ্জাজ মায়াম্মার (মসলাদার আস্ত মুরগির রোস্ট), রোস্টেড পোট্যাটো (সেদ্ধ আলু এবং সবজি দিয়ে তৈরি সালাদ) সহ আরো অনেক আয়োজন। 

আলজেরিয় স্যুপ; Image Souce: womensweeklyfood.com

তবে প্রসিদ্ধ খাবারের পদের মধ্যে সর্বপ্রথমে নাম আসে বাউরেক নামক একপ্রকার রোল রুটির কথা, যার ভেতরটা মাংসের কিমা দিয়ে পূর্ণ থাকে। এছাড়া, শাকশৌকার কথাও বলা যায়, যেটি মূলত টমেটোর সসের সাথে ডিম পোচ দিয়ে বানানো হয়। এটা সাধারণত খাওয়া হয়ে থাকে খুবজ বা রুটি দিয়ে, এবং এটা এমন আহামরি কোনো ভারি খাবারও না, তাই এর জনপ্রিয়তাও বেশি। 

বাউরেক; Image Source:auxdelicesdupalaisnet.com

ভারত 

ভারত আদতে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার দেশ হলেও এখানে অনেক বেশি মুসলমানের বসবাস। আর ইফতার আয়োজনে ভারতের মুসলমানরা মুঘল ঐতিহ্যকে বহন করতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। খেজুর, পনির যুক্ত খেজুর, শরবত, ফালসা শরবত, শাহী তুকদা (ফিন্নি জাতীয় মিষ্টি খাবার), চিকেন শামী কাবাব, গাজরালা (গাজরের হালুয়া), কাবলি পুলাও, কাগজি কাবাব, দম বিরিয়ানি, মাটন ভুনা গোশত, শির খুরমা, হালিম, পায়া কারি, বটি কাবাব, খাসির লেগ রোস্ট সহ আরো নানান পদের খাবার। 

গাজরালা বা গাজরের হালুয়া; Image Source: cookwithkushi.com

তবে বিভিন্ন ধরনের ডাল বা সবজি দিয়ে বানান পাকোড়া না থাকলে ভারতীয় ইফতার যেন অপূর্ণই থাকে। এছাড়া, দই বড়া নামক খাবারটি ভারতের ইফতারের জন্য অন্যতম প্রসিদ্ধ খাবারের পদ। মসুর বা খেসারির ডালের বড়াকে ডুবো তেলে কড়া করে ভাজা হয়, পরে নামিয়ে মিষ্টি তেঁতুল আর টক দই দিয়ে বানানো সসের মধ্যে ডুবিয়ে রাখা হয়। স্বাদের জন্যে আলাদা চাটনিও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। 

দই বড়া; Image Source: vegreceipesofindia.com

পাকিস্তান 

মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানে ইফতার আয়োজন করা হয় বেশ উৎসবমুখর পরিবেশেই। রুটি এবং মাংস পাকিস্তানের সবচাইতে বেশি প্রচলিত এবং প্রসিদ্ধ খাবার। এছাড়াও, শরবত ও ফলমূলের পাশাপাশি, পাকোড়া, ব্রেড রোল, চিকেন সামুসা বা টিক্কা, তান্দুরি কাটলেট, ঘিলাফি কাবাব, নুডলস কাবাব, সুফিয়ানি বিরিয়ানি, কিমা কেরালা, ফ্রুট সালাদ, ফ্রুট ছাট, কাজলা, করাচী ফালুদা ইত্যাদি। 

ঘিলাফি কাবাব; Image Source: sooperchefs.com

তবে সবচাইতে প্রচলিত এবং প্রসিদ্ধ হচ্ছে মাংসের হালিম, কেননা আগেই বলা হয়েছে পাকিস্তানিরা রুটি এবং মাংস খেতে পছন্দ করে তাই মাংসের হালিমটা যেন ইফতারে রাখা বাধ্যতামূলক। এই হালিমটা মূলত গম, ডাল, মাংস, মরিচ দিয়ে বানানো এক ধরনের তরকারী বিশেষ যা খেতে।

হালিম; Image Source: medium.com

মরক্কো 

মরক্কোতে সরকারের পক্ষ থেকে তোপধ্বনি দিয়ে সেহরি এবং ইফতারের সময় জানিয়ে দেয়া হয় জনসাধারণকে। ইফতারকে বলা হয় এফতোর। মরক্কোতে অঞ্চলভেদে খাবারের ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। খেজুর, দুধ, জুস এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার থাকাটা বাধ্যতামূলক। তবে দেশটি খাবারের ঐতিহ্যকে এখনো আঁকড়ে ধরে আছে। যার জন্যে প্রায় দুই ঘণ্টা সময় নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হয় মরক্কোতে, যেন খেতে খেতে গল্পগুজব করা যায়। 

স্যাল্লো; Image Source: Christine Benlafquih

সেদ্ধ ডিম, ভাজা মাছ, প্যাস্ট্রি এবং বিভিন্ন ধরনের আর স্বাদের প্যানকেক, খুবজ রুটি, স্যাল্লো (পুডিং বা প্যানকেকের মতোই), ছ্যাবেকিয়া (হালুয়ার বিস্কুট), ব্রিওয়াত (মিষ্টি বা সবজির রোল), মেস্ম্যান/ম্যালুই (পরোটা বিশেষ), ক্রাচেল (বার্গারের মতই অনেকটা), পিটা ব্রেড (রুটি) সহ আরো নানান পদ। তবে জনপ্রিয়তার তালিকায় শীর্ষে আছে হারিরা স্যুপ এবং কুসকুস। হারিরা হচ্ছে এক ধরনের টমেটো, ডাল এবং বিভিন্ন সবজি দিয়ে বানানো পুষ্টিকর আর সুস্বাদু স্যুপ বিশেষ। আর কুসকুস হচ্ছে সেমোলিনা গমের গুঁড়া দিয়ে বানানো বিশেষ মজাদার খাবার। 

কুসকুস; Image Source: foodexplorers.com

ফিলিস্তিন 

প্রতিনিয়ত সংঘাতে থাকা এই দেশটির ইফতার আয়োজনে তেমন বর্ণাঢ্য আয়োজন লক্ষ করা যায় না। এমনকি এখানকার বাসিন্দাদের বোমার আঘাতে ধ্বংস নিজের বাড়ির সামনের রাস্তায় টেবিল বিছিয়ে ইফতারও করতে হয়। তবে তা বলে যে ইফতার থেমে থাকে, তা কিন্তু নয়। হয়তো আয়োজন তেমন থাকে না, কিন্তু তাও সকলে মিলে অন্তত ইফতারের সময়টাতে খানিকটা প্রাণবন্ত থাকার চেষ্টা করে। অন্যান্য দেশের মতোই খেজুর, শরবত, দুধ, সেদ্ধ শাকসবজি এবং তাজা ফলমূল থাকতেই হবে ফিলিস্তিনিবাসীর ইফতার আয়োজনে। এছাড়া কানাফেহ, মামুল ডেট কুকিজ (খেজুরের বিস্কুট), দাওয়ালি এবং কুসা (আঙুরের তৈরী খাবার বিশেষ) এবং মাকলুবা (ভাত, সবজি আর মাংসের মিশ্রিত এক খাবার পদ) সহ আরো নানান পদের খাবারের আয়োজন করা হয়ে থাকে। 

মামুল ডেট কুকিজ; Image Source: kitchenofpalestine.com

ফিলিস্তিনের শীতকালীন স্যুপ নামে পরিচিত আদাশ বা লেন্টিল স্যুপ হচ্ছে এই দেশের ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় একটি ইফতারের পদ। যদিও এটি শীতকালেই সবচাইতে বেশি দেখা যায়, কিন্তু রমজান যে ঋতুতেই হোক না কেন, ইফতার আয়োজনে আদাশ চাই-ই চাই। পাকিস্তানের হালিমের মতো হলেও এটা ভিন্নভাবে এবং ভিন্ন উপায়ে তৈরি করা হয়। আদাশ তৈরিতে যে মসুর বা কলাই ব্যবহার করা হয়ে থাকে, তা এই দেশের সবচাইতে প্রাচীন চাষাবাদের ফসল। 

আদাশ। Image Source: colourfulreceipes.com

ফিলিপাইন 

ফিলিপাইনের লোকেরা সাধারণত মশলাদার খাবারের চেয়ে ফলমূল, শাকসবজি এবং স্যুপ জাতীয় খাবারেই বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আর ইফতারের আয়োজনেও এমনটাই প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। আরোজ ক্যালডো হচ্ছে চিকন চাল এবং মুরগী দিয়ে তৈরি এক ধরণের স্যুপ বিশেষ। মুরগি এবং চালকে আদার ঝোলে জ্বাল দেয়া হয় যতক্ষণ অবধি সবকিছু একদম জাউয়ের মতো না হয়ে যায়। তবে কেবল মুরগিই নয় বরংচ মাঝে মধ্যে গরুর মাংস দিয়ে এই স্যুপ তৈরি করা হয়ে থাকে। ইফতার ছাড়াও সারাবছর ব্যাপীই এই স্যুপ ফিলিপাইনে অত্যন্ত জনপ্রিয় খাবারের পদ। 

আরোজ ক্যালডো; Image Source: istock.com

লেবানন 

লেবাননের ইফতার আয়োজনে মিশরসহ আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশসমূহের খাবারের সংস্কৃতির সঙ্গে ব্যাপক মিল লক্ষ করা যায়। খেজুর, শুকনো ফল এবং শরবত বা দুধ ইফতারের আয়োজনে বাধ্যতামূলক। এছাড়া জাতীয় খাবার টাবুলাহ (সবজির সালাদ), তাহিনি (আলুর সালাদ), লেবানিজ আলুর সালাদ, শিপার্ড সালাদ (ফলের সালাদ), লেন্টিল স্যুপ, চরবা (মরক্কান স্যুপ), টক দই আর আলুর স্যুপ, ফাতায়ের (নিমকির মতো ভেতরে মাংস থাকে), কিব্বে (কাবাব), আরায়েস, ইয়ালাঞ্জি (আঙুর পাতার খাবার), লাহম বি আজিন (রুটির সঙ্গে মাংসের পদ), খাবসা, মানসাফসহ আরো নানান পদের খাবার। 

টাবুলাহ; Image Source: splendidtable.com

জাতীয় খাবার হিসেবে টাবুলাহর সাথে ফাটুশকেও গণ্য করা হয় কেননা সতেজ আর টাটকা ফলমুল আর শাকসবজি দিয়ে তৈরী এই সালাদের তুলনা আর অন্য কিছু নেই। শসা, টমেটো, মুলা, লেটুস পাতা এবং ওয়াটারক্রেস (এক ধরনের জলজ শাক) দিয়ে এই সালাদ প্রস্তুত করা হয়ে থাকে। 

ফাটুস; Image Source: simplyleb.com

ওমান 

খেজুর, শুকনো ফল আর লাবাং দিয়ে ইফতার শুরু করলেও ওমানিদের খাবারের তালিকায় হরেক পদের খাবারের বৈচিত্র্যতা লক্ষ্যনীয়। যেগুলোর মধ্যে লাবনেহ (ক্রিমি পনির), মৌতাবেল (পুডিং জাতীয়), উম আলী, ওমানিয়ান হালওয়া এবং কাওয়া (কফি) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। কাবাব এবং বিরিয়ানি জাতীয় খাবারগুলোও ওমানিদের ইফতার আয়োজনে জায়গা করে নেয়। 

উম আলী; Image Source: arabamerica.com

তবে বিশেষভাবে রমজানের জন্য ইফতারের আয়োজনে উল্লেখযোগ্য নাম হচ্ছে আরশিয়া। আরশিয়া কেবলমাত্র রমজানই নয়, বরং সারা বছর জুড়ে ওমানে যত উৎসব পালন করা হয়, সেগুলোর অন্যতম প্রধান খাবার এটা। এটা প্রস্তুত করতে চালের সাথে মাংস কিংবা মাছকে ভালোভাবে মিশিয়ে ফেলতে হয়, ইটালিয়ান রিসোটির মধ্যপ্রাচ্যের সংস্করণ বলা যায় এই খাবারটিকে। 

আরশিয়া। Image Source: thermomix.com

সিরিয়া 

পুরো রমজান জুড়েই সিরিয়াতে রোজার এবং ইদের আমেজ লক্ষ্য করা যায়। একটা উৎসব ভাব লক্ষ্য করা নাগরিকদের মধ্যে। খেজুর আর ফলের জুস/শরবত ছাড়া সিরিয়ানরা ইফতারে বসার কথা চিন্তাও করে না। সারাদিন না খেয়ে থাকায় আগেই ভারী খাবার না খেয়ে তাই ইফতার খুলেই স্যুপ বা সালাদ জাতীয় খাবার খেয়ে থাকে সিরিয়ানরা। ইফতার আয়োজনে সিরিয়ান ফাত্তাহ, কোবেবা (কাবাব), টাবুলাহ (সালাদ), অরজো স্যুপ, মুসাব্বাক (জিলাপি), সাম্বুসাক (সমুচা), ফাত্তুস (সালাদ), এবং ফাউল খাবারের পদ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মিষ্টি জাতীয় খাবারের মধ্যে ইশতা (পুডিং), পেস্ট্রি এবং অন্যতম জনপ্রিয় নায়েম (পাঁপড়ের মতো)। 

সিরিয়ান ফাত্তাহ; Image Source: thenation.com

ঐতিহ্যগত দিক থেকে সিরিয়াতে প্রতি শুক্রবার ফাউল নামক খাবারটি খাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও রমজানের সময় তা নিত্যদিনের ইফতার আয়োজনে জায়গা করে নেয়। পেঁয়াজ, টমেটো, রসুন, শাকপাতা, শস্যদানার সস এবং পরিমাণমতো অলিভ অয়েল দিয়ে এই খাবারটি তৈরি করা হয়ে থাকে। ইফতারের সময় রুটি দিয়ে এই খাবার খেয়ে থাকেন সিরিয়ানরা। 

ফাউল; Image Source: themuslimtimes.com

লিবিয়া 

খেজুর, খোরমা, শুকনো ফল, দুধ এবং শরবত দিয়ে ইফতারের প্রথম পর্ব সম্পন্ন করা হয়ে থাকে লিবিয়াতে। পুষ্টিকর স্যুপ লিবিয়ার ইফতার আয়োজনে থাকাটা যেন বাধ্যতামূলক। এরপর শুকনো রুটি থাকে অথবা পিজ্জার মতো করে বানানো রুটিও থাকে; যেমন বোরেক – মাংস/আলু দিয়ে পরোটার মতো করে বানান হয়ে থাকে। এছাড়া, দোলমা, মালশুকা (রোল জাতীয়), ইম্বাতিন (আলুর স্লাইসের মধ্যে কোফতা দেয়া টিকা), তাজিন (ডিমের তৈরি) সহ হরেক পদের খাবার। 

বোরেক; Image Source: withaspine.com

ইফতার পরবর্তী মিষ্টান্নের তালিকায় লিবিয়াতে আসিদার চাইতে জনপ্রিয় খাবার আর দ্বিতীয়টি নেই। এই মিষ্টি তৈরিতে খুব আহামরি কোন উপকরণের দরকার পড়ে না কেবল আটা, পানি, মাখন আর মধু দিয়েই এই খাবারটি নিমেষেই তৈরি করা সম্ভব। 

আসিদা; Image Source: themuslimtimes.com

আফগানিস্তান

যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটিতে ইফতারের আয়োজন এতটাও ঘটা করে হয় না; তবে তাই বলে একদমই যে কোনো আয়োজন হয় না, তাও কিন্তু নয়। সুন্নতি খাবার খেজুরের সঙ্গে সেদ্ধ আলু আর পুঁইশাক ছাড়াও অন্যান্য আরও শাকসবজি এবং ফলের সালাদ প্রাধান্য পায় ইফতারের আইটেমে। ভারি খাবার হিসেবে ইফতারে আফগানরা শুকনো ফল, রুটি আর মাংসের তরকারি, স্যুপ, পেঁয়াজু, বেগুনি, কাবাবসহ এমনকি বিরিয়ানি বেশ পছন্দ করে। 

বোলানি পরোটাল; Image Source: vforveggy.com

তবে আফগানদের ইফতারের ঐতিহ্য বা সংস্কৃতি বলতে গেলে ইফতারের আয়োজনে টেবিল অবশ্যই বোলানি পরোটা থাকতে হবে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা ভারতে আলু পরোটা নামে পরিচিত হলেও আফগানিস্তানে এটা বোলানি পরোটা নামে প্রসিদ্ধ। এছাড়া, পানীয়তে তাজা ফলের জুস, শরবত এবং দুধের আয়োজন করে থাকে। ইফতার শেষে নামাজ আদায় করার পর থাকে বাসায় তৈরি বা কিনে আনা বিভিন্ন মিষ্টান্ন। যার মধ্যে- রোহত (মিষ্টি রুটি), গোরমান্দিস (মিষ্টি রোল), খাজুরি (খেজুরের তৈরী মিষ্টি খাবার) এবং জালেবি (জিলাপি) অন্যতম। 

আফগান জালেবি। Image Source: splendidtable.com

ইয়েমেন  

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ইয়েমেনে এত জমজমাট করে ইফতার আয়োজনের রেওয়াজ না থাকলেও ঘরোয়া পরিবেশে ইয়েমেনীয়রা বেশ ভালোই আয়োজন করে থাকে ইফতারের সময়। সাধারণত খেজুর, জুস, সালাদসহ কমন আইটেমগুলো থাকেই; এছাড়া সাম্বুসিক (সমুচা), পুফি (নিমকি), সাফুতা (দই বড়া জাতীয় খাবার), খুশকা (বিরিয়ানি), বিহাইভাস (বিশেষভাবে তৈরি রুটি), বিন্ত আল শান (ঘরোয়াভাবে তৈরি মধু দেয়া কেক), ক্যাটলিক্স (আলুর চপের মতো), মাহালাবিয়া (দুধের পুডিং) সহ বিভিন্ন পদের কাবাবের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া মিষ্টান্নও থাকে খাবারের শেষভাগের জন্য। 

মাহালাবিয়া; Image Source: simplyleb.com

মালয়েশিয়া  

মালয়েশিয়ার লোকেরা সাধারণত খেজুর দিয়ে রোজা ভেঙে শরবত এবং বিভিন্ন ধরণের পানীয় খেয়ে নামাজে চলে যায়। নামাজ আদায় শেষে এসে ভারি খাবার খেয়ে থাকে। সব ধরনের ফলমূল ছাড়াও বুবুর (পরিজ), লেমাক ল্যাঞ্জা, পপিয়া বানাস, নাসি আয়াম, আয়াম পেরিক, রেনডান, রামলি বার্গার, কেটুপাক ইত্যাদি থাকে ইফতার আয়োজনে। এছাড়া পুরো রমজান জুড়েই বুবুর ল্যাম্বাক নামক এক বিশেষ আর ঐতিহ্যবাহী খাবার খেয়ে থাকে মালয়েশিয়ানরা। 

বুবুর ল্যাম্বাক; Image Source: urbanadventures.com

মালদ্বীপ  

মালদ্বীপে ইফতারকে রোয়াদা ভিলান নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। অন্যান্য দেশের মতো এই দেশেও ইফতারের মূল উপাদান হিসেবে খেজুর এবং শুকনো ফলের প্রচলন রয়েছে। এছাড়া থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার যেমন – কান্ডু কুকুলহু (টুনা মাছের তরকারি), কিরু এন্ড ফোলহি (নারকেল আর দুধ দিয়ে বানানো পুডিং আর পিঠা), কানামাদহু চকলেট ফাজ, ক্রিম জেহি বানাস (জেলি মিশ্রিত রুটি), পাভ্লোভা (ফলের সালাদ বিশেষ), ওটমিল কুলহি বোয়াকিবাহ (ওট দিয়ে বানান রুটি), মাস রোহি (গমের রুটি), বাটার চিকেনসহ আরো নানান পদের খাবার। আর জুসের মধ্যে ফানি এবং আমের জুস প্রাধান্য পায়। 

কান্ডু কুকুলহু; Image Source: monumedhu.com

কাতার 

বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কাতারের সাধারণ জীবনযাপনও অনেকাংশেই রাজকীয় ঘরানার। আর সেখানে ইফতারের মতও একটা আয়োজনকে তাই আরো বেশি রাজকীয় আর সমৃদ্ধ করতেই ভালোবাসে কাতারবাসী। খেজুর, শুকনো ফল, সালাদ এবং পানীয় যেমন – বিল্টু (এক প্রকারের শরবত), লাবাং, ফলের জুস সহ দুধও থাকে এই ক্ষেত্রে। আর ভারী খাবারের মধ্যে সর্বপ্রথমেই নাম আসে হারিসের যেটা মুসলিম অন্যান্য দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয় বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। এছাড়া, খাবসা রাইস (বিরিয়ানি), লুকাইমাত (তালের পিঠার মতো), খবুজ ওরগাক (খাসির মাংস ও সবজির পদ), মাধরুবা (অনেকটা পুডিংয়ের মতো), বালালিত (মিষ্টি স্বাদের পাস্তা) এবং উম আলী বা মাহালাবিয়া (পুডিং) অন্যতম। 

বালালিত; Image Source: sbs.com.uk

বিশ্বের অনেক দেশেরই ইফতার আয়োজন সম্পর্কে ধারণা হলো। তবে এই রমজানের দিনেও যারা সেহরি না খেয়ে রোজা রাখছে, ইফতার কী দিয়ে করবে সেই চিন্তা বাদ দিয়েই- আমরা কি তাদের কথা ভাবছি? অন্তত এই করোনার কারণে লকডাউনের দিনগুলোতে তো ভাবা উচিত। রমজানের পরিপূর্ণ ফযিলতের আশায় আসুন নিজ নিজ অবস্থান থেকে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াই। 

This article is in Bengali Language. This is about the food culture all around the world that serves only in Ramadan on Iftar. 

Necessary references have been hyperlinked inside the article. 

Featured Image: rawpixel.com

Related Articles