Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্লুবেল ফরেস্ট: মায়াবী অরণ্যলোকের কথকতা

“যখন আমি তাকাই নদীর পাড়ে
আমার এলোমেলো দৃষ্টি গিয়ে পড়ে
কাঁপতে থাকা ছোট্ট একটা ফুলে
সে যে এক মিষ্টি ব্লুবেলে।”
 – অ্যান ব্রন্টি

বাগানে পথের কিনারে, তৃণভূমি জুড়ে কিংবা বনের মাঝে খুঁজে পাওয়া যায় মিষ্টি ব্লুবেলদের। ছোট একটা ঝাড় বা আস্ত একটা বন- ব্লুবেলের মোহনীয় সৌন্দর্য আপনার নজর কাড়বেই। নীলাভ বেগুনি রঙের ঘণ্টাকৃতির এই ফুলটি ফোটে বসন্তকালে। তারপর পুরো বসন্তকাল জুড়ে চলে ব্লুবেলের বিস্ময়কর প্রদর্শনী। বহুবর্ষজীবী ব্লুবেলের অনেকগুলো প্রজাতি আছে। সেসবের মধ্যে ইংলিশ ব্লুবেল (Hyacinthoides non-scripta) জন্মে বনে-বাদাড়ে। চিরহরিৎ বনের ঘন গাছগাছালির চাদরের নিচে এরা জন্মাতে পারে না। মূলত পাতাঝরা বনের গাছগুলোয় যখন নতুন পাতা জন্মে, সেই পাতার ছায়ায় জন্মায় এই নীল সুন্দরী।

বুনো ব্লুবেল শাখার একপাশে ঝুলে থাকে। অন্যদিকে স্প্যানিশ ব্লুবেল (Hyacinthoides hispanica) সোজা কাণ্ডের আগায় ঝুলতে থাকে। স্কটল্যান্ডের জাতীয় ফুল স্কটিশ ব্লুবেলের কথাও ভুলে গেলে চলবে না। এদের ঘণ্টার আকৃতি একটু অন্যরকম। এদেরকে বলে হেয়ারবেল। ব্লুবেল অরণ্যে হেঁটে যাওয়ার সময় এর তীব্র সুগন্ধ আপনার নাকে এসে লাগবে। ব্লুবেলের উপস্থিতি বনের প্রাচীনত্বের প্রতীক। ব্লুবেল মূলত ইউরোপে পাওয়া যায়- ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, স্কটল্যান্ড প্রভৃতি দেশে।

ব্লুবেল নিয়ে প্রচলিত আছে নানা উপকথা। ব্লুবেলের ঘণ্টা নাকি বাজানো হতো পরীদের সভা ডাকতে। আর আপনি যদিও ভুলেও ব্লুবেল ছিঁড়েছেন, তাহলে পরীরা আপনাকে পথ ভুলিয়ে ছাড়বে! সৌন্দর্য ছাড়াও ব্লুবেলের আছে বেশ কিছু ঔষধি গুণ।

দেখতে চান ব্লুবেলের কার্পেট? হারাতে চান কোনো মায়াবী ব্লুবেল অরণ্যে? তাহলে আপনাকে যেতে হবে ইংল্যান্ডে। কারণ, ব্লুবেলের চাদরে ছাওয়া বনভূমি ইংলিশ বসন্তের অবিচ্ছেদ্য অংশ। চলুন ঘুরে আসা যাক ইংল্যান্ডের কয়েকটি ব্লুবেল অরণ্য থেকে।

আশরিজ এস্টেট

হার্টফোর্ডশায়ার, বাকিংহামশায়ার ও বেডফোর্ডশায়ার এর সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত এই এস্টেটটি ন্যাশনাল ট্রাস্টের একটি বনাঞ্চল। এস্টেটের ভেতর দিয়ে চলে গেছে অসংখ্য পায়ে চলা পথ, সবুজ মাঠ, জলাশয় ও বনভূমি। মূল রাস্তা থেকে সরে গেলে দেখা মিলবে হরিণের। পুকুরের উপরে আছে ব্রিজ। ব্রিজ পেরোলে কটেজ।

আশরিজের প্রাণোচ্ছল ব্লুবেল অরণ্য; Image Source: national trust

প্রত্যেক বসন্তে এস্টেট সাজে নতুন রূপে। এস্টেটের বনভূমি ঢেকে যায় বেগুনি-নীল ব্লুবেলের কার্পেটে। বসন্তের কয়েক সপ্তাহ এখানে ব্লুবেলের রাজত্ব চলে। এস্টেটের ডকি উড অংশে ব্লুবেলের দেখা পাওয়া যায়। দীর্ঘ গাছের সবুজ পাতার পটভূমিতে নীল ব্লুবেলের বৈপরীত্য অপার সৌন্দর্য নিয়ে ধরা দেয়।

মিচেলডেভার উড

এটি মূলত বিচ বন। সাথে রয়েছে কনিফারের অনন্য সমাবেশ। বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, পোকামাকড়, হরিণ ও প্রজাপতির অভয়ারণ্য এটি। অসংখ্য রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে বনের ভেতর দিয়ে। এসব পথ ধরে চলতে চলতে আপনি উপভোগ করতে পারবেন ব্লুবেলের অনন্য শোভা। সকালে যখন কুয়াশা বিদূরিত হতে শুরু করে, কাঠের কাণ্ডের ফাঁক দিয়ে সূর্যালোক এসে পড়ে বনের উপর, তখন ব্লুবেল দেখার শ্রেষ্ঠ সময়।

ব্লুবেল অরণ্যে আলো-ছায়ার খেলা; Image Source: flickr

আলোছায়ার এই লুকোচুরি খেলা দেখতে অসাধারণ লাগে। বেড়াতে গিয়ে কখনোই ব্লুবেল ছিড়বেন না। স্থানীয় পুরাণ বলে, ব্লুবেল ছিড়লে পরীর অভিশাপ লাগে। তারপরও অনেক ব্লুবেল নষ্ট হচ্ছে পর্যটকদের কারণে। ১৯৮১ সালে অবশ্য যুক্তরাজ্য ব্লুবেল সংরক্ষণে আইন করেছিল।

হ্যাচল্যান্ড পার্ক

হ্যাচল্যান্ডের পার্কের উত্তরের ছোট্ট বনটি সারে অঞ্চলের সেরা ব্লুবেল বন। ইস্ট ক্ল্যানডনে অবস্থিত এই শান্ত ছোট বনটি চেস্টনাট, ওক, বিচ গাছে ভর্তি। প্রতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে বনটি মেতে ওঠে রঙের অদ্ভুত সমারোহে। পরিণত হয় নীল ব্লুবেলের সমুদ্রে। মনমতানো গন্ধে ভরে যায় বনের বাতাস।

হ্যাচল্যান্ডে ব্লুবেলের সমাহার; Image Source: national trust

হাজার হাজার পর্যটক ব্লুবেলের সৌন্দর্য দেখতে এসময় পার্কে ভিড় জমান। আপনি বসন্তে পার্কে যেতে না পারলেও ক্ষতি নেই। পার্কটি বছরের অন্যান্য সময়েও খোলা থাকে। খোলা মাঠ, সবুজ বন, ৪০০ একর জমিতে নির্মিত লাল ইটের প্রাচীন ভবন- দেখার মতো অনেককিছুই আছে এখানে। ভবনের ভেতরটা বিখ্যাত কোবে পরিবারের সংগ্রহ দিয়ে সাজানো। এর মধ্যে আছে শেক্সপীয়রের ছবি ও বিখ্যাত সব সঙ্গীতজ্ঞের ব্যবহৃত নানা বাদ্যযন্ত্র, বিশেষ করে কিবোর্ড।

রেনারডেল

রেনারডেলের ব্লুবেলগুলো বেশ আলাদা। কারণ এরা বনে জন্মে না, জন্মে পাহাড়ের ঢালে, খোলা আকাশের নিচে। বনের ব্লুবেলের চেয়ে বেশ কিছুটা সময় পরে ফোটে এরা। রেনারডেলের পাহাড়ি ব্লুবেল দেখতে হলে হাঁটা শুরু করতে হবে ক্রামক ওয়াটার লেকের পাড়ের সিনডারডেল কমন থেকে।

রেনারডেলের ব্লুবেল অরণ্য মানেই বৈচিত্র্য; Image Source: andrews walks

পথে পড়বে সিনডারডেল বেক। উপত্যকা পেরিয়ে চলে যেতে হবে রেনারডেলের উপরের অংশে। এখান থেকে ভালোভাবেই দেখা যাবে ব্লুবেল। ব্লুবেল দেখার পর নিচে নেমে পথে পাবেন বাটারমেয়ার গ্রাম। গ্রাম থেকেও ব্লুবেলের সুন্দর দৃশ্য চোখে পড়ে।

ইসাবেলা প্ল্যানটেশন

দক্ষিণ লন্ডনের রিচমন্ড পার্কে ভিক্টোরিয়ান বনভূমির মাঝখানে ৪০ একরের বাগান এটি। বাগানে প্রচুর পরিমাণে রডোডেনড্রন, ক্যামিলিয়াসহ নানা ধরনের দুষ্প্রাপ্য গাছ রয়েছে। তবে পার্কটি এজালিয়া ফুলের জন্য বেশি বিখ্যাত। ১৮৩১ সালে যখন পার্কের যাত্রা শুরু হয়েছিল, তখনই এর বেশিরভাগ বিচ, চেস্টনাট গাছগুলো লাগানো হয়।

নানা রঙের ফুলের মাঝে অনন্য ব্লুবেল; Image Source: tripsavvy

 

সাধারণ একটি স্ট্রিমসাইড ওয়াক থেকে পার্কটি আজ ৪০ একরের লন, পুকুর, লেক, বাগানের সমষ্টি। এ বাগানে পাখির কিচিরমিচিরের শব্দে বিমোহিত হতে হতে ব্লুবেল সমারোহ দেখতে পাবেন।

হার্ডক্যাসল ক্র্যাগস

শীতের ধূসর দিনের শেষে হেবডেনডেলে বসন্ত আসে নতুন জীবন নিয়ে, উপত্যকাকে নতুন রঙে রাঙিয়ে। পাখির কলরবে মুখরিত হয় বন। ফুলে ফুলে রাঙে বনভূমি। ব্লুবেলরাও হাসে তাদের উজ্জ্বল রঙ নিয়ে, উচ্ছলতা ছড়িয়ে। হেবডেন ব্রিজের কাছেই হার্ডক্যাসল ক্র্যাগ। ২০ মাইলের বেশি হাঁটা পথ চলে গেছে নদীর পাড় দিয়ে, ঝর্ণার ধার দিয়ে, পাহাড়ের কোল ঘেঁষে। এলমেট ফার্মহাউজের নিচের এই উপত্যকাটি সারা বছরই অপার সৌন্দর্যে ভরপুর থাকে।

ব্লুবেল শোভিত উপত্যকা; Image Source: national trust

 

গ্রীষ্মে ঘন সবুজ পাতায় ছেয়ে থাকে বন, শরতে হয় সোনালি। নদীর উপর ব্রিজ আছে। এখানে চোখে পড়বে বিচিত্র রকমের পাখি ও তাদের শিকারের দৃশ্য। নানারকম ছত্রাকের আবাসস্থল হিসেবে বনটির খ্যাতি আছে। হার্ডক্যাসল ক্র্যাগের কেন্দ্রে আগে আছে গিবসন মিল, যা একসময় জলবিদ্যুৎ দিয়ে চালিত কটনমিল ছিল।

ব্রিড হাই উড

উডল্যান্ড ট্রাস্ট কার পার্ক থেকে হাঁটতে শুরু করলে একটি ঘাসে ছাওয়া রাস্তা ও ঢাল পেরিয়ে বিচ বন পড়বে। তারপরই ৬৪৭ একরের বিচিত্র গাছগাছালির সংগ্রহ ব্রিডহাই উড। বহু পুরোনো এই বনভূমি একসময় রোমানদের অধিকারে ছিল। বসন্তে এখানে ব্লুবেল ফুটতে দেখা যায়।

বসন্তনন্দিনী ব্লুবেলে সেজেছে প্রকৃতি; Image Source: shutterstock

বুনো এনিমোনের দেখাও মেলে এখানে। আরো পাবেন পিগনাট ও প্রিমরোজ। প্রাচীন কনিবারো বনের উপস্থিতি আছে এখানে। শান্ত সকাল বা বিষণ্ন বিকেলে এখানে একটুখানি হাঁটাহাঁটি আপনার মন ভালো করে দেবেই।

প্রতিটি বুনো ব্লুবেলের আলাদা সৌকর্য আছে, যা আমাদের মনকে সুখানুভূতিতে ভরিয়ে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। প্রতিটি ব্লুবেল অরণ্যেের নীরব মুখরতা আমাদের প্রকৃতির রূপসুষমার সাথে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার আবেদন ধারণ করে। এই বসন্তনন্দিনীর লালিত্য যেন কিছু সময়ের জন্য হলেও জীবনের কঠোরতা ও কলুষতাকে দূরে সরিয়ে সতেজতা ও কোমলতার পরশ বুলিয়ে দিতে পারে। সুরক্ষিত থাক পৃথিবীর ব্লুবেল অরণ্যগুলো।

This is a Bangla article about bluebell forest. Best bluebell forests of England have been disscussed in the article.

All the references are hyperlinked inside the article. 

Featured Image: mix96

Related Articles