Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নিজেদের নাম পরিবর্তন করেছিল যে দেশগুলো

১৯৭১ সালের পূর্বে আমরা ছিলাম পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসী। কিন্তু স্বাধীনতার পর আমাদের দেশটি পরিচিতি পায় বাংলাদেশ হিসেবে। স্বাধীনতার পর নতুন নামে পরিচিত হওয়াটা অবশ্য খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। শুধু নাম না, একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্মের পর তার জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত, সীমানা, সংবিধান, সরকার পদ্ধতিসহ অনেক কিছুই নতুন করে নির্ধারণ করতে হয়। কিন্তু স্বাধীনতা ছাড়াও কোনো কোনো দেশের নাম পরিবর্তন করা হতে পারে।

দেশের নাম পরিবর্তনের সর্বসাম্প্রতিক উদাহরণ আফ্রিকান রাষ্ট্র সোয়াজিল্যান্ডের। গত ১৯ এপ্রিল দেশটির ৫০তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে দেশটির রাজা তৃতীয় মসোয়াতি ঘোষণা করেন, এখন থেকে আর সোয়াজিল্যান্ড (Swaziland) না, বরং দেশটি পরিচিত হবে ইসোয়াতিনি (eSwatini) হিসেবে। নাম পরিবর্তন করার কারণটি খুবই অদ্ভুত। রাজার ভাষায়, তারা যখন বিদেশে যান, তখন অনেকেই সোয়াজিল্যান্ডকে সুইজারল্যান্ড বলে ভুল করে। এই ভুল সংশোধন করার জন্যই তিনি দেশটির নাম পাল্টে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সোয়াজিল্যান্ডের মানচিত্র ও পতাকা; Source: Dreamstime.com

ইসোয়াতিনি শব্দটিরও অর্থ সোয়াজিল্যান্ডের মতো একই- ‘সোয়াজিদের দেশ’। এবারই আনুষ্ঠানিক ভাবে নাম পরিবর্তন করা হলেও দীর্ঘদিন ধরেই রাজা সোয়াজিল্যান্ডের পাশাপাশি ইসোয়াতিনি নামটাও ব্যবহার করে আসছিলেন। ২০১৪ সালে দেশটির প্রথম সংসদের অভিষেকের সময় এবং ২০১৭ সালে জাতিসংঘের ভাষণেও তিনি দেশটিকে ইসোয়াতিনি বলে সম্বোধন করেছিলেন। দেশটির পাসপোর্টে ইংরেজি ও ফরাসি ভাষায় সোয়াজিল্যান্ডের পাশাপাশি ইসোয়াতিনি নামটিরও অস্তিত্ব আছে।

তবে পাসপোর্টই কোনো দেশের নামবাহী একমাত্র নথি না। দেশের সংবিধান এবং জাতীয় সঙ্গীত থেকে শুরু করে মুদ্রা, সরকারি নথিপত্র, সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্যাড, সীল, ওয়েবসাইটসহ অসংখ্য স্থানে একটি দেশের নামের উপস্থিতি থাকতে পারে। একবার নাম পরিবর্তন করলে তার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সব ধরনের তথ্য হালনাগাদ করতে গিয়ে খরচ হতে পারে হাজার হাজার কোটি ডলার। কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেক দেশই এ পর্যন্ত তাদের নাম পরিবর্তন করেছে। কেউ স্বাধীনতার সময়, কেউ সোয়াজিল্যান্ডের মতো ভিন্ন কোনো সময়। চলুন জেনে নিই নাম পরিবর্তন করা উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দেশের কথা।

রোডেশিয়া/জিম্বাবুয়ে

জিম্বাবুয়ের মানচিত্র, পতাকা ও প্রতীক; Source: freepik.com

১৮৯৮ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বর্তমান জিম্বাবুয়ের নাম ছিল সাদার্ন রোডেশিয়া। রোডেশিয়া নামটির উৎপত্তি হয়েছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ব্যবসায়ী সেসিল রোডস এর নাম থেকে। ষাটের দশক থেকে দেশটির অধিবাসীরা জাতীয়তাবাদ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে রোডেশিয়া নামটির পরিবর্তে জিম্বাবুয়ে নামটির প্রচলন শুরু করে। স্বাধীনতা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন সাংগঠনও নিজেদের নামের সাথে জিম্বাবুয়ে নামটি ব্যবহার করতে শুরু করে।

ধারণা করা হয় জিম্বাবুয়ে শব্দটি স্থানীয় ‘শোনা’ ভাষা থেকে এসেছে, যার অর্থ পাথরের বাড়ি। স্থানীয়রা নামটির প্রচলন শুরু করলেও ব্রিটিশরা রোডেশিয়া নামটিই ব্যবহার করতে থাকে। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে রোডেশিয়া-জিম্বাবুয়ে নামটির ব্যবহার শুরু হয়। সবশেষে ১৯৮০ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর রোডেশিয়া শব্দটি পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলে দেশটি শুধু জিম্বাবুয়ে নামে পরিচিতি লাভ করে।

পারস্য/ইরান

ইরানের মানচিত্র ও পতাকা; Source: maps.maphill.com

বর্তমান ইরান ছিল পারস্য বা পার্সিয়ান সাম্রাজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। তবে বহির্বিশ্বে গ্রিকদের দেওয়া পার্সিয়া নামে পরিচিত থাকলেও ইরানের ভেতরে অনেক অঞ্চলে শত শত বছর ধরে দেশটি ইরান নামেই পরিচিত ছিল। ১৯৩৫ সালের নওরোজের দিন ইরনের রেজা শাহ পাহলভি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করেন, ইরানকে পার্সিয়ার পরিবর্তে ইরান নামে ডাকার জন্য। ধারণা করা হয়, জার্মানীতে নিযুক্ত ইরানি রাষ্ট্রদূত নাৎসি জার্মানদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে শাহকে ইরানের নাম পরিবর্তন করানোর জন্য প্ররোচিত করেছিলেন। কারণ ইরান শব্দটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ ল্যান্ড অফ অারিয়ান, বা আর্যদের ভূমি।

বার্মা/মায়ানমার

মায়ানমারের মানচিত্র ও পতাকা; Source: globaltableadventure.com

মায়ানমারের পূর্ব নাম ছিল বার্মা। কিন্তু ১৯৮৯ সালে দেশটি নিজেদেরকে মায়ানমার হিসেবে পরিচিত করে। নামের এ পরিবর্তন প্রাথমিক দিকে আন্তর্জাতিকভাবে খুব বেশি সমর্থন পায়নি, কারণ সে সময় ক্ষমতায় ছিল মায়ানমারের সেনাবাহিনী, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অনেক রাষ্ট্রই অবৈধ হিসেবে গণ্য করত। ১৯৮৯ সালেই সেনাবাহিনীর গুলিতে সহস্রাধিক বেসামরিক জনগণ নিহত হয়েছিল। জাতিসংঘ, ফ্রান্স, জাপানসহ কয়েকটি দেশ নতুন নাম হিসেবে মায়ানমারকে স্বীকৃতি দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন দীর্ঘদিন পর্যন্ত বার্মা নামটিই ব্যবহার করে।

বার্মা এবং মায়ানমার দুটি নামই মায়ানমারে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত। দুটি নামই মূলত একই অর্থে ব্যবহৃত হয়। বামা (বার্মা) নামটি কথ্য রূপ, যা প্রধানত দৈনন্দিন কথাবার্তায় ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে মানমা (মায়ানমার) নামটি লেখ্য রূপ, যা আনুষ্ঠানিক বক্তৃতা-বিবৃতি বা বইপত্রে ব্যবহার করা হয়।

সিলন/শ্রীলঙ্কা

শ্রীলঙ্কার মানচিত্র ও পতাকা; Source: maps.maphill.com

শ্রীলঙ্কার সাথে প্রাচীনকাল থেকেই আরব, গ্রিক, রোমান প্রভৃতি জাতির সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল। সে সময় তামিল শব্দ সেরেনতিভু (চেরাস পর্বতের দেশ) অনুসারে দেশটি আরবদের কাছে সেরানদিব, রোমানদের কাছে সেরেনডিভিস প্রভৃতি নামে পরিচিত ছিল। এই নাম পরবর্তীতে বিবর্তিত হয়ে গ্রীকদের কাছে সিলেন দিভা নামে পরিচিত হয়। পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক সময় এই সিলেন বা সিলন নামটি স্থায়ী হয়ে যায়।

স্বাধীনতার পর অন্য অনেক দেশের মতোই শ্রীলঙ্কাও তাদের ঔপনিবেশিক নামগুলো পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়। হিন্দুদের পুরাণ রামায়ন অনুযায়ী এই দ্বীপের নাম ছিল লঙ্কা। সেখান থেকে অনেকেই দেশটিকে লঙ্কা নামে অভিহিত করত। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও তাদের নামের সাথে লঙ্কা নামটি ব্যবহার করতে শুরু করে। সে ধারাবাহিকতায় ১৯৭২ সালে লঙ্কা নামটির পূর্বে সম্মানসূচক শ্রী যুক্ত করে দেশটির নামকরণ করা হয় শ্রীলঙ্কা।

চেক রিপাবলিক/চেকিয়া

চেকিয়ার মানচিত্র ও পতাকা; Source: maps.maphill.com

বাংলাদেশের পূর্ণ নাম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ। ফ্রান্সের পূর্ণ নাম দ্য ফ্রেঞ্চ রিপাবলিক। কিন্তু এই দেশগুলো বাংলাদেশ এবং ফ্রান্স নামেও স্বীকৃত এবং সমধিক পরিচিত। কিন্তু চেক রিপাবলিকের কোনো সংক্ষিপ্ত নাম ছিল না, তারা তাদের পূর্ণ নাম চেক রিপাবলিক হিসেবেই সব জায়গায় পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে দেশটির পার্লামেন্ট এক ভোটাভুটির মাধ্যমে তাদের নাম হিসেবে চেকিয়া নির্ধারণ করে।

বলা হয়, দেশটির বিভিন্ন কোম্পানী যেন সহজে বহির্বিশ্বে পরিচিত পেতে পারে, সেজন্যই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে অনেকগুলো কোম্পানী প্রস্তুতকারক দেশের নাম নির্দেশ করত শুধুমাত্র ‘চেক’ দিয়ে, যা অর্থগত দিক থেকে ভুল ছিল। কারণ চেক শব্দটি একটি বিশেষণ, যা দ্বারা চেক প্রজাতন্ত্রের অধিবাসীদেরকে বোঝানো হয়।

আপার ভোল্টা/বুরকিনা ফাসো

বুরকিনা ফাসোর মানচিত্র ও পতাকা; Source: maps.maphill.com

বুরকিনা ফাসো পূর্বে পরিচিত ছিল ঔপনিবেশিক ফরাসিদের দেওয়া নাম আপার ভোল্টা হিসেবে। নামটি দেওয়া হয়েছিল ভোল্টা নদীর নামানুসারে, যা দেশটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ১৯৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট থমাস সাঙ্কারা দেশটির নাম পরিবর্তন করে বুরকিনা ফাসো রাখেন।

বুরকিনা ফাসো নামটির দুটি অংশ নেওয়া হয়েছে দেশটির প্রধান দুটি ভাষা থেকে। স্থানীয় মূর ভাষায় বুরকিনা শব্দটির অর্থ সৎ মানুষ। অন্যদিকে দিউলা ভাষায় ফাসো শব্দটির অর্থ পিতৃভূমি। একত্রে নামটির অর্থ সৎ মানুষদের আবাসভূমি। বুরকিনা ফাসোর অধিবাসীদেরকে বলা হয় বুরকিনাবে। এখানে ‘বে’ প্রত্যয়টি নেওয়া হয়েছে তৃতীয় একটি ভাষা ফুলা থেকে, যার অর্থ নারী বা পুরুষ।

আবিসিনিয়া/ইথিওপিয়া

ইথিওপিয়ার মানচিত্র ও পতাকা; Source: maps.maphill.com

বর্তমান ইথিওপিয়া রাষ্ট্রটি একসময় আবিসিনিয়া হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু তাদেরকে নাম পরিবর্তন করতে হয়নি। কারণ ইথিওপিয়া যখন ১৯৪৮ সালে প্রথম জাতিপুঞ্জের সদস্য হয়, তখনই ইথিওপিয়া নামে অন্তর্ভুক্ত হয়। আবিসিনিয়া ছিল মূলত ইথিওপিয়ার একটি অংশ, যা আবিসিনিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মূলত আরব ইতিহাসবিদদের লেখার মধ্য দিয়েই দেশটি আবিসিনিয়া হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল, যদিও মূল ইথিওপিয়া ছিল আবিসিনিয়ান সাম্রাজ্যের চেয়ে আকারে আরো বড়।

ফিচার ইমেজ- didu.me

Related Articles