Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইউকে, গ্রেট ব্রিটেন, ইংল্যান্ড বিভ্রান্তি: এক দেশেরই হরেক নাম, নাকি হরেক দেশের এক?

আমার এক বন্ধু যুক্তরাজ্য (ইউনাইটেড কিংডম) প্রবাসী । প্রিয় পাঠক, আপনাদের মধ্যে হয়তো অনেকেই ধরে নিয়েছেন, আমার বন্ধুটি ইংল্যান্ডে থাকে। না, এখানে একটু খটকা আছে। যুক্তরাজ্য মানে শুধু ইংল্যান্ড না।

স্কটল্যান্ডে ২০১৪ সালে একটি গণভোট আয়োজন করা হয়েছিল। স্কটল্যান্ডের জনগণের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, তারা কি যুক্তরাজ্যের অংশ হয়ে থাকতে চায়, নাকি বের হয়ে যেতে চায়? ভোটের ফলাফলে জনগণ জানিয়েছিল, তারা আলাদা হতে চায় না।

এবার ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের কথা একটু মনে করার চেষ্টা করুন তো। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফ্যান হয়ে থাকলে অবশ্যই মনে পড়বে, সেই বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে ছাড়াও স্কটল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই বিশ্বকাপে কিন্তু ইংল্যান্ডও অংশগ্রহণ করেছিল। তা-ও আবার স্বাগতিক দেশ হিসেবে! এবার নিশ্চয়ই ভাবছেন, যেহেতু স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্যের  মধ্যে, তাহলে যুক্তরাজ্য আর ইংল্যান্ড কি আলাদা রাষ্ট্র? 

আবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জন্য ২০০৫ সাল একটি সুখস্মৃতির বছর। কারণ প্রথমবারের মতো ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশ পরাজিত করে সেই বছরই। বাংলাদেশ, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার অংশগ্রহণে এই ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজের স্বাগতিক দেশ হিসেবে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশ যে সোফিয়া গার্ডেন স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল, সেটা কিন্তু ইংল্যান্ডে না! বরং আলাদা একটি দেশ, ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফে!

স্বাগতিক দেশ ইংল্যান্ড হলে, যদি খেলা হয় ওয়েলসে, তাহলে কি ওয়েলস ইংল্যান্ডের মধ্যে?

এটি পুরো ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের মানচিত্র। এর মাঝেই লুকিয়ে রয়েছে যুক্তরাজ্য, গ্রেট ব্রিটেন এবং ইংল্যান্ড; Image Source: cgp grey/youtube

ব্রেক্সিটের কথা তো অনেকের মুখেই শুনেছেন। পত্রপত্রিকায় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনাও দেখেছেন। যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের অধীনে থাকবে কি না, এই সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য গ্রেট ব্রিটেনে ব্রিটিশ জনগণ একটি গণভোটে অংশ নিয়েছিলেন। প্রায় ৫২ শতাংশ ব্রিটিশ নাগরিক যুক্তরাজ্যকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিলেন।

পাঠক, যুক্তরাজ্য আর ইংল্যান্ড নিয়ে জটিলতার মধ্যে এবার চলে এলো ব্রিটেন বা গ্রেট ব্রিটেনের নাম। মাথায় জট লেগে যাচ্ছে? বিভ্রান্ত মনে হচ্ছে? চলুন তবে এবার উপরের সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে জট খোলা যাক।

যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম (সংক্ষেপে ইউকে)

প্রথমে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস ছাড়াও আয়ারল্যান্ড নামক আরকটি ‘ভূখণ্ডের’ ধারণা দিয়ে রাখা দরকার। কারণ যুক্তরাজ্য, ইংল্যান্ড, গ্রেট ব্রিটেনের জটলার মধ্যে আয়ারল্যান্ড নামটিও জড়িত।

আসলে আয়ারল্যান্ড নামে কোনো দেশ নেই। একটি দেশ আছে, নাম রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড। আরেকটি দেশের নাম নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। এরা পাশাপাশি অবস্থিত। এই লেখার শেষাংশে এই দুটি দেশ তথা ‘আয়ারল্যান্ড’ নিয়ে আরো বলা হয়েছে।

বেগুনি রঙের অংশটুকু হচ্ছে যুক্তরাজ্য। এর মাঝে লুকিয়ে আছে চারটি দেশ; Image Source: cgp grey/youtube

প্রথমেই যুক্তরাজ্যের জট খোলা যাক। উপরের মানচিত্রের বেগুনি অংশটুকু হচ্ছে যুক্তরাজ্য। অনেকেরই ধারণা, যুক্তরাজ্য একটি একক দেশ। আসলে যুক্তরাজ্য হচ্ছে ৪টি দেশ নিয়ে গঠিত একটি দেশ (স্টেট)। চারটি সম-মর্যাদার জাতি: ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড মিলে যুক্তরাজ্য গঠিত। যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম পুরোটা একটি সার্বভৌম ভূখণ্ড বলা যেতে পারে, তবে সীমারেখার ভিত্তিতে এই চারটি দেশকে আলাদা আলাদাভাবে সার্বভৌম বলা যায় না

অনেকে শুধু ইংল্যান্ডকেই যুক্তরাজ্য ভেবে ভুল করে থাকেন। কারণ যে চারটি দেশ নিয়ে যুক্তরাজ্য গঠিত, তার মধ্যে ইংল্যান্ড আয়তন এবং জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাকি তিনটি দেশের চাইতে বড়। এর চাইতেও মজার ব্যাপার হচ্ছে লন্ডন হলো যুক্তরাজ্যের রাজধানী, যা আবার ইংল্যান্ডেরও রাজধানী! ইংল্যান্ড ছাড়াও যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড- এই তিনটি দেশেরই আলাদা আলাদা পতাকা, রাজধানী, সরকার ব্যবস্থা, নির্বাচনী ব্যবস্থা এবং সংসদীয় ব্যবস্থাও রয়েছে।

ইংল্যান্ডের উত্তর দিকে রয়েছে স্কটল্যান্ড, পশ্চিমে ওয়েলস এবং উত্তর-পশ্চিমে একটু দূরেই নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড। খোদ যুক্তরাজ্যের মানুষই কখনো কখনো ভুলে যান যে, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড তাদেরই অংশ!

ইংল্যান্ড (লাল অংশ), স্কটল্যান্ড (নীল), ওয়েলস (সাদা), নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড (হলুদ)- এই চার দেশ নিয়েই যুক্তরাজ্য গঠিত।Image Source: cgp grey/youtube

এই চারটি দেশের নাগরিকদের আবার নিজ দেশের পাসপোর্ট নেই! তাদের সবাইকে বলা হয় ব্রিটিশ নাগরিক। চার দেশের সবার পাসপোর্ট এক- ব্রিটিশ পাসপোর্ট। আরো ভালোভাবে বলতে গেলে- তারা যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ব্রিটিশ নাগরিক। যুক্তরাজ্যের পুরো নাম হচ্ছে- ‘ইউনাইডেট কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড’

এবার একটু ইতিহাস ঘুরে আসা যাক। মানে কীভাবে এই চার দেশ এক হয়ে যুক্তরাজ্য তৈরি হলো তা জানা যাক।

৯২৫ সাল: কিংডম অফ ইংল্যান্ড – তখনকার সময়ের অ্যাংলো স্যাক্সন উপজাতিগুলোর একীভূতকরণের মাধ্যমে জন্ম হয় কিংডম অফ ইংল্যান্ড বা ইংল্যান্ডের রাজত্ব।

১৫৩৬ সাল: কিংডম অফ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস – ইংল্যান্ডে সাথে ওয়েলস যোগ হলো। রাজা অষ্টম হেনরি কর্তৃক প্রণীত একটি বিলের মাধ্যমে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস মিলে একটি দেশ (State) গঠন করে এবং একই আইনের আওতায় পরিচালিত হয়।

১৭০৭ সাল: দ্য কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন – দ্য কিংডম অফ ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলসের সাথে কিংডম অফ স্কটল্যান্ড যুক্ত হয়ে গঠন করে দ্য কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন।

১৮০১ সাল: ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড আয়ারল্যান্ড – কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেনের সাথে কিংডম অফ আয়ারল্যান্ড যুক্ত হয়। এবং আবারো নাম পাল্টে গঠিত হয় ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড আয়ারল্যান্ড।

১৯২২ সাল: ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড –১৮০১ সালে যুক্ত হওয়া আয়ারল্যান্ডের একটি অংশ (সাউথ আয়ারল্যান্ড, যা এখন রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড) ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নেয়। ফলে নর্থ আয়ারল্যান্ড ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেনের অংশ হয়ে থেকে যায় এবং সবশেষে নাম দাঁড়ায় ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেন অ্যান্ড নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড!

তাহলে যদি জিজ্ঞাসা করা হয়, যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম কবে গঠিত হয়েছিল? কেউ কেউ যুক্তি দিয়ে থাকেন, ১৭০৭ সালে ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডের একীভূত হওয়ার মাধ্যমেই ইউনাইটেড কিংডম গঠন হয়েছিল। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের যুক্ত হবার আগপর্যন্ত যুক্তরাজ্যের নাম যুক্তরাজ্য (ইউকে) হয়ে ওঠেনি। এতক্ষণ শুধুমাত্র যুক্তরাজ্যের ব্যাখা পড়লেন। এবং এর মাঝেই ঢুকে গেল একটি টার্ম- গ্রেট ব্রিটেন। এবার চলুন এই গ্রেট ব্রিটেনের দিকে একটু নজর দেয়া যাক।

গ্রেট ব্রিটেন

প্রথমেই বলে রাখি, গ্রেট ব্রিটেন বলতে কোনো দেশ বোঝায় না। গ্রেট ব্রিটেন হচ্ছে বিশাল একটি দ্বীপ বা ভূখণ্ডের নাম। এখানে ‘গ্রেট’ কথাটি ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ, এই দ্বীপটি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের (The British Isles) মধ্যে সবচেয়ে বড় ‘অখন্ড’ দ্বীপ। অনেকে আবার গ্রেট ব্রিটেন বলতেও ইংল্যান্ডকে বোঝেন। তবে আসল ব্যাপার হচ্ছে, এই দ্বীপের মধ্যে ইংল্যান্ডের সাথে স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসও রয়েছে।

যুক্তরাজ্য থেকে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং কিছু ছোট দ্বীপ বাদে কালো অংশটুকু গ্রেট ব্রিটেন; 
Image Source: cgp grey/youtube

কিন্তু তিনটি দেশ আবার পুরোপুরিভাবে গ্রেট ব্রিটেন নামক দ্বীপখন্ডের মধ্যে পড়েনি। অর্থাৎ এই তিনটি দেশের সম্পূর্ণ অংশ গ্রেট ব্রিটেনের মধ্যে পড়েনি। ইংল্যান্ডের ওয়েইট দ্বীপ (Isle of Wight), ওয়েলসের আঙ্গেলসি দ্বীপ (Isle of  Anglesey), স্কটল্যান্ডের দক্ষিণের ক্লায়েড দ্বীপ (Island of the Clyde) এবং উত্তরের স্কটিশ হেব্রেডিস (Hebrides), অর্কনি দ্বীপ (Orkney Island), শেটল্যান্ড দ্বীপ (Shetland Islands) নামের বেশ কয়টি ছোট ছোট দ্বীপ গ্রেট ব্রিটেনের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয় না। কারণ গ্রেট ব্রিটেন বলতে একটি ‘অখণ্ড’ দ্বীপকে বোঝানো হয়ে থাকে। তাই এই ছোট ছোট দ্বীপগুলো ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসের অংশ হয়েও গ্রেট ব্রিটেনের অংশ হতে পারেনি। তবে এই ছোট ছোট দ্বীপগুলো যুক্তরাজ্যের অংশ! আর যেহেতু গ্রেট ব্রিটেন একটি অখণ্ড দ্বীপ, তাই ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলসের মতো নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড যুক্তরাজ্যের অংশ হয়েও গ্রেট ব্রিটেনের অংশ না।

যে ছোট ছোট দ্বীপগুলো যুক্তরাজ্যের অংশ হয়েও গ্রেট ব্রিটেনের অংশ নয়; Image Source: cgp grey/youtube

গ্রেট ব্রিটেন দ্বীপের নাম কেন গ্রেট ব্রিটেন হলো তার একটি সাধারণ ব্যাখ্যা আগের অনুচ্ছেদে দেয়া হয়েছে। তবে একটু ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যাক এই নামকরণের পেছনে আসল ব্যাখ্যা কীরকম। গ্রেট ব্রিটেনের ব্রিটেন অংশটুকু এসেছে রোমান শব্দ ‘ব্রিটানিয়া’ থেকে। কিন্তু ব্রিটেনের আগে গ্রেট কীভাবে যুক্ত হলো তা নিয়ে দুই ধরনের মতবাদ প্রচলিত আছে।

প্রথমত, ব্রিটেনকে এর প্রায় অনুরূপ ফরাসি প্রতিবেশি অঞ্চল ব্রিটনিক (উচ্চারণেও কাছাকাছি) থেকে আলাদা করার জন্যই এর পূর্বে গ্রেট বসিয়ে দেয়া হয়েছে। আর দ্বিতীয় মতবাদ অনুসারে, রাজা প্রথম জেমসের অহংকারের প্রমাণস্বরূপ ব্রিটেনের আগে গ্রেট শব্দটি বসানো হয়েছে। এই অহংকারী রাজা ঢালাওভাবে সবাইকে জানাতে চেয়েছিলেন যে, তিনি শুধু পুরনো রোমান ব্রিটেনের রাজা নন, বরং পুরো দ্বীপের রাজা ছিলেন। তিনি নিজেকে কিং অফ গ্রেট ব্রিটেন হিসেবে পরিচয় দিতে ভালবাসতেন।

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং আয়ারল্যান্ড

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ হচ্ছে ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত অনেকগুলো ছোট-বড় দ্বীপের সমষ্টি। এটি গ্রেট ব্রিটেন, আয়ারল্যান্ড, আইল অফ ম্যান, আইলস অফ স্কিলি, চ্যানেল আইল্যান্ডসহ ছোট-বড় মোট ৬,০০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত। ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের সবচাইতে বড় দ্বীপের নাম গ্রেট ব্রিটেন এবং দ্বিতীয় বৃহৎ দ্বীপের নাম আয়ারল্যান্ড।

অর্থাৎ শুধু ‘আয়ারল্যান্ড’ বলতে একটি দ্বীপ বোঝায়। এই আয়ারল্যান্ড দ্বীপই ‘নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড’ এবং ‘রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড’ নামে দুই ভাগে বিভক্ত। শুরুতেই বলে এসেছি, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড হচ্ছে যুক্তরাজ্যের অংশ। তাহলে বাকি অংশ রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড কীসের অংশ? তারা কি যুক্তরাজ্য এবং গ্রেট ব্রিটেন কোনোটারই অংশ না?

না, বর্তমানে তারা এই দুটোর কোনোটিরই অংশ না। ১৮০১ সালে পুরো আয়ারল্যান্ড দ্বীপ ইউনাইটেড কিংডম বা যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। আবার ১৯২২ সালে এর একটি অংশ নিজেদেরকে যুক্তরাজ্য থেকে সরিয়ে নেয় এবং রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড নামক একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ গঠন করে।

ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের দ্বিতীয় বৃহত্তম দ্বীপ আয়ারল্যান্ড দুই ভাগে (হলুদ অংশ নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড, সবুজ অংশ রিপাবলিক অফ আয়ারল্যান্ড) বিভক্ত; Image Source: cgp grey/youtube

ইংল্যান্ড

যুক্তরাজ্য, গ্রেট ব্রিটেন সম্পর্কে যদি এতক্ষণে মোটামুটি একটি পরিস্কার ধারণা চলে আসে, তাহলে ইংল্যান্ড সম্পর্কেও আশা করি বুঝে গিয়েছেন। তা-ও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ওয়েলস, স্কটল্যান্ডের মতো ইংল্যান্ডও একটি একক দেশ। যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত চারটি দেশের মধ্যে জনসংখ্যা এবং আয়তনের দিক দিয়ে ইংল্যান্ড সর্ববৃহৎ। আর যুক্তরাজ্য গঠনে ইংল্যান্ড একটি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবদান রেখেছিল। আর আগেই বলা হয়েছে, ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডন, আবার যুক্তরাজ্যেরও রাজধানী। তাই ইংল্যান্ড বলতে যুক্তরাজ্য, আর যুক্তরাজ্য বলতে মানুষ ইংল্যান্ড গুলিয়ে ফেলে।

সারমর্ম

যুক্তরাজ্য বা ইউনাইটেড কিংডম – একটি সার্বভৌম ভূখণ্ড, যার মধ্যে ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড অন্তর্ভুক্ত। চারটি দেশ মিলে একটি সার্বভৌম দেশ, যার রাজধানী আবার ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে।

গ্রেট ব্রিটেন – গ্রেট ব্রিটেন কোনো দেশ নয়। এটি ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের একটি সর্ববৃহৎ দ্বীপ। যুক্তরাজ্যের নর্দান আয়ারল্যান্ড বাদে বাকি তিন দেশের অখণ্ড অংশ নিয়ে গ্রেট ব্রিটেন গঠিত।

ইংল্যান্ড – যুক্তরাজ্যের অন্তর্গত চারটি দেশের মধ্যে একটি দেশ। কিন্তু দেশটি সার্বভৌম দেশ নয়।

যুক্তরাজ্য (বামে), ইংল্যান্ড (মাঝে) এবং গ্রেট ব্রিটেনের (ডানে) আলাদা আলাদা মানচিত্র; Image Source: 

লেখার শুরুতে উঠে আসা প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন। তবে একটি প্রশ্নের উত্তর এখনো একটু ঝাপসা। কেন ইংল্যান্ড স্বাগতিক দেশ হবার পরেও ২০০৫ সালে আয়োজিত ত্রিদেশীয় সিরিজে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার খেলা ওয়েলসে অনুষ্ঠিত হয়েছিল?

প্রথমদিকেই বলা হয়েছে, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড, নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড- এই চারটি দেশ যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং সীমানার ক্ষেত্রে সার্বভৌম নয়। রাজনৈতিকভাবে এরা ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের নিয়মনীতি মেনে চলে। যুক্তরাজ্যের সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী, এলিজাবেথকে রানী হিসেবে মেনে নিয়ে পুরো যুক্তরাজ্যে একটি সংসদীয় শাসনব্যবস্থা পরিচালিত হয়। ফলে চারটি দেশ রানীর স্বায়ত্তশাসনের সাথে নিজেরা স্বাধীন প্রশাসন গঠন করেছে। তবে তারা কেউ যদি চায়, তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে (যেমনটা স্কটল্যান্ডে হয়েছিল ২০১৪ সালে) যুক্তরাজ্য থেকে নিজেদের মুক করতে পারবে। জতিসংঘের তালিকায় কিন্তু ইংল্যান্ড নামে কোনো দেশ নেই, আছে যুক্তরাজ্য! যেহেতু সীমারেখার প্রশ্নে এই চার দেশ উদার, তাই ইংল্যান্ড স্বাগতিক হয়েও ওয়েলসে (যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরে) খেলার আয়োজন করতে পেরেছিল। যেমনটা দেখবেন, অলিম্পিকে কিন্তু ইংল্যান্ড নামে কোনো দেশ অংশ নেয় না, অংশ নেয় যুক্তরাজ্য বা ইউকে!

This is the Bangla article on difference between United Kingdom, Great Britain and England

All the sources are hyperlinked inside the article.

Feature Image: Indipentent.co.uk

Related Articles