আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত ছোট্ট একটি দেশ ওমান। আরব উপদ্বীপের অন্যান্য অংশ থেকে সাগর, পাহাড় আর মরুভূমি দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়েছে দেশটি। তবে এই বিচ্ছিন্নতাই যেন ওমানকে সৌন্দর্য আর বিশুদ্ধতায় আরব উপদ্বীপের অন্যান্য দেশ থেকে কয়েকগুণ এগিয়ে নিয়ে গেছে । বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তর, সাগরের অথৈ নীল জলরাশি, সুউচ্চ পাথুরে পর্বত, সাদা বালুকাবেলা কিংবা বিশাল আকাশের নীলিমা- ওমানের সবখানেই যেন অন্যরকম এক সৌন্দর্য ঝরে পড়ছে। প্রতিবেশী দেশ আরব-আমিরাতের মতো ওমানে নেই আকাশছোঁয়া অট্টালিকা, কোলাহলপূর্ণ নগর-চত্বর বা রাজপথ। তাই প্রকৃতি ও পরিবেশ এখানে দূষণমুক্ত আর বিশুদ্ধ। দূষণহীন মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে নিতে হেঁটে বেড়ানো যায় এর শান্ত শহরগুলোতে। ওমান প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বেশ সমৃদ্ধ হলেও এখানে পর্যটকের আনাগোনা তেমন চোখে পড়ে না। তাই অবিমিশ্র প্রকৃতির স্নিগ্ধ ছোঁয়া বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে বেশ উপভোগ্য ।
নিখাদ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার কল্পনা করতে গিয়ে ওমানকে বাইরের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগহীন একটি আদিম ভূখণ্ড ভাবার কোনো কারণ নেই। পারস্য উপসাগরের মুখে অবস্থিত হওয়ায় দেশটি প্রাচীনকাল থেকেই প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের বাণিজ্যিক সংযোগ সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে। এটি একসময় ছিল প্রাচীন সিল্করুটের গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বৈদেশিক শক্তির উপনিবেশে পরিণত হয়েছে ওমান। পার্সিয়ান, পর্তুগিজ বা আব্বাসীয় খেলাফত- সব শাসনামলের স্বাক্ষর আজও বহন করে চলেছে ওমানের বিভিন্ন গ্রাম এবং শহরে। সমৃদ্ধ ইতিহাস ছাড়াও ওমানের রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। আজকের এই আয়োজন আরবনন্দিনী ওমানের সেরা পর্যটন আকর্ষণগুলো সম্পর্কে- যা ওমানকে অনন্য করে তুলেছে। চলুন হারানো যাক ওমানের অদেখা ভুবনে।
মাসকাট
ওমান উপসাগরের তীরে অবস্থিত মাসকাট ওমানের রাজধানী এবং গুরুত্বপূর্ণ বন্দর নগরী। রুক্ষ আল-হাজার পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত এই শহরটি ওমান সালাতানাতের মাসকাট প্রদেশের প্রাদেশিক রাজধানীও বটে। মাসকাট শহরটি ওমানের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত। এর পশ্চিমে রয়েছে আল-বাতিনা সমভূমি আর পূর্বে রয়েছে আশ-শারকিশা অঞ্চল। মাসকাট শহরটি মূলত ছোট ছোট তিনটি শহরের সমষ্টি। প্রাচীরঘেরা পুরনো এই মাসকাট শহরে রয়েছে রাজপ্রাসাদসমূহ। শহরের দ্বিতীয় অংশটির নাম মাতরাহ।
আসলে এটি একটি জেলেপল্লী। এই এলাকা রঙিন বাজারগুলোর জন্য বিখ্যাত।
অন্য শহরটির নাম রুউয়ি। এই অংশটি মাসকাট শহরের বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক কেন্দ্র। ১৯৭০ সালে সুলতান কাবুস সিংহাসনে আরোহণের পর মাসকাটে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছিল। মাসকাট থেকে শহরের প্রধান হাইওয়ে সুলতান কাবুস হাইওয়ে ধরে গেলে পথে পড়বে কুরুম জেলা, মাদিনা আল সুলতান কাবুস, আল খুয়াইর, সিব প্রভৃতি স্থান। তবে মূল মাসকাট শহরেই দর্শনীয় স্থানের অভাব নেই।
সাগর আর পাহাড়ের মাঝখানে আটকে থাকা মাসকাট শহরটি প্রাচীন ইতিহাস এবং সমৃদ্ধ ইসলামী ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহন করে চলেছে এর অসাধারণ সব দুর্গ, রাজপ্রাসাদ আর মসজিদের মাধ্যমে। মাসকাট একসময় পর্তুগিজদের দখলে ছিল। সেই সুবাদে শহরে পর্তুগিজ রীতিতে নির্মিত অনেক ভবনের দেখা মেলে। তবে শহরের স্থাপত্যগুলোতে পর্তুগিজ ছাড়াও আরব, পার্সিয়ান, ইথিওপিয়ান, ভারতীয় এমনকি আধুনিক পাশ্চাত্য ধাঁচও চোখে পড়ে। কাসর আল আলম স্ট্রিটে রয়েছে পর্তুগিজদের তৈরি দু'টি দুর্গ-আল জালালি দুর্গ এবং আল মিরানি দুর্গ।এই দুর্গ দু'টির মাঝখানে অবস্থিত 'কাসর আল আলম' রাজপ্রাসাদ।
নীল আর সোনালি স্তম্ভের অনিন্দ্যসুন্দর এই প্রাসাদটি ওমান সালাতানাতের বর্তমান সুলতান কাবুসের অফিস। প্রাসাদটি একটি প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়ের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে মাসকাট শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক সম্ভবত সুলতান কাবুস গ্র্যান্ড মসজিদ।
মাসকাটের পশ্চিমাংশে অবস্থিত এই মসজিদটি সুলতান কাবুসের শাসনামলের ত্রিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে নির্মিত হয়।দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদটির সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব এর মেঝেতে বিছানো পার্সিয়ান কার্পেটটি। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম কার্পেট।
মসজিদটির রয়েছে পঞ্চাশ মিটার উঁচু সুদৃশ্য গম্বুজ এবং ইসলামের পাঁচটি খুঁটির প্রতিনিধিত্বকারী পাঁচটি মিনার। সাদা মার্বেল পাথরে তৈরি এই মসজিদের ভেতরের চত্বরে রয়েছে মনোরম বাগান। দেয়ালে খোদিত কুরআনের আয়াত এর অভ্যন্তরীণ সজ্জাকে আরো মোহনীয় করে তুলেছে। মাসকাট শহরটি চমৎকার সব জাদুঘর আর পুষ্প-আচ্ছাদিত পার্কের জন্যও বিখ্যাত। শহরের সবচেয়ে বড় পার্ক 'কুরুম ন্যাশনাল পার্ক'। 'বাইত আয- যুবাইর' জাদুঘরের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। শহরের চমৎকার সব স্থাপত্য দেখার ফাঁকে সুমদ্রের ঠাণ্ডা বাতাসের স্পর্শ পেতে হেঁটে আসতে পারেন মাতরাহর কর্নিশ থেকে। শহরের গরমে অতিষ্ঠ হলে অবগাহন করতে পারেন সমুদ্রের নীল জলে। সমুদ্রস্নান বা রৌদ্রস্নান ছাড়াও উপভোগ করতে পারেন স্কুবা ডাইভিং, ট্রেকিং, রক ক্লাইম্বিং প্রভৃতি।
আর যদি সৈকতে হাঁটার ইচ্ছে থাকে, বা বসে বসে সাগরপাড়ের হাওয়ায় শরীর জুড়াতে ইচ্ছা করে, তাহলে যেতে পারেন আল কুরুম সৈকতে বা আল বুস্তান সৈকতে। আল বুস্তান সৈকতটি বিলাসবহুল হোটেল আল বুস্তান প্যালেসের ব্যক্তিগত এবং শহরের সবচেয়ে দীর্ঘতম সৈকত।
জাবাল আল-আখদার
'জাবাল আল-আখদার' 'আল-হাজার' পর্বতমালার অন্তর্গত একটি পর্বতশ্রেণি। মাসকাট থেকে ১৫০ কি.মি. দূরে অবস্থিত এই পাহাড়শ্রেণিটি মূলত চুনাপাথরে গঠিত। এখানকার পাহাড়চূড়াগুলোতে প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং পাহাড়ি ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে কিছু গাছপালা জন্মে । এজন্য একে বলা হয় 'সবুজ পর্বত'। সবুজ কথাটা শুনে যেন ঘন সবুজ গাছগাছালি বা পত্র-পল্লববেষ্টিত কোনো পাহাড়ি বনভূমি কল্পনা করতে যাবেন না।
এখানে গাছপালা বলতে আছে শুধু মরুভূমির কাটা গুল্ম আর কিছু ঝোপঝাড়। নিচের মরুভূমি থেকে গাছপালা বেশি আছে বলে এর নাম হয়েছে সবুজ পাহাড়। তবে এই পর্বতশ্রেণি ঘিরে রেখেছে উর্বর সাইক মালভূমি। এখানে কৃষিকাজের উপযুক্ত জমিগুলোতে চাষাবাদ হয়। ডালিম, এপ্রিকট, পিচ বা আঙুরের মতো ফল জন্মে এখানে।
এছাড়া এখানে জন্মে গোলাপি রঙের, সুগন্ধি দামাস্কাস গোলাপ। এই গোলাপ থেকে তৈরি হয় এই অঞ্চলের বিখ্যাত পণ্য গোলাপজল। জাবাল আল-আখদারে রয়েছে বেশকিছু বন্যপ্রাণির আবাস। এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অটুট রাখতে এবং বন্যপ্রাণিদের নিরাপদ বাসস্থান নিশ্চিত করতে ওমানের পর্যটন মন্ত্রণালয় এই অঞ্চলকে 'ন্যাচারাল রিজার্ভ' ঘোষণা করেছে। অবশ্য রুক্ষ, বিরান এই পাহাড়ে মানুষের পদধূলি কমই পড়ে। যদিও জনমানবশূন্য এই পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে চলে গেছে কার্পেটের মতো মতো মসৃণ হাইওয়ে। জাবাল আখদারে হাইকিং বেশ জনপ্রিয়। জাবাল আখদারের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে অনিন্দ্যসুন্দর সব মরূদ্যান। এই মরূদ্যান এবং পাহাড়ি চত্বরগুলোতে ঘুরে বেড়ানো যে বেশ রোমাঞ্চকর হবে, তা তো বলাই বাহুল্য। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় জাবাল আখদার ধরা পড়ে এক মোহনীয় রূপে, অপার্থিব সেই সৌন্দর্য!
নিজওয়া কেল্লা
ওমানের ঐতিহাসিক নিজওয়া শহরে অবস্থিত বিশাল একটি দুর্গ নিজওয়া ফোর্ট। সতেরো শতকে ইমাম সুলতান বিন সাইফ আল ইয়ারুবি দুর্গটি নির্মাণ করেন। তবে দুর্গের পুরনো অংশটি নির্মিত হয়েছিল আরো আগে, নবম শতাব্দীতে। এই দুর্গটি ওমানের দাঙ্গাপূর্ণ অতীত ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রাচীন এই স্থাপত্যটি ওমানের সবচেয়ে বেশি পরিদর্শিত স্থাপনা। এই দুর্গের প্রধান আকর্ষণ এর ত্রিশ মিটার উঁচু বিশাল চার-কোণাকৃতির টাওয়ার।
টাওয়ারে ওঠার জন্য রয়েছে প্যাঁচানো সিঁড়িপথ। টাওয়ারের ছাদে চারদিকে তাক করা রয়েছে চারটি কামান। এতে বোঝা যায়, কামানের গোলা না খেয়ে কিছুতেই দুর্গে অনুপ্রবেশ সম্ভব ছিল না শত্রুপক্ষের। পুরো দুর্গ এবং টাওয়ারে রয়েছে আরো বেশকিছু প্রতিরক্ষা কৌশল, যেমন- গোপন শ্যাফট, চোরাগর্ত, নকল দরজা ইত্যাদি। দুর্গটি একটি ভূগর্ভস্থ জলাধারের উপর নির্মিত হয়েছিল, যা দুর্গে নিরবচ্ছিন্ন পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতো। বর্তমানে এই দুর্গটি জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়েছে। এখানেই সমাহিত হন দুর্গের নির্মাতা ইমাম সুলতান।
রাস আল জিনয
আরব উপদ্বীপের সর্বপূর্বে অবস্থিত রাস আল জিনয এলাকাটি বিপন্নপ্রায় সবুজ কচ্ছপ রিজার্ভের জন্য বিখ্যাত। এই রিজার্ভে রয়েছে প্রায় বিশ হাজার মা কচ্ছপ যারা নিয়মিত ডিম দেয় এবং ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা উৎপাদন করে। এখানে দর্শকদের জন্য রয়েছে কচ্ছপের পূর্ণ জীবনচক্র কাছ থেকে দেখার দুর্লভ সুযোগ।
রিজার্ভের বাদামি বালুর সৈকতে পূর্ণবয়স্ক থেকে বাচ্চা- নানা আকারের কচ্ছপের দেখা মেলে। এখানে হয়তো কোন কচ্ছপ নিশ্চিন্ত মনে হাঁটছে, কেউবা বসে বসে ডিমে তা দিচ্ছে। কচ্ছপ ছাড়াও রাস আল জিনযে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অভাব নেই।
মনোমুগ্ধকর পাথুরে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত প্রবহমান সমুদ্রের নীল জলরাশি এসে বাদামী বালুর সৈকতে আছড়ে পড়ার দৃশ্যও আপনাকে বিমোহিত করবে। দিনের বেলা সৈকতে হেঁটে বেড়ানোর সুযোগ রয়েছে। হেঁটে বেড়ানোর সময়ই মূলত চোখে পড়ে কচ্ছপের বিচিত্র জীবন।
সালালাহ
মরুভূমি অধ্যুষিত কোনো দেশে সবুজ-শ্যামল এলাকা পাওয়া খুবই দুষ্কর। আবার সেই সবুজটা যদি পুরো রেইন ফরেস্টের মতো সবুজ, তাহলে তো অবাক হতেই হয়, তা-ই না? সালালাহ হচ্ছে ওমানের রুক্ষ জমিনে এক টুকরো সবুজ স্বর্গ। সালালাহ ওমানের দোফার প্রদেশের রাজধানী এবং দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। এই শহরটি বিখ্যাত এর সমুদ্রসৈকত, কলাবাগান এবং এর সবুজের উৎস বর্ষাকালের জন্য। বর্ষার অবারিত বৃষ্টিপাত এখানকার অনুর্বর মরুভূমিকে ঘন সবুজে আচ্ছাদিত করে তোলে। ফলে চারিদিকে চোখে পড়ে সবুজের চিরায়ত সৌন্দর্যে সজ্জিত মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী। বর্ষার পানি পেয়ে এখানকার জলপ্রপাতগুলো যেন প্রাণ ফিরে পায় ।
প্রপাতের পানিপতনের ছন্দে মুখরিত আর জীবন্ত হয়ে ওঠে সালালাহর বন, প্রকৃতি। মরূদ্যানের হ্রদগুলোও পানিতে টইটুম্বুর হয়ে যায় তখন। মরুর দেশ ওমানে সবুজের এই বিস্ময়কর সমারোহ সত্যিই অভাবনীয়। সালালাহ শুধু যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত, তা কিন্তু নয়। এর ঐতিহাসিক গুরুত্বও অনেক। এককালে সালালাহ ছিল সুগন্ধি ধুনোর কল্যাণে সিল্করুটের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র। এখনো অল্প কিছু ধুনোর চাষ হয় এখানে। সালালাহ ওমানের বর্তমান সুলতান কাবুসের জন্মস্থল। একসময় সালালাহ ওমানের রাজধানী ছিল। সুলতান কাবুস ক্ষমতায় আসার পর রাজধানী মাসকাটে স্থানান্তর করেন। বাদশাহ কাবুসের জন্মস্থান সেই প্রাসাদ সুলতান কাবুস প্যালেস দেখতে পারবেন। তবে বাইরে থেকে এর চেহারা দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে, কারণ ভেতরে ঢোকার সুযোগ নেই। এছাড়া সালালাহতে রয়েছে বিখ্যাত নবী হযরত ইমরানের সমাধি। সালালাহর সৈকতগুলোও দারুণ সুন্দর।
তবে বর্ষাকালে সাগরের শক্তিশালী ঢেউয়ের কারণে স্কুবা ডাইভিং করতে পারবেন না। সাগরতলের সৌন্দর্য দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে শুকনো মৌসুমের।
রুব আল খালি
আরব উপদ্বীপ মরুভূমির জন্য বিশেষভাবে খ্যাত। আর আরবের মরুভূমিগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত একটি মরুভূমি রুব আল খালি বা Empty quarter। সৌদি আরব, ইয়েমেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান- এই চারটি দেশের ৬,৫০০০০ বর্গমি. এলাকা জুড়ে বিস্তৃত দানবাকৃতির এই মরুভূমি। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নিরবচ্ছিন্ন মরুভূমি।
ওমানের অংশের রুব আল খালি পড়েছে দোফার প্রদেশে। সালালাহ বিমানবন্দর থেকে প্লেনে করে এখানে যাওয়া যায়। গাছপালাহীন এই বালির সাগরে আবহাওয়া প্রচণ্ড রুক্ষ। এখানে বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অস্বাভাবিক কম। তাই পানি এখানে সোনার চেয়েও দামি। যদিও প্রাচীনকালে তৈরী কিছু পাথুরে অগভীর জলাশয়ের দেখা মেলে এখানে। মরুভূমির বৈরি প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে এখানেও জীবন চলছে আপন গতিতে। বেশকিছু বেদুইন গোত্রের বসবাস আছে এই অঞ্চলে। প্রচণ্ড প্রতিকূল আবহাওয়া সত্ত্বেও অভিযাত্রীদের কাছে বেশ আকর্ষণীয় গন্তব্য সোনালি বালিয়াড়ির এই মরুভূমি।
অনেকে এখানে খুঁজে বেড়ান মরুভূমির আটলান্টিস খ্যাত উবার বা ইরাম নগরী। সাহিত্য বা সিনেমার কাল্পনিক জগতকে সাজাতে অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন এই মরুভূমির। প্রত্নতাত্ত্বিক কিছু গবেষণা বলে একসময় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল রুব আল খালিতে। তার প্রমাণ হিসেবে বেশকিছু জীবাশ্মও পাওয়া গেছে। কোলাহলপূর্ণ শহুরে জীবন থেকে আপনি যখন প্রবেশ করবেন অন্তহীন এই বালির সমুদ্রে, তখন মনে হবে অন্য কোন গ্রহে যেন এসে পড়েছেন। অবাক নিস্তব্ধতায় ছেয়ে থাকা জনমানবহীন মরুভূমি শিহরিত করবে আপনাকে। পানি পিপাসায় মৃত্যু বা মরুভূমিতে পথ হারানোর ভয় থাকলেও রুব আল খালির মতো নির্দয় মরুভূমিও উপভোগ্য মনে হবে আপনার।
চাইলে ফোরহুইল ড্রাইভে করে মরুভূমি পাড়ি দিতে পারবেন। উটের পিঠে চড়েও ঘুরে বেড়ানো যাবে এখানে। এছাড়া মরুভূমির দূষণমুক্ত বিশুদ্ধ আকাশে তারা দেখার নির্মল আনন্দও পেতে পারেন। আরো রয়েছে বেদুইনদের বাড়িঘর ঘুরে বেড়ানো এবং তাদের জীবন ও সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ।
মুসানডাম এর ফিয়ড
ফিয়ড কথাটা শুনলে সাধারণত নরওয়ের কথা মনে পড়ে। কিন্তু যদি বলি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানেও ফিয়ড (পাহাড়ি জলাশয়/হ্রদ) আছে তাহলে কি বিশ্বাস করবেন? হ্যাঁ, ওমানেও নরওয়ের মতো ফিয়ড আছে। তবে এখানে নেই নরওয়ের তুষারাবৃত পর্বতমালা, তার বদলে আছে ধূসর রুক্ষ পাহাড়। এখানে নরওয়ের কনকনে ঠাণ্ডা আবহাওয়া নেই, তবে ফিয়ডগুলো ওমানের প্রচণ্ড গরম থেকে আপনাকে অব্যাহতি দিতে পারে।
ফিয়ডগুলোর নীলচে-সবুজ পানিতে সাঁতার কাটা, স্নোরকেলিং, এমনকি ডলফিনের পেছনে ছুটে বেড়ানো যায়। এই ফিয়ডগুলো অবস্থিত ওমানের মুসানডাম প্রদেশে। এটি হরমুজ প্রণালির মাঝখানে অবস্থিত একটি দ্বীপ।
মাসিরাহ আইল্যান্ড
ওমানের পূর্ব উপকূলে আরব সাগরের মাঝখানে অবস্থিত একটি দ্বীপ মাসিরাহ আইল্যান্ড। এটি দেশটির সর্ববৃহৎ দ্বীপ। এখানে রয়েছে রয়্যাল এয়ার ফোর্স অব ওমানের একটি এয়ার বেস এবং কয়েকটি ছোট শহর। দ্বীপটির এক প্রান্তে রয়েছে পাহাড়। আরেক প্রান্তে আছে শুভ্র বালির সৈকত।
মাঝখানের এলাকাটি রুক্ষ ও মরুময়। প্রচুর বাতাসের কারণে এই সৈকতগুলো উইন্ড এবং কাইট সার্ফিংয়ের জন্য আদর্শ জায়গা। এখানকার নির্জন সৈকতে হেঁটে বেড়ানোর সময় চোখে পড়ে কচ্ছপ আর ইউরোপীয় পাতিহাঁস বা গোলাপি ফ্লেমিঙ্গোর মতো পরিযায়ী পাখিদের।
This is a Bangla article on tourist attractions of Oman, one of the countries of arabian peninsula. Different aspects of these beautiful tourist spots are disscussed in this article. All the informations are hyperlinked inside the article
Featured image: grayline.ae