Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রহস্যময় ওয়াদি জ্বীন: অলৌকিকতা, নাকি দৃষ্টিভ্রম?

ওয়াদি জ্বীন বা জ্বীনের উপত্যকা নামটি হয়তো অনেকেই শুনেছেন। সৌদি আরবের পবিত্র মদিনা শরিফ থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি পাহাড়ি উপত্যকা এটি। জায়গাটি পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। কারণ জনশ্রুতি অনুযায়ী, এখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি কাজ করে না। ইঞ্জিন বন্ধ করে রাখলেও এখানে গাড়ি পাহাড়ি ঢালু রাস্তা বেয়ে উপরের দিকে উঠে যায়, পানি ঢেলে দিলে গড়িয়ে গড়িয়ে সেই পানি উপরের দিকে চলে যায়। অনেকের দাবি, জ্বীনের কারসাজিতেই এরকম অদ্ভূতূড়ে ঘটনা ঘটে। আর সে কারণেই এমনিতে ওয়াদি আল-বেইদা নামের এই উপত্যকাটির পরিচয় ওয়াদি জ্বীন হিসেবে।

কিন্তু আসলেই কি ওয়াদি জ্বীনে অলৌকিক কোনো ঘটনা ঘটে? আসলেই কি সেখানে গাড়ি মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিপরীতে চলে? নাকি পুরো ব্যাপারটাই মানুষের দৃষ্টিভ্রম? এমন কি হতে পারে যে, বাস্তবে সেখানে অলৌকিক কিছুই ঘটছে না? মানুষের চোখে যে রাস্তাকে উপরের দিকে ঢালু বলে মনে হচ্ছে, সেটা আসলে নিচের দিকেই ঢালু? গাড়ি স্বাভাবিকভাবেই সেই ঢালু পথ ধরেই নেমে যাচ্ছে, কিন্তু আশেপাশের প্রকৃতির কারণে খালিচোখে মানুষের কাছে সেটাকেই উপরের দিকে উঠে যাওয়া মনে হচ্ছে? কিন্তু কীভাবে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে?

ওয়াদি জ্বীন; Image Source: Danang Ambar Prabowo/ Flickr

সবচেয়ে সহজ হতো যদি ওয়াদি জ্বীনে যাওয়ার সময় কেউ সাথে করে ওয়াটার লেভেল নিয়ে যেত। তাহলে হাতেনাতেই প্রমাণ পাওয়া যেত রাস্তা আসলে কোনদিকে ঢালু। কিন্তু ইউটিউবে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে ওয়াদি জ্বীনের উপর শতশত ভিডিও থাকলেও সেগুলোর অধিকাংশই মানুষের বিস্মিত হওয়ার অনুভূতি এবং অলৌকিকতার প্রতি অন্ধ বিশ্বাসকেই প্রতিফলন করে। গবেষণামূলক কোনো ভিডিও যদি থাকেও, এইসব ভিডিওর ভীড়ে সেগুলোকে খুঁজে পাওয়া কঠিন।

এখানে জানিয়ে রাখা ভালো, ওয়াদি জ্বীনের রহস্য কিন্তু অনেক আগেই সমাধান হয়ে গেছে। ওয়াদি জ্বীন যে আসলে একধরনের ‘গ্র্যাভিটি হিল’, এবং এ ধরনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ‘অগ্রাহ্য করা’ গ্র্যাভিটি হিল যে সারা পৃথিবীতে আরো অনেক আছে, সেটাও নতুন কোনো তথ্য না। কিন্তু ধরে নিন আপনি সেগুলো জানেন না, বা তত্ত্বীয়ভাবে জানলেও প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত বিশ্বাস করতে চান না। আবার আপনার পক্ষে এই মুহূর্তে সৌদি আরবে গিয়ে স্বচক্ষে প্রমাণ খোঁজাও সম্ভব না। তাহলে উপায়? আপনি যে পদ্ধতিটি কাজে লাগে লাগাতে পারেন, তার নাম ওপেন সোর্স ইনভেস্টিগেশন।

ওয়াদি জ্বীন; Image Source: Kashif Gulzar/ Flickr

ওপেন সোর্স ইনভেস্টিগেশন হচ্ছে কোনো ঘটনা তদন্তের সেই পদ্ধতি, যেখানে অনলাইনে সকলের জন্য উন্মুক্ত তথ্য ভাণ্ডারের সাহায্য নিয়ে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা হয়। বর্তমানে ইন্টারনেটে যেকোনো বিষয়ে এতো বেশি তথ্য, ছবি এবং ভিডিও আছে, এবং সেই সাথে সেগুলোকে ঠিকভাবে কাজে লাগানোর জন্য এতো বেশি কার্যকরী টুলস আছে যে, একটু চেষ্টা করলে ঘরে বসেই অনেক রহস্যের সমাধান খুঁজে বের করা যায়। আজকের এই প্রবন্ধে আমরা ঠিক সেই কাজটাই করব। ওপেন সোর্স ইন্টালিজেন্স ব্যবহার করে বের করার চেষ্টা করব, আসলেই ওয়াদি জ্বীনে অলৌকিক কোনো ঘটনা ঘটে কিনা।

প্রথম ধাপ: ভিডিও বিশ্লেষণ

প্রথমেই আমাদের যে কাজটা করতে হবে, ওয়াদি জ্বীনের অলৌকিকত্বের দাবি করা কিছু ভিডিও খুঁজে বের করতে হবে। এর জন্য চলুন ইউটিউবে গিয়ে Wadi Jinn লিখে সার্চ দিয়ে প্রথম ভিডিওটা (চিত্র ১) চালু করি। ৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের এই ভিডিওটাতে পরিষ্কারভাবেই দেখা যাচ্ছে, এখানে পানি এবং গাড়ি ঢাল বেয়ে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। কিন্তু এখন আমাদেরকে যেটা প্রমাণ করতে হবে, সেটা হচ্ছে প্রথমত, ভিডিওটা ঠিক কোন জায়গার? এটা আসলেই ওয়াদি জ্বীনের ভিডিও কিনা? আর দ্বিতীয়ত, এখানে যেরকম দাবি করা হচ্ছে, অর্থাৎ ঢাল বেয়ে উপরের দিকে উঠার দাবিটা আসলে সত্য কিনা?

চিত্র ১: ইউটিউবে ওয়াদি জ্বীনের ভিডিও

ভিডিওটা আসলেই ওয়াদি জ্বীনের কিনা, এবং হলে একেবারে ঠিক কোন জায়গার, সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমাদেরকে ভিডিওর মধ্যে বিশেষ লক্ষ্যনীয় কিছু চিহ্ন খুঁজে বের করতে হবে, যেটা হয়তো পরে অন্য কোনো ছবি, ভিডিও বা স্যাটেলাইট ইমেজের সাথে মেলানো সহজ হবে। ভিডিওর স্থান নির্ধারণ করার এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় জিওলোকেশন। আমাদের ভিডিওটার ৫ মিনিট ৪ সেকেন্ডের দৃশ্যটা (চিত্র ২) এক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। এখানে রাস্তার সামনে হাতের বামে পাশাপাশি তিনটা পাহাড়ের চূড়া দেখা যাচ্ছে। পরে অন্য ছবির সাথে মেলানোর জন্য আমরা এই পাহাড়গুলোকে লাল, নীল এবং সবুজ আয়তাকার বাক্স দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে পারি।

ভিডিওটা ভালোভাবে লক্ষ্য করলে আমরা এই স্থানটার আরও কিছু বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাব। এর মধ্যে একটা হচ্ছে, এই স্থানটার একপাশে, নির্দিষ্ট করে বললে, অধিকাংশ সময় যেদিক ফিরে ভিডিও করা হয়েছে, সেদিকে তাকালে হাতের বাম পাশে রাস্তার ঠিক পাশেই একটা পাহাড় আছে, এর বিপরীতে হাতের ডান পাশে পাহাড়গুলোর অবস্থান অনেক দূরে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে ল্যাম্পপোস্টগুলো শুধুমাত্র রাস্তার ডানপাশেই অবস্থিত, বামপাশে কোনো ল্যাম্পপোস্ট নেই। এই বৈশিষ্ট্যগুলোও পরবর্তীতে জিওলোকেশনের সময় কাজে লাগতে পারে। আপাতত ল্যাম্পপোস্টগুলোকে আমরা কালো রংয়ের বৃত্ত দিয়ে চিহ্নিত করে রাখতে পারি।

চিত্র ২: ভিডিওতে বিশেষ লক্ষ্য চিহ্ন সনাক্তকরণ

দ্বিতীয় ধাপ: স্যাটেলাইট ইমেজ অনুসন্ধান

দ্বিতীয় ধাপে আমাদেরকে স্যাটেলাইট ইমেজে এই জায়গাটির সঠিক অবস্থান খুঁজে বের করতে হবে। এই ধাপটাই সবচেয়ে কঠিন। অনেক সময় সোশ্যাল মিডিয়া, ইমেজ হোস্টিং সার্ভিস এবং ফ্রি স্যাটেলাইট ইমেজ প্রোভাইডার সার্ভিসগুলোতে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানোর পরেও কোনো স্থান খুঁজে বের করা যায় না। কিন্তু আমাদের ভাগ্য ভালো, ওয়াদি জ্বীন জায়গাটা খুবই ছোট এবং একইসাথে বেশ বিখ্যাত একটি জায়গা। স্যাটেলাইট ইমেজের জন্য আমরা গুগল ম্যাপসও ব্যবহার করতে পারি, কিন্তু এ ধরনের অনুসন্ধানে “গুগল আর্থ” সফটওয়্যারটা আরও বেশি কার্যকর, কাজেই আমরা সেটাই ব্যবহার করব।

চিত্র ৩: গুগল আর্থে ওয়াদি জ্বীন

চলুন এবার গুগল আর্থ সফটওয়্যারটি ওপেন করে ওয়াদি জ্বীনের নাম লিখে সার্চ করে (চিত্র ৩) মানচিত্রে জায়গাটির অবস্থান খুঁজে বের করি। এখানে দেখা যাচ্ছে, দুই সারি পর্বতশ্রেণীর মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত চলে যাওয়া রাস্তাটিই হচ্ছে ওয়দি জ্বীন। মানচিত্রের উপর লক্ষ্য করলেই আমরা দেখতে পাব্, কিছুদূর পরপর বৃত্তাকার কিছু ইমেজ আইকন দেখা যাচ্ছে। এগুলোতে ক্লিক করলে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর তোলা ঐ স্থানের ছবি প্রদর্শিত হবে। আমাদেরকে এখন এক এক করে এই ছবিগুলো ওপেন করে দেখতে হবে, কোনোটা আমাদের ভিডিওতে দেখানো দৃশ্যের সাথে মিলে যায় কিনা।

আমাদের ভাগ্য ভালো, কয়েকটা ছবিতে ক্লিক করার পরেই আমরা (চিত্র ৪)-এ প্রদর্শিত ছবিটা পেয়ে পাব। এই ছবিতে রাস্তার সামনে পাশাপাশি যে কয়েকটা পাহাড়ের চূড়া দেখা যাচ্ছে, তাদের আকৃতি ঠিক আমাদের ভিডিওটার মতোই। কিন্তু এই ছবিতে বাড়তি একটা পাহাড় (চিত্র ৫) দেখা যাচ্ছে, যেটার অবস্থান অন্য পাহাড়গুলো থেকে অনেকটা কাছে। এটাকে আমরা হলুদ আয়তাকার বক্স দ্বারা চিহ্নিত করতে পারি। কিন্তু কথা হচ্ছে, এই পাহাড়টা কোথা থেকে এসেছে? মনে আছে, ভিডিওতে ক্যামেরার ঠিক বামে রাস্তার ধারেই একটা পাহাড় ছিল? এটা হতে পারে ঠিক সেই পাহাড়টাই।

চিত্র ৪: গুগল আর্থে সম্ভাব্য পাহাড়গুলোর ছবি
চিত্র ৫: গুগল আর্থে পাহাড়ের ছবিগুলো শনাক্তকরণ

তৃতীয় ধাপ: জিওলোকেশন নিশ্চিত করা

গুগল আর্থে যে স্থানে ছবিটা পাওয়া গেছে, সেখানে যদি আমরা জুম ইন করি, তাহলে দেখতে পাব, তার থেকে আরেকটু সামনে ঠিক একটা পাহাড়ের পাশেই (চিত্র ৬) কিছু গাড়ির ভীড় দেখা যাচ্ছে। এই জায়গায় ভীড়ের অর্থ হতে পারে, এটাই সেই অলৌকিক স্থান, যেখানে পর্যটকরা ভীড় করে। এর ঠিক বাম পাশেই একটা পাহাড় এবং ডান পাশে অনেক দূর পর্যন্ত খালি থাকাটাও আমাদের ভিডিওর সাথে মিলে যায়। আরও একটু জুম করলে (চিত্র ৭) আমরা দেখতে পাব, রাস্তার ডান পাশে একটু পরপর হালকা কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এগুলোই সেই ল্যাম্পপোস্টগুলো, যেগুলো শুধু রাস্তার ডান পাশেই থাকার কথা।

চিত্র ৬: পাহাড়ের পাশেই গাড়ির ভীড়
চিত্র ৭: রাস্তার ডানে থাকা ল্যাম্পপোস্টগুলো
চিত্র ৮: গুগল আর্থের স্ট্রিট ভিউ লেভেল থেকে পাহাড়গুলো শনাক্তকরণ

অর্থাৎ আমরা মোটামুটি ভিডিওটার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গেছি। আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য চলুন আমরা আরো জুম ইন করে স্ট্রিট ভিউ লেভেলে চলে যাই, যেন পাহাড়গুলোর উচ্চতাও আমাদের কাছে দৃশ্যমান হয়। এখানে (চিত্র ৮) রাস্তার সামনে একটু বামে সেই তিনটা পাহাড়ের চূড়া দেখা যাচ্ছে, যেগুলোর উচ্চতা, আকৃতি এবং পারস্পরিক দূরত্ব আমাদের ভিডিও এবং ছবির সাথে মিলে যাচ্ছে। এছাড়া ভিডিওতে যেরকম রাস্তাটা সামনের দিকে একটু ডান দিকে বেঁকে গিয়েছিল, এখানেও ঠিক সেরকমই।

আমরা যদি ভিডিওটার ৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ড থেকে একটা দৃশ্য নিই, তাহলে রাস্তার ডানে থাকা পাহাড়গুলো (চিত্র ৯) দেখতে পাব। পরবর্তীতে তুলনা করার জন্য তিন ধরনের উচ্চতার তিনটি পাহাড়কে আমরা লাল, নীল ও সবুজ উপবৃত্ত দ্বারা চিহ্নিত করে রাখতে পারি। এবার গুগল আর্থে একই অবস্থানে থেকে ডান দিকে ক্যামেরার ভিউপয়েন্ট ঘোরালে আমরা দেখতে পাব, ঠিক একইরকম, একই আনুপাতের উচ্চতার তিনটি পাহাড় (চিত্র ১০) দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ আমরা নিশ্চিতভাবেই ভিডিওতে প্রদর্শিত জায়গাটির সঠিক অবস্থান খুঁজে পেয়েছি।

চিত্র ৯: ভিডিওর ৩ মিনিট ২৪ সেকেন্ডে রাস্তার ডান পাশের পাহাড়গুলো
চিত্র ১০: গুগল আর্থের স্ট্রিট ভিউ লেভেল থেকে ডান পাশের পাহাড়গুলো শনাক্তকরণ

চতুর্থ ধাপ: ভিডিওর দাবির সত্যতা নির্ণয়

জিওলোকেশন নির্ণয়ের পর আমাদের আর একটাই কাজ বাকি। খুঁজে বের করা, ভিডিওতে যে দাবি করা হচ্ছে, সেটা সত্য কিনা। এর জন্য প্রথমেই চলুন জুম আউট করে আমরা উপর থেকে পুরো মানচিত্রটা (চিত্র ১১) আবার দেখি। চিত্রের সাদা বৃত্তাকার অংশটি হচ্ছে ভিডিও ধারণকারী ক্যামেরার এবং গাড়িগুলোর অবস্থান, হলুদ আয়তাকার বক্সটি হচ্ছে রাস্তার বাম পাশের পাহাড়টি, আর সামনে লাল, নীল, সবুজ আয়তাকার বক্সগুলো হচ্ছে রাস্তার সামনের তিনটি পাহাড় চূড়া।

চিত্র ১১: গুগল আর্থে ঘটনাস্থলের অবস্থান

গাড়ি কোন দিক থেকে কোন দিকে যাচ্ছে, সেটা বোঝার জন্য ঘটনাস্থলের দুই পাশে আমরা দুটি বিন্দু চিহ্নিত করি, যেগুলোকে আমরা বলব পয়েন্ট A এবং পয়েন্ট B।  ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে, A থেকে B এর দিকটা, অর্থাৎ লাল তীর চিহ্নিত দিকটা উপরের দিকে ঢালু, কিন্তু তা সত্ত্বেও গাড়ি এবং পানি স্বয়ংক্রিয়ভাবে A থেকে B এর দিকে গড়িয়ে চলে যায়। এই দাবির সত্যতা বোঝার জন্য এখন আমরা গুগল আর্থের একটি বিশেষ ফিচার ব্যবহার করব, যার নাম এলিভেশন প্রোফাইল ফিচার। 

এর জন্য প্রথমেই আমাদেরকে গুগল আর্থে A থেকে B এর দিকে একটি Path তৈরি করতে হবে, যেটা চিত্রে রাস্তার উপর লাল দাগের মাধ্যমে প্রদর্শিত হচ্ছে। এবার Edit মেনু থেকে Show Elevation Profile এ ক্লিক করলে আমরা দেখতে পাব, গুগল আর্থ রাস্তাটির এই অংশটুকুর প্রতিটি বিন্দুর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কতটুকু, তার একটি রেখাচিত্র দেখাচ্ছে।

এখান থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি, A বিন্দুর উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৯০ মিটার, অন্যদিকে B বিন্দুর উচ্চতা ৭৩৪ মিটার। A এর অবস্থান এখানে পরিষ্কারভাবেই B থেকে অনেক উপরে। A থেকে B এর দিকে রাস্তা ক্ষেত্র বিশেষে ৪ থেকে ৫ শতাংশ নিচের দিকে ঢালু। অর্থাৎ আমরা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ পেলাম, ওয়াদি জ্বীনের এই স্থানে অলৌকিক কিছুই ঘটছে না। গাড়ি এখানে আসলে ঢাল বেয়ে নিচের দিকেই নামছে। কিন্তু আশেপাশের প্রকৃতির কারণে মানুষের কাছে নিচু ঢালকেই উঁচু বলে মনে হচ্ছে।

চিত্র ১২: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে A বিন্দুর উচ্চতা
চিত্র ১৩: সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে B বিন্দুর উচ্চতা

এ ধরনের ঘটনা যে শুধুমাত্র ওয়াদি জ্বীনে ঘটে, এমন না। বিশ্ব জুড়ে শতশত এরকম স্থান আছে, যেগুলোকে গ্র্যাভিটি হিল বলা হয়। গ্র্যাভিটি হিল কী, এবং সেগুলো কীভাবে কাজ করে, সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে হলে এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন। কিন্তু আজকের এই লেখাটি থেকে আমরা যেটা শিখতে পারি, সেটা হচ্ছে, বর্তমান যুগে অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া কোনো দাবিই আপনার চোখ বন্ধ করে বিশ্বাস করার দরকার নেই। বিশ্ব এখন প্রযুক্তিগতভাবে এতোই এগিয়ে গেছে, একটু চেষ্টা করলে ওপেন সোর্স বিভিন্ন তথ্যভান্ডার এবং টুলস ব্যবহার করে আপনি নিজেই সত্য অনুসন্ধান করে দেখতে পারেন।

This article is in Bangla. It's about the mystery of Wadi Jinn in Saudi Arabia. The article shows how to find the trurth about the claims regarding Wadi Jinn using Open Source Intelligence.

Featured Image: Kashif Gulzar/ Flickr

Related Articles