Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কানাডার অনিন্দ্যসুন্দর হ্রদমালা

প্রকৃতির মনোহারিণী রুপের এক অনন্য নিদর্শন লেক বা হ্রদ। চারিদিকে স্থলবেষ্টিত সুগভীর বা অগভীর এই জলাধারের মোহময়ী সৌন্দর্যে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। সবুজ বনানীর উদারতার আশ্রয়ে বা সুউচ্চ পর্বতের মমতাময়ী কোলে অবস্থিত কোনো হ্রদ এক নিমেষে আপনাকে নিয়ে যেতে পারে রুক্ষ বাস্তবতা থেকে স্বপ্নময় কোনো ভূবনে।

সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা রং, আকার, প্রকার ও গভীরতার অসংখ্য লেক। তবে লেকের স্বর্গরাজ্য কানাডার লেকগুলোর রয়েছে অন্যরকম এক আবেদন। বিশেষ করে পশ্চিম কানাডার রাজ্য ব্রিটিশ কলাম্বিয়া এবং আলবার্টার লেকগুলোর সৌন্দর্য আপনার চোখ ধাঁধিয়ে দিবে। কানাডার বেশিরভাগ হ্রদই পাহাড়ী। তুষারের টোপর পরা পর্বতশৃঙ্গে ঘেরা এই লেকগুলোর স্বচ্ছ সবুজ বা নীল জলরাশি হৃদয় ছুঁয়ে যায়। অতুলনীয় সৌন্দর্যের আধার কানাডার এমনই কিছু হ্রদ সম্পর্কেই আজ জানা যাক।

লেক সুপিরিয়র

লেক সুপিরিয়র; Source:Lamerge

লেক সুপিরিয়র পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সুপেয় পানির হ্রদ। আগ্নেয়গিরির অগ্নিস্ফুরণের ফলে সৃষ্ট সুবিশাল এই লেকটিতে তিনশটিরও বেশি নদীর স্রোত এসে মিলিত হয়েছে। লেক সুপিরিয়রে রয়েছে ছোট-বড় প্রায় চারশটি দ্বীপ। মায়াবী এই লেকের প্রাণীবৈচিত্র্যের বিস্তৃতিও ব্যাপক। লেকের জলে নানারকম মাছের পাশাপাশি লেকের পাশ্ববর্তী জঙ্গলে রয়েছে দুর্লভ অনেক অর্কিড। লেকটির ২৭ কি.মি. পর্যন্ত গভীরতায় দৃষ্টি চলে যায়, যা আপনাকে লেকের বৈচিত্র্যময় জলজীবন দর্শনের সুযোগ করে দেবে।

পাহাড়ঘেরা লেক সুপিরিয়রের নীল জলরাশি; source: Lake Superior Magazine

এছাড়া লেকটিকে ঘিরে রয়েছে হাইকিং ট্রেইল, দর্শনীয় জলপ্রপাত, সুসজ্জিত রেস্তোরাঁ। অপূর্ব সুন্দর এই লেকটি বিপজ্জনকও বটে! লেকের যে অংশ কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রকে বিভক্ত করেছে সেই অংশ জাহাজডুবির জন্য কুখ্যাত।

লেক লুইস

কানাডার আলবার্টা প্রদেশের বানফ ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত লেক লুইস যেন অরণ্যের সবুজের বুকে এক টুকরো চকচকে হীরকখণ্ড! ভূপৃষ্ঠ থেকে ১,৭৩২ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই লেকটির সৌন্দর্যের তুলনা নেই। উজ্বল রঙের জল, লেকের পাড়ের সবুজ বন আর তুষারে মোড়া পর্বত মিলিয়ে লেক লুইসে প্রকৃতির সাজ অনন্য। পান্নার মতো সবুজ রঙা পানি আর তুষারঢাকা সুউচ্চ পর্বতে ঘেরা লেকটির নামকরণ করা হয়েছিল রানী ভিক্টোরিয়ার কন্যা লুইস ক্যারোলিনের নামানুসারে। লেকের স্ফটিকস্বচ্ছ জলের উৎস ভিক্টোরিয়া হিমবাহ।

অপরুপ লেক লুইস; source: Expedia

গ্রীষ্মকালে লেকের রঙ সবচেয়ে উজ্জ্বল হয়। গ্রীষ্মের প্রখর সূর্যালোকে লেকের পাথুরে তলদেশের প্রতিফলিত আলো আর হিমবাহের বরফগলা পানির প্রাচুর্য্যে লেকের রঙ হয় গাঢ় নীল থেকে পান্না সবুজ। নয়নাভিরাম লেকের সাথে এখানে রয়েছে অসাধারণ কিছু হাইকিং ট্রেইল। শীতকালে পুরো লেকটাই জমে বরফ হয়ে যায় । তখন স্কিয়িং করা যায় লেকে।

মোরাইন লেক

রুপসী মোরাইন লেক;source: World for Travel

বিখ্যাত মোরাইন লেক হতে পারে নিঃসন্দেহে আপনার দেখা অন্যতম সেরা লেক। ব্যানফ ন্যাশনাল পার্কের দশ পর্বতের উপত্যকায় (Valley of Ten Peaks) এই লেকটি অবস্থিত। মোরাইন লেক স্বচ্ছ নীল জল আর চিত্তাকর্ষক পারিপার্শ্বিক পরিবেশের কারণে বিখ্যাত। হিমবাহ থেকে গড়িয়ে আসা জলেরা লেক মোরাইনে খুঁজে নেয় নিবিড় আশ্রয় আর সেই কাকচক্ষু জলের ছোঁয়ায় প্রকৃতি হয়ে ওঠে অদ্ভুত শান্ত। শান্ত সমাহিত আর আশ্চর্য সুন্দর সেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে গভীর ভাললাগার আবেশে ভরে ওঠে মন, প্রশান্ত হয় অন্তর।

লেক পেইতো

উজ্জ্বল পেইতো লেক; source: emmanuelcoupe.com

সবুজ পাহাড়ের পটভূমিতে ঘন নীল রঙের লেক। লেকের রং এতটাই মোহনীয় যে, আপনি অপার বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য হবেন। এই হচ্ছে লেক পেইতো। লেক পেইতো মূলত এর আকর্ষণীয় রঙের জন্যই বিখ্যাত। ব্যানফ ন্যাশনাল পার্কের এই দীর্ঘ লেকটি সবচেয়ে সুন্দর দেখায় আলবার্টার আইসফিল্ডস পার্কসওয়ের বো পয়েন্ট থেকে। ১,৮৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই লেকটি তিনটি পর্বত দ্বারা বেষ্টিত। লেকের উজ্জ্বল পানি আসে হিমবাহ থেকে। অনিন্দ্যসুন্দর এই লেকটি ফটোগ্রাফারদের কাছে দারুণ জনপ্রিয়।

এমারেল্ড লেক

এমারেল্ড লেকের পান্না সবুজ পানি; source: reddit.com

কানাডিয়ান রকি পর্বতমালার এমারেল্ড লেকে এর নামের স্বার্থক প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়। লেকটি দেখলে মনে হয়, এমারেল্ড পাথর তথা পান্না থেকে সবুজ রং শুষে নিয়ে তার পুরোটুকুই যেন ঢেলে দেয়া হয়েছে এই লেকে, যেন লেকে ছড়িয়ে দেওয়া আছে অসংখ্য এমারেল্ড পাথর! পান্না না থাকলেও লেকের জলে আছে চুনাপাথরের গুঁড়া! আর এ থেকেই লেকটি পেয়েছে তার মনোলোভা রং। এমারেল্ড লেক দেখার শ্রেষ্ঠ সময় জুলাই মাস। কারণ জুলাইয়ের আগ পর্যন্ত লেকটি বরফাচ্ছাদিত থাকে। জুলাইয়ে বরফ গলতে শুরু করলেই দেখা মেলে চোখ ঝলসানো সুন্দর এমারেল্ড লেকের!

লেক অ্যাজিউর

গহীন পর্বতের কোলে অবস্থিত অ্যাজিউর লেক; source: flickr.com

অজিলভি পর্বতমালার গহীনে অবস্থিত অ্যাজিউর লোকের নামকরণ করা হয়েছে এর উজ্জ্বল নীল রঙের কারণে। অন্যান্য লেকের মতো এই লেকটি হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়নি। বরং এটি অ্যাজিউর নদীর বর্ধিত অংশ। ওয়েলস গ্রে ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত এই লেকটি খোদিত হয়েছে সুউচ্চ পর্বতের মাঝখানে। অপরুপ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, হাইকিং ট্রেইল প্রভৃতির কারণে লেকটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণ।

লেক আব্রাহাম

মিথেন বাবল ভর্তি আব্রাহাম লেক; source: canadiangeographic.com

লেক আব্রাহাম ব্যতিক্রমধর্মী অনন্যসাধারণ লেক। এই কৃত্রিম লেকটি দেখার আদর্শ সময় শীতকালে। শীতকালে লেকটি অসাধারণ রুপ ধারণ করে। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাস ত্রিশ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা আস্ত লেকটিকে বরফে পরিণত করে ফেলে। ভাবছেন, এই হাড় কাঁপানো শীতে বরফঢাকা একটি লেকের কীসের এত মাহাত্ম্য? আসলে অন্যান্য লেকের মতো আব্রাহাম লেক এর পানির রঙের জন্য বিখ্যাত নয়, এটি বিখ্যাত এর জলের তলায় তৈরি হওয়া অদ্ভুত সুন্দর মিথেন বাবলের কারণে!

লেকে উদ্ভিদের পচনের ফলে তৈরি হয় দাহ্য মিথেন গ্যাস। শীতকালে এই মিথেন গ্যাস ভর্তি বুদবুদগুলো জমে গিয়ে বরফে পরিণত হয়। লেকের জলে জমে যাওয়া বরফের বুদবুদ নজরকাড়া নকশা তৈরি করে, যার ফলে লেকটি নবসৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

গ্যারিবল্ডি লেক

মায়াবী গ্যারিবল্ডি লেক; source: wordpress.com

কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশের গ্যারিবল্ডি লেক ভ্যানকুভার শহর থেকে মাত্র ৯০ কি.মি. দুরত্বে অবস্থিত। তুষারে ছাওয়া সুদীর্ঘ পর্বত আর বনবাদাড়ের সান্নিধ্য পেয়ে লেকটি হয়ে উঠেছে সৌন্দর্য্যের দুর্লভ তীর্থ। লেকটি দেখতে হলে আপনাকে ১৮ কি.মি. পাহাড়ি পথ ডিঙোতে হবে। সময় লাগতে পারে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। পর্যটকরা রাতের লেকের মনোরম দৃশ্য দেখার জন্য ক্যাম্প করে থেকেও যান এখানে।

লেক অন্টারিও

লেক অন্টারিওর তীরে বিখ্যাত নগরী টরেন্টো; source: wallpaperscraft.com

অন্টারিও প্রদেশে অবস্থিত এই লেকটি বেশি বড় নয়। তবে সৌন্দর্য আর ভৌগলিক অবস্থানের গুরুত্ব দিয়ে ঠিকই বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে এটি। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ জলপ্রপাত নায়াগ্রা ফলসের নিচে অবস্থিত এই লেকটি প্রথমে সেইন্ট লরেন্স নদীতে মিলিত হয়েছে। তারপর পড়েছে আটলান্টিক মহাসাগরে। লেকের তীরে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে বাতিঘর। লেকের পাড়ে কানাডার বিখ্যাত শহর টরেন্টো অবস্থিত। লেক অন্টারিও থেকে একইসাথে শহুরে এবং প্রাকৃতিক দৃশ্যের দেখা মেলে।

জফরি লেক

মেঘ আর পাহাড়ের ছায়ায় জফরি লেক; source: Beginners Hiking

জফরি লেক পাহাড়ের উচ্চ, মধ্য, নিম্ন- এই তিন স্তরে অবস্থিত। হিমবাহের বিগলিত বরফ পানি হয়ে গড়িয়ে এসে আস্তানা গাড়ে লেকের গর্ভে। সবুজরঙা স্বচ্ছ পানির এই লেকটি শান্ত-সুন্দর প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব করে।

স্পটেড লেক

কারুকার্যময় স্পটেড লেক; source: Strange Sounds

‘লেকের গায়ে আবার কোন কলঙ্কের ছাপ আঁকা রয়েছে!’ নামটা শুনে মুখ বাঁকিয়ে এমনটা ভাবতেই পারেন অনেকে। এই লেকের পানি হচ্ছে নানারকম খনিজ লবণের আখড়া। গ্রীষ্মকালে লেকের পানি যখন খররোদে বাষ্প হতে শুরু করে, তখন খনিজ লবণগুলো পানিতে রঙ ছড়িয়ে আল্পনা আঁকে। তার ফলেই লেকে নানা রঙের বড় বড় ফুটকি দেখা যায়। এবার বুঝতেই পারছেন স্পটেড নাম হওয়ার যথার্থতা। গ্রীষ্মকালই খনিজ লবণের নকশা দেখার শ্রেষ্ঠ সময়।

চোখজুড়ানো সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়ে ভূপৃষ্ঠে অবস্থান করা এই লেকগুলো প্রকৃতির অপরূপ রূপসুষমার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লেকগুলোর বিস্ময়কর সৌন্দর্যে বিমোহিত হতে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন কানাডা থেকে!

ফিচার ইমেজ- Wallpaperstock

Related Articles