Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের অদ্ভুত সুন্দর কিছু সমুদ্র সৈকত

সমুদ্র সৈকত শুনলেই আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে পরিস্কার, স্বচ্ছ, নীল সমুদ্রের পাড়ে সোনালি বালিয়াড়ির ছবি। একপাশে হয়তো সমুদ্রের বুকে মাথা ঝুঁকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কিছু পাম গাছ, আকাশের বুকে হয়তো উড়ছে কিছু ধবধবে সাদা সীগাল। কিন্তু পৃথিবীর সব সৈকতই কি এরকম? মোটেও না। বিচিত্র এ পৃথিবীতে সমুদ্র সৈকতেরও আছে নানান রূপ। চলুন জেনে নেওয়া যাক বিশ্বের সবচেয়ে অদ্ভুত কিছু সমুদ্র সৈকতের কথা।

মেক্সিকোর গুপ্ত সৈকত

মেক্সিকোর হিডেন বীচ; Source: travelandleisure.com

মেক্সিকোর পুয়ের্তো ভ্যালার্তা উপকূল থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে জনমানবহীন ম্যারিয়েটা দ্বীপে হিডেন বীচ নামক এই গুপ্ত সৈকতটির অবস্থান। সম্পূর্ণ সৈকতটি বিশাল একটি গুহার মধ্যে অবস্থিত, যার ছাদে আছে বিশাল একটি গর্ত। এই দ্বীপে যেতে হলে ভ্রমণকারীদেরকে নৌকা বেয়ে প্রায় এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে হয়। এরপর নৌকা বাইরে রেখে সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে সাঁতার কেটে প্রবেশ করতে হয় গোপন এই সৈকতটিতে। ছাদের গর্ত দিয়ে দড়ি বেয়েও অবশ্য নামা যেতে পারে, কিন্তু সমুদ্র থেকে দ্বীপটির উপরে উঠে, বিশাল দূরত্ব পায়ে হেঁটে এরপর দড়িটিকে কোনো কিছুর সাথে বেঁধে ভেতরে প্রবেশ করা আরও কঠিন কাজ।

তবে যত কষ্টই হোক, একবার সৈকতটিতে প্রবেশ করতে পারলে পর্যটকদের সকল কষ্ট নিমেষেই লাঘব হয়ে যায়। গুহার ভেতরে অবস্থিত এই সৈকতটি বিশ্বের অন্য যেকোনো সৈকতের চেয়ে ভিন্ন। যেন বাইরের বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন এক জগত এটি। এখানে বাইরের পৃথিবীর সাথে একমাত্র যোগাযোগ স্থাপিত হয় ছাদের খোলা অংশটুকুর মধ্য দিয়ে আসা সূর্যের আলোর মাধ্যমে।

উপর থেকে মেক্সিকোর হিডেন বীচের দৃশ্য; Source: labrujulaverde.com

এই সৈকতটি অবশ্য সব সময় এরকম ছিল না। এক সময় পুরো গুহাটাই আবৃত ছিল। জনবসতি না থাকার সুযোগকে পুঁজি করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে বিমান থেকে বোমা হামলা অনুশীলন করার জন্য মেক্সিকোর সরকার এই দ্বীপগুলোকে বেছে নেয়। সেরকমই একটি বোমার আঘাতে ভেঙে পড়ে গুহার ছাদ। মেক্সিকোর সরকার দীর্ঘদিন পর্যন্ত এসব এলাকায় বোমা বর্ষণের অনুশীলন চালিয়ে যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে ষাটের দশকে তারা অনুশীলন প্রকল্প বন্ধ করে এবং পরবর্তীতে দ্বীপগুলোকে ন্যাশনাল পার্ক হিসেবে মর্যাদা দেয়।

মালদ্বীপের প্রদীপ্ত সৈকত

মালদ্বীপের গ্লোয়িং বীচ; Source: huffpost.com

বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছু সমুদ্র সৈকত আছে, যেগুলোকে বলা হয় বায়োলুমিনেসেন্ট বীচ। বায়োলুমিনেসেন্স হচ্ছে কোনো উদ্ভিদ বা প্রাণীর আলোক নিঃসরণের ক্ষমতা। যেসব সৈকতে প্ল্যাংকটন জাতীয় উদ্ভিদ থেকে বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে আলোক নিঃসরিত হয়, তাদেরকেই বায়োলুমিনেসেন্ট বীচ বলা হয়।

মালদ্বীপের ভাধু দ্বীপের গ্লোয়িং বীচ এরকমই একটি সমুদ্র সৈকত। এখানের সমুদ্রতীরে অবস্থিত হাজার হাজার ফাইটোপ্ল্যাংকটন উদ্ভিদ আছে, যেগুলো সামান্য স্পর্শে বা ঢেউয়ের আঘাতেই আলোক নিঃসরণ করে। ফলে রাতের বেলা রূপকথার রাজ্যের মতো অতুলনীয় দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। মনে হয় যেন কালো আকাশের বুকে হাজার হাজার নীল রঙের তারা মিটিমিটি জ্বলছে।

ক্যালিফোর্নিয়ার কাঁচ সৈকত

ক্যালিফোর্নিয়ার কাঁচ সৈকত; Source: californiabeaches.com

সৈকতে কাঁচের টুকরা থাকুক, এটা সম্ভবত কেউই চাইবে না। কিন্তু মাঝেমাঝে কাঁচের উপস্থিতিই সৈকতকে আকর্ষণীয় এবং পর্যটন স্থানে রূপান্তরিত করতে পারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ফোর্ট ব্র্যাগে এরকম অন্তত তিনটি সৈকত আছে, যেগুলো রঙ বেরঙের মসৃণ কাঁচের টুকরা দ্বারা আবৃত।

এই জায়গাগুলো ছিল মূলত শহরটির বর্জ্য নিষ্কাশন স্থান। বছরের পর বছর ধরে মানুষ এখানে তাদের যাবতীয় ময়লা-আবর্জনা ফেলে গেছে। সময়ের সাথে সাথে জৈব বর্জ্যগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমুদ্রের সাথে মিশে গেছে, ভারী লোহার টুকরোগুলো মরিচা পড়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে বা সমুদ্রে তলিয়ে গেছে, কিন্তু রয়ে গেছে শুধু কাঁচের টুকরাগুলো। যুগ যুগ ধরে তীরে আছড়ে পড়া ঢেউয়ের আঘাতে সেগুলোর ধারালো কোণগুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সমুদ্র তীরবর্তী নুড়ি পাথরের মতো মসৃণ হয়ে উঠেছে।

কাঁচ সৈকতের রং বেরংয়ের কাঁচ; Source: mustdotravels.com

অত্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী এই কাঁচের সৈকতটি বর্তমানে কর্তৃপক্ষ দ্বারা সংরক্ষিত। মানুষ এখানে বেড়াতে পারে, কিন্তু কাঁচের টুকরাগুলো সরিয়ে নিতে পারে না। এই জাতীয় সৈকত অবশ্য এটিই একমাত্র না। সাইবেরিয়াতে সমুদ্র তীরবর্তী একটি কাঁচ তৈরির কারখানাও তাদের ত্রুটিপূর্ণ কাঁচগুলো সমুদ্রে নিক্ষেপ করার মাধ্যমে এরকম একটি সৈকত তৈরি করেছে।

নিউজিল্যান্ডের ড্রাগন ডিম্ব সৈকত

নিউজিল্যান্ডের ড্রাগন এগ বীচ; Source: collective-evolution.com

ড্রাগনের ডিমের ফাঁদে আটকা পড়ার ভান করছে এক পর্যটক; Source: boredpanda.com

নিউজিল্যান্ডের কোকোহ সৈকতে গেলে মনে হবে এটি বুঝি এই পৃথিবীর কোনো দৃশ্য না। এই সৈকতে অবস্থিত মোরকি নামক পাথরখন্ডগুলোকে মনে হবে হয়তো কোনো সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্রের এলিয়েনদের মহাকাশযান, অথবা গেম অফ থ্রোনস ধারাবাহিকের ড্রাগনের ডিম। সৈকতটির অদ্ভুত বৈশিষ্ট্যের কারণে এটি পর্যটকদের এবং শখের ফটোগ্রাফারদের কাছে বেশ প্রিয় একটি স্থান।

মোরকি নামক এই পাথর খণ্ডগুলো মূলত ৫.৬ কোটি বছর আগে তৈরি হওয়া পাললিক শিলা। এদের ব্যাস ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। দীর্ঘকাল পর্যন্ত এগুলো নিকটবর্তী পর্বতের দেয়ালে বাঁধের আড়ালে ছিল। সম্প্রতি ঢেউয়ের স্রোতে সেগুলো সৈকতে এসে হাজির হয়েছে। সমুদ্রের পানির স্রোতের আঘাতে পাথরগুলোর ফাটল আরো বিস্তৃত হয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনভাবে ভেঙে গেছে যে, মনে হয় যেন বৃহদাকার কোনো প্রাণীর ডিম ফুটে বাচ্চার জন্ম হওয়ার উপক্রম হচ্ছে।

নিউজিল্যান্ডের উষ্ণ পানির সৈকত

উষ্ণ পানির সৈকতে স্নান করছে পর্যটকরা; Source: mybestplace.com

নিউজিল্যান্ডের মার্কারী উপসাগরের তীরে করোমান্ডেল উপদ্বীপে অবস্থিত এই সৈকতটি সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র সমুদ্র সৈকত, যেখানে মানুষ বালতি এবং কোদাল নিয়ে স্নান করতে যায়। এর কারণ হচ্ছে, এখানকার সৈকতের বালির নিচ দিয়ে উষ্ণ পানির ধারা প্রবাহিত হয়। দিনে দু’বার ভাটার আগে এবং পরে মাটি খুঁড়লে সেই গরম পানি উপরে উঠে আসে। ভ্রমণকারীরা তাই কোদাল দিয়ে মাটি খুঁড়ে কৃত্রিম জলাধার তৈরি করে, জমা হওয়া উষ্ণ পানিতে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকে এবং পরবর্তীতে বালতি থেকে মগ কেটে সেই পানিতে স্নান করে।

পৃথিবীর বেশ কিছু স্থানে আগ্নেয়গিরির প্রভাবে সৃষ্টি হওয়া ভূ-গর্ভস্থ জলাধার আছে, যেখান থেকে উষ্ণ পানির ধারা প্রবাহিত হয়। নিউজিল্যান্ডের এই স্থানটিও সেরকমই একটি স্থান। ভূগর্ভে পানির উষ্ণতা অনেক বেশি হলেও সৈকতের মাটি খুঁড়ে সর্বোচ্চ ৬৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস উষ্ণতা বিশিষ্ট পানি পাওয়া যায়। পর্যটকদের জন্য এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি স্থান। বছরে প্রায় সাত লক্ষ পর্যটক এই সৈকতটি ভ্রমণ করে।

বাহামার গোলাপী সৈকত

বাহামার গোলাপী বালির সৈকত; Source: wavejourney.com

বাহামা দ্বীপপুঞ্জের হারবার দ্বীপটি এর গোলাপী সৈকতের জন্য বিখ্যাত। দ্বীপটির পূর্ব প্রান্তে প্রায় তিন মাইল জুড়ে এ ধরনের গোলাপী রঙের বালি বিশিষ্ট সৈকত দেখা যায়। এই রঙের উৎস মূলত ফোরামিনিফেরা নামক এক প্রকার অতি ক্ষুদ্র এককোষী প্রাণী, যাদের কিছু কিছু প্রজাতির খোলসের রং লালচে গোলাপী হয়ে থাকে।

সংক্ষেপে ফোরাম নামে পরিচিত এই প্রাণীগুলো দেখতে অনেকটা স্ট্রবেরির মতো হয়। এরা তীর থেকে দূরে বিপুল সংখ্যায়  বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীতে সমুদ্রের ঢেউয়ের সাথে তীরে এসে বালির সাথে মিশে সৈকতে গোলাপী আভা সৃষ্টি করে। হারবার দ্বীপ ছাড়াও বাহামার এলিউথেরা দ্বীপেও এ ধরনের গোলাপী সৈকত আছে।

ব্রাজিলের মরুভূমির সৈকত

ব্রাজিলের ডেজার্ট বীচ; Source: freshwallpapers.net

দেখতে মরুভূমির মতো হলেও এটি আসলে মরুভূমি না। ব্রাজিলের উত্তর-পূর্বের মারানহাও অঙ্গরাজ্যে অবস্থিত ‘মারানহাওয়ের বিছানাচাদর’ খ্যাত ন্যাশনাল পার্কটি আমাজন অববাহিকায় বিশাল এলাকা জুড়ে পলিমাটি থেকে সৃষ্টি হওয়া বালিয়াড়ি। প্রতি বছর জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই এলাকায় প্রায় ৪৭ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হয়। কিন্তু বালিয়াড়ির তলদেশে অবস্থিত অভেদ্য শিলার উপস্থিতির ফলে এই পানি অন্য কোথাও যেতে না পেরে বালিয়াড়ির উপত্যকাতেই জমা হতে থাকে এবং স্বচ্ছ নীল রংয়ের উপহ্রদের সৃষ্টি করে। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরের দিকে যখন উপত্যকাগুলো পানিতে পরিপূর্ণ হয়ে উপচে পড়ে, তখন বালিয়াড়িকেই হ্রদের তীরবর্তী সৈকত বলে মনে হয়।

স্পেনের গির্জা সৈকত

স্পেনের ক্যাথেড্রাল বীচ; Source: panoramio.com

স্পেনের গ্যালিসিয়া প্রদেশে অবস্থিত এই সৈকতটির প্রকৃত নাম পারিয়া দে অগাস সান্তাস, যার অর্থ পবিত্র পানির সৈকত। কিন্তু প্রাচীন ভগ্ন গির্জার মতো দেখতে বিশেষ ধরনের পাথরের তৈরি প্রাকৃতিক খিলান এবং গুহার উপস্থিতির জন্য পর্যটকদের কাছে এটি অ্যাজ কাতেদ্রাইস বীচ তথা ক্যাথেড্রাল সৈকত বা গির্জা সৈকত নামে পরিচিতি লাভ করেছে। এর গুহাগুলোর মধ্য দিয়ে শুধুমাত্র ভাটার সময়ই বিচরণ করা যায়। জোয়ারের পানিতে এর অধিকাংশই তলিয়ে যায় এবং সৈকতটি অত্যন্ত সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। জোয়ারের সময়টা সমুদ্রে সাঁতার কাটার চেয়ে গুহাগুলোর উপরে দাঁড়িয়ে দৃশ্য উপভোগ এবং চিত্রধারণের জন্য বেশি উপযোগী।

ফিচার ইমেজ- zersey.com

Related Articles