Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাফেজিয়া: কথা বলতে সমস্যা হয়, অথচ গান গাইতে নয়!

এমন কোনো মানুষ দেখেছেন কখনো যিনি কথা বলতে গেলে সমস্যাবোধ করেন, তোতলান; অথচ গান গাইতে পারেন সাবলীলভাবে? আমাদের চারপাশে খুব কম মানুষই আছেন যাদের মধ্যে এই বিচিত্র ব্যাপারটি লক্ষ্য করা যায়। আমাদের কাছে ব্যাপারটি অনেক বেশি রহস্যময় হলেও স্নায়ুবিজ্ঞানীদের কাছে এটি খুব সাধারণ একটি ঘটনা। যেটি খুব কম ঘটলেও অস্বাভাবিক নয়। এই পুরো ব্যাপারটির খুব সহজ একটি উত্তর আছে। আর সেটি হলো মানুষের মস্তিষ্কের গঠন। কিছু মানুষের মস্তিষ্কের বামপাশ এবং ডানপাশ সমানভাবে কাজ করে না। কারো বামপাশের মস্তিষ্ক ডানপাশের চাইতে বেশি কাজ করে, কারো ক্ষেত্রে ব্যাপারটি উল্টো। আর অনেকের কাছে দুটো পাশই সমানতালে কাজ করে যায়। আর কথা বলা কিংবা গান করার এই রহস্যের চাবিকাঠিও মস্তিষ্কের এই কর্মকান্ডের উপরেই নির্ভরশীল।

কথা বলতে সমস্যা হয় আর গান গাইলে হয় না?

অ্যাফেজিয়ায় আক্রান্তদের মস্তিষ্কের বামপাশ ব্যবহার করতে সমস্যা হয়; Source: bancodasaude.com

আরো অনেকের মতো আপনারও যদি এই সমস্যাটি থাকে তাহলে বুঝতে হবে আপনার মস্তিষ্কের ডানপাশ বামপাশের চাইতে বেশি সক্রিয়। মানুষ কথা বলে তার মস্তিষ্কের বাম অংশ থেকে আর সুর কিংবা গান করে ডানপাশ থেকে। ফলে কারো যখন বামপাশ ব্যবহার করতে সমস্যা হয়, তখন তিনি কথা বলতে পারেন না। কিন্তু গানের ব্যাপারটি যেহেতু পরিচালিত হয় মস্তিষ্কের ডান অংশের মাধ্যমে, তাই কথা বলতে সমস্যাবোধ করলেও গান গাইতে কোনো সমস্যাবোধ করেন না তারা।

এসব ক্ষেত্রে সাধারণত মানুষের মস্তিষ্কের বামপাশ কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে। এর অর্থ এই নয় যে, জন্ম থেকেই এমন কিছু হতে হবে। তবে স্ট্রোক, আঘাত এবং নানা রকম প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে এমন কিছু ঘটতে পারে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে আমাদের মস্তিষ্ক। আর এই কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যাবোধ করা বা যোগাযোগ বিপর্যয়ের ব্যাপারটিকে ডাক্তারি ভাষায় বলা হয় অ্যাফেজিয়া।

অ্যাফেজিয়া: কী এবং কেন?

যোগাযোগে সমস্যা দেখা দেয় এই রোগে; Source: National Aphasia Association

অ্যাফেজিয়া এমন একধরনের অবস্থা, যেখানে মস্তিষ্ক কোনো আঘাত কিংবা অন্য কোনো কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হয়। সাধারণত, বয়স্ক মানুষদের ক্ষেত্রে অ্যাফেজিয়া বেশি দেখা যায়। একজন মানুষ অন্য মানুষের কথা বুঝতে এবং সেই কথাকে ব্যবহার করতে কতটা সমস্যার মুখোমুখি হয়? অ্যাফেজিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি হয়ে যায় একদম আলাদা। এর ফলে, মানুষ সামনের মানুষটির কথা সহজে বুঝতে পারে না এবং সেই কথা ব্যবহারও করতে পারে না।

কোনো কোনো কথা শুনে লিখে ফেলা, কথোপকথন শুনে বুঝতে পারা, সংখ্যা লেখা ইত্যাদি এই মানুষগুলোর জন্য হয়ে পড়ে কষ্টকর ব্যাপার। এর মানে কিন্তু এই নয় যে, অ্যাফেজিয়ায় আক্রান্তদের বুদ্ধি কম। তাদের বুদ্ধি আর সব মানুষেরই মতো। তবে শব্দ দিয়ে নিজের মনের ভাব প্রকাশ করার সময় সঠিক শব্দটি খুঁজতে এই সমস্যায় আক্রান্তদের কষ্ট হয়। ফলে দেখা দেয় তোতলামির মতো ব্যাপার।

মস্তিষ্ক ব্যবহারের উপরে নির্ভর করে কোনো মানুষ কথা বলতে পারছেন নাকি পারছেন না; Source: WebMD

সাধারণত, মস্তিষ্কে কোনো আঘাত পেলে কিংবা স্ট্রোকের কারণে অ্যাফেজিয়া দেখা দেয়। মস্তিষ্কের যে অংশ কথা বলার কাজটি পরিচালনা করে সেটি তখন ব্যাহত হয়। ফলে মানুষ ঠিক করে কথা বলতে পারে না। জাতীয় অ্যাফেজিয়া অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ মানুষ স্ট্রোক করার পর জীবিত থাকাকালীন সময়ে অ্যাফেজিয়ায় ভুগে থাকে। এছাড়াও অ্যাফেজিয়ার পেছনে থাকতে পারে মস্তিষ্কের টিউমর, মস্তিষ্কের সংক্রমণ, স্মৃতিশক্তির দুর্বলতা ইত্যাদি সমস্যাগুলোও। অনেক সময় অ্যাফেজিয়া এপিলেপ্সি কিংবা কোনো স্নায়ু সংক্রান্ত সমস্যার কারণেও ঘটতে পারে।

অ্যাফেজিয়ার রকমভেদ

অ্যাফেজিয়া নানা রকমের হতে পারে। খুব সাধারণ থেকে তীব্র- সব ধরনের অ্যাফেজিয়াই হতে পারে। চলুন দেখে নিই অ্যাফেজিয়ার রকমগুলো সম্পর্কে।

১. এক্সপ্রেসিভ অ্যাফেজিয়া

এক্সপ্রেসিভ অ্যাফেজিয়ার ক্ষেত্রে কোনো মানুষ কী বলতে চান সেটা জানেন, কিন্তু বলতে পারেন না। সেটা যেকোনো ব্যাপারেই হতে পারে। খেলা কিংবা অর্থনীতি- ব্যাপারটি নার্ভাস হয়ে যাওয়া নিয়ে নয়। প্রচুর জানা সত্ত্বেও কথা উচ্চারণ করতে পারেন না এক্সপ্রেসিভ অ্যাফেজিয়ার ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা।

২. রিসেপ্টিভ অ্যাফেজিয়া

রিসেপ্টিভ অ্যাফেজিয়ায় ভোগেন যে মানুষগুলো তারা সামনের মানুষের সব কথা শুনতে পান, কিন্তু কিছু বুঝতে পারেন না। এমনকি তার নিজের কথাও কখনো কখনো অস্পষ্ট হয়ে যায়। কারণ নিজের কথাও শুনতে কিংবা শুনলেও বুঝতে পারেন না তারা।

৩. অ্যানোমিক অ্যাফেজিয়া

এই সমস্যার ভুক্তোভোগী মানুষ কোনো কথা বলার সময় বা লেখার সময় শব্দ খুঁজে পান না। ব্যাপারটি আমাদের সবার সাথেই কমবেশী হয়ে থাকে। তবে অ্যাফেজিয়ায় আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি গুরুতর হয়ে দাড়ায়।

৪. গ্লোবাল অ্যাফেজিয়া

অ্যাফেজিয়ার এই রকমটি বেশ ভয়ংকর। এই ক্ষেত্রে মানুষ কিছু বলার সময় শব্দ খুঁজে পান না। মাঝেমধ্যে কথা বলতে পারেন না। সামনের মানুষের কথা শুনলেও বুঝতে সমস্যা হয় তাদের। এছাড়া, লিখতে বা পড়তেও সমস্যাবোধ করেন তারা। অর্থাৎ অ্যাফেজিয়ার সব সমস্যাই এদের ক্ষেত্রে দেখা যায়। সাধারণত, স্ট্রোক করার পর এমন অ্যাফেজিয়া দেখা যায় মানুষের মধ্যে।

অ্যাফেজিয়া নানা রকমের হতে পারে; Source: PEMF Therapy Education

৫. প্রাইমারি প্রোগ্রেসিভ অ্যাফেজিয়া

প্রাইমারি প্রোগ্রেসিভ অ্যাফেজিয়ার ক্ষেত্রে রোগী কথা বলা কিংবা লেখা, কারো কথা বোঝার ব্যাপারগুলো একটু একটু করে হারিয়ে ফেলতে থাকেন। এই অ্যাফেজিয়া খুব বিরল। এর তেমন কোনো চিকিৎসাও নেই। অন্য অ্যাফেজিয়াগুলোর কিছুটা উন্নতি করা সম্ভব অবশ্য থেরাপির মাধ্যমে। তবে সেটাও কতটা ভালো ফলাফল নিয়ে আসবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না।

অ্যাফেজিয়া সামান্য থেকে শুরু করে গুরুতর- সব ধরনেরই হতে পারে। তবে, প্রাথমিক এবং সামান্য মাত্রার অ্যাফেজিয়ার ক্ষেত্রে মানুষ কথা বলতে এবং যোগাযোগ করতে একটু সমস্যা হলেও সমর্থ হয়। গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে অবশ্য অন্যের কথা বুঝতে বা স্বাভাবিকভাবে যোগাযোগ করতে কষ্ট হয় অ্যাফেজিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের। এখন প্রশ্ন হল, কী দেখে আপনি বুঝতে পারবেন যে সামনের মানুষটির অ্যাফেজিয়া আছে নাকি নেই? প্রাথমিকভাবে, কোনো শারীরিক সমস্যা না থাকলে, অ্যাফেজিয়ায় আক্রান্ত রোগীকে খুঁজে বের করাটা কঠিন। তবে কিছু ব্যাপার, যেমন-

১. কথা বলতে সমস্যাবোধ করা
২. কথা মনে করতে সমস্যাবোধ করা
৩. কারো কথা শুনেও বুঝতে না পারা এবং
৪. লিখতে ও পড়তে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি ব্যাপারগুলো দেখলে সেটাকে অ্যাফেজিয়ার লক্ষণ বলে ধরে নেওয়া যায়। বয়স, অসুস্থতা, মস্তিষ্কের অবস্থান হতে পারে অ্যাফেজিয়ার কারণ।

অ্যাফেজিয়া পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়; Source: My Brain LLC

অ্যাফেজিয়া থেকে একেবারে মুক্ত হওয়া সম্ভব নয়। তবে নিয়মিত মানুষের সাথে কথা বলা, পত্রিকা পড়া ও থেরাপি নেওয়া অ্যাফেজিয়া আক্রান্ত রোগীকে কিছুটা হলেও সুস্থ করে তুলতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, গানও এই ধরনের রোগীদের সুস্থ করে তুলতে পারে। অ্যাফেজিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা ঠিকভাবে কথা বলতে না পারলেও নিজেদের মস্তিষ্কের অন্য অংশ ব্যবহার করে গান গাইতে পারেন। এই একই ব্যাপারটি ডিসফোনিয়া নামক আরেকটি সমস্যার ক্ষেত্রেও হতে পারে, যেখানে পেশীর সমস্যার কারণে মানুষ কথা বলতে পারে না, কিন্তু গান গাইতে পারে। সমস্যা একই হলেও সম্পূর্ণ আলাদা নামের এই ব্যাপারটি নিয়ে নাহয় আরেকদিন কথা বলা যাবে। তবে আপনি যদি আপনার কিংবা পরিচিত কারো মধ্যে অ্যাফেজিয়ার লক্ষণ দেখতে পান, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের সাথে আলাপ করুন!

ফিচার ইমেজ: PEMF Therapy Education

Related Articles