Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

সুস্বাস্থ্য এবং রূপচর্চায় পানির উপকারিতা

পানির অপর নাম জীবন। সেই ছোট বেলায় পাঠ্যবই থেকে আমরা সবাই এটা জেনেছি। আস্তে আস্তে যত বড়ো হয়েছি তত আরো বিশদভাবে জেনেছি পানি আমাদের জীবন আর স্বাস্থ্যের জন্য কত বেশি দরকারী, কতটা আবশ্যক। মানবদেহ নিয়ে যত বিস্তারিত পড়া যাবে, ততই সুস্থতার জন্য সর্বাগ্রে পানির প্রয়োজনীয়তা আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সেই মাতৃগর্ভ থেকে শুরু করে একটি শিশুর ধীরে ধীরে পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠা, একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির সুস্থভাবে বেঁচে থাকা অনেকটাই নির্ভর করে সঠিক পরিমাণে নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পানের উপর।

কিন্তু মানুষের বাহ্যিক সৌন্দর্য, সুস্থ ত্বক, ঝলমলে চুল আর উজ্জ্বল চেহারাও যে ব্যক্তির পানি পানের অভ্যাসের ওপর নির্ভর করে। আর এ বিষয়ে এখনো অনেকেই সচেতন নন। তাই আজ সুস্বাস্থ্যের পাশাপাশি সৌন্দর্যের জন্যও পানি কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা পাঠকদের সামনে সেটা তুলে ধরতেই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস থাকছে।

প্রতিটি কোষ থেকে শুরু করে ত্বক, পেশি, অভ্যন্তরীণ অঙ্গ- সম্পূর্ণ শরীরের শতকরা প্রায় ৫৫-৭৫ ভাগ যে পানি দ্বারা গঠিত, শরীরকে টিকিয়ে রাখতে সেই পানি কতটা জরুরী তা বলাই বাহুল্য। অন্যান্য অঙ্গগুলোর মতো আমাদের ত্বকও অসংখ্য কোষ দ্বারা গঠিত। আর এই কোষগুলোর নিজেদের কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পন্ন করতে দরকার হয় পানির। এখান থেকেই শুরু ত্বকের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা। ত্বকের অত্যাবশ্যকীয় আর্দ্রতা ধরে রাখতে আর কোষগুলোতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পৌঁছে দিতে প্রয়োজন পানির। পানিই ক্ষতিগ্রস্ত কোষকে আবার জীবিত করে, সেই সাথে ত্বককে দান করে স্থিতিস্থাপকতা। এভাবেই দেহে থাকা পর্যাপ্ত পানি আপনাকে সময়ের আগে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। তাই বয়সের ছাপ, ত্বকের কুঁচকানো ভাব রুখতে বিভিন্ন প্রসাধনী আর চিকিৎসার প্রলোভনে যখন বাজার সয়লাব, তখন নিশ্চিন্তে বলা যায়, বিশুদ্ধ পানিই এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির জন্য সবচেয়ে বড়ো সমাধান।

পানি যে আমাদের শরীর থেকে মূত্র, ইউরিক এসিডের মতো বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় সেটা আমরা জানি। কিডনি পরিষ্কার করে এবং যকৃত থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দিয়ে আমাদের সুস্থ রাখে। দূষিত পদার্থ বের হয়ে গেলে অবশ্যই তা আমাদের ত্বককেও আরো ভালো ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে। কিন্তু পানি যে আমাদের শরীরের পেশী গঠনেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে- তা আমরা কয়জন জানি? পানির মাধ্যমেই পেশীর প্রতিটি কোষের কাছে অক্সিজেন পৌঁছায় যা পেশীর কলাগুলোকে শক্তিশালী করে। তাই সুঢৌল পেশী পেতে পানির বিকল্প নেই।

বিশুদ্ধ পানি- জীবনধারার সূচনা; paemuka.com

ত্বকের রোদে পোড়াভাব কামাতেও পানি অসাধারণ ভূমিকা রাখে। কড়া রোদ থেকে ফিরে দ্রুত ঠান্ডা পানিতে হাত- মুখ ধুয়ে নিন। রোদের ক্ষতিকর প্রভাব কমে যাবে অনেকটা। ব্রণের সমস্যা সমাধানও পানি ছাড়া অসম্ভব। পানির মাধ্যমেই দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়। তাই গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। এটা ব্রণের সমস্যা সমাধানে বেশ উপকারি।

ফ্যাকাশে আর ভঙ্গুর নখ কখনো কখনো শরীরে পানির অভাবের কথা ঘোষণা করে। নখের বৃদ্ধি সঠিকভাবে না হওয়াও হতে পারে পানিশূন্যতার পরিণাম। দিনে পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান নখের বৃদ্ধি স্বাভাবিক রাখে, নখ ভেঙে যাওয়া রোধ করে, সেই সাথে নখের স্বাভাবিক ঔজ্জ্বল্য বৃদ্ধি করে।

রোদে পোড়াভাব বা ত্বকের লালচে ভাব- যে ককোন সমস্যাতেই পানির বিকল্প নেই; pinterest.com

শুধু নখ নয়, চুলের অনেক সমস্যার সমাধানসমূহের একটি সাধারণ সমাধান হলো পানি। চুল পড়ে যাওয়া রোধ করতে আরো বেশি বেশি পানি পান করার কথা যেকোনো বিশেষজ্ঞই বলবেন। চুল ভেঙে যাওয়া রোধ করতে, নিষ্প্রাণ চুলের প্রাণ ফেরাতে বা চুলের বৃদ্ধি দ্রুত করা- পানি সমাধানের তালিকায় অবশ্যই থাকবে। চুলের এক-চতুর্থাংশ কেবল পানি দিয়েই গঠিত। সেই সাথে পানির মাধ্যমেই চুল অধিকাংশ পুষ্টি পেয়ে থাকে। তাছাড়া আমাদের মাথার ত্বক ও চুলের গোড়া আলোর প্রতি সংবেদনশীল এবং স্নায়ুর শেষ অংশ এখানেই থাকে।

পানি এই স্নায়ু প্রান্তগুলোকে শক্তিশালী করে। ফলে আমাদের ত্বক ও চুলের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। বিশুদ্ধ পানি পান খুশকির মতো মাথার ত্বকের সমস্যা থেকে দিতে পারে মুক্তি। শুধু পানি পান করা নয়, পানি ব্যবহার করে চুলের গঠন পরিবর্তন করাও অনেক সহজ। ঠান্ডা, পরিষ্কার পানিতে গোসল চুলকে আরো ঝলমলে আর ঝরঝরে করে তোলে। মাথার ত্বকের তাপমাত্রা আর পরিচ্ছন্নতা রক্ষা ছাড়াও ঠান্ডা পানিতে গোসল চুলের প্রাকৃতিক রঙ ধরে রাখতে সাহায্য করে।

ঠান্ডা পানিতে গোসল কি শুধু চুলের জন্য ভালো? না, চোখ আর ত্বকের জন্যও এটি যথেষ্ট উপকারি। দেহের তাপমাত্রা স্বাভাবিক রেখে স্নায়ুকে শান্ত রাখতে চান? মানসিক চাপ, কাজের ব্যস্ততা কাটিয়ে একটু সতেজ হয়ে উঠতে চান? এক্ষেত্রেও ঠান্ডা পানিতে গোসলের কোনো তুলনা নেই। ঠান্ডা পানি চোখের নিচের কালো দাগ কমায়, চোখে ঠান্ডা পানির ঝাপটা অতিরিক্ত ফোলাভাবও নিয়ন্ত্রণ করে। তাই চোখের কোন জেল ব্যবহার করার সময় পানিযুক্ত জেল ব্যবহার করা ভালো।

চামড়ার লালচে ভাব কাটাতেও ঠান্ডা পানি অত্যন্ত সহায়ক। গরম পানির ভাপ ত্বকের কোষগুলোকে ঢিলা করে দেয় আর ঠান্ডা পানির সংস্পর্শ ত্বককে টানটান করে। আবার মেকআপ করার আগে মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে নিলে মেকআপ ভালো হয়। অবশ্য বেশিক্ষণ গোসল করলে বা বারবার মুখ ধোয়ার ফলে ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের আবরণ হারিয়ে যেতে পারে। এই ব্যপারে সচেতন থাকতে হবে।

চোখ ও মুখের ত্বকের জন্য ঠান্ডা পানির ঝাপটা বেশ উপকারি; watermakesbeauty.com

আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের ক্ষত দ্রুত পূরণ করে পানি। অসুস্থ শরীরকে সারিয়ে তুলতেও পানি বেশি কার্যকরী। ব্যাথার স্থায়িত্ব কমিয়ে দেয় পানি। মেরুদণ্ডের ও হাড়ের সংযোগস্থলের ব্যথা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে পানি। মেরুদণ্ডের দুইটি প্লেটের মাঝখানে থাকা তরল পানীয় দেহের উপরিভাগের ভার বহন সহজ করে। মন ও মস্তিষ্ককে উজ্জীবিত করতে কাজ করে পানি।

মস্তিষ্ক দেহের মোট ওজনের পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ হলেও মোট সরবারহকৃত রক্তের বিশ ভাগের এক ভাগ মস্তিষ্কই ব্যবহার করে। পানি রক্তের মাধ্যমে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ বজায় রেখে একে আরো কর্মক্ষম করে তোলে। এজন্য রোজ ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা জরুরি। পানি কম পান করার ফলে মস্তিষ্কের কর্মকাণ্ড হুমকির সম্মুখীন হয়ে পানি জমা করতে শুরু করে। ফলে অনেক সময় হাত, পা, মুখ ফুলে উঠতে পারে।

হজম প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখতে পানির ভূমিকার কথা সহজেই অনুমেয়। কিন্তু ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথেষ্ট পানি পানের কথা ভেবে দেখেছেন কখনো? দেহে পানির ঘাটতি হলে বৃক্ক বা কিডনি যকৃতের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলে। যকৃত শরীরের অতিরিক্ত চর্বি গলিয়ে ফেলতে সহায়তা করে। কিন্তু এই অতিরিক্ত চাপের ফলে যকৃতের নিয়মিত কাজ কম করতে পারে। ফলাফল- দেহে চর্বির মজুদ বৃদ্ধি পাওয়া। আবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি আপনাকে অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ থেকেও বিরত রাখবে। সুতরাং বলা যায়, যথেষ্ট পানি পানের একটা অন্যতম সুফল দেহের মেদ কমা।

সুস্বাস্থ্যের জন্যও পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে; food.ndtv.com

এখন প্রশ্ন হলো, একজন পূর্ণবয়ষ্ক মানুষের দৈনিক কী পরিমাণে পানি পান করা প্রয়োজন? দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করার জন্যই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রায় ১২ গ্লাস পরিমাণ পানি রোজ তার দেহ থেকে হারায় মূত্রত্যাগ, ঘাম ও অন্যান্য মাধ্যমে। গর্ভবতী ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন এমন মায়েদের জন্য পরিমাণটা হতে পারে ১০-১৩ গ্লাস বা তার উর্ধ্বে। আবার খেলোয়াড় বা শারীরিক দিক থেকে কঠোর পরিশ্রমী ব্যক্তির জন্য পরিমাণ হবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। শীতের চেয়ে গরমের সময় বেশি পানি খাওয়ার প্রয়োজন হয়।

এভাবে শরীরের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক কাজে, সুস্বাস্থ্য, সৌন্দর্য বা উপর্যুক্ত কর্মক্ষমতার জন্য পানির কোনো বিকল্প নেই। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি কাজে পানির প্রয়োজনীয়তার কথা বলে শেষ করা যাবে না। বেশি বেশি পানি পান করুন, সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন।

ফিচার ইমেজ: Santiagotimes.cl

Related Articles