Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে যেসব খাবার

কিডনি বা বৃক্ক শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ। প্রাকৃতিক এই ছাঁকনি রক্ত থেকে অতিরিক্ত পানি ও জীবাণু বেরে করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি লোহিত রক্ত কণিকা উদ্দীপ্ত করতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটিকে প্রায় এক প্রকার অগ্রাহ্যই করি বলা যায়! একটু খোঁজ করলেই দেখা যাবে, দেশে কিডনি রোগীর অভাব নেই। এছাড়াও একবার এই রোগ হলে শরীরে অবক্ষয় তো হয়ই, আর এর চিকিৎসায় খরচও হয় অনেক। তাই আর দেরি না করে এখনই কিডনির বিষয়ে সচেতন হন। কিডনি সুস্থ রাখতে নিচে উল্লেখিত খাবারগুলো নিয়ম মেনে খেতে ভুলবেন না।

পানি

ক্যালরি = ০, প্রোটিন = ০ গ্রাম, ফ্যাট = ০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ০ গ্রাম

পানির জাদু এতটাই অদ্ভুত যে, তা সুস্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনতে অনন্যভাবে কাজ করে। কিন্তু আপনার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কত তা কিন্তু ঠিক ঠিক জানতে হবে। অন্যথায়, মাত্রাতিরিক্ত পানিও শরীরের জন্য ভালো নয়। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী, একজন নারীর দিনে ৯ গ্লাস এবং পুরুষের ১৩ গ্লাস পানি খাওয়া দরকার। তবে আপনার প্রতিদিনের কার্যকলাপ ও কিডনির অবস্থা বিবেচনা করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেই পরিমাণ পানি খাওয়া ভালো।

বাঁধাকপি

ক্যালরি = ২২, প্রোটিন = ১ গ্রাম, ফ্যাট = ০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ৫ গ্রাম

বাঁধাকপি হলো এমন একটি সবজি যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যাল। এতে যেসব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে সেগুলো শরীরের জীবাণু বের করে দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও ক্যান্সার, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ এবং মূত্রাশয়জনিত সমস্যাগুলোর প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। বাঁধাকপিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল  তবে এই ভিটামিন ও মিনারেলগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর নয়।

এতে য়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোকেমিক্যাল; Image Source: vijaykarnataka.indiatimes.com

লাল ক্যাপসিকাম

ক্যালরি = ৪৬.২, প্রোটিন = ১ গ্রাম, ফ্যাট = ০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ৯ গ্রাম

লাল রঙের ক্যাপসিকাম কিডনিকে সুস্থ রাখে এবং এতে পটাসিয়ামের পরিমাণ কম থাকে। এছাড়াও এই সবজিটি যেকোনো আইটেমে রঙিন আভা এনে দেয়, যাতে আইটেমটি দেখতে লোভনীয় হয়ে যায়। এতে আরও রয়েছে ভিটামিন সি, বি৬, এ, ফলিক এসিড ও ফাইবার। লাল ক্যাপসিকামে আরও রয়েছে লাইকোপিন নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা কয়েক রকমের ক্যান্সার থেকে সুরক্ষা দেয়। বিভিন্ন রকম রান্নায়, যেকোনো ধরনের সালাদ বা কাঁচাও খেতে পারেন এই লাল ক্যাপসিকাম।

পেঁয়াজ

ক্যালরি = ৬৪, প্রোটিন = ২ গ্রাম, ফ্যাট = ০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ১৫ গ্রাম

কাঁচা পেঁয়াজের গন্ধ অনেকে সহ্য করতে পারেন না! কিন্তু পেঁয়াজ কিডনিকে সঠিকভাবে কার্যক্রম চালাতে সাহায্য করে।  এতে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড এবং কুয়ারসেটিন, যা রক্তনালী থেকে চর্বি জাতীয় পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে। কুয়ারসেটিন হলো একধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। পেঁয়াজ কিডনির জন্য বেশ উপকারী এবং এতে পটাশিয়ামের পরিমাণও কম। এতে রয়েছে ক্রোমিয়াম, যা চর্বি, প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটকে বিপাক করতে সাহায্য করে।

পেঁয়াজ কিডনিকে সঠিকভাবে কার্যক্রম চালাতে সাহায্য করে; Image Source: sweetonion.com

রসুন

ক্যালরি = ২০৩, প্রোটিন = ৯ গ্রাম, ফ্যাট = ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ৪৫ গ্রাম

পেঁয়াজের মতো রসুনের গন্ধও তীব্র। কিন্তু এটি শক্তিশালী ভেষজ ঔষধগুলোর মধ্যে একটি। তাছাড়া এটি খাবারের স্বাদও বাড়ায়। রসুনের রস ও মেটাফরমিন (টাইপ-২ ডায়াবেটিস এ আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্দেশিত ঔষধ) একসাথে টাইপ-২ ডায়াবেটিস মোকাবেলায় বেশ কার্যকরী।

ফুলকপি

ক্যালরি = ২৫, প্রোটিন = ২ গ্রাম, ফ্যাট = ০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ৫ গ্রাম

ফুলকপি হলো কিডনির একটি সুপারফুড। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, ফোলেট এবং ফাইবার। এছাড়াও এতে যেসব যৌগ রয়েছে সেগুলো কিডনির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং শরীরে বিষাক্ত পদার্থ প্রতিরোধে সাহায্য করে। রান্নার আইটেম, শুধু সেদ্ধ, গ্রিল বা সালাদে দিয়েও ফুলকপি খেতে পারেন।

কিডনির একটি সুপারফুড; Image Source: Delightful Vegans

আপেল

ক্যালরি = ৬৫, প্রোটিন = ০ গ্রাম, ফ্যাট = ০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ১৭ গ্রাম

আপেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল ও ফাইবার। এছাড়াও এতে রয়েছে জ্বালাপোড়া কম করার মতো উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। আর এজন্যই এই ফলটি ক্ষতিকর কোলেস্টেরল, হৃদরোগ, ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়। যেহেতু ডায়াবেটিস মূত্রাশয় জনিত রোগের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত, তাই আপেল খেলে আপনি কিডনি রোগের সমস্যা প্রতিরোধ করতে পারবেন। আপেল শুধু খাওয়া ছাড়াও ডেজার্ট বা মিষ্টি আইটেম বানিয়েও খাওয়া যায়। এছাড়া আপেল দিয়ে বিভিন্ন রকম পানীয় বানিয়েও পান করতে পারেন।

ফ্যাটি মাছ

ক্যালরি = ১৭৫, প্রোটিন = ১৯ গ্রাম, ফ্যাট = ১০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ০ গ্রাম

মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড (পিইউএফএ)। পিইউএফএ-এর উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড যা জ্বালাপোড়া কম করতে, হৃদরোগ প্রতিরোধ করতে, এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরল কম করতে এবং কিডনি সুরক্ষায় কাজ করে। বিজ্ঞানীদের মতে, শরীরে মাছে থাকা পিইউএফএ-এর চাহিদা পূরণ হলে কিডনি রোগের ঝুঁকি কমে।

কোলেস্টেরল কম করতে এবং কিডনি সুরক্ষায় কাজ করে; Image Source: Nutrition Advance

লেবুর শরবত

ক্যালরি = ৬১, প্রোটিন = ১ গ্রাম, ফ্যাট = ০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ২১ গ্রাম

লেবুর শরবতে কিডনির সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে থাকা ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড অভ্যন্তরীণ পিএইচ, সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। সকালে বা দুপুরে খাওয়ার আগে লেবুর শরবত পান করুন।  তবে পর্যাপ্ত বা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি মিশিয়ে খেতে ভুলবেন না!

স্ট্রবেরি

ক্যালরি = ৪৯, প্রোটিন = ১ গ্রাম, ফ্যাট= ০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট= ১২ গ্রাম

স্ট্রবেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি, ম্যাঙ্গানিজ ও ফাইবার। এছাড়াও এতে রয়েছে জ্বালাপোড়া কম করার ও ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপাদান। তাই শুধু কিডনিই নয়, বরং এটি হৃদপিণ্ডের জন্যও ভালো। তবে কিডনির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এর উপকারিতা নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তাই কিডনির কোনো সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে খাওয়াই ভালো।

এটি হৃদপিণ্ডের জন্যও ভালো; Image Source: hopewoodlifestyle.com.au

চেরি

ক্যালরি = ৫১, প্রোটিন = ১ গ্রাম, ফ্যাট = ০.৩ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ১৩ গ্রাম

চেরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটোক্যেমিক্যাল, যা হৃদপিণ্ড এবং কিডনি সুরক্ষায় সহায়তা করে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় চেরি রাখলে আপনার শরীরে জ্বালাপোড়াভাব কমবে। বিশেষ করে এই ফলটি কিডনির জন্য বেশ উপকারী।

লাল আঙ্গুর

ক্যালরি = ১০৪, প্রোটিন = ১.১ গ্রাম, ফ্যাট = ০.২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ২৭ গ্রাম

লাল আঙ্গুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক পলিফেলনিক যৌগ, যা রেসভেরাট্রল নামে পরিচিত। এটি হৃদপিণ্ডকে সুস্থ এবং কিডনিকে সুরক্ষিত রাখে। এছাড়াও এর রয়েছে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য সুবিধা। রেসভেরাট্রল মূত্রাশয়জনিত ক্ষত উন্নয়ন করতে সহায়তা করে। তাই কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাল আঙ্গুর খাওয়ার চেষ্টা করুন।

লাল আঙ্গুর কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে; Image Source: mrgrape.com

তরমুজ

ক্যালরি = ৪৬, প্রোটিন = ০.৯ গ্রাম, ফ্যাট = ০.২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট = ১১ গ্রাম

তরমুজে রয়েছে লাইকোপিন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মূত্রাশয়জনিত রোগ প্রতিরোধ করে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে তরমুজ খেলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। যদি আপনার কিডনির সমস্যা অতিরিক্ত থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তরমুজ খাবেন।

ফিচার ইমেজ: Unique Facts

Related Articles