Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ডায়াবেটিক কোমা: ডায়াবেটিস যখন মৃত্যুর কারণ!

সময়টা ২০১৪ সালের মে মাস। ফ্রান্সের এক ২৫ বছর বয়সী তরুণী মিনা এল হোউয়ারি অনেকদিন ধরেই অনলাইনে কথা বলছিলেন এক তরুণের সাথে। সেখান থেকেই ভালো লাগা, ভালোবাসা। একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন দুজন, দেখা করবেন। অনলাইনে নয়, এবার সামনা সামনি কথা বলবেন তারা। ১৯ মে মরোক্কোর ফেজে একটি হোটেলে আসেন মিনা। সেখানে আসেন তার প্রেমিক পুরুষটিও। বেশ ভালোই কাটছিলো তাদের সময়। কিন্তু কী থেকে কী হল, কিছু বুঝে ওঠার আগেই জ্ঞান হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলেন মিনা। খানিকক্ষণ প্রেমিকার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করলেন প্রেমিক। নাহ! নাড়ি চলছে না। শেষমেশ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন প্রেমিক। তার সাথে থাকাকালীন সময়েই যেহেতু মৃত্যু ঘটেছে, সুতরাং এখন কেউ এই লাশ দেখে ফেললে দোষ হবে তারই। তাই কাউকে না জানিয়ে লুকিয়ে কবর দিয়ে দেন তিনি প্রেমিকা মিনার।

জীবন্ত কবর দেওয়া হয় মিনার; Source: Huffington Post

ব্যস, ঝামেলা শেষ! কিন্তু আসলেও কি ঝামেলা শেষ হলো? একদম না। খোঁজ লাগালো মিনার পরিবার। শেষ পর্যন্ত প্রেমিক আর মিনার কবর দুটোরই খোঁজ পেল পুলিশ। আর তখনই জানা গেল যে, মিনা মারা যায়নি, তাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হয়েছিল। তবে প্রেমিক মিথ্যা বলেন নি। মিনার নাড়ি তখন সত্যিই চলছিল না বা খুব দুর্বলভাবে চলছিল। নাড়ি না চললে মিনা বেঁচে ছিলেন কীভাবে? কারণ, মিনা ‘ডায়াবেটিক কোমা’র ভেতরে চলে গিয়েছিলেন। ডায়াবেটিক কোমা হল ডায়াবেটিক রোগীদের সেই পর্যায় যেখানে রোগী জ্ঞান হারাতে বাধ্য হন আর অনেকটা মৃত ব্যক্তির মতো আচরণ করেন। বর্তমানে আমাদের দেশে ডায়াবেটিক রোগীদের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই চলুন আর দেরি না করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নিই।

ডায়াবেটিক কোমা

রক্তে সুগারের পরিমাণ হ্রাস পাওয়া এবং বৃদ্ধি পাওয়া ডায়াবেটিকের মূল কারণ। আর কোনো মানুষের রক্তের সুগার যদি বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি ডেসিলিটারে ৬০০ মিলিগ্রাম কিংবা তার বেশি হয়ে যায় (হাইপারগ্লাইসেমিয়া) বা অনেক বেশি কমে যায় (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) তখন সেটাকে ডায়াবেটিক কোমা বলা যেতে পারে। এই অবস্থায় রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং অনেকটা নিথর হয়ে যান। ডায়াবেটিক কোমায় মানুষের শরীর অতিমাত্রায় পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

ডায়াবেটিস; Source: InfoAedia

ডায়াবেটিক কোমা সাধারণত টাইপ ২ ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে দেখা যায়। অসুখ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় এমনটা দেখা যায়। সাধারণত, ডায়াবেটিক কোমা বৃদ্ধ, অসুস্থ এবং চলাফেরায় অক্ষম মানুষের ভেতরে বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকেরা ধারণা করেন, এরা হয়তো বুঝতে পারেন না যে তাদের শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ছে। আর বুঝলেও শরীরের বাকি সব অসুস্থতা থেকে সেটাকে আলাদা করতে পারেন না। ফলে এমন সমস্যার জন্ম হয়।

ডায়াবেটিক কোমা দেখা দিলে রোগী কোনো কিছু শুনতে, দেখতে বা কোনো ব্যাপারে সাড়া দিতে পারেন না। তাই অনেক সময় বেশ বড় ধরণের সমস্যা তৈরি হয়ে যায় ডায়াবেটিক কোমা থেকে, যার উদাহরণ তো একটু আগেই দেওয়া হয়েছে।

ডায়াবেটিক কোমার চিহ্নগুলো

ডায়াবেটিক কোমায় আক্রান্তদের পরিচর্যার প্রয়োজনীয় সামগ্রী; Source: Diabetes Library

ডায়াবেটিক কোমায় কোনো রোগী চলে যাচ্ছেন কিনা সেটার বেশ কিছু সতর্কতা চিহ্ন আছে। এই চিহ্নগুলো দেখলে বুঝে নিতে হবে যে, এমন কোনো একটি সমস্যা হয়তো হতে চলেছে। চিহ্নগুলো হলো-

  • অধিক জ্বর
  • দুর্বলতা
  • মাথা ঘোরা
  • মানসিক অস্থিরতা
  • মাথা ব্যথা
  • কথা না বলতে পারা
  • অবশভাব
  • অস্থিরতা
  • দৃষ্টিশক্তির সমস্যা
  • হৃদপিণ্ডের গতি দ্রুত হওয়া, ভ্রম হওয়া ইত্যাদি।

আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগী হন এবং আপনার মধ্যে যদি এই লক্ষণগুলোর যেকোনো একটিও দেখা দেয় তাহলে সাবধান হয়ে যান। ভয়ের ব্যাপার হল, হাইপোগ্লাইমিয়াতে দীর্ঘদিন ধরে ভুগছেন এমন মানুষ খুব সহজে বুঝতে পারেন না যে, কখন তিনি জ্ঞান হারাচ্ছেন বা কখন জ্ঞান হারানোর কোনো চিহ্ন দেখা দিচ্ছে শরীরে। ফলে সাবধানও হতে পারেন না তারা।

ডায়াবেটিক কোমার কারণ

কার্যকারণ বলে একটি শব্দ আছে। কোনো কিছু হলে তার কারণ তো থাকবেই। ঠিক তেমনভাবেই ডায়াবেটিক কোমারও আছে বেশ কিছু কারণ। কারণগুলো জেনে নিলে সাবধান থাকা, এই কাজগুলোকে পরিহার করা এবং ডায়াবেটিক কোমা নামক ব্যাপারটি থেকে দূরে থাকা- এ সব কিছুই বেশ সহজ হয়ে পড়ে। তো, চলুন জেনে নিই ডায়াবেটিক কোমার পেছনে থাকা কারণগুলো।

১. ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস

আমাদের শরীরে যখন কোনো খাবার থাকে না তখন শরীর তার জমানো ফ্যাটি এসিডগুলো থেকে খাবার সংগ্রহের চেষ্টা করে। আর এই ফ্যাটি এসিড ভাঙতে গিয়েই জন্ম নেয় বিষাক্ত কিটোনস, যা ডায়াবেটিক কোমা পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে আপনাকে। সাধারণত টাইপ ১ ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রেই বেশি হলেও ডায়াবেটিক কিটোএসিডোসিস হতে পারে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্তদেরও।

ডায়াবেটিক কোমা থেকে বেঁচে ফিরেছেন এই নারী; Source: YouTube

২. ডায়াবেটিক হাইপারসমোলার সিনড্রোম

যখন আপনার রক্তে সুগারের পরিমাণ প্রতি ডেসিলিটারে ৬০০ মিলিগ্রামের বেশি হয়ে থাকে তখন রক্ত অনেক বেশি ভারী হয়ে যায়। সেই রক্তের সুগার মেশে ইউরিনে। আর শরীর এই পুরো কাজে অনেক বেশি পরিমাণ পানি ব্যবহার করে ফেলে। ফলে তৈরি হয় পানিশূন্যতা আর ডায়াবেটিক কোমা।

৩. হাইপোগ্লাইসেমিয়া

মস্তিষ্কের কাজ করার জন্য কিছু পরিমাণ গ্লুকোজের দরকার পড়ে। কিন্তু রক্তে সুগারের পরিমাণ অনেক কমে গেলে মস্তিষ্ক ঠিক করে কাজ করতে পারে না। ফলে তৈরি হয় ডায়াবেটিক কোমা। এছাড়াও সংক্রমণ, হার্ট অ্যাটাক, কিডনি অকেজো হয়ে যাওয়া, আলসার থেকে রক্তপাত হওয়া, রক্ত জমাট বাঁধা, অসুস্থতা, ঔষধ (অনেক সময় নানারকম ঔষধ গ্রহণের ফলে সেগুলোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেই শরীরে পানির অভাব এবং সেখান থেকে কোমায় চলে যাওয়ার মতো ব্যাপার ঘটতে পারে) ইত্যাদির কারণে ডায়াবেটিক কোমা ঘটতে পারে।

তবে মাথায় রাখবেন, চিকিৎসক আপনাকে ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পটাশিয়াম, আইভি এবং রক্তের সুগার কমানোর জন্য ইনসুলিনের মতো নানারকম ঔষধ ও সেবা দিবেন। তবে ডায়াবেটিক কোমার সঠিক চিকিৎসা এবং নিয়ন্ত্রণ আপনার হাতে, যেটি না করলে আপনার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

ডায়াবেটিক কোমা প্রতিরোধের উপায়

এখন প্রশ্ন হলো ডায়াবেটিক কোমা থেকে দূরে থাকতে আপনি ঠিক কী কী করতে পারেন? হ্যাঁ, ডায়াবেটিক কোমা থেকে দূরে থাকতে বেশ কিছু উপায় অবলম্বন করতে পারেন আপনি।

খাবারের দিকে নজর রাখুন

নিজের খাবারের দিকে কড়া নজর রাখুন। কারণ খাবারের কারণেই আপনার শরীরে ডায়াবেটিস অনেক বেড়ে বা কমে যেতে পারে।

রক্তের সুগার মাপুন

হয়তো আপনার রক্তের সুগার বেশ কিছুদিন ধরে ঠিকঠাক আছে, তবু প্রতিদিন সেটা পরীক্ষা করুন। কারণ ডায়াবেটিক কোমার ক্ষেত্রে অনেক সময় বলাটা কঠিন হয়ে যায় যে, আপনার রক্তের সুগার কখন বাড়বে বা কখন কমবে।

নিয়মিত রক্তের সুগার মাপুন; Source: YouTube

কিটোনস এবং গ্লুকোজ পরীক্ষা

রক্তের কিটোনস আর গ্লুকোজের মাত্রা মাপুন নিয়মিত। এতে করে আপনার শরীর সুস্থ থাকবে। তবে তার সাথে পরিকল্পনা করে রাখুন আগে থেকেই যে, অসুস্থতার ভেতরে কী করে নিজের কাজগুলো করবেন। শুনতে খারাপ লাগলেও, এই পরিকল্পনা করে রাখলে আপনাকে কখনোই আটকাতে হবে না বা অতিরিক্ত চিন্তায় পড়তে হবে না।

অ্যালকোহল পান করুন বুঝে শুনে

অ্যালকোহল শরীরের সুগারের মাত্রায় বেশ পরিবর্তন আনে। তাই আপনার সেই অভ্যাস থাকলে একটু বুঝে শুনে পান করুন।

ফিচার ইমেজ: InfoAedia

Related Articles