Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অতিরিক্ত চাপ কি মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলতে পারে?

মানসিক চাপ, বিষন্নতা ও দুশ্চিন্তা- এই তিনটি শব্দ আমাদের অনেকেরই প্রতিদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার অনেকেই চাইলেও এর থেকে মুক্তি পেতে পারছেন না। স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সাথে নতুন করে পরিচয় করানোর কিছু নেই। প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনা বা পরিস্থিতি, যেমন কোনো জটিল সমস্যা, চ্যালেঞ্জ, অতিরিক্ত কাজ, প্রত্যাশা ইত্যাদির ফলে আমাদের দেহ ও মনের উপর যে চাপ পড়ে তা-ই হলো স্ট্রেস বা মানসিক চাপ। অর্থাৎ দৈহিক বা মানসিক চাপই হলো স্ট্রেস। পারিবারিক, সামাজিক বা পেশাগত চাপের কারণে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সৃষ্টি হয় এক অস্থিতিশীল অবস্থা, যা পরবর্তীতে হয়ে দাঁড়ায় শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণ। দীর্ঘকালীন মানসিক চাপ আপনার জন্য বয়ে আনতে পারে ভয়ানক সব শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। কিন্তু এটা কি মস্তিষ্কেও প্রভাব ফেলতে পারে?

Source: the odyssey online

উত্তর হল হ্যাঁ, মস্তিষ্কের কার্যপদ্ধতি, আকার আর গঠনের উপর প্রভাব ফেলে স্ট্রেস এবং তৈরী করে দীর্ঘস্থায়ী বিভিন্ন সমস্যা। কিন্তু কীভাবে আর কেন? সেগুলো কতটুকুই বা ক্ষতিকর? আর তা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে কি? আজ সেসব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আমরা আজকের লেখায়।

ক্রনিক স্ট্রেস

আপনি কি কখনও দরকারের চেয়ে অনেক বেশি ঘুমিয়েছেন? কিংবা কখনও অতিরিক্ত কাজের জন্য অস্বস্তির মাঝে ডুবে যাওয়া, অধৈর্য হওয়া, সবার থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া, অল্প সময়ের জন্য মেজাজ খিটমিটে হয়ে যাওয়া কিংবা খুব বেশি ভুলোমনা হয়ে যাচ্ছেন? হওয়াটা স্বাভাবিক। এমনটা হলে আপনি রয়েছেন স্ট্রেস বা মানসিক চাপের মধ্যে।

স্ট্রেস যে সব সময় খারাপ ফলই বয়ে আনবে এমনটা কিন্তু না। অনেক সময় স্ট্রেসও হতে পারে আপনার সাফল্যের কারণ, যেমন কোনো প্রতিযোগিতা বা মঞ্চে বক্তৃতা কিংবা কঠিন কোনো সমস্যার সমাধানে, মনোযোগ বৃদ্ধি করতে। কিন্তু সেটা আপনার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে যদি দীর্ঘ একটা সময় আপনি স্ট্রেসে ডুবে থাকেন।

দীর্ঘসময় ধরে অতিরিক্ত কাজের চাপ বা পারিবারিক কলহ থেকে হতে পারে ক্রনিক স্ট্রেস। আর ফলাফল মস্তিষ্কের কার্যপদ্ধতির উপর প্রভাব। কী রকম প্রভাব? এর ফলে পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে মস্তিষ্কের গঠন, কাজের ধরন, সংকুচিত হতে পারে আকারে। কিন্তু এসব জানার আগে স্ট্রেস আসে কীভাবে তা একটু জেনে নেয়া যাক।

স্ট্রেস শুরুর কাহিনী

স্ট্রেসের শুরুটা হয় হাইপোথ্যালামিক পিটুইটারি অ্যাড্রেনাল অ্যাক্সিস (এইচপিএ অ্যাক্সিস) থেকে। এই এইচপিএ অ্যাক্সিস ৩টি আলাদা অংশ- মস্তিষ্কের হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি গ্ল্যান্ড (থ্যালামাসের নীচে অবস্থিত একটি দানা আকৃতির গ্রন্থি) এবং অ্যাড্রেনাল গ্ল্যান্ডের (কিডনির উপরে ছোট অঙ্গ) সমন্বয়ে গঠিত একটি জটিল সেট, যেটা মস্তিষ্কের এন্ড্রোক্রাইন গ্রন্থি এবং কিডনির মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং দেহের স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করে।

যখন আপনি কোনো ক্ষতিকর, ভীতিকর বা দুর্যোগপূর্ণ অবস্থা অর্থাৎ স্ট্রেসফুল পরিবেশের সম্মুখীন হন তখন তাৎক্ষণিকভাবে এইচপিএ অ্যাক্সিস কর্টিসল নামের একধরনের হরমোন নিঃসরণ করে, যা আপনাকে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সাহায্য করে। আর আপনার মধ্যে তৈরী করে ফাইট অর ফ্লাইট রেসপন্স। অর্থাৎ আপনি তখন পালাবেন নাকি পরিস্থিতির মোকাবেলা করবেন সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেয়। ঐ পরিস্থিতে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়, রক্তচাপও বেড়ে যায়। এমনকি সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া কঠিন হয়ে যায়।

Source: Wikimedia Commons

ক্ষতিকর দিকগুলো

বেশি মাত্রায় কর্টিসল দীর্ঘসময় ধরে নিঃসরণ হলে তা শুরু করে মস্তিষ্কের ক্ষতি করা। উদাহরণ হিসেবে এটি মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অঞ্চলকে (অ্যামিগডালা হলো মস্তিষ্কের ভীতিকেন্দ্র) আরো কার্যকর করে এবং এর নিউরাল সংযোগ আরো বৃদ্ধি করে দেয়। ফলে আপনার মধ্যে খুব সহজেই ভীতির জন্ম হয়।

আবার মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস অঞ্চলের ইলেকট্রন সংকেত প্রেরণ কমিয়ে দেয়। হিপোক্যাম্পাস কোনো নতুন কিছু শিখতে সাহায্য করে, স্মৃতি ধরে রাখে। হিপোক্যাম্পাস স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণে রাখে। আর অধিক মাত্রার কর্টিসল স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে বাঁধা দেয়।

কিন্তু শুধু এখানেই শেষ নয়। অধিক মাত্রার কর্টিসল মস্তিষ্কের আকার সংকুচিত করে ফেলতে পারে। দ্য গার্ডিয়ানের দেয়া তথ্যানুযায়ী ইউনিভার্সিটি অব উইস্কন্সিনের গবেষক ফ্রেড হেলমস্টেটার ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণা করেন। ল্যাবরেটরিতে ২১ দিন দৈনিক ছয় ঘণ্টা করে কিছু ইঁদুরকে খাবার-পানি ছাড়া একটি বদ্ধ স্থানে আটকে রাখেন। ২১ দিন পর দেখা যায় তাদের মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস তিন শতাংশ সংকুচিত হয়ে গেছে।

Source : Wikimedia Commons

লাইভ সাইন্সের তথ্যানুযায়ী, আরেক গবেষণায় একদল গবেষক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৭ জন ছাত্রের মস্তিষ্কের স্ক্যান করেন। ২০১১ সালের জাপানের একটি ভূমিকম্পের পর তাদের কয়েকবার মস্তিষ্ক স্ক্যান করে দেখা যায় মস্তিষ্কের হিপোক্যাম্পাস আর অর্বিটোফ্রন্টাল কর্টেক্সের আয়তন কমে গিয়েছে।

কর্টিসল বেশি মাত্রায় নিঃসরণ হলে মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর মধ্যে সিন্যাপটিক যোগাযোগ কমে যায়। প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্সও সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। প্রি-ফ্রন্টাল কর্টেক্স মনোযোগ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ভুল-শুদ্ধ বিচার, সামাজিক যোগাযোগের কাজে সাহায্য করে। আর সংকোচনের কারণে আপনি হারাতে পারেন এই কাজগুলো উপর নিয়ন্ত্রণ। পাশাপাশি হিপোক্যাম্পাসে কম পরিমাণে নিউরন সেল তৈরী হতে পারে। ফলশ্রুতিতে কোনো নতুন জিনিস শেখা হয়ে পড়বে আরো কঠিন, পুরনো কথা মনে পড়বে না। আর সব শেষে ক্রনিক স্ট্রেস আপনাকে পরিচালিত করবে ডিপ্রেশন কিংবা আলঝেইমারের মতো গুরুতর সব মানসিক রোগের দিকে।

Source : ThingLink

এক গবেষণায় কিছু ইঁদুরের উপর পরীক্ষা করে দেখা যায় যেসব ইঁদুরকে তাদের মা বেশ যত্ন সহকারে লালনপালন করে বড় করেন পরবর্তীতে সেসব ইঁদুরের স্ট্রেসের প্রতি ততটা সংবেদশীল হয় না। কিন্তু যেসব ইঁদুরকে তাদের মায়েরা সঠিকভাবে লালনপালন করে না, তারা পরবর্তীতে স্ট্রেসের সম্মুখীন হয় অনেক। এটি হল এপিজেনেটিক পরিবর্তন। এর অর্থ হল এটি জেনেটিক কোড পরিবর্তন না করে কোন জিনটি উদ্ভাসিত হচ্ছে সেটি অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া হওয়া। আরো আশ্চর্যজনক হল এপিজেনেটিক পরিবর্তন বংশানুক্রমে চলতে থাকে।

স্ট্রেস দূর করার উপায়

স্ট্রেস আপনার নিয়ন্ত্রণে নেই। তাই আপনি না চাইলেও স্ট্রেস আসতেই পারে। মানুষের জন্মের সূচনালগ্ন থেকেই স্ট্রেস ছায়ার মতো লেগে থাকে। এতে ঘাবড়াবার কিছু নেই। কিন্তু জানতে হবে সেই স্ট্রেস বা মানসিক চাপ মোকাবেলা করার উপায়। স্ট্রেস থেকে মুক্তির সহজ দুটি উপায় হল শরীরচর্চা আর যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন। কারণ উভয়ই গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস এর সাথে সম্পর্কিত, যা আপনাকে আরো মনোযোগী করবে আর আপনার চারপাশের জগৎ সম্পর্কে করবে আরো সচেতন। কিন্তু তার পুরোটাই নির্ভর করবে আপনি কীভাবে নিজেকে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেবেন তার ওপর। মাত্রাতিরিক্ত কর্টিসল আপনার যে ক্ষতি করে তার মোকাবেলা করা খুব একটা কঠিন না, যদি না আপনি সেভাবে নিজেকে প্রস্তুত রাখেন। ব্যায়াম করুন, যত জটিল সমস্যাই হোক না কেন তা হালকাভাবে মোকাবেলা করুন।

Source : Harvard Health

ভয়কে জয় করুন, তবেই স্ট্রেসকে জয় করতে পারবেন। কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিনোদনের ব্যবস্থা রাখুন। পরিবার আর বন্ধুদের জন্য সময় দিন, এতে মন হালকা থাকবে। সকলের সাথে যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখুন।

Source : Ted Ed

এখনই আপনি চাইলেই স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তার আগেই স্ট্রেস না আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করে বসে!

This article is in Bangla Language. It's about Brain affects on stress. Does stress really affects on brain, How much and Why?
References used in this article are hyperlinked inside this article. 
Featured Image: shutterstock

Related Articles