Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানসিক সুস্থতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকা

তিন বিলিয়ন ব্যবহারকারী। পৃথিবীর প্রায় ৪০ শতাংশেরও বেশি মানুষ। এই শ্রেণিভুক্তরা প্রতিদিন গড়ে দু’ ঘণ্টা সময় ব্যয় করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, লাইভ ভিডিও, টুইট, মেনশন- এসবে নিজেকে শামিল করার মাধ্যমে জীবনের বড় একটা অংশ ব্যয়িত হয়ে যাচ্ছে ভার্চুয়ালি। অর্থাৎ, বাস্তবতায় বর্তমান থেকেও আমরা একটা ‘বিকল্প বাস্তব’ খুঁজছি। প্রাত্যহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। কী খুঁজছি, কী চাচ্ছি, কাকে পাচ্ছি- এসব চির নিরুত্তর প্রশ্নের উত্তরান্বেষণে রত হয়ে রইছি প্রতিদিন। বদলে কী পাচ্ছি, এ প্রশ্নের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো- কী হারাচ্ছি? সময় ও সুস্থতার হিসেবে কতটা ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হচ্ছি?

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বহুল ব্যবহার জীবনে ডেকে আনছে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি; Image Source: BBC

সময়ের ব্যপ্তি হিসেব করলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আমাদের জীবনে শাশ্বত কখনই ছিল না। সুতরাং এর নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে কৃত গবেষণাকর্মগুলো বস্তুনিষ্ঠ, সে দাবি গ্রহণযোগ্য নয়। এর ওপর অভিজ্ঞতাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্ব-দাখিলকৃত বা সেলফ রিপোর্টেড। অর্থাৎ ব্যবহৃত তথ্যাদি শতভাগ বিজ্ঞানসম্মত, তা-ও বলা যাবে না। তবুও আজ পর্যন্ত যেসব গবেষণা হয়েছে এ বিষয়ে, সেসবের উপর ভিত্তি করে বললে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার যথেষ্ট নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করছে আমাদের মানসিক সুস্থতার উপর। 

মানসিক চাপ

দৈনন্দিন জীবনের এমন কিছু নেই, যা নিয়ে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনুসন্ধান করি না। রাজনীতি, শিক্ষা, ব্যবসা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক প্রায় সব বিষয় নিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে চর্বিত চর্বণ হয়ে থাকে। তথাকথিত এই ‘সামাজিকীকরণ’ করতে গিয়ে আমরা নিজেদের অজান্তে মানসিক অশান্তি টেনে আনি। নিরবচ্ছিন্ন স্ক্রলিং শেষে নিজেরই আবার প্রশ্ন জাগে- কী চেয়েছিলাম আর কী-ইবা পেলাম? উত্তরবিহীন এ প্রশ্নের উত্তর জানতে আবারও চলে স্ক্রলিং। এভাবেই মানসিক চাপ বা স্ট্রেস তৈরী হয় মস্তিষ্কে।

সামাজিকীকরণের নামে আমরা নিজের অজান্তে মানসিক চাপ বাড়িয়ে চলেছি; Image Source: bbc.com/ Getty Images

ওয়াশিংটন ডিসি ভিত্তিক পিউ গবেষণা কেন্দ্র ১৮০০ অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে একটি গবেষণা চালায়। পার্সিভড স্ট্রেস স্কেল (পিএসএস) নামক স্কেল ব্যবহৃত হয় এই গবেষণায়। অংশগ্রহণকারীদের বিগত ৩০ দিনের উপর একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করতে বলা হয়। প্রশ্নগুলো ছিল:

  • অপ্রত্যাশিত কিছু ঘটে যাওয়ার ফলে মন খারাপ হওয়া
  • জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা
  • আতঙ্কিত ও স্ট্রেসড অনুভব করা
  • যে কোনো সমস্যা সমাধানে আত্মবিশ্বাসী অনুভব করা
  • নিজের অনুকূলে জীবনের প্রবাহিত হওয়া
  • দায়িত্ব-কর্তব্য বা কাজের সাথে মানিয়ে নিতে না পারা
  • অস্বস্তিকর অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারা
  • যে কোনো অনুভূতির চূড়ান্তে অনুভব করা
  • পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে অত্যধিক রাগান্বিত হওয়া
  • জীবনের কাঠিন্যকে অনতিক্রম্য অনুভব করা

এসব প্রশ্নের জন্য সম্মিলিতভাবে ০-৩০ পয়েন্টের মাপকাঠিতে ০ ও ৩০ যথাক্রমে সর্বনিম্ন ও সর্বোচ্চ মানসিক চাপের মাত্রা নির্দেশ করে। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী পিএসএস স্কেলে পুরুষের স্কোর ছিল ৯.৮ এবং নারীদের স্কোর ছিল ১০.৫। গড়পড়তা হিসেবে পুরুষরা নারীদের চেয়ে ৭% কম চাপ অনুভব করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। তবে এই ফলাফলটিকে সুষম আখ্যা দেওয়া উচিৎ হবে না, কারণ বেশ কিছু ব্যতিক্রম ছিল। যেসব পুরুষ শিক্ষিত, বিবাহিত তারা তুলনামূলক কম চাপ উল্লেখ করেছেন। আবার নারীদের মাঝে যারা অল্প বয়সী, বাসার বাইরে কোনো চাকরিতে নিযুক্ত তাদের চাপের মাত্রাও কম ছিল। 

মেজাজ

২০১৪ সালে, অস্ট্রিয়ায় অনুষ্ঠিত এক জরিপে দেখা যায় যে শুধু ফেসবুক চালানো এবং নেট ব্রাউজ করার প্রভাব সম্পূর্ণভাবে আলাদা। ২০ মিনিট সময়ের জন্য শুধু ফেসবুক ব্যবহার করার পর ব্যবহারকারীদের মাঝে বিষণ্ণতার হার বেড়ে যায়। অন্যদিকে যারা নেট ব্রাউজ করেন, তাদের মাঝে মেজাজের এই নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ করা যায়নি। এর সম্ভাব্য কারণ হলো- ফেসবুক ব্যবহারের পর গ্রাহকদের মাঝে সময় অপচয়জনিত কারণে গ্লানিবোধ কাজ করে। 

একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা মেনে চললে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার অন্তত ক্ষতিকর হবে না; Image Source: BBC

ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে পরিচালিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে ট্রিকল ডাউন ইফেক্ট। অর্থাৎ বিষণ্ণ আবহাওয়ার দরুন নেতিবাচক পোস্টের সংখ্যা এক শতাংশ করে বৃদ্ধি পায়। কোনো বৃষ্টিস্নাত শহরে একটি মন খারাপ করা পোস্ট অন্য একটি শুষ্ক আবহাওয়ার শহরে ১.৩টি নেতিবাচক পোস্টকে প্রভাবিত করে। অন্যদিকে, ইতিবাচক পোস্ট অন্য আরও ১.৭৫ টি ইতিবাচক পোস্টের জন্ম দেয়। তবে ইতিবাচক পোস্ট সত্যিকার অর্থেই মন ভালো করার ক্ষমতা রাখে কি না, সে বিষয়ে গবেষণাটি কিছু জানায়নি। 

ঘুম

বিবর্তনের ধারানুযায়ী মানুষের মস্তিষ্ক এমনভাবে বিকাশলাভ করেছে, যাতে তার সন্ধ্যার পরপরই বা রাতের আগমনে ঘুমের প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রযুক্তির উত্তরোত্তর উন্নতি সাধনে দিনের আলো নিভে গেলেও কৃত্রিম আলোয় চারদিক সুসজ্জিত থাকে। চারপাশের এত অতিরিক্ত আলোর কারণে মেলাটোনিন হরমোনের ক্ষরণ কমে আসে। এই মেলাটোনিনই মূলত নিদ্রা চক্র নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে। মেলাটোনিন যত কম উৎপন্ন হবে, ঘুমের সমস্যাও তত তীব্র হবে। স্মার্টফোন, ল্যাপটপ থেকে বিকিরিত নীল আলোকে বলা হয়ে থাকে সমস্যা সৃষ্টিকারীদের মাঝে নিকৃষ্টতম। 

পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত আরেকটি গবেষণা পরিচালিত হয় ১৮-৩০ বছর বয়সী ১৭০০ জন অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে। প্রাপ্ত ফলে, নীল আলো মানুষের সার্কাডিয়ান রিদমে ব্যাঘাত ঘটায়। অর্থাৎ দেহাভ্যন্তরীণ যে ঘড়ি, তার ছন্দ নষ্ট হওয়ার কারণে ঘুমের সমস্যা হয় বলে তারা দাবি করছেন। এখান একটি সূক্ষ্ম বিষয় হলো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কত সময় ব্যয় করা হচ্ছে, তার চেয়ে অধিকতর গুরুত্ব বহন করে- একদিনে একজন ব্যবহারকারী গড়ে কতবার লগ ইন করছেন।

ব্যয়িত সময়ের চেয়েও বেশি নেতিবাচক ভূমিকা পালন করে বারবার লগ ইন করার অভ্যাস, যাকে বলা হয় অবসেসিভ চেকিং বা অনেকটা শুচিবায়ুগ্রস্ততা। তবে এই বিষয়ে গবেষকরা আলোকপাত করেননি যে, যাদের নিদ্রাহীনতা কাজ করে- তারাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সচল, নাকি এ সচলতাই নিদ্রাহীনতার জন্য দায়ী?

বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারে আমরা অবসেসড হয়ে যাচ্ছি; Image Source: BBC

সত্যিকার অর্থে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর নকশা এতটা সুচারুভাবে করা হয় যে গ্রাহকরা এই দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারেন না। নিরন্তর এই স্ক্রলিং কখনই অভীষ্ট মানসিক শান্তি এনে দিতে পারে না বরং আরও বেশি করে তারা সবধরনের নেতিবাচক অনুভূতির দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন।

এর সমাধান হলো, আপনাকে বুঝতে হবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, আপনার প্রাত্যহিক জীবনের ঠিক কতটা সময় পাবার যোগ্য? কতটা গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার অধিকার রাখে এসব ওয়েবসাইট আপনার জীবনে? বিশ্বব্যাপী যেকোনো ধরনের আচরণকে মানসিক সমস্যা বা ডিজঅর্ডার বা আসক্তি বলে চিহ্নিত করার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য দু’টি প্রতিষ্ঠান হলো- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং অ্যামেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশন। ভিডিও গেম এবং ইন্টারনেটের বহুল ব্যবহার ইতোমধ্যেই আসক্তি বলে তারা ঘোষণা দিয়েছেন। ভয়ের বিষয় হচ্ছে, ফেসবুক-টুইটার-ইন্সটাগ্রামের অধিক ব্যবহারকে ভাবা হচ্ছে মদ্যপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবনের চেয়েও অধিক গুরুতর সমস্যা হিসেবে। 

অন্তর্মুখীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেন একাকিত্ব ঘোচাতে আর বহির্মুখীরা করেন বড় পরিসরে মেশার উদ্দেশ্যে; Image Source: BBC

ইতোমধ্যেই এটি একটি প্রমাণিত সত্য যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার ও বিষণ্ণতার মাঝে সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। সার্বক্ষণিক অস্থিরতা, বিষণ্ণতা, নিদ্রাহীনতা- এসবের পেছনে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করে যে কোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পপ-আপ ব্যবস্থাটি। নিরবচ্ছিন্ন এই নোটিফিকেশন ব্যবস্থা আপনাকে নাজেহাল করবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আপনার হাতেই আছে!

স্বাস্থ্য সংক্রান্ত চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

This article is about mental health and social media and is written in the Bengali language. All the references are hyperlinked in the article.

Featured Image: thedailystar.net

Related Articles