Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

তথ্য বিভ্রাট: আমাদের দেহের আসলে কতটুকু পানি দরকার?

আমাদের দেহের প্রায় ৬০ শতাংশ পানি। প্রতিনিয়ত আমাদের দেহ হতে পানি (ঘাম এবং মূত্র আকারে) নিঃসৃত হয়। এই কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের ৮টি ৮ আউন্সের গ্লাস (যা প্রায় ২ লিটারের সমান) পানি পান করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কিন্তু এই তথ্যটিকে করা হয়েছে অতিরিক্ত মাত্রায় সাধারণীকরণ। প্রতিটি জিনিসের মতই প্রত্যেকের পানি গ্রহণের মাত্রা সেই ব্যক্তি এবং আরও কিছু বিষয়ের উপরে নির্ভর করে। আজকের আলোচনা পানির এই অতিরঞ্জন নিয়েই।

প্রতিদিনের ৮ গ্লাস পানি; source- glenpatrick.ie

৮ গ্লাস পানির পিছনের ইতিহাস

প্রতিদিন ৮ গ্লাস পানি পান করতে হবে এই বক্তব্য শুরু হয় এক গবেষকের গবেষণার ভুল উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে প্রায় ৭০ বছর আগে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় খাদ্য এবং পুষ্টি সমিতি পরামর্শ দিয়েছিল যে, মানুষ যাতে ২.৫ লিটারের মত পানি পায় প্রতিদিন। তারা এটি বলেননি যে প্রত্যেকের ২.৫ লিটার করে পানি পান করতে হবে। গবেষণায় এটি উল্লেখ করা হয় যে, প্রতিদিনের সুপারিশকৃত পানি সকলে যে খাবার খায় (বিশেষ করে ফল এবং সবজির), তার মাধ্যমে পূরণ করতে পারে। আপনি আপনার পানকৃত চা, কফি, সোডা, ফলের জুস বা অন্য পানীয়ের মাধ্যমে প্রতিদিনের পানির প্রয়োজনীয়তা মিটাতে পারেন।

পানি এবং আপনার স্বাস্থ্য

পানি আমাদের শরীরের অপরিহার্য একটি উপাদান। যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি। কিছু রোগ দূরে ঠেলে দেয়ার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে পানি।

কোষ্ঠকাঠিন্য: পানির নিয়মিত গ্রহণ কোষ্ঠকাঠিন্য (যা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা) থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক।

ক্যান্সার: কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে সকল মানুষ তুলনামূলক বেশি পানি পান করেন তাদের মূত্রাশয় এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস পায়। তবে কিছু গবেষণায় পানির সাথে ক্যান্সারের তেমন কোনো সম্পর্ক খুঁজে পান নি গবেষকেরা। তাদের ধারণা, ক্যান্সারের কোষের আচরণ এবং পানির মধ্যকার সম্পর্কে বোঝার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।

কিডনির পাথর: গবেষণায় দেখা যায়, পানি গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে কিডনিতে পাথর হবার সম্ভাবনা হ্রাস পেতে থাকে।

তাহলে আমি এখন কতটুকু পানি পান করব?

কিন্তু এই মাত্রা নির্ণয়ের আগে দেখা যাক পানি আমাদের দেহে কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। তৃষ্ণার কারণে আমরা পানি পান করি এবং এই পানি আমাদের দেহে ব্যাপন বা আস্রাবন প্রক্রিয়ায় দেহের বিভিন্ন কোষে প্রবেশ করে। ব্যাপন প্রক্রিয়ায় তরল এবং গ্যাসীয় মাধ্যমে পানি উচ্চ ঘনত্বের জায়গা থেকে নিম্ন ঘনত্বের দিকে প্রবাহিত হয়। আস্রাবন প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে এই প্রবাহের মাঝে একটি পর্দা থাকে। দেহের বিভিন্ন কোষের বিভিন্ন রকমের ব্যপ্তিযোগ্যতা থাকে। এই ব্যপ্তিযোগ্যতা নির্ভর করে তাদের বহিস্তরে অবস্থিত লিপিডের আবরণের উপরে এবং কি পরিমাণে পানির নালী রয়েছে তার উপরে।

আপনার কিডনির প্রধান কাজ শরীরের মধ্যে পানি পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ এবং রক্তে খনিজ আয়নের ঘনত্ব বজায় রাখা। তারা বর্জ্য পণ্য, বিশেষ করে ইউরিয়া দেহ থেকে নিঃসরণ করার জন্য। একই সময়ে তারা গ্লুকোজ এবং প্রোটিনেট মতো দরকারী পদার্থ ধরে রাখে, যাতে শরীর থেকে তা হারিয়ে না যায়।

কিডনির কার্যক্রম; source- thinglink.com

তবে এর মানে এই নয় যে আপনার দেহের যে পরিমাণে পানির প্রয়োজন তার সবটুকুই আপনার পান করতে হবে। বেশিরভাগ খাবারেই প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে। মাংস, মাছ, ডিম এবং বিশেষ করে পানি-সমৃদ্ধ ফল এবং সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পানির উপস্থিতি পাওয়া যায়। তাই আমরা কতটুকু পানি পান করছি তার দিকে খেয়াল না রেখে আমাদের খেয়াল রাখা উচিত আমাদের জল ভারসাম্যের উপরে। এই ভারসাম্য সম্পর্কে বোঝার জন্য মানুষ তার পূর্বপুরুষদের ধন্যবাদ দিয়ে পারে। মানুষের দেহে যখন পানির মাত্রা কমে আসে তখন সে তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়ে, এমনটাই অভিমত প্রকাশ করেন ওকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যায়াম বিষয়ক চিকিৎসক টামারা হিউ-বাটলার

বিভিন্ন ফল এবং সবজিতে পানির উপস্থিতি; source- twitter.com

কিন্তু এর মানে এই নয় যে মানুষের পানি পান করার প্রয়োজন নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তৃষ্ণার উপরে ভরসা না করে অধিক পরিমাণে পানি গ্রহণ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল যখন অধিক পরিমাণে (বিশেষ করে গরমের দিনে এবং ব্যায়াম করার পরে) ঘাম নিঃসৃত হয়। যে হারে ঘাম নিঃসৃত হয়, সেভাবে পানি পানের ব্যাপারটি খেয়াল রাখা প্রয়োজন পড়ে। যেসকল খেলোয়াড় বিশেষ ব্যায়ামের মাধ্যমে নিজের শরীর গঠনের মধ্যে ব্যস্ত থাকেন তাদের পানির পাশাপাশি কিছু অতিরিক্ত পুষ্টিও দেখা দরকার হয়।

গর্ভধারণের পরবর্তী সময়ে মহিলাদের অধিক পরিমাণে পানি গ্রহণ প্রয়োজন পড়ে। তাছাড়া বৃদ্ধ বয়সে পানির গ্রহণের পরিমাণ সম্পর্কে নিজেদের খেয়াল রাখা লাগে, কারণ বয়োবৃদ্ধির সাথে সাথে দেহের বিভিন্ন মেকানিজম ঠিকমত কাজ করতে অক্ষম হয়।

মানুষের প্রয়োজনীয় পানির পরিমাণ মূলত নির্ভর করে তার পরিবেশ এবং কার্যক্রমের উপরে। গবেষকেরা কিছু নির্ণায়ক নির্ধারণ করেছেন যার উপরে মানুষের দেহ হতে পানি ক্ষয়ের পরিমাণ নির্ভর করে। সেগুলো হলো তাপমাত্রা, বয়স, আর্দ্রতা, উচ্চতা, কী পরিমাণে বায়ু গৃহীত হচ্ছে, কাপড়, চলাফেরা, খাবারের মাত্রা, রোগ (ডায়রিয়ার মতো রোগের কারণে পানির প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পায়), ওষুধ এবং হরমোনের সমস্যা।

তাহলে দিন শেষে বলা যায়, কেউ আপনাকে এটা বলে দিতে পারবে না যে, আপনার এতটুকু পানি পান করতেই হবে। নির্ণায়কগুলো প্রত্যেকের জন্যই আলাদা। আপনি নিজেই প্রয়োজন অনুসারে পানি পান করতে থাকুন। শুধুমাত্র খেয়াল রাখুন নিজের দেহের। অতিরিক্ত গরমের দিনে বা ব্যায়ামের কারণে পানির অধিক ক্ষয় হলে তা পূরণ করার চেষ্টা করুন। কেননা যে সকল পানি গ্রহণের মানদন্ড আপনারা দেখতে পান তার সবটুকুই করা হয় একটি গড় হিসেব করে।

আপনার দেহের প্রতিদিনের ইনপুট এবং আউটপুট; source- h4hinitiative.com

বিভিন্ন হেলথ জার্নাল বয়সভেদে তা-ও মানুষজনকে ১.৫-৩ লিটার পর্যন্ত পানি প্রতিদিন পান করতে উৎসাহিত করে। তবে এর মানে এই নয় যে আপনি ২-৩ লিটারের একটি কোক বা পেপসি জাতীয় পানীয় গ্রহণ করবেন। এসকল পানীয়তে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে যা ডায়াবেটিস ও অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন পানীয়তে চিনির পরিমাণ তাহলে একটু দেখে আসা যাক

বিভিন্ন পানীয়তে চিনির পরিমাণ; source- aquazania.co.za

তাছাড়া আজকাল সুগার-ফ্রি নামে আরেক ধরনের পানীয় পাওয়া যায়। তাতে সুগার তথা চিনি থাকে না, তবে তাতে কৃত্রিম বিভিন্ন উপাদান থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ইম্পিরিয়াল কলেজের একদল গবেষকের মতে, এই সুগার-ফ্রি পানীয় আপনার টাইপ ২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করতে বা ওজন কমাতে সহায়তা করবে না। এমনকি, এর ফলে আপনার খাবারের প্রতি রুচি বৃদ্ধি পেয়ে আপনার ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকদের মতে, এসব কৃত্রিম পানীয়তে যে সকল রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় তা আপনার দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতিকর। এই গবেষণার জন্য গবেষকেরা প্রায় ২৩ ধরনের পানীয় (সফট ড্রিংক এবং স্পোর্টস ড্রিংক) নিয়ে পরীক্ষা চালনা করেন। তাছাড়া এসব পানীয়ের অম্লতার কারণে হাইপারসেন্সিটিভিটি, ডেন্টিনের (এনামেলের নিচের স্তরের কোষ) ক্ষতিও হতে পারে। পুষ্টিবিদ এমান্ডা আরসেলের মতে, আপনি এসব পানীয় না পান করে থাকতে পারলে তা আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভাল একটি দিক হয়ে দাঁড়াবে। আপনার কাছে সর্বদা পানি পান করা একটু বিরক্তিকর মনে হলে আপনি চা, কফি বা দুধ পানের মাধ্যমেও তৃষ্ণা নিবারণ করতে পারেন।

ফিচার ইমেজ : postinghealth.com 

Related Articles