Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শরীরের বিপাক প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রাখবে যে খাবারগুলো

ওজন কমানোর চিন্তায় কতকিছুই না করা হয়! আর সেজন্য স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার বিপাক প্রক্রিয়া সম্পর্কে এবং জানা দরকার যে, কীভাবে বিপাক প্রক্রিয়া ওজনের সামঞ্জস্য ও ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। বিপাক প্রক্রিয়া হলো এমন একটি প্রাণরাসায়নিক প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে শরীর খাবার থেকে ক্যালরি শোষণ করে নেয় এবং অক্সিজেনের সাথে মিশে শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপন্ন করে। আমাদের শরীর এই শক্তিকে ধরে রাখে এবং বিভিন্নভাবে কাজে লাগায়, যেমন- রক্তসঞ্চালন, শ্বাস-প্রশ্বাস, হজমশক্তি, হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা, কোষের বৃদ্ধি ও ক্ষতিপূরণ সংস্কার। যে হারে আমাদের শরীর ক্যালরিকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে, তাকে মৌলিক বিপাকীয় হার বলে। সোজা কথায় বলতে গেলে, বিপাক প্রক্রিয়া আমাদের শরীরকে সচল রেখে বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা করে। বিপাক প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে যে, কতটা কার্যকরভাবে আমাদের শরীর সঞ্চিত শক্তিকে কাজে লাগাতে পারে।

একেকজনের বিপাক প্রক্রিয়ার হার একেক রকম হয়ে থাকে। কারো কারো শরীরে অন্যদের চাইতে তুলনামূলক কম ক্যালরি খরচ হয়। বিপাকীয় হারের ক্ষেত্রে নানা ধরনের বিষয়ের প্রভাব রয়েছে। বয়স এবং লিঙ্গ ভেদে বিপাকীয় হারে ভিন্নতা থাকতে পারে। মহিলাদের তুলনায় পুরুষেরা কম সময়ে ওজন কমাতে পারে। আর এর কারণ হলো পুরুষদের শরীরে মহিলাদের শরীরের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম পরিমাণে চর্বি ও মাংসপেশী থাকে। বয়সের সাথে সাথে শরীর নমনীয়তা হারাতে শুরু করে। তাই শরীরে ক্যালরি খরচ করার ক্ষমতা কমে যায়।

কীভাবে উন্নত হবে আপনার বিপাক প্রক্রিয়া?

যাদের বিপাকীয় হার কিছুটা মন্থর, তাদের জীবনযাত্রায় সামান্য কিছু পরিবর্তন আনলেই কিন্তু পার্থক্যটা লক্ষ্য করা সম্ভব। দেখা যায় যে, নিয়মিত শরীরচর্চা মৌলিক বিপাকীয় হার গঠন করে। শরীরচর্চার ক্ষেত্রে হাঁটা ও দৌড়ানো বেশ উপকারী হতে পারে, তবে অন্যান্য ব্যায়ামও একইরকম কাজ করবে।

এখানে কতগুলো টিপস দেয়া হলো, যেগুলো মেনে চললে শরীরচর্চা করার সময় আপনি ক্লান্ত ও বিষণ্ণ অনুভব করবেন না,

  • শরীরচর্চা করার সময় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করবেন।
  • শরীরচর্চার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান। কারণ শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হলে ওজন ধীরে ধীরে কমবে এবং শরীরে ঘ্রেলিন নামক হরমোন অধিক পরিমাণে নিঃসরণ হতে পারে, যার কারণে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগতে পারে।
  • দিনে অন্তত একবার হলেও চা, কফি বা গ্রিন টি পান করুন।
  • পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমান এবং চাপ কম নেবার চেষ্টা করুন।
  • প্রতিদিন কতটুকু ক্যালরি সম্পন্ন খাবার খাচ্ছেন সেদিকে লক্ষ্য রাখুন এবং পরিমিত পরিমাণে খাবার খান। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর খাওয়ার অভ্যাস করুন।
  • যথেষ্ট পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খান।

সুষ্ঠু বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য কী কী খাবার খেতে পারেন?

ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার

শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব হলে তা বিপাক প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে পারে। সূর্যের আলো হলো এর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কিন্তু সচরাচর যেহেতু আমাদের নিয়ম করে সূর্যের আলোতে যাওয়া হয় না, তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। যেমন মাছ, ডিমের কুসুম, দুধ, মাশরুম, টক দই, মাখন, কমলার রস ও গরুর কলিজা।

আপনার শরীরে ভিটামিন ডি এর ঘাটতি হচ্ছে না তো? Source: Rx Vitamins

পাকস্থলী ও শরীর ঠাণ্ডা রাখে যেসব খাবার

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, প্রাকৃতিকভাবে যেসব খাবার পাকস্থলী ও শরীর ঠাণ্ডা রাখে, সেগুলো শরীরের বিপাকীয় হার বাড়াতেও বেশ কার্যকরী। সেক্ষেত্রে নিয়মিত খাবারে শসা ও তরমুজ খেতে পারেন।

দুধ ও টক দই

দুধে যে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে, তা নিশ্চয়ই আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এক গবেষণা মতে, শরীরে নিয়মিত ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা হলে কার্যকরীভাবে চর্বি বিপাক করা সম্ভব হয়। আর টক দইয়ে মূলত প্রচুর পরিমাণে প্রবায়োটিকস্‌ থাকে। প্রবায়োটিকস্‌ হলো একধরনের কার্যকরী ব্যাকটেরিয়া, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং শরীরকে ঠাণ্ডা রাখে। আর পনিরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, যা মাংসপেশী গড়তে ও রক্ষা করতে সাহায্য করে।

প্রতিদিন চাই অন্তত এক গ্লাস দুধ; Source: livestrong.com

গ্রিন টি এবং কফি বা চা

আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনের করা এক গবেষণা অনুযায়ী, যারা কফি বা চা এবং গ্রিন টি দুটোই নিয়মিত পান করে থাকেন তারা অন্যদের তুলনায় অধিক ক্যালরি খরচ করে থাকেন। গ্রিন টিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনলের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যার রয়েছে বিবিধ পুষ্টিগুণ। এছাড়াও গ্রিন টি ওজন কমাতে সাহায্য করে। আর কফি বা চা ক্লান্তি কমাতে এবং শরীরচর্চার সময় সহনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

গ্রিন টি ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে; Source: Healthline

সবুজ শাকসবজি

সবুজ সতেজ শাকসবজিতে আছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ উপাদান, প্রোটিন ও লৌহ। এই উপাদানগুলো প্রতিদিন শরীরে প্রয়োজনীয় শক্তির চাহিদা পূরণ করে আপনাকে রাখে সুস্থ ও স্বচ্ছন্দ।

মাছ

তেল জাতীয় মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, যা আপনার শরীরের বিপাকীয় হার উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাড়াতে পারে। মাছের তেল শরীরে চর্বি কমানোর এনজাইমের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।

ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড বিপাকীয় হার বাড়ায়; Source: en.neonetwork.pk

মসুর ডাল ও গোটা শস্য

মসুর ডালে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফাইবার যা হজমশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও রয়েছে লৌহ, যা পুরো শরীরে এটি প্রবাহিত হতে সাহায্য করে। আর এর ফলস্বরূপ বিপাক প্রক্রিয়া সুগঠিত হয় এবং শক্তিও বৃদ্ধি পায়। এর সাথে আপনার খাবার তালিকায় যোগ করতে পারেন গোটা শস্য জাতীয় খাবার, যেহেতু এসব খাবার হজম হতে এবং চর্বি ঝেরে ফেলার জন্য অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন হয়।

বিভিন্ন ধরনের বাদাম ও বিচি

শুকনো ফলমূল বা ড্রাই ফ্রুটকে শক্তির উৎস বলা চলে। কাঠবাদাম, কাজুবাদাম ও পেস্তাবাদামের রয়েছে প্রচুর স্বাস্থ্যগুণ। এছাড়া বাদাম থেকে আপনি পেতে পারেন প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। যেহেতু প্রোটিনে উচ্চ তাপীয় প্রভাব রয়েছে, তাই আপনার শরীরকে অনেকটা ফ্যাট বার্ন করতে হবে একে হজম করার জন্য। শিমের বিচি, কাঁঠালের বিচি ও মিষ্টি কুমড়ার বিচি বিপাক প্রক্রিয়া কর্মক্ষম করতে সাহায্য করে।

বাদাম খেতে ভুলবেন না যেন! Source: Twenty Something Living

স্যুপ

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে, স্যুপ খাওয়ার অভ্যাস মেদবাহুল্যের আশঙ্কা কমায়। বিভিন্ন ধরনের ডায়েটের নিয়মানুযায়ী মূল খাবারের আগে স্যুপ খাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু কেন? গবেষকদের মতে, মূল খাবার খাওয়ার আগে স্যুপ খেলে মূল খাবারটা তুলনামূলকভাবে কম খাওয়া পড়ে। পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, স্যুপের পানীয় এবং শক্ত উপকরণ ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। আর এভাবে খাওয়াটাও কম হয় এবং অপেক্ষাকৃত দ্রুত ফ্যাট বার্ন হয়।

মসলা

কালো গোল মরিচ, সরিষার দানা, রসুন গুঁড়া বা পাউডার এবং আদা আপনার বিপাকীয় হারকে বাড়াতে সাহায্য করবে। এই বিষয়টি প্রমাণিত যে, যারা তাদের প্রতিদিনের খাবারে মসলার ব্যবহার করে থাকে তারা অন্যদের তুলনায় প্রতিদিন ১,০০০ ক্যালরি বেশি বার্ন করতে সক্ষম হয়।

প্রতিদিনের খাবারে পরিমিত পরিমাণ মসলা ব্যবহার করুন; Source: bhaktivedantamanor.co.uk

এছাড়াও খেতে পারেন টক জাতীয় ফলমূল, আপেল ও ঝাল মরিচ।

ফিচার ইমেজ: The Fat Kid Inside

Related Articles