Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মোশন সিকনেস: যাত্রাপথে যে সমস্যা প্রতিনিয়ত তাড়িয়ে বেড়ায়

চাকরিসূত্রে বা অন্যান্য কাজে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত ট্যাক্সি, বাস, রেলসহ বিভিন্ন যানবাহনে যাতায়াত করতে হয়। কিন্তু যানবাহনে উঠেই কারো কারো ক্ষেত্রে শুরু হয়ে যায় নানা ধরনের অস্বস্তি। গাড়ি চলতে শুরু করলে এই অস্বস্তির পরিমাণ যেন আরো বাড়তে শুরু করে। মাথাব্যথা, বমি বমি ভাব, ঘেমে যাওয়া, বমি শুরু হওয়া এবং সবশেষে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে। এ ধরনের অসুস্থতাকে বলা হয় মোশন সিকনেস বা ট্রাভেল সিকনেস।

কারণ

গাড়ি বা কোনো যানবাহনের গতি সাধারণত মানুষের তিনটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

(১) ত্বক

(২) চোখ

(৩) অন্তঃকর্ণ

এই অংশ তিনটিকে বলা হয় সেন্সরি রিসেপ্টর। শরীরের যখন এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ অংশের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়, তখনই মোশন সিকনেসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

কারা বেশি ঝুঁকিতে?

  • নারীদের ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। বিশেষ করে গর্ভবতী মহিলা, ঋতুস্রাবের সময় এবং হরমোন থেরাপি নিচ্ছেন, এমন মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি প্রবল।
  • ২-১২ বছর বয়সী অনেক শিশু এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর পরিমাণ কমতে থাকে।
  • যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে, তাদের বেলায় এতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা মোশন সিকনেসের পূর্ব লক্ষণ; Source: fashionlady.in

  • নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ, যেমন: কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, হাঁপানির ওষুধ, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং এমনকি আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপরোক্সেন জাতীয় সাধারণ কিছু ওষুধ যারা গ্রহণ করে, তাদের বেলায় এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
  • যাদের কানের সমস্যা রয়েছে, তারাও এ রোগে আক্রান্ত পারে।

লক্ষণ

গুরুতর লক্ষণ:

  • বমি বমি ভাব
  • বমি হওয়া
  • শরীর হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে ওঠা
  • শ্বাস-প্রশ্বাসে কষ্ট হওয়া
  • মাথা ঘোরা
  • ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া
  • শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে না পারা, ভারসাম্যহীনতায় পড়ে যাওয়া

পুরুষদের চাইতে মহিলাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি; Source: toptraveldestinationdeals.com

সাধারণ লক্ষণ:

  • ক্ষণে ক্ষণে ঘাম হওয়া
  • শরীর হঠাৎ খারাপ লাগা
  • অস্বস্তি হতে থাকা
  • গা গোলানো লালা নিঃসরণ হওয়া
  • ঝিমুনি আসা

বমি বমি ভাব কিংবা বমি হলে শরীরে শুরু হয় অস্বস্তি; Source: tiresandparts.net

অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের অসুস্থতা খুব বড় ধরনের প্রভাব ফেলে না। নিজে নিজে কিছু ব্যবস্থা নেয়ার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ তীব্র আকার ধারণ করে। যারা ঘন ঘন এবং দীর্ঘ সময় ধরে এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদেরকে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া এবং প্রয়োজনমতো শরীরের যত্ন নেয়া আবশ্যক। কান ও শরীরের ভারসাম্য এবং স্নায়ুতন্ত্র স্বাভাবিক অবস্থায় কীভাবে রাখা যায়, তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন।

মোশন সিকনেসের কারণে মুখমণ্ডল ফ্যাকাশে হয়ে পড়ে; Source: mnn.com

প্রতিকার

  • নিজস্ব গাড়িতে ভ্রমণ করলে একটানা যাতায়াত না করে কিছুক্ষণ পরপর বিরতি দিয়ে দিয়ে যাত্রা সম্পন্ন করলে মোশন সিকনেস কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। বিরতির সময়ে কিছুক্ষণ খোলা হাওয়া উপভোগ করে আবার যাত্রা শুরু করতে পারেন।
  • চুইংগাম ও আদা মোশন সিকনেস কমাতে সাহায্য করে। যাত্রাকালীন সময়ে চুইংগাম কিংবা আদা চিবোতে থাকলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

যাত্রাপথে চুইংগাম কিংবা আদায় কমতে পারে মোশন সিকনেস; Source: medicalnewstoday.com

  • যাত্রার সময় ঘুমানোর অভ্যাস করতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • কম ঝাঁকুনির সিটে বসাই উত্তম। বাসে ভ্রমণের সময় সামনের সিটে, জানালার ধারে বসলে আলো-বাতাস পাওয়া যাবে বেশি। ফলে শরীরে আরাম পাওয়া যাবে বেশি।
  • গাড়ির মধ্যে না তাকিয়ে দিগন্তের দিকে তাকালে ভালো।
  • উল্টোমুখী সিটে না বসাই ভালো।
  • ভ্রমণের পূর্বে তেল ও মশলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। যাত্রার সময় মশলা বা তৈলাক্ত খাবার খেলে বমি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • যাত্রাকালে বই না পড়াই ভালো।
  • তেলের গন্ধ যাদের সহ্য হয় না, তারা পছন্দের এয়ার ফ্রেশনার ব্যবহার করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে অন্যান্য যাত্রীর অবস্থাও বিবেচনায় রাখতে হবে।
  • যাত্রাকালে পাশের যাত্রীর সাথে কথা না বলা এবং মোবাইল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এড়িয়ে চলা উচিত।

মাথার যন্ত্রণা থেকে উপশম পেতে হলে

  • হালকা ম্যাসাজ করতে পারেন।
  • বমি, মাথা ঘোরা বা মাথা ধরা শুরু হচ্ছে বুঝতে পারলে বড় বড় শ্বাস নিয়ে ধীরে ধীরে ছাড়তে থাকুন। এই সমস্যা যতক্ষণ না কমছে, ততক্ষণ এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে পারলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
  • যাত্রার সময় মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করুন। কোনো সুন্দর পরিবেশের কথা ভাবুন।
  • হালকা গান শোনা ‍কিংবা নিজের সাথে নিচু গলায় কথা বললেও মোশন সিকনেসের ঝুঁকি কমানো যায়।
  • প্রতিদিন নিয়ম করে হাটুঁন।
  • যোগাভ্যাস করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়।

যাত্রার সময় ঘুমানোর অভ্যাস করলে মোশন সিকনেস কাটিয়ে ওঠা যায়; Source: tubaduba.com

চিকিৎসা

মোশন সিকনেস এড়ানোর জন্য ঘরোয়া প্রতিরোধ ব্যবস্থাই বেশ কার্যকরী। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এই অসুস্থতার মাত্রা এত তীব্র হয় যে, তার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ ধরনের চিকিৎসা সবসময় ভ্রমণের পূর্বে নিতে হয়। মোশন সিকনেস থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসকরা রোগীকে রোগের মাত্রা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের ওষুধ সেবনের নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।

স্কোপোলামিন

এ সমস্যা কাটানোর জন্য স্কোপোলামিন জাতীয় পথ্য বেশ ভালো ফল দেয়। এটি অবশ্য রোগের উপসর্গ শুরু হওয়ার আগে নেওয়া উচিত।  ভ্রমণের ৬-৮ ঘণ্টা আগে এই পথ্যটি কানের পেছনে স্থাপন করলে বেশ উপকার পাওয়া যায়।

প্রমেথাজিন

ভ্রমণের ২ ঘণ্টা আগে নেওয়া উচিত। এর প্রভাব ৬-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তবে এর কিছুটা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন: তৃষ্ণা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া।

সাইক্লিজিন

ভ্রমণের কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে নেওয়া গেলে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখে। তবে ৬ বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে এ ধরনের ওষুধ দেয়া উচিত নয়।

মেকলিজিন

এ জাতীয় ট্যাবলেট যাত্রা শুরুর আধঘণ্টা আগে এবং প্রয়োজনে ছয় ঘণ্টা পরে পুনরায় ব্যবহার করতে হয়। তবে, ডমপেরিডন, মিটোক্লপ্রামাইড ও অন্যান্য ফেনোথায়াজিন মোশন সিকনেস এড়াতে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখে না। তবে সময়মতো যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া গেলে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব।

যাত্রাকালে দিগন্তের দিকে তাকিয়ে থাকা উত্তম; Source: pestleherbs.co.uk

ঘরোয়া চিকিৎসা

  • এক কাপ আদার শরবতের সাথে এক চামচ লেবুর রসের মিশ্রণ তৈরি করে তা যাত্রার এক ঘণ্টা আগে পান করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
  • এক গ্লাস পানিতে এক চামচ মধু ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে ভালো প্রতিকার পাওয়া যায়।
  • যাত্রা শুরুর পূর্বে এবং যাত্রার বিরতির সময়ে অল্প পুদিনা পাতা মুখে রাখলে মোশন সিকনেস কাটানো যায়।

ফিচার ইমেজ: healthreflect.com

Related Articles