Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

স্থূলতা: বর্তমান বিশ্বের ভয়াবহতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা

ধরুন, রাস্তা দিয়ে সকালবেলা হেঁটে যাচ্ছেন। কিংবা সন্তানকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসতে যাচ্ছেন বাসে চড়ে। অথবা ধরে নিন, ন’টা-পাঁচটা অফিস করে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরছেন। আশেপাশের মানুষগুলোর দিকে সচেতনে নজর দিতে হবে বলছি না, স্রেফ দৃষ্টিসীমায় উপস্থিত থাকা মানুষগুলোর কথা আলাদা করে ভেবে দেখেছেন কখনও? কিংবা নিজের পরিবারের সদস্যদের কথা? শারীরিকভাবে ঠিক কতটা ফিট আছি বর্তমানের আমরা?

খাদ্যে ভেজাল, ফরমালিন, অস্বাস্থ্যকর উপায়ে প্রস্তুতকৃত খাদ্য; এসব বিষয় না হয় বাদই দিলাম। যে খাদ্যভ্যাস আমরা দিনে দিনে গড়ে তুলছি তা ঠিক কতটা উপকারি বা বিজ্ঞানসম্মত? খাদ্যাভাসের পাশাপাশি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনধারা প্রতি মুহূর্তে আমাদের স্থূলতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ভবিষ্যৎ পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য সমস্যা হতে যাচ্ছে স্থূলতা, যা নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।

সময়টা স্থূলতাকে মহামারী ঘোষণা করার

জনস্বাস্থ্য সমস্যার সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে স্থূলতা। যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি স্থূলতায় ভুগছেন এবং অবশিষ্ট দুই-তৃতীয়াংশ অতিরিক্ত ওজনের অধিকারী, যারা ধীরে ধীরে স্থূলতার দিকে এগোচ্ছেন। বয়সের হিসেবটা বাদ দিয়ে যদি জাতিগতভাবে দেখা হয়, তাহলে হিস্প্যানিক, কৃষ্ণাঙ্গ ও নেটিভ আমেরিকানদের সম্মিলিত জনগোষ্ঠীর মাঝে প্রায় অর্ধেক মানুষই স্থূলতার শিকার।

স্থূলতার সবচেয়ে ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে শিশুদের মাঝেও এটির ছড়িয়ে পড়া। ১৯৯৯-২০০০ এই এক বছরে শিশুদের (২-১৯ বছর বয়সী) মাঝে স্থূলতার হার ছিল ১৩.৯%, যেটি জরিপের শেষ বছর অর্থাৎ ২০১৫-১৬ তে এসে হয় ১৮.৫%। অন্যদিকে ১৯৯৯-২০০০ এই এক বছরে প্রাপ্ত বয়স্কদের (২০ বছর বয়স কিংবা ততোধিক) মাঝে স্থূলতার হার ছিল ৩০.৫%, যেটি বেড়ে ২০১৫-১৬ তে হয় ৩৯.৬%।

যুক্তরাষ্ট্রের শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মাঝে স্থূলতার হার; Image Source: cdc.gov

প্রশ্ন হচ্ছে, স্থূলতাকে মহামারী হিসেবে ঘোষণা করা কেন জরুরি? মহামারী কিংবা এপিডেমিক বলতে বোঝায়, যখন একটি রোগ স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সমগ্র বিশ্বজুড়ে স্থূলতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ফলাফল হিসেবে বেশ কিছু জটিল সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে বড় আকারে। স্থূলতার ফলে সৃষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোর মাঝে রয়েছে:

  • উচ্চ রক্তচাপ
  • ডায়াবেটিস
  • হৃদরোগ
  • হাড়ের সমস্যা
  • নিদ্রাহীনতা
  • ফুসফুসের সমস্যা
  • বিপাকীয় সমস্যা
যুক্তরাজ্যে স্থূলতার আশংকাজনক চিত্র; Image Source: gov.uk

সুতরাং স্থূলতা কোনো একক সমস্যা নয়। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাবের জন্যই একে অতি শীঘ্রই মহামারী ঘোষণা দেওয়া জরুরী হয়ে পড়েছে।

অভিনব এক সমাধান

যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় শহর হিসেবে পেনসিলভানিয়ার ফিলাডেলফিয়াতে কোমল পানীয়র উপর আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়। নীতি নির্ধারকদের উদ্দেশ্য ছিল, আরোপিত এই শুল্কের মাধ্যমে কোমল পানীয়ের দাম বৃদ্ধি করা এবং ফলাফল হিসেবে এর ব্যবহার বা ভোগ কমিয়ে আনা, কারণ স্থূলতার সম্ভাব্য কারণসমূহের মাঝে সুগার ইনটেক অর্থাৎ চিনি গ্রহণ একদম ওপরের দিকেই রয়েছে। খোদ ফিলাডেলফিয়া শহরে এর দারুণ ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা গেলেও পেনসিলভানিয়া রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে কোমল পানীয় ভোগের চিত্রটা কিছুটা হতাশাজনক ছিল বটে। অবশ্য সরকারের হর্তাকর্তাদের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলো দিয়ে চোরাই পথে কী পরিমাণ কোমল পানীয় প্রবেশ করছে, তা খতিয়ে দেখা।

জামা নেটওয়ার্ক কর্তৃক চালিত জরিপের সাফল্য; Image Source: wesa.fm

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় শহর হিসেবে ফিলাডেলফিয়াতে কোমল পানীয়ের আউন্স প্রতি ১.৫ সেন্ট হিসেবে কর ধার্য করা হয়। উক্ত পরীক্ষায় ম্যারিল্যান্ডের বাল্টিমোর শহরকে কন্ট্রোল হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ এই পরিসংখ্যানে বাল্টিমোর শহরটির সাপেক্ষে ফিলাডেলফিয়াতে কোমল পানীয়ের করারোপ পরবর্তী মূল্য এবং বিকিকিনির হিসাবনিকাশ করা হবে। স্বাভাবিকভাবেই, বাল্টিমোর ছিল কোমল পানীয়ের উপর শুল্কমুক্ত শহর। ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি (করারোপ-পূর্ব সময়) থেকে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭ (করারোপ পরবর্তী সময়), এই সময়ের মাঝে শহরটিতে সুগার সুইটেন্ড (ফলের রস, প্রস্তুতকৃত চা-কফি, সোডা, এনার্জি ড্রিংক, স্পোর্টস ড্রিংক) ও আর্টিফিশিয়ালি সুইটেন্ড (কোক, স্প্রাইট, ফান্টা, বাদামের শরবত, মিল্কশেক) বেভারেজের ব্যবহার জরিপ করা হয়।

বাজারে বিদ্যমান সব কোমল পানীয়তেই রয়েছে অত্যধিক পরিমাণ চিনি; Image Source: childrensmn.org

এই পরিসংখ্যানের ফলাফল ছিল অত্যন্ত ইতিবাচক। অতিরিক্ত শুল্ক ধার্যের ফলে শহরের সুপার মার্কেট, মাস মারচেন্ডাইজার স্টোর ও ফার্মেসিগুলোতে কোমল পানীয়ের দাম আউন্স প্রতি বেড়ে যায় যথাক্রমে ০.৬৫, ০.৮৭ ও ১.৫৬ সেন্ট। মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব হিসেবে শহরের কেন্দ্রীয় জায়গাগুলোতে এর বিক্রি কমে যায় প্রায় ১.৩ বিলিয়ন আউন্স, শতাংশের হিসেবে বললে কোমল পানীয়ের বিক্রি ৫১% কমে যায় করারোপের দরুন।

অবশ্য, সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ৩০৮.২ মিলিয়ন আউন্স পানীয় বেশি বিক্রি হয়, যার কারণে শেষ পর্যন্ত শুল্ক বৃদ্ধির পর পানীয়ের সামগ্রিক ব্যবহার কমে যায় ২৪.৪%। অর্থাৎ শেষ অবধি প্রমাণিত হয় যে, চিনিভিত্তিক কিংবা কৃত্রিম উপায়ে মিষ্টিকৃত পানীয়ের উপর শুল্ক আরোপের ফলে এর ভোগ কমে আসে অনেকাংশেই এবং এর সরাসরি ইতিবাচক ফলাফল লক্ষ্য করা যাবে স্বাস্থ্যখাতে!

ব্যক্তিগত আয় ও স্থূলতা

একজন ব্যক্তির নিজস্ব আয় হচ্ছে তার আর্থ-সামাজিক অবস্থানের অন্যতম নিয়ামক। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডার জনগণের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত মোট ২১টি গবেষণাপত্র নিয়ে একটি মেটা অ্যানালাইসিস করা হয়। মেটা অ্যানালাইসিস বলতে বোঝানো হয়, ইতোমধ্যে সম্পন্নকৃত গবেষণালব্ধ ফলাফল থেকে নতুন একটি পেপার লেখা; সহজ ভাষায় বলা হয় রিভিউ পেপার যেটি অবশ্যই কোনো মৌলিক গবেষণা কাজ নয়। বিবেচনাকৃত ২১টি গবেষণাপত্র থেকে প্রাপ্ত ফলাফলকে ব্যাখ্যা করা যায় দুভাবে।

প্রথমে আসা যাক আয় ও স্থূলতার সমানুপাতিক সম্পর্কে। আয়ের মাপকাঠিতে নীচের দিকে অবস্থান করা ব্যক্তিরা, ধনীদের চেয়ে স্থূলতার প্রতি অধিক সংবেদনশীল। মানসম্মত খাদ্যের অভাব, যথাযথ বাসস্থানের অপ্রতুলতা, যথোপযুক্ত ব্যায়ামের সুযোগহীনতা, মানসম্পন্ন চিকিৎসা সেবার অপর্যাপ্ততা, দৈনন্দিন জীবনের অনিশ্চয়তা, স্ট্রেস ইত্যাদির মূলে রয়েছে স্বল্প আয়।

দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সোশ্যাল স্টিগমা বা একটি বহুল প্রচলিত সামাজিক ভ্রান্ত ধারণা। কিছুটা স্থূলকায় মানুষ দেখলেই আমরা চট করে একটি ধারণা পোষণ করে ফেলি যে ব্যক্তিটি কাজেকর্মে যথেষ্টই শ্লথ গতির, যেকোনো ধরনের দায়িত্ব তাকে দেওয়া হোক না কেন তিনি অবশ্যই মন্থরতার পরিচয় রাখবেন। দীর্ঘকাল ধরে চলে আসা এই বিষয়টি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এতটাই প্রোথিত হয়ে গেছে যে বর্তমানে স্থূলকায় ব্যক্তিরাও নিজেরা এই বিশ্বাসে যথেষ্টই বলীয়ান- তারা মূলত সব প্রকার কাজের জন্যই অনুপযুক্ত, তারা অলস, তাদের ইচ্ছাশক্তি খুব কম, তারা সাফল্যের দেখা পান না এবং তারা নিয়মতান্ত্রিক হন না কখনই। তারা নিজেদের প্রকৃত সক্ষমতার উপর কোনোভাবেই ভরসা করতে পারেন না। অর্থাৎ সমাজের নিতান্তই একটি ট্যাবু সময়ের খেয়ায় ভাসতে ভাসতে প্রকারান্তরে ভিকটিমাইজড জনগোষ্ঠীর দৃঢ় বিশ্বাসে পরিণত হয়ে গেছে।

সামষ্টিকভাবে এর ফলাফল হিসেবে আমরা দেখতে পাই, স্থূলকায় ব্যক্তিরা কর্মক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছেন, সামাজিক অনিরাপত্তায় ভুগছেন, কাজের জগতে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন এবং সর্বোপরি তাদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ধ্যান ধারণাসমূহ বিজ্ঞানসম্মত হচ্ছে না। এতসব স্টেরিওটাইপ চিন্তাভাবনার সম্মিলিত প্রভাবে একজন স্থূলকায় ব্যক্তির কর্মক্ষেত্রে শেষ অবধি ভালো মাইনে যোগাড়  করা আর কোনোভাবেই সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। এখানে ব্যাপারটিকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ইনভার্স কসালিটি অর্থাৎ স্থূলতাই স্বল্প আয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সমস্যা সমাধানে চাই সম্যক উপলব্ধি

স্থূলতার এই ব্যপক আকার কমিয়ে আনার লক্ষ্যে শুরুটা হওয়া চাই ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে। স্থূলতার ভয়াবহ পরিসীমায় একবার প্রবেশ করে ফেললে তা থেকে বেরিয়ে আসা যথেষ্টই কষ্টসাধ্য। তাই প্রত্যেক পরিবারের জেষ্ঠ্য সদস্যদের উচিৎ পরবর্তী প্রজন্মকে শুরু থেকেই একটি সুস্থ জীবনধারায় অভ্যস্ত করে গড়ে তোলা। 

This article is about obesity in the Bengali language. All the necessary references are hyperlinked within the article. 

Feature image: spectator.co.uk

Related Articles