Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পার্কটা শুধুই তাদের!

স্বাস্থ্যরক্ষার তাগিদে কতকিছুই না করি আমরা। বিশেষ করে, বর্তমান সময়ে সুস্থ থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চা করার প্রবণতা অনেক বেড়ে গিয়েছে। চীনের বেলায় অবশ্য এই চিন্তা শুরু হয়েছিল আরও অনেক আগে। আর শুধু চিন্তাই নয়, চিন্তার সাথে সাথে কাজও শুরু হয়ে গিয়েছিল সেখানে। বয়স্কদের জন্য ‘এল্ডারলি পার্ক’ তৈরি করা শুরু করে চীন বহু আগে থেকে। চীনের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত এসব পার্কে বয়স্কদের উপস্থিতিও বেশ চোখে পড়ার মতো। শতকরা ৫০ শতাংশ মানুষ শরীরচর্চার জন্য এই পার্কগুলো ব্যবহার করেন। বর্তমানে চীনের দেখাদেখি বিশ্বের অন্যান্য স্থানেও এমন বয়স্কদের জন্য নির্মিত উদ্যানের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু চীনের ব্যাপারটা যেন একেবারেই অন্যরকম!

প্রথমে আপনার পার্কটিকে শিশুদের জন্য তৈরী বলে মনে হতেই পারে; Image Source: The Guardian

সকাল হলেই রাস্তায় দৌড়ান বা সাইকেল চালান, এমন মানুষের সংখ্যা অন্যান্য দেশেও কম নয়। তবে চীনে ব্যাপারটি এমন নয়। এখানে একা একা শরীরচর্চার চাইতে বয়স্কদের মধ্যে পার্কে এসে শরীরচর্চা করার প্রবণতাই বেশি দেখা যায়। আর শরীরচর্চাটাও ঠিক শরীরচর্চা নয়। এর মধ্যে আছে হালকা শরীরচর্চা, সাথে ঐতিহ্যবাহী কর্মকাণ্ড এবং নাচও! ভারোত্তোলনসহ বেশকিছু শরীরচর্চার সরঞ্জাম রাখা থাকে পার্কগুলোতে। আর সবগুলোর রঙই বেশ উজ্জ্বল। দেখে প্রথমে আপনার পার্কটিকে শিশুদের জন্য তৈরী বলে মনে হতেই পারে। তবে এটি নির্মাণ করা হয়েছে বয়স্কদের জন্য।

প্রাথমিকভাবে চীনে শুরু করা এই উদ্যোগটি বর্তমানে অবশ্য আরও অনেক দেশ ব্যবহার করেছে। লন্ডন, বার্লিন টরেন্টোর মতো স্থানেও এখন আপনি ‘সিনিয়র প্লেগ্রাউন্ড’ খুঁজে পাবেন। একটা বয়সের পর প্রয়োজন হলেও হয়তো একা একা শরীরকে কর্মক্ষম রাখতে খেলতে বা শরীরচর্চা করতে চাইবেন না অনেকে। বয়স্কদের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য তৈরী এই পার্কগুলো সেই সুযোগ করে দিয়েছে, খুব সহজেই।

শুরুটা কবে?

চীনের এই বিশেষায়িত পার্কগুলোর শুরুটা অবশ্য খুব একটা নতুন নয়। সকালে বয়স্কদের একত্রে শরীরচর্চা করার উল্লেখ আছে ইয়োলো এমপেররের সময়ে লেখা বই হুয়াংদি  নেইজিং-এ। তৃতীয় শতকে লেখা এই বইটিকে চীনের ঔষধিশাস্ত্রের পুরোধা বলে মনে করা হয়। এছাড়া ১৯৫০ সালে সরকারিভাবেও দলগতভাবে শরীরচর্চার এই ব্যাপারটিকে বয়স্কদের মধ্যে জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়। অভ্যাসের শুরুটা সেখানেই। পার্কে না যাওয়ার পেছনে অনেকসময় যে মানসিক বাধাগুলো কাজ করে, শুধু বয়স্কদের জন্যই পার্ক তৈরিতে ব্যাপারটি অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। চীনের এই বিশেষ পার্কগুলোতে আপনি কোন বাস্কেটবলের হুপ দেখতে পাবেন না। দেখতে পাবেন বয়স্কদের উপযোগী এবং তাদের জন্য উপকারী সব সরঞ্জাম।

শুরু হয়েছে সবখানে

স্প্যানিশ রাজ্য মালাগাতেই এমন ৪০০টি স্থান আছে; Image Source: Pintrest

চিনের দেখাদেখি অন্যান্য স্থানেও একই কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। এই যেমন লন্ডনের কথাই ধরুন। লন্ডনের হাইডি পার্ক সিনিয়র্স প্লেগ্রাউন্ডে বয়স্কদের জন্য রাখা হয়েছে যথাযথ সব ব্যবস্থা। ২০০৯ সালে শুরু করা হয় এই পার্কটি। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর অন্যান্য দেশও কাজটির অনুকরণ করছে। স্প্যানিশ রাজ্য মালাগাতেই এমন ৪০০টি স্থান আছে। অবশ্য কিছু কারণে এর অনেকগুলোই ব্যবহার করা হচ্ছে না। সঠিক স্থান এবং সরঞ্জামের ব্যবস্থা না করায় এমনটা হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নে এমন আরও অনেকগুলো প্রকল্প শুরু হতে যাচ্ছে।

বয়স্কদের জন্য পার্ক: কতটা সম্ভব?

বয়স্কদের জন্য, তাদের চাহিদামাফিক পার্কের ব্যবস্থা করাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কিন্তু শুনতে খুব সহজ মনে হলেও চিন্তাটিকে কাজে পরিণত করা কিন্তু বেশ কঠিন ব্যাপার। এতে প্রয়োজন পড়বে যথাযথ হিসাব-নিকাশেরও। যে ব্যাপারগুলো এখানে বড় ভূমিকা রাখবে, সেগুলো হলো-

পার্কের অবস্থান

পার্কে যেতে অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হলে একজন বয়স্ক মানুষ এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিতই হবে; Image Source: Mable

বয়স্কদের জন্য যে স্থানটিকে আপনি পার্ক হিসেবে তৈরি করছেন, সেটি সহজগম্য স্থানে হলেই ভালো। বাস স্টেশন বা যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যম থেকে যেন সমান দূরত্ব বজায় রাখে স্থানটি। এতে করে মানুষের পক্ষে পার্কে আসা সহজ হবে। বাড়তি সমস্যা বোধ করবেন না তারা। অন্যদিকে, পার্কে যেতে অতিরিক্ত ঝামেলা পোহাতে হলে একজন বয়স্ক মানুষ এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিতই হবেন কেবল।

পার্কের সরঞ্জাম

যেহেতু বয়স্কদের জন্য তৈরী, তাই পার্কের সরঞ্জাম এবং গঠন হওয়া উচিত তাদের মতো করে। যথাযথ হাঁটার স্থান, বসার জায়গা থাকতে হবে সেখানে। পার্কের সরঞ্জামের রঙ হিসেবে এমন রঙ বেছে নিতে হবে, যা মানুষকে আনন্দ দেয়, মনকে ভালো রাখতে সাহায্য করে। অর্থ্যাৎ, পার্ক তৈরি করার কথা ভাবলেই হবে না। দরকার হবে সঠিক পরিকল্পনারও।

সচেতনতার অভাব

এজন্য প্রয়োজন যথাযথ সচেতনতা; Image Source: Saga

মানুষ পার্ক বলতেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশু পার্ককে বোঝে। আর এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করে সচেতনতার অভাব। অনেকে চারপাশের মানুষ কী বলবে, এমনটা ভেবেও পার্কে যেতে চাইবেন না। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ সচেতনতা। এছাড়া, ব্যাপারটিকে সহজ আর স্বাভাবিক করে তোলার ব্যাপারও আছে। তাহলেই পার্কে যাওয়ার ব্যাপারটি বয়স্কদের কাছে আর আলাদা বা বিশেষ কিছু মনে হবে না। বেশিরভাগ দেশে, বিশেষ করে অনুন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে যেখানে স্বাভাবিক জীবনমানই নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে বয়স্কদের জন্য বাড়তি এই ব্যবস্থাটিকে একটু অতিরিক্ত বলে ভাবতেই পারেন সবাই।

আদতে, ব্যাপারটিকে যতটা বিলাসিতা বলে মনে করা হচ্ছে এটি কিন্তু তা নয়। আমাদের সমাজের একটা বড় ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ জুড়ে আছেন বয়স্ক মানুষ। প্রতিদিন, প্রতি বছর একটা নিয়মের মধ্যে থেকে শেষ বয়সে কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটি পেয়ে তাদের পুরো পৃথিবীটাই আটকে যায় চার দেয়ালে। ফলে নানাবিধ শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগেন তারা, যা এই পার্কগুলো খুব সহজেই দূর করতে পারে। কিন্তু উন্নত দেশেও এখনো এ ব্যাপারে সঠিক ধারণা ও কার্যক্রম নেই মানুষের মধ্যে।

এ ব্যাপারে যদি সরকার এবং সচেতন জনগোষ্ঠী এগিয়ে আসেন, তাহলে সমস্যার সমাধান করাটা খুব সহজ হয়ে পড়বে। সচেতনতা বাড়ালেই বাড়বে প্রসার। অন্যথায়, পার্ক তৈরি করলেও শুধু সচেতনতার অভাবেই বয়স্করা সেই পার্কে যেতে পারবেন না। অন্যদের হাসির পাত্র হবেন।

কেমন হতো, যদি এমন উদ্যোগ বাংলাদেশেও নেওয়া হতো? Image Source: Time Travel Turtle

ব্যাপারটি এমন নয় যে, বয়স্কদের জন্য তৈরী এই পার্ক শুধু তাদেরকেই আনন্দ দেবে। এতে করে বয়স্করা স্বাস্থ্যসচেতন হবে। সুস্থ জীবন যাপন করলে চিকিৎসার বাড়তি খরচ কমবে। জীবনমান উন্নত হবে। বয়সের সাথে সাথে অনেকেই যেমন নিজেকে সমাজে অবহেলিত ভাবতে শুরু করেন, তেমনটা কমে আসবে। কারণ, সবাই তাদেরকে নিয়ে ভাবে, মানসিক এই নিরাপত্তা বয়স্কদের দেবে এই পার্ক। কেমন হতো, যদি এমন উদ্যোগ বাংলাদেশেও নেওয়া হতো? দেশে বয়স্কদের জন্য পার্ক যে নেই, তা নয়। তবে শুধু তাদের জন্যই নির্মিত একটি পার্ক সচেতনতা এবং সুস্থতাকে আরও অনেক বেশি বাড়িয়ে দিতে পারে। চীনের দেখাদেখি বাকি দেশগুলোও যোগ দিয়েছে এই দলে। উন্নয়নের আরেকটি ধাপ হিসেবে এই উদ্যোগটি তাই বাংলাদেশ নিতেই পারে!

চমৎকার, জানা-অজানা সব বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: https://roar.media/contribute/

This article is in Bangla language. This is about a unique step in China, a park just for elderly people. The park also inspires other countries for doing something like this.

Featured Image: Guim

Related Articles