Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

কেন অনেক মানুষের শরীরেই দুধ সহ্য হয় না?

দুধ কিংবা দুগ্ধজাত বিভিন্ন খাবার সহ্য হয় না, এমন মানুষের অভাব নেই আমাদের চারপাশে। বরং একটু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে, আমাদের চারপাশের অনেক মানুষই দুধ পান কিংবা অন্যান্য দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণের পর বিভিন্ন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হন।

প্রাচীন ডিএনএ’র উপর করা একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় উঠে এসেছে, ইউরোপ মহাদেশে দুধ হজমের প্রবণতা খুবই আধুনিক একটি বিষয়, এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষজন এখনও পুরোপুরি দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য হজমের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।

কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এর পেছনে কারণ কী? মানুষের দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য হজমে অক্ষমতার নেপথ্যের কারণ হলো ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স বা অসহনীয়তা।

দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য হজমে অক্ষমতার নেপথ্যের কারণ হলো ল্যাকটোজ অসহনীয়তা; Image Source: Coastal Urgent Care Louisiana

ল্যাকটোজ কী? কেন অনেক মানুষেই এর সহনীয়তা কম?

দুধ কিংবা দুগ্ধজাত খাদ্যের প্রধান শর্করা জাতীয় উপাদানটির নাম হলো ল্যাকটোজ। যাদের মধ্যে ল্যাকটোজ অসহনীয়তা বিদ্যমান, তারা এ শর্করাটি হজম করতে পারে না, কেননা তাদের ক্ষুদ্র অন্ত্র যথেষ্ট পরিমাণে ল্যাকটোজ উৎপন্ন করতে পারে না। এটি একধরনের এনজাইম যা ল্যাকটোজ পরিপাকে সহায়তা করে।

কারা এতে আক্রান্ত হয়?

প্রায় ৬০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ল্যাকটোজ অসহনীয়তার শিকার, কিংবা শৈশবকালীন সময় পার করার পর তারা ল্যাকটোজ অসহনীয় হয়ে ওঠে। তবে মজার বিষয় হলো, ল্যাকটোজ সহনীয়তা বা অসহনীয়তা ভৌগলিক ভিন্নতার উপর বিশেষভাবে নির্ভর করে। কোনো একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর মধ্যে এই সহনীয়তা অপর কোনো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি বা কম দেখা যেতে পারে।

ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ব্রিটেনে ল্যাকটোজ অসহনীয়তা সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এশিয়ান কিংবা আফ্রিকান-ক্যারিবিয়ান সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে। উত্তর ইউরোপের প্রতি ৫০ জনের মধ্যে মাত্র ১ জনের মধ্যে ল্যাকটোজ অসহনীয়তা রয়েছে, যেখানে চীনের ৯০ শতাংশ মানুষই এর শিকার।

ভৌগলিক অবস্থান ভেদে ল্যাকটোজ অসহনীয়তার হার; Image Source: Food Intolerance Network

এর কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ঐতিহাসিকভাবে যেহেতু আফ্রিকা ও এশিয়া অঞ্চলের মানুষের কাছে খুব বেশি পরিমাণ পশুজাত দুধ পৌঁছাত না, তাই তাদের মধ্যে ল্যাকটোজ সহনীয়তা সেভাবে গড়ে ওঠেনি, কেননা এতে তাদের বিশেষ কোনো লাভ হতো না।

কীভাবে মানুষের মধ্যে এই সহনীয়তা গড়ে উঠেছে?

শৈশবকালে মানুষ দুধ হজম করতে পারে, এর পেছনে একমাত্র কারণ হলো তাদের জীনগত অভিযোজন। গবেষণা থেকে জানা যায়, ২০,০০০ বছর আগে মানুষের শরীরে দুধের ল্যাকটোজ ভাঙার উপযোগী জিনের উপস্থিতি ছিল না, এবং ব্রোঞ্জ যুগেও এটি ছিল খুবই বিরল।

খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে মানুষের মধ্যে কীভাবে ল্যাকটোজ সহনীয়তা গড়ে উঠল, তা নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে ধারণা করা হয় যে, সরাসরি দুধ পান হয়তো মানুষের টিকে থাকার ক্ষেত্রে বিশেষ কোনো সুবিধা দিতে শুরু করেছিল, যা দুধকে পনির, দই বা লাচ্ছিতে পরিণত করার ক্ষেত্রে সম্ভব ছিল না।

যদিও এখনো বিশ্বের বিশাল সংখ্যক মানুষ ল্যাকটোজ অসহনীয়তায় আক্রান্ত, তারপরও অনেক মানুষের কাছেই এখন বিকল্প খাদ্য পৌঁছে যাচ্ছে, এছাড়া ল্যাকটোজ-ফ্রি দুধও পাওয়া যাচ্ছে, আবার ল্যাকটোজ পিল কিনতে পাওয়া যাচ্ছে, যার মাধ্যমে সহজেই সাধারণ দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য হজম করা সম্ভব।

ল্যাকটোজ অসহনীয়তার উপসর্গসমূহ; Image Source: Science ABC

ল্যাকটোজ অসহনীয়তার উপসর্গগুলো কী কী?

ল্যাকটোজসমৃদ্ধ খাদ্য বা পানীয় গ্রহণের ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টার মধ্যে ল্যাকটোজ অসহনীয় ব্যক্তিরা পেট ব্যথা, বায়ুপ্রবাহ, উদরস্ফীতি, ডায়রিয়া, পাতলা পায়খানা, অ্যাসিডিটি প্রভৃতির শিকার হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এসব উপসর্গ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

কারো মধ্যে যদি এসব উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে যে তিনি ল্যাকটোজ অসহনীয়। তবে তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য তিনি টানা বেশ কয়েকদিন দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলতে পারেন। সেক্ষেত্রে যদি তার মধ্যে আর এই উপসর্গগুলো দেখা না দেয়, তার মানে তিনি আসলেই ল্যাকটোজ অসহনীয়। কিন্তু যদি দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার এড়িয়ে চলার পরও এসব উপসর্গ দেখা দেওয়া অব্যহত থাকে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

এটি কি ডেইরি অ্যালার্জি?

না, এ ধরনের অসহনীয়তা ফুড অ্যালার্জির থেকে আলাদা। এগুলো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে হয় না, এবং এগুলো প্রাণঘাতিও নয়।

মিল্ক অ্যালার্জি হলো পিনাট (চীনাবাদাম) অ্যালার্জির পর সবচেয়ে পরিচিত ফুড অ্যালার্জি। মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গরুর দুধের আমিষকে ভুল করে ক্ষতিকর মনে করে এবং বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ অবমুক্ত করে, যার ফলে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এর ফলে শ্বাসকষ্ট বা বমি বমি ভাব হয়, এবং প্রাণঘাতি প্রতিক্রিয়া অ্যানাফিল্যাক্সিসও দেখা দিতে পারে।

মিল্ক অ্যালার্জি সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অপরদিকে ল্যাকটোজ অসহনীয়তার শিকার হয় কিশোর বয়সী থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করা।

দুধে রয়েছে সবচেয়ে বেশি ল্যাকটোজ; Image Source: Just Milk

এর কি কোনো চিকিৎসা রয়েছে?

না, ল্যাকটোজ অসহনীয়তা পুরোপুরি নির্মূল করা কখনোই সম্ভব নয়। তবে ল্যাকটোজসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ সীমিত করলে কিংবা একেবারেই বাদ দিয়ে দিলে এর উপসর্গগুলো থেকে বাঁচা সম্ভব। এছাড়া আজকাল অনেকে বিভিন্ন ল্যাকটেজ সাবস্টিটিউটও গ্রহণ করছে, যেমন ড্রপ বা ট্যাবলেট, যার মাধ্যমে তাদের শরীরে ল্যাকটোজ পরিপাকে উন্নতি ঘটছে।

বেশিরভাগ ল্যাকটোজ অসহনীয় ব্যক্তিই সামান্য পরিমাণ দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার কোনো সমস্যা ছাড়াই গ্রহণ করতে পারে। তাই খাদ্যতালিকা থেকে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার পুরোপুরি ছেঁটে ফেলার বিশেষ কোনো আবশ্যকতা নেই। তাছাড়া দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার অন্য কোনো খাবারের সাথে একসাথে খেলেও সুফল পাওয়া যেতে পারে। কেননা এর ফলে হজম প্রক্রিয়া ধীরগতির হয়ে যায়, ফলে শরীরের পক্ষে ল্যাকটোজ শোষণ করা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়।

আমরা জানি, দুধে রয়েছে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম, যা শরীরের জন্য খুবই দরকারি। কেউ যদি দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার পুরোপুরি ছেড়ে দেয়, তাহলে তাকে ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের জন্য পরিপূরক অন্য কোনো খাবার খেতে হবে। যেমন- চর্বিযুক্ত মাছ, গরুর কলিজা ও ডিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি আছে। আর সবুজ পাতাযুক্ত শাকসবজি, সয়াবিন, বাদাম প্রভৃতিতে উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম রয়েছে।

সবুজ শাকসবজি খেয়ে দৈনন্দিন ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব; Image Source: Med India

অবশ্য অধিকাংশ পুষ্টিবিদই মনে করেন , বিশেষ প্রয়োজন ব্যতীত কোনো নির্দিষ্ট একটি খাদ্যগোষ্ঠীকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে দেওয়া কোনো সমাধান নয়। তবে কেউ যদি দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্য গ্রহণ একেবারেই ছেড়ে দেন, তাহলে তার শরীরে কিছু পরিবর্তন আসা অবশ্যম্ভাবী। সেসব পরিবর্তনের কিছু হতে পারে ইতিবাচক, আবার কিছু নেতিবাচক।

আরো কী কী করা যেতে পারে? 

এছাড়াও কোনো ব্যক্তি ল্যাকটোজ অসহনীয় হলে আরো কিছু বিশেষ পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। যেমন:

  • ছাগলের কাঁচা দুধ পান করা যেতে পারে। কেননা ছাগলের কাঁচা দুধ হজম করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
  • গরু বা ছাগলের দুধ দিয়ে বানানো পুরনো পনির খাওয়া যেতে পারে। কেননা এতে ল্যাকটোজের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় থাকে। পনির যত বেশি পুরনো হয়, তাতে ল্যাকটোজের মাত্রা তত কমতে থাকে।
  • ঘরে বসেই ন্যূনতম মাত্রার ল্যাকটোজ সমৃদ্ধ দই বানানো যেতে পারে।  
  • কোনো দুগ্ধজাত খাবার কেনার সময় সেটির মোড়কের লেবেলে বা উপাদানের জায়গায় দেখে নিতে হবে সেখানে ল্যাকটোজের উল্লেখ রয়েছে কি না। ল্যাকটোজের উল্লেখ থাকলে সেই খাদ্য বর্জন করতে হবে।

চমৎকার সব বিষয়ে রোর বাংলায় লিখতে আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/

This article is in Bengali language. It is about lactose intolerance, the reason why most adult people cannot digest milk. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image © HIPP Organic

Related Articles