Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গ্ল্যাডিয়েটর যোদ্ধাদের অজানা দশ কাহিনি

গ্ল্যাডিয়েটর; প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্যের দুর্ধর্ষ এ যোদ্ধারা হলিউড সিনেমার কল্যাণে একসময় বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। হিংস্র প্রাণী ও মানুষদের সাথে তাদের আমরণ লড়াই যদিও এখনো গায়ে কাঁটা দেয় অনেকেরই। শিহরণ জাগায় শরীরজুড়ে। মৃত্যুকে মুষ্টিবদ্ধ করে রুদ্ধশ্বাস এ যুদ্ধ চলতো টান টান উত্তেজনায়। আর এতেই সম্রাট ও সাম্রাজ্যের সাধারণ প্রজারা পরিতৃপ্ত হতো এক বীভৎস পৈশাচিক আনন্দে।

তবে, রোমের দুঃসাহসী এই যোদ্ধাদের নিয়ে হলিউডের মুভি-সিরিজের কাহিনীকে রাঙানো হয়েছে কিছুটা অতিরঞ্জনের ছটায়। দর্শকদের মুগ্ধ করতে দেখানো হয়েছে একটু ভিন্ন আঙ্গিকে, সাজানো হয়েছে বিবর্তিত রূপে। আর এখানেই মিথ্যার ছোট্ট এক অনন্য মিশ্রণে মিশে গেছে ইতিহাসের এক চিলতে সত্য। তাদের ঘিরে রচিত হয়েছে উদ্ভট সব কল্পকাহিনী। আজকের এ লেখায় জানবো সেই অজানা দশ কাহিনি নিয়েই

রণভূমিতে গ্ল্যাডিয়েটরদের লড়াই; Image Source: Getty Images

১. গ্ল্যাডিয়েটরদের সবাই দাস নয়

মুভি-সিরিজের রূপালী পর্দায় গ্ল্যাডিয়েটরদের দেখানো হয়েছে সাম্রাজ্যের দাস হিসেবে। যেখানে তারা বন্দী দাসত্বের নির্মম শৃঙ্খলে। আর তাই একজন দাস হিসেবে সম্রাটের আদেশ মানা একান্ত কর্তব্য। ফলে সম্রাটের আদেশে বাধ্য হয়েই তাদেরকে লড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষ ও কৃতদাসের সঙ্গে। কিন্তু এটি পুরোপুরি সত্যি নয়! কেননা, যুদ্ধে বিজয়ী প্রত্যেক গ্ল্যাডিয়েটর সম্রাটের নিকট থেকে পেত মহামূল্যবান পুরষ্কার। আর তাই, দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে মুক্তি পেতে সাধারণ মানুষ, এমনকি সাবেক দক্ষ সেনারাও নাম লিখিয়েছে গ্ল্যাডিয়েটরের খাতায়। হয়ে উঠেছে একেকজন অদম্য সাহসী যোদ্ধা।

২. খেলাটি ছিল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার একাংশ

প্রাচীন রোমানরা বিশ্বাস করতো, মৃত্যুর পর মৃতদেহের সামনে রক্ত ঝরালে মৃতের আত্মা নির্বাণ লাভ করে, মুক্তি পায় শাস্তি থেকে। আর তাই অভিজাত সম্প্রদায়ের কারও মৃত্যু ঘটলে সম্রাটের আদেশে আয়োজিত হতো এই বীভৎস খেলা। যেখানে দুঃসাহসী গ্ল্যাডিয়েটরদের বিপরীতে যুদ্ধের ময়দানে নামিয়ে দেওয়া হতো সাজাপ্রাপ্ত ভয়ংকর সব আসামীদের। সংঘটিত হতো এক রক্তক্ষয়ী বীভৎস যুদ্ধ। রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের রাজত্বকালে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এটি। সম্রাট নিজেও মৃত পিতা ও কন্যার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় ১০০ যোদ্ধার এক সুবিশাল লড়াইয়ের আয়োজন করেন।

রক্তক্ষয়ী বীভৎস যুদ্ধ; Image Source: Getty Images

৩. লড়াই মানেই মৃত্যু অবধারিত, এমন নয়

গ্ল্যাডিয়েটরদের যুদ্ধে দু’পক্ষের সংঘর্ষে একপক্ষ হারবে, পরাজয় বরণ করবে, এবং মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, মুভি-সিরিজে সাধারণত এমনটাই দেখানো হয়ে থাকে। কিন্তু রোমান ইতিহাস অনুযায়ী এটি পুরোপুরি মিথ্যে। কেননা, সম্রাটের আদেশেই নির্ধারিত হতো খেলার নির্মমতার মাত্রা ও খেলোয়াড়দের মৃত্যু। কিছু কিছু খেলা আয়োজিত হতো কেবলই আনন্দ-বিনোদনের জন্য। সেসবে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-কানুনের ভেতর দিয়ে যেতে হতো খেলোয়াড়দের। যেখানে খেলা পরিচালনায় থাকতো একজন সুদক্ষ রেফারিও। দু’জন খেলোয়াড়ের কেউ যদি মারাত্মকভাবে আহত হতো, তখনই তিনি খেলা থামিয়ে দিতেন। তবে, কিছু খেলার নিয়মই ছিল মৃত্যু পর্যন্ত লড়াই।

৪. বৃদ্ধাঙ্গুলি নামানো মানেই মৃত্যু নয়

কলোসিয়ামের ভেতর চলমান যুদ্ধে গ্ল্যাডিয়েটরদের কেউ মারাত্মক আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তার মৃত্যু নির্ধারিত হতো সম্রাটের সিদ্ধান্তে। কখনো কখনো নির্ভর করতো দর্শকদের মতামতের উপরও। অনেকেই মনে করেন, সম্রাট তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নিচের দিকে দেখালে বিজয়ী গ্ল্যাডিয়েটর ছিন্নভিন্ন করে ফেলতো তার প্রতিপক্ষের দেহ-পিঞ্জর। কিন্তু বাস্তবে তা হতো না। কিছু ঐতিহাসিকের মতে, সম্রাটের দু’হাতের ইশারাই কেবল নির্ধারণ করতো তা। এছাড়াও, সাদা রুমালের নাড়াচাড়া রক্ষা করতো আহত গ্ল্যাডিয়েটরের জীবন।

কলোসিয়ামের ভেতর চলমান লড়াই; Image Source: Getty Images

৫. তারা একাধিক দলে বিভক্ত ছিল

কলোসিয়ামে আয়োজিত হওয়া প্রথমদিকের যুদ্ধে অভিজ্ঞ যোদ্ধাদের পূর্ববর্তী খেলার বিজয়গাঁথা সাফল্য, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার উপর একাধিক দলে বিভক্ত করা হতো। অতঃপর আয়োজিত হতো এই খেলা। পাশাপাশি, প্রত্যেক দলের যোদ্ধাকে প্রদান করা হতো ধারালো অস্ত্র ও ছোরা। এসব দলের মধ্যে সেসময় সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল থারেসেস ও মুরমিলুনস নামে দুটি দল। এছাড়াও ঘোড়ার পিঠে চড়ে ইকুইটিস নামের একদল গ্ল্যাডিয়েটর সবেগে প্রবেশ করতো রণাঙ্গনে। তখনই হর্ষধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠতো রণাঙ্গন।

৬. হিংস্র প্রাণীদের সঙ্গে লড়াই করতো

অদম্য সাহসী গ্ল্যাডিয়েটরদের ভেতর থাকা একাধিক দলের মধ্যে অন্যতম দুটো হলো ভেনাতোরেস ও বেস্টিয়ারি। দল দুটোর যোদ্ধারা হিংস্র সিংহ, কুমির, ভাল্লুক, এমনকি বিশালাকার হাতিদের সঙ্গেও যুদ্ধ করেছে। তবে, এসব খেলায় তাদের অংশগ্রহণের পূর্বে হিংস্র প্রাণী শিকার করে পূর্ণ করতে হয়েছে নিজেদের অভিজ্ঞতার ঝুলি। এভাবে কলোসিয়ামে খেলা শুরু হওয়ার মাত্র একশো দিনের মাথায় গ্ল্যাডিয়েটরদের হাতে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৯ হাজার প্রাণী!

হিংস্র হাতিদের সঙ্গেও লড়াই করেছে তারা; Image Source: Getty Images

৭. নারীরাও ছিল গ্ল্যাডিয়েটর যোদ্ধা

রোমান ইতিহাস অনুযায়ী, পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অংশগ্রহণ করতো রক্তক্ষয়ী এই খেলায়। তারাও পারদর্শী ছিল হিংস্র প্রাণীদের সঙ্গে বীভৎস যুদ্ধে। অংশ নিয়েছে অসংখ্য রণে হিংস্র প্রাণীদের বিপক্ষে। ঐতিহাসিকদের মতে, প্রথম শতাব্দীর প্রারম্ভে নারী যোদ্ধারা মেতে ওঠে এই খেলায়।

৮. রোমান সম্রাটরাও ছিলেন গ্ল্যাডিয়েটর

ইতিহাস বলে, জীবন বাজি রাখা মরণপণ এ লড়াইয়ে বেশ কয়েকজন রোমান সম্রাটও নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনে অংশ নিয়েছেন। এভাবে কখনো তারা আয়োজকের ভূমিকা থেকে নেমে এসেছেন খেলোয়াড়ের কাতারে। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন রোমান সম্রাট ক্যালিগুলা, টাইটাস ও হাড্রিয়ান। যদিও সম্রাটদের সঙ্গে যুদ্ধে গ্ল্যাডিয়েটররা হামলা নয়, কেবল আত্মরক্ষার পন্থা অনুসরণ করেছে।

গুরুত্বপূর্ণ দেয়ালে আঁকা লড়াইয়ের চিত্র; Image Source: Getty Images

৯. লাভ করতো সম্মান ও খ্যাতি

গ্ল্যাডিয়েটর যোদ্ধারা রোমান সাম্রাজ্যে কুৎসিত মানুষ হিসেবে পরিগণিত হতো। তবে, সবকিছু ছাপিয়ে সাহসী গ্ল্যাডিয়েটরদের কীর্তিও শোনা যেত রাজ্যের আনাচে-কানাচে। গুরুত্বপূর্ণ দেয়ালে আঁকা হতো তাদের চিত্র। ঝোলানো থাকতো একেকজন সফল যোদ্ধার অর্জনের গল্প। ফলে, শিশু, যুবক ও বৃদ্ধদের মুখে ধ্বনিত হতো তাদের সুনাম। যুবতীরা আকৃষ্ট হতো তাদের প্রতি।

১০. পরিশেষে ছিল এক মজবুত ভ্রাতৃত্ববোধ

হিংস্র মনোভাব নিয়ে আজন্ম যুদ্ধ করা গ্ল্যাডিয়েটরদের ভেতরও ছিল ভ্রাতৃত্ববোধ। ছিল একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও মমত্ববোধ। সেখান থেকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে গ্ল্যাডিয়েটরদের একটি সহযোগী ইউনিয়ন। আহত গ্ল্যাডিয়েটরদের সেবা-শুশ্রূষা ও নিহতদের যথাযোগ্য মর্যাদায় কবর দেওয়া ছিল এই ইউনিয়নের অন্যতম কাজ। এছাড়াও মৃতের স্ত্রী-সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্বও নিত তারা।

আহত গ্ল্যাডিয়েটরকে সেবা-শুশ্রূষা করছে তারা; Image Source: Getty Images

অদম্য সাহসী গ্ল্যাডিয়েটর যোদ্ধারা আদিম রোমান সাম্রাজ্যের এক অপ্রতিরোধ্য ঐতিহাসিক চরিত্র। তাদের প্রকৃত পরিচয় লড়াকু, দুরন্ত ও বীরত্বপূর্ণ দুঃসাহসী মানব। আর তাই চাঞ্চল্যকর মুভি-সিরিজের চিত্তাকর্ষক ভিএফএক্সের ছোঁয়ায় তাদের প্রকৃত ইতিহাসে মরীচিকার আবরণ না পড়ুক। বিকৃত না হোক সত্য ঘটনা। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ুক কেবল রোমাঞ্চকর সেসব গল্পের নিখাঁদ বর্ণনা।

Language: Bangla
Topic: Ten unknown history of Gladiator Warriors
Feature Image: Getty Images
References: All the necessary links are hyperlinked inside the article.

Related Articles