Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মানুষের মলে ২,০০০ বছরের পুরনো ইতিহাস!

অতীত নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহ অনেক আগে থেকেই। আর সেই ধারাবাহিকতা অনুসরণ করেই ধুলো, মাটি, পলি দিয়ে জমা এক টুকরো দলা নিয়ে গবেষণা করছিলেন ম্যাসাচুসেটসের আর্মহাস্টের ভূবিজ্ঞানের ছাত্র রব ডি’আঞ্জো। হাতে এক কাপ কফি নিয়ে হতাশ দৃষ্টিতে দেখছিলেন সামনে পড়ে থাকা বহু বছরের পুরনো দলাটিকে। ভেবেছিলেন, প্রায় ৭,০০০ বছর আগেকার এই ছোট্ট দলাটিই তাকে পথ দেখাবে। উত্তর নরওয়ের লফোটেন দ্বীপের লেক লাইলান্দের তলা থেকে খুঁজে পাওয়া অতি সাধারণ এই বস্তুটিই তথ্য দেবে ৭,০০০ বছর পূর্বের লেকটি কেমন ছিল সে সম্পর্কে। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি। না তেমন কোনো তথ্য পাওয়া গেল, না পাওয়া গেল ৭,০০০ বছর আগের লেকের সাথে বর্তমানের লেকের উষ্ণতা আর বৃষ্টিপাতের পরিমাণের কোনো সংযোগ।

কী আর করা! একটা সময় পর হাল ছেড়ে দিলেন রব। কিন্তু হঠাৎ কী মনে হতেই নড়েচড়ে বসলেন তিনি। এবার আর নিজের পড়াশোনা কেন্দ্রিক জ্ঞান দিয়ে নয়, প্রাচীন দলাটিকে বুঝতে তিনি সাহায্য নিলেন রসায়নের। খুব বেশি সময় লাগলো না। খানিক বাদেই বুঝতে পারলেন তিনি, তার সন্দেহটা ঠিক ছিল। আর দশটা সাধারণ মাটির দলা নয়, প্রাচীন এই দলাটি আসলে মানুষের মল! তা-ও আবার আজ কিংবা কালকের নয়, প্রাচীন এই ফেকাল স্টেরলটি প্রায় ২,০০০ বছর আগের!

প্রাচীন মানব মল; Source: picquery

নিতান্তই তুচ্ছ একটি বস্তু। কিন্তু সেটাও যে কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝতে সময় লাগলো না ডি’আঞ্জোর। বিশেষ করে, মলের এই অবশিষ্টাংশ সে সময়ের মানুষ এবং পরিবেশের উপরে তাদের কতটা প্রভাব ছিল তা সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে, সেটা বুঝে ফেলেছিলেন তিনি।

আরো অনেকটা সময় কাটান ডি’আঞ্জো ফেকাল স্টেরলটি নিয়ে। তারপর তার প্রাপ্ত তথ্য প্রকাশ করেন একটি জার্নালে। হ্যাঁ, ব্যাপারটি অন্যরকম ছিল। এর আগে মানুষ কখনো মানুষের মলের উপর এতটা জোর দিয়েছে, সেটাকে এভাবে ব্যবহার করেছে, তার নজির নেই। তবে নতুন নজির তৈরি করতে সমস্যা কোথায়?

লাইলান্দ লেকে চলছে ইতিহাসের খোঁজ; Source: Popular Science

লেকের তলার পলি এর আগেও নানাভাবে মানুষের অতীত সম্পর্কে জানতে সাহায্য করেছে প্রাচীন পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের। তারা প্রাচীন মানুষগুলোকে জানার জন্য বেশ কিছু উপায় বের করেছেন এরই মধ্যে। তবে সেই উপায়গুলোর মাধ্যমে পাওয়া তথ্য কতটা ঠিক আর কতটা নয়, সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এই যেমন- কোনো এক স্থানে লেকের পলি থেকে পাওয়া কয়লা আর রেণু দেখে বলা হলো যে, প্রাচীনকালে উক্ত স্থানের মানুষ শস্য ফলাতে এবং আগুন জ্বালাতে পারতো। তবে এর বিপরীতেও কথা বলা যায়। রেণু উড়ে আসতে পারে অন্য কোনো স্থান থেকে। আর আগুন, সেটা প্রাকৃতিকভাবেও লাগতে পারে। তার অর্থ এই নয় যে, সেখানে মানুষ ছিল এবং তারা আগুন ধরাতে ও শস্য ফলাতে জানতো।

আর ঠিক এই কারণেই মলের এই অবশিষ্টাংশ পেয়ে যথেষ্ট উত্তেজিত হয়ে পড়েন রব ডি’আঞ্জো। কারণ মানুষের মলে ঠিক সেই উপাদানগুলো পাওয়া যাবে যেগুলো সম্পর্কে জানলে ঐ সময়ের মানুষ, তাদের খাদ্যাভ্যাস, পরিবেশ, খাবারের পরিমাণ ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়। এর আগে অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মল থেকে নানা রকম তথ্য জেনেছেন বিজ্ঞানীরা। একেক ধরনের স্তন্যপায়ী প্রাণী একেক রকম তথ্য দিতে পারে এ ক্ষেত্রে। প্রাচীনকালে কৃষকেরা কী ধরনের শস্য উৎপাদন করত, জমিতে সার দিত কিনা- এমন অনেক ব্যাপার উঠে এসেছে সেসব গবেষণায়। এছাড়া প্রাচীন মানুষের মল থেকে তাদের বাসস্থান এবং মলত্যাগের স্থানগুলোকেও চিহ্নিত করা সম্ভব।

লফোটেন দ্বীপ; Source: EuroTravelogue

শুধু তা-ই নয়, মল থেকে প্রাচীনকালে মানুষের শারীরিক নানা রকম সমস্যা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করাটাও বেশ সুবিধাজনক। যেটা কিনা ইতিপূর্বে কেউই করার কথা ভাবেনি। ডি’আঞ্জো মলের টুকরোটিকে নিয়ে অনেকটা সময় গবেষণা করলেন। সেটার সঠিক সময়কাল বোঝার চেষ্টা করলেন। সাথে যোগ করলেন একই স্থানের আশেপাশে পাওয়া অন্যান্য প্রাণীদের মলের টুকরো। অন্য প্রাণীদের মল থেকে পাওয়া তথ্যগুলোকে এক করলেন তিনি। এরপর সেটার সাথে পাওয়া পলিসাইক্লিক অ্যারোমাটিক হাইড্রোকার্বন ও প্ল্যান্ট অয়েক্সেস (হাইড্রোকার্বন, অ্যালকোহল, কিটন, অ্যাসিড, এস্টার ইত্যাদি যেটা দিয়ে সে সময় আশেপাশে জঙ্গল ছিল নাকি খোলা মাঠ সেটা বোঝা সম্ভব) এর সময়কাল যোগ করে দেখলেন। মানুষের মল, প্রাণীদের মল এবং অন্য সব তথ্য থেকে একটি ফলাফলে এসে পৌঁছালেন তিনি।

এসব তথ্য-উপাত্ত আর গাছের গুড়ির উষ্ণতার তথ্য নিয়ে যখন এক করলেন ডি’আঞ্জো, পুরো গল্পটাই পরিষ্কার হয়ে উঠলো তার কাছে। গত প্রায় ৪,০০০ বছর বা তারও আগে মানুষের ফেকাল স্টেরলের পরিমাণ এবং তাতে হাইড্রোকার্বনের পরিমাণ যথেষ্ট কম পাওয়া যায়। সেসময় আশেপাশে গাছের গুঁড়ির পরিমাণটাও ছিল অনেক বেশি। চারপাশের এলাকা ছিল জঙ্গল। তবে ২,২৫০ বছর আগে ফেকাল স্টেরল এবং হাইড্রোকার্বন- এ দুটো ব্যাপারই বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে চারপাশের জঙ্গলের পরিমাণও কমে যেতে থাকে। এরপরে ফেকাল স্টেরলে নানা রকম পরিবর্তন আসে। ঠান্ডা এবং উষ্ণ আবহাওয়ার উপরে ভিত্তি করে পরিবর্তনগুলো আসতে থাকে।

ঠান্ডা আবহাওয়ায় চাষের পরিমাণ কমে গেলে স্টেরলের স্তর কমে গিয়ে আবার উষ্ণ আবহাওয়ায় সেটা বেড়ে যাওয়া- এ দুটো ব্যাপারই বেশ লক্ষণীয় ছিল এই পর্যায়ে। এরপর চোখে পড়ার মতন পরিবর্তন দেখা দেয় ৫৫০ অব্দে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে স্ক্যান্ডিনেভিয়াতে প্রচুর পরিমাণে অভিবাসী তৈরি হয়। এতে করে স্টেরল স্তরে অনেকখানি পরিবর্তন আসে। পরবর্তীতে এই স্টেরলের পরিমাণ বাড়ে, কিন্তু ১৪ শতকে ব্ল্যাক প্লেগ দেখা দিলে প্রায় ৮০ শতাংশ ক্ষেতখামার ছেড়ে সবাই পালিয়ে যায়। স্টেরল স্তরে আসে আরো পরিবর্তন।

ব্ল্যাক প্লেগের সময় সবাই ক্ষেতখামার ছেড়ে পালিয়ে যায়; Source: TeenZone Magazine

ব্যাপারটা এমন নয় যে, এই ঘটনাগুলো সব স্থানের মানুষের সাথেই ঘটেছে। শুধু তা-ই নয়, এই স্থানেও যে ঠিক ঠিক এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে সেটাও বলা সম্ভব নয়। কিন্তু তাতে কী? রব ডি’আঞ্জো নিজের মতো করে নিজের দলকে সাথে নিয়ে গবেষণা করে গিয়েছেন। কে জানে, হয়তো ছোট কোনো কিছু খুঁজতে গিয়ে নতুন কোনো তথ্যের সন্ধান পাওয়া যাবে! ইতিমধ্যেই যে স্থানটিতে ফেকাল স্টেরল পাওয়া গিয়েছে সেটার চারপাশে খুঁজতে শুরু করেছেন ডি’আঞ্জো সহ অন্যরা। প্রাচীনকালে যেখানে মানুষের মলে ফেকাল স্টেরল পাওয়াটা ছিল দুর্লভ, সেখানে এমন কোনো ঘটনার মুখোমুখি হওয়াটা তো রোমাঞ্চকর হবেই। তবে দলের সবাই কেবল এই একটি বিষয় নিয়েই উত্তেজিত নন। তারা জানতে চান বর্তমান সময়ে মানুষের মল এবং এবং প্রাচীন মানুষের মলের মধ্যে পার্থক্যগুলো কী কী। আর তাই এ দুটো বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যেই বিস্তারিতভাবে গবেষণা করার চিন্তা-ভাবনা করছেন তারা।

সামান্য একটি মাটির দলা থেকে এতকিছু হয়ে গেল। কী ভাবছেন নিজের আবিষ্কার নিয়ে রব ডি’আঞ্জো? ডি’আঞ্জোর কাছে ব্যাপারটি একটি ইতিহাসের সংরক্ষণ ছাড়া আর কিছু না।

কোনকিছু না জেনেই, প্রাচীন মানুষেরা আমাদের জন্য একটু একটু করে নিজেদের তথ্য সংরক্ষণ করছিল, মানছি তাদের সংরক্ষণের উপায়টা একটু অন্যরকম, নিজেদের মলের মাধ্যমে তথ্য দিয়ে গিয়েছে তারা আমাদের“, মন্তব্য করেন তিনি।

ফিচার ইমেজ- Vanillapup

Related Articles