Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পুরুষের ছদ্মবেশে জীবন কাটানো ৬ নারীর অজানা কাহিনী!

নারী ও পুরুষের মাঝে পার্থক্য সৃষ্টিকারী নানা বিষয়ের মাঝে অন্যতম উল্লেখযোগ্য হলো পোশাক। এছাড়া চেহারা, চুল, কণ্ঠ ও শারীরিক অবয়বের মতো নানা বিষয় তো আছেই।

বর্তমানে একজন নারী পেশাগত ক্ষেত্রে যতটা স্বাধীনতা ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করেন, আজ থেকে কয়েকশ বছর আগে সেটা কল্পনাও করা যেত না। অনেক পেশাতেই তাদের প্রবেশাধিকার পর্যন্ত ছিলো না। নিষিদ্ধ সেসব পেশায় প্রবেশ করতে তখন কোনো কোনো নারী পুরুষের সাজ পর্যন্ত নিয়েছেন। এমনকি সেই সাজেই কাটিয়ে দিয়েছেন সারাটা জীবন। তাদের মৃতদেহ সৎকারের জন্য প্রস্তুত করতে গিয়ে জানা গিয়েছিলো তাদের লিঙ্গের ব্যাপারে প্রকৃত সত্য কাহিনী। এমনই ৬ জন নারীর পুরুষ সেজে থাকার বিচিত্র কাহিনী জানানো হয়েছে আজকের এ লেখায়।

১) ব্র্যান্ডন টিনা

১৯৭২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের রাজধানী লিঙ্কনে জন্ম নেয় একটি মেয়ে। বাবা-মা শখ করে মেয়ের নাম রাখেন ব্র্যান্ডন টিনা। ছোটবেলা থেকেই মেয়েটি বেশ দূরন্ত স্বভাবের ছিলো। আত্মীয়রা তাই নামের মেয়েলি ‘টিনা’ অংশের বদলে তাকে পুরুষালি ‘ব্র্যান্ডন’ নাম ধরেই ডাকতো। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, শৈশবে একবার এক আত্মীয়ের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হয় টিনা। এরপর আর সেখানে না থেকে তিনি চলে যান নেব্রাস্কারই রিচার্ডসন কাউন্টিতে।

নতুন জায়গায় গিয়ে নিজেকে পুরোপুরি পাল্টে ফেলেন টিনা। পুরোদস্তুর পুরুষালি বেশভূষা ধারণ করেন তিনি, চলাফেরা করতে থাকেন পুরুষদের মতোই। কারাগারে সাজা ভোগ করে আসা জন লটার এবং মার্ভিন টম নিসেন নামে দুই ব্যক্তির সাথে খাতির হয় তার। এমনকি লানা টিসডেল নামে এক মেয়ের সাথেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন টিনা!

টিনা ও লানা; Source: Associated Press

মজার ব্যাপার হলো, টিনার সঙ্গী-সঙ্গিনীদের কেউই বুঝতে পারে নি যে তিনি আসলে একজন নারী। একবার চেক জালিয়াতির অভিযোগে জেলে যেতে হয় টিনাকে। তাকে জামিনে ছাড়িয়ে আনতে গিয়েছিলো তারই বান্ধবী লানা। জেলে গিয়ে টিনাকে নারীদের সেলে দেখে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায় তার কাছে। এরপর থেকে আর কোনোদিনই লানা টিনার সাথে দেখা করে নি।

টিনার এ ঘটনাটি পত্রিকায় তার আসল নাম সহ প্রকাশিত হলে জন ও মার্ভিনও জেনে যায় টিনার পরিচয়। তারা দুজনে মিলে টিনাকে ধর্ষণ করে। আইনের সাহায্য চেয়েও প্রশাসনিক জটিলতায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাই নিতে পারেন নি টিনা। একসময় সাবেক এই দুই বন্ধুর গুলিতেই প্রাণ হারাতে হয় তাকে। এরপর পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছিলো। বিচারে জনকে ফাঁসি এবং মার্ভিনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করা হয়।

২) জেমস গ্রে

১৭২৩ সালে ইংল্যান্ডের ওরচেস্টারে জন্ম হয় হান্নাহ স্নেলের। ছোটবেলায় ছেলেদের মতো যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলার নেশা ছিলো তার। ১৭৪৪ সালে জেমস সামস নামে এক লোকের সাথে বিয়ে হয় হান্নাহর। বিয়ের দু’বছরের মাথায় তাদের ঘর আলো করে আসে এক কন্যাসন্তান। কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় মারা যায় মেয়েটি। এরপর হান্নাহর স্বামী তাকে পরিত্যাগ করে চলে যায়।

স্বামীকে খুব ভালোবাসতেন হান্নাহ। তার স্বামীর এক ভাই ছিলো জেমস গ্রে নামে। জেমসের কাছ থেকে নিজের নিরাপত্তার জন্য পুরুষদের একটি স্যুট নিয়ে তিনি বেরিয়ে পড়েন স্বামীর খোঁজে। তখনই তিনি নিজের নাম হান্নাহ স্নেল থেকে পাল্টে করে নেন জেমস গ্রে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, একসময় হান্নাহ জানতে পারেন, খুনের দায়ে তার স্বামীর প্রাণদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

হান্নাহ স্নেল; Source: thefemalesoldier.com

এরপর আর বাড়ি না ফিরে হান্নাহ চলে যান পোর্টসমাউথে, জেমস গ্রে নামে যোগ দেন রয়্যাল মেরিনে। পরবর্তী সময়ে তিনি দু’বার যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। এ দুটি যুদ্ধ মিলিয়ে মোট ১১ বার পায়ে এবং ১ বার কুঁচকিতে আঘাত পেয়েছিলেন তিনি। তবে কুঁচকির অপারেশনের সময় কীভাবে তিনি নিজের লিঙ্গের ব্যাপারটি ম্যানেজ করতে পেরেছিলেন তা আজও জানা যায় নি।

পরবর্তীতে ১৭৫০ সালে তার ইউনিট ফিরে এলে তিনি তাদের কাছে নিজের প্রকৃত পরিচয় প্রকাশ করেন। সংবাদপত্রে তাকে নিয়ে খবর বেরোয়। তিনি পেনশনের জন্য আবেদন করেন এবং বিস্ময়করভাবে সেটা পেয়েও যান। সামরিক বাহিনী তাকে তার কাজের স্বীকৃতিও দিয়েছিলো।

৩) পিটার হ্যাগবার্গ

১৭৫৬ সালে সুইডেনের ফিনারোদয়াতে জন্ম হয় ব্রিটা নিলসডটারের। ১৭৮৫ সালে অ্যান্ডার্স পিটার হ্যাগবার্গ নামে এক সেনাকে বিয়ে করেন ব্রিটা। বিয়ের অল্প কিছুদিনের মাথায় রুশো-সুইডিশ যুদ্ধে অংশ নিতে ডাক পড়ে অ্যান্ডার্সের। স্বামী চলে গেলে একসময় ব্রিটা বুঝতে পারেন, স্বামীকে ছেড়ে থাকা তার পক্ষে আসলে সম্ভব নয়। তাই পুরুষদের বেশ ধারণ করে, নিজের নাম পাল্টে পিটার হ্যাগবার্গ করে তিনি সামরিক বাহিনীতে যোগদান করেন।

সভেন্সক্সুন্দের যুদ্ধ; Source: Wikimedia Commons

সভেন্সক্সুন্দ এবং ভাইবর্গ উপসাগরের যুদ্ধেও তিনি অংশ নিয়েছিলেন। একবার সার বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকার সময় তাদের কমান্ডিং অফিসার ‘হ্যাগবার্গ’ নাম ধরে ডাক দিলে তিনি এবং তার স্বামী দুজনই সামনের দিকে এগিয়ে যান। আর এভাবেই তারা একে অপরকে খুঁজে পান।

এরপরও তারা দুজনে মিলে আসল লিঙ্গপরিচয় প্রকাশ না করারই সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরবর্তী এক যুদ্ধে ব্রিটা আহত হলে চিকিৎসা করাতে গিয়ে সবকিছু ফাঁস হয়ে যায়। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে তাকে পেনশন এবং সাহসিকতার জন্য মেডেল দেয়া হয়েছিলো। আবার মৃত্যুর পর সামরিক মর্যাদায় তাকে সমাহিত করা হয়।

৪) অ্যালবার্ট ক্যাশিয়ার

১৮৪৩ সালে জন্ম হয় জেনি আইরিন হজার্সের। তার ইচ্ছে ছিলো সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার, কিন্তু স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো আইন। এজন্য ১৮৬২ সালে পুরুষের ছদ্মবেশে অ্যালবার্ট ক্যাশিয়ার নাম নিয়ে আইরিন নাম লেখান ৯৫ তম ইলিনয় ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে। এই রেজিমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন ভবিষ্যতের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউ. এস. গ্র্যান্ট। তারা ৪০টির মতো যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো। প্রকৃত পরিচয় লুকিয়ে রাখতে আইরিন অন্যান্যদের সাথে তুলনামূলক কম কথা বলতেন। এ থেকে অন্যরা মনে করতে থাকে যে, অ্যালবার্ট বোধহয় একাকী থাকতেই বেশি পছন্দ করে।

জেনি আইরিন হজার্স; Source: Tagg Magazine

১৮৬৫ সাল পর্যন্ত তিনি এই রেজিমেন্টের একজন যোদ্ধা হিসেবে ছিলেন। এরপর তিনি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যান। এমনকি তখনও কেউ সন্দেহ করে নি তার লিঙ্গের ব্যাপারে। চল্লিশটি বছর ধরে আইরিন গির্জার দারোয়ান, কবরস্থানের কর্মী এবং রাস্তার লাইট জ্বালানোর কর্মী হিসেবে কাজ করে গিয়েছেন। তিনি ভোট দিতেন পুরুষ হিসেবে, নিতেন সামরিক বাহিনীর ভাতাও।

১৯১০ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তার পা ভেঙে যায়। চিকিৎসা করাতে গেলে ডাক্তার তার আসল লিঙ্গ পরিচয় জেনে যান। তবে আইরিনের অনুরোধেই তা গোপন রাখা হয়। ১৯১১ সালে তিনি সৈনিকদের বৃদ্ধকালীন থাকার জায়গাতে চলে যান। সেখানে একসময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারাতে শুরু করেন। তখন একদিন তাকে গোসল করাতে নিয়ে গেলে তার লিঙ্গের ব্যাপারটি সবাই জেনে যায়।

১৯১৫ সালে মারা যান আইরিন। তার সমাধিফলকে ‘অ্যালবার্ট ডি. জে. ক্যাশিয়ার’ এবং ‘জেনি আইরিন হজার্স’- এ দুটো নামই খোঁদাই করা আছে।

৫) ডেনিস স্মিথ

উনিশ বছর বয়সী প্যারিসের বাসিন্দা ডরোথি লরেন্সের শখ ছিলো যুদ্ধ বিষয়ক সাংবাদিক হওয়ার। কিন্তু এ শখের পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার লিঙ্গ পরিচয়। তখন চলছিলো ১ম বিশ্বযুদ্ধ। যুদ্ধের ভয়াবহতা এমন পর্যায়েই পৌঁছেছিল যে পুরুষ সাংবাদিকদের জন্যও ফ্রন্ট লাইনে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো।

তারপরও নাছোড়বান্দা ছিলেন ডরোথি। তিনি কোনোভাবে দুজন সৈন্যকে রাজি করালেন যেন তারা তাকে সৈনিকদের ইউনিফর্ম এনে দেয়। সেই সাথে গায়ে রঙ মেখে শরীর তামাটে বর্ণের করে নিলেন তিনি। নকল পরিচয়পত্র বানিয়ে প্রাইভেট ডেনিস স্মিথ পরিচয়ে লাইচেস্টারশায়ার রেজিমেন্টে নাম লেখান তিনি, চলে যান সমের যুদ্ধক্ষেত্রের ফ্রন্ট লাইনেও।

ডরোথি লরেন্স; Source: Wikimedia Commons

১০ দিন পর বোধোদয় হয় ডরোথির। তিনি বুঝতে পারেন, তার প্রকৃত পরিচয় ফাঁস হয়ে গেলে তাকে সাহায্য করা লোকগুলোই বিপদে পড়বে। এজন্য তিনি নিজে থেকেই কোম্পানির প্রধানদের কাছে গিয়ে নিজের সত্য পরিচয় জানিয়ে দেন। সাথে সাথেই গুপ্তচর ভেবে তাকে বন্দী করা হয়।

সেনা কর্মকর্তারা এটা ভেবে শঙ্কিত হয়েছিলেন যে, ডরোথির এমন কর্মকান্ডের কথা প্রকাশিত হলে আরো অনেকেই হয়তো এমন প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে। সেজন্য তারা তাকে দিয়ে হলফনামায় সই নিয়ে নেয় যে, এ বিষয়ে তিনি কোনোকিছুই লিখতে পারবেন না। ফলে দীর্ঘদিন এ সম্পর্কে কিছুই প্রকাশিত হয় নি। যুদ্ধ শেষ হবার অনেক বছর পর এ বিষয়ে ডরোথির লেখা প্রকাশ পেয়েছিলো।

৬) জেমস ব্যারি

জেমস ব্যারি কাজ করতেন ব্রিটিশ আর্মির মিলিটারি সার্জন হিসেবে। ক্যারিয়ারের শেষের দিকে তিনি মিলিটারি হাসপাতালগুলোর ইন্সপেক্টর জেনারেল হয়েছিলেন। তার কর্মস্থল ছিলো ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। বলা হয়ে থাকে, তিনিই প্রথম ব্রিটিশ সার্জন, যিনি সফলতার সাথে আফ্রিকায় সিজারিয়ান সেকশন করাতে পেরেছিলেন। অপারেশনের পর মা ও সন্তান দুজনই বেঁচে ছিলো।

মজার ব্যাপার হলো, আজকের লেখার অন্যান্য নারীদের মতো জেমস ব্যারিও আসলে কোনো পুরুষ ছিলেন না। জন্মের সময় তার নাম ছিলো মার্গারেট অ্যান বাল্কলে, অর্থাৎ একজন নারী। মার্গারেটের স্বপ্ন ছিলো চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনার, যা তৎকালীন নারীদের জন্য সম্ভবপর ছিলো না। এজন্যই তার এমন ছদ্মবেশ ধারণ!

জেমস ব্যারি; Source: Wikimedia Commons

১৮৬৫ সালের ২৫ জুলাই আমাশয়ে ভুগে মারা যান মার্গারেট। তার দেহ শেষকৃত্যানুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুতকরণের দায়িত্বে নিয়োজিত ভৃত্যই সর্বপ্রথম জানতে পারেন, জেমস ব্যারি আসলে কোনো পুরুষ নন, তিনি একজন নারী!

পুরুষের বেশ ধরে থাকা নারীদের এ তালিকায় আরো আছেন বিলি টিপ্টন, শেভালিয়র ডি’ইয়ন, মালিন্ডা ব্লালক, ম্যারিনাস, হেলেন ক্লার্ক, ফ্লোরেনা বুডউইন প্রমুখ।

ফিচার ইমেজ- Youtube

Related Articles