Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাডলফ তোলকাচেভ: দ্য বিলিয়ন ডলার স্পাই (শেষ পর্ব)

সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ফ্যাজোট্রনে রাডার বিশেষজ্ঞ হিসেবে চাকরি করতেন অ্যাডলফ তোলকাচেভ। কিন্তু সোভিয়েত সরকারের নিপীড়নের শিকার হয়ে স্ত্রী নাতাশার বাবা-মায়ের পৃথিবী ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় একসময় সিআইএ এর ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ট বনে যান তোলকাচেভ। যার কাছে থেকে সিআইএ পেয়েছিল সোভিয়েত সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সব নথিপত্র। তোলকাচেভের সাধারণ প্রকৌশলী থেকে অসাধারণ এক গোয়েন্দা হওয়ার সত্য ঘটনার চার পর্বের আর্টিকেলের আজ থাকছে শেষ পর্ব।

শেষের শুরু

কয়েক বছরের মধুচন্দ্রিমার অবসান ঘটে ১৯৮৩ সালের শরৎ থেকে। তখন থেকে তোলকাচেভ ও সিআইএ এর মধ্যে যোগাযোগে একের পর সমস্যা শুরু হয়। এবং সেই সময় থেকে তোলকাচেভ আটক হওয়ার আগপর্যন্ত তার দেওয়া তথ্যের যোগান অনেকাংশে কমে যায়।

১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের শুরুর দিকে পাঁচবার সাক্ষাতের সময়সূচি ঠিক করেও কেস অফিসারের সাথে দেখা করতে পারেননি তোলকাচেভ। এর মধ্যে তিনবার তিনি নিজেই আসতে পারেননি। আর দুবার কেজিবির কঠোর নজরদারির কারণে সিআইএ কোনো কেস অফিসার পাঠাতে পারেনি। পরে তোলকাচেভ জানান, তিনি ছোট কিন্তু অবহেলা করার মতো নয় এমন কিছু কারণে আসতে পারেননি। তবে বাকি দুবার তিনি দেখা করার স্থানে এসেছিলেন। কিন্তু কেস অফিসারকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।

অ্যাডলফ তোলকাচেভ; Image Source: Tolkachev Family  

অবশেষে নভেম্বরের মাঝামাঝিতে কেস অফিসার ও তোলকাচেভের সাক্ষাত হয়। আবার সাক্ষাত হওয়ায় তোলকাচেভ আগের চেয়ে স্বস্তিবোধ করছিলেন। সেদিন তিনি হাতে লেখা ১৬ পৃষ্ঠার নোট দেন। এছাড়া আর কিছুই তিনি সেদিন দিতে পারেননি। কারণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার কারণে তিনি কোনো ডকুমেন্টের ছবি তুলতে পারেননি।

সেদিন কেস অফিসার তোলকাচেভকে নিরাপত্তার বিষয়ে বিস্তারিত একটি নোট, দুটি ছোট গোপন ক্যামেরা, একটি লাইট মিটার, কিছু দামি গহনা, কিছু ফিকশন ও আর্কিটেকচারের বই এবং তাদের কিছু তথ্যের চাহিদাপত্র দেন। এরপর তারা পরবর্তী সাক্ষাতের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সেরে দুজন বিদায় নেন।

তোলকাচেভের নিরাপত্তা হুমকি

তোলকাচেভের দেওয়া নোট পড়ে সিআইএ কর্মকর্তারা হতবাক হয়ে যান। কারণ তাদের এজেন্ট বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকির মধ্যে পড়ে গেছেন। তিনি যেকোনো মুহূর্তে আটক হতে পারেন। তোলকাচেভ তার নোটে বলেন, এপ্রিল থেকে তাদের অফিসে একটি তথ্য ফাঁসের বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। একটি সোভিয়েত যুদ্ধবিমানের টার্গেট রিকগনিশন সিস্টেমের তথ্য ফাঁস হওয়ার খবর পাওয়ার পরই সেখানকার উপরমহল থেকে তদন্ত শুরু করা হয়।

তদন্তের শুরুতেই কেজিবি এই তথ্যে কাদের প্রবেশাধিকার রয়েছে তাদের তালিকা চায়। এতে তোলকাচেভ বেশ ঘাবড়ে চান। কারণ এই তথ্য এর আগের মাসেই সিআইএ এর কাছে পাচার করেছেন তিনি। তদন্তের খবর শোনার পরের দিনই তোলকাচেভ অফিস থেকে ছুটি নেন। এরপর তিনি তার বাগানবাড়িতে চলে যান। সাথে করে এসপিওনাজের সকল সরঞ্জাম নিয়ে যান। এর মধ্যে পেন্টাক্স ক্যামেরা, টাকা, বইসহ সিআইএ এর দেয়া প্রায় সবই ছিল।

বাগানবাড়িতে গিয়ে তিনি যেসব জিনিস পোড়ানোর মতো সেগুলো পুড়িয়ে ফেলেন। আর ধাতব বস্তুগুলো মস্কো ফেরার পথে গাড়ি থেকে ছুড়ে ফেলে দেন। এই ঘটনার পর থেকে তিনি সবসময় সাথে করে বিষের বড়ি রাখতেন। কারণ তিনি জানতেন যেকোনো সময় তাকে আটক করা হতে পারে। এমনও হতে পারে তার অফিসের প্রধান তার কক্ষে ডেকে নিয়েও কেজিবির হাতে তুলে দিতে পারেন। তখন তিনি যেন অন্তত বিষের বড়ি খেয়ে আত্মহুতি দিতে পারেন।

এরপর কয়েকদিন কেটে যাওয়ার পর তোলকাচেভ সিআইএকে জানান আপাতত তিনি কোনো ডকুমেন্টসের ছবি দিতে পারবেন না। তবে নিজের হাতে লেখা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের নোট দিতে পারবেন। এপ্রিলের এই ঘটনার পর কেস অফিসারের সাথে তার সাক্ষাত হয় সেপ্টেম্বরে। তখন তাকে একদম স্বাভাবিকই দেখাচ্ছিল। কেস অফিসারকে তোলকাচেভ জানান, তিনি কাজ চালিয়ে যাবেন। যদি তাকে এজন্য মৃত্যুবরণ করতে হয়, তবু তার কোনো আপত্তি নেই৷

এদিকে হেডকোয়ার্টার থেকে মস্কো শাখাকে জানানো হয়, এপ্রিলে তোলকাচেভের অফিসে তদন্ত হলেও তারা জুনের আগে তার পাঠানো সেই তথ্য কাউকে দেননি। কিন্তু বিষয়টি কিভাবে ফাঁস হলো তা তারা বুঝতে পারছেন না। এর পরের কয়েকমাস তোলকাচেভের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। এবং তার সাথে বছরে মাত্র দুবার দেখা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সেই সাথে হেডকোয়ার্টার থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় তিনি যেন আর কখনো কোনো ডকুমেন্টস বাসায় না নিয়ে যান। এর চেয়ে তিনি অফিসে যা পড়বেন, তা বাড়িতে এসে লিখে রাখলেই হবে। পরে তাকে আবারো একটি মিনিয়েচার ক্যামেরা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। যদি তিনি নিরাপদ মনে করেন একমাত্র তখনই ক্যামেরা ব্যবহার করে ছবি তুলবেন।

অ্যাডলফ তোলকাচেভ: দ্য বিলিয়ন ডলার স্পাই; Image Source: David E. Hoffman 

এরপর ১৯৮৪ সালের এপ্রিলে কেস অফিসারের সাথে তোলকাচেভ দেখা করেন। তখন তিনি কেস অফিসারকে ছবি ভর্তি মিনিয়েচার ক্যামেরা ও ৩৯ পৃষ্ঠা নিজের হাতে লেখা নোট দেন। সেই সাথে তিনি একটি সোভিয়েত রাডারের বিস্তারিত ৯৬টি ছবিতে ধারণ করে সিআইএকে তুলে দেন।

সেই বৈঠকে তোলকাচেভকে আরো দুটি নতুন স্পাই ক্যামেরা, যোগাযোগের পরিকল্পনার নোট, কিছু ঔষধ, কয়েকটি বই এবং এক লাখ রুবলের বেশি নগদ অর্থ দেওয়া হয়। এরপর তোলকাচেভ আরেকটি নতুন ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরা দিতে বলেন। কারণ আগের ক্যামেরাটি তিনি নষ্ট করে ফেলেছেন। কিন্তু আগের বছরের হঠাৎ করে শুরু করা সেই তদন্ত নিয়ে পরে আর দৃশ্যমান কোনো নজরে পড়েনি। এ কারণে তিনি আবারো পেন্টাক্স ক্যামেরায় ছবি তুলতে চেয়েছিলেন। তখন তাকে ক্যামেরার বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু না বলে দেশত্যাগের প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি সেদিন আবারো তা নাকচ করে দেন।

১৯৮৪ সালের এপ্রিল থেকে অক্টোবরের প্রথমভাগ পর্যন্ত তোলকাচেভের নিরাপত্তা ও তার কাজের মধ্যে ভারসাম্য আনার জন্য সিআইএ বিভিন্নভাবে পরিকল্পনা করতে থাকে। তবে তোলকাচেভের নিরাপত্তাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ কারণে সিআইএ তাদের এজেন্টকে পেন্টাক্স ক্যামেরা দিতে অসম্মতি জানায়। কারণ বাসায় নিয়ে ডকুমেন্টসের ছবি তোলার কাজটি তাদের কাছে নিরাপদ মনে হয়নি।

একই বছরের অক্টোবরে কেস অফিসারের সাথে বৈঠকের সময় দুটি মিনিয়েচার ক্যামেরা ফেরত দেন। যার মধ্যে পুরো ৯০টি ফ্রেম ভর্তি ছবি ছিল। এরপর কেস অফিসার তাকে আরো তিনটি মিনিয়েচার ক্যামেরা দেন নতুন ছবি তোলার জন্য। এছাড়া তোলকাচেভের কিছু ঔষধ ও তার ছেলের জন্য আর্কিটেকচারাল ড্রয়িংয়ের কিছু সরঞ্জাম দেওয়া হয়।

সেই বৈঠকে তোলকাচেভ তাকে আবারো ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরা দিতে বলেন। মস্কোর সিআইএ শাখা ইচ্ছার বিরুদ্ধে সম্মতি জানান। কারণ তাদের ধারণা ছিল তারা বারবার নাকচ করলে তোলকাচেভ নিজেই দোকান থেকে ক্যামেরা কিনতে পারেন। এ কারণে তাকে খুশি করার জন্য ৩৫ মিলিমিটার ক্যামেরা দিতে সিআইএ রাজি হয়। তবে তারা শর্ত দেয় পরের সাক্ষাতে তাকে দুটি মিনিয়েচার ক্যামেরায় ছবি তুলে ফেরত দিতে হবে।

তোলকাচেভের সাথে সিআইএ আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করে। বছরের শেষ দিকে তার পারিশ্রমিকের উপর প্রাপ্ত মুনাফার পুরো অর্থ তাকে প্রদান করতে হবে কি না তা জানতে চাওয়া হয়। তার নামে যখন এক মিলিয়ন ডলারের বেশি বন্ড ছিল। এর থেকে ৮.৫ শতাংশ হারে পাওয়া মুনাফাও কম ছিল না। তোলকাচেভ তখন পুরো অর্থ নিতে আগ্রহী ছিল না। কারণ এর আগে তাকে অনেক রুবল পোড়াতে হয়েছে।

১৯৮৫ সালের জানুয়ারি মাসে আবারো কেস অফিসার ও তোলকাচেভ মিলিত হন। এবার তিনি তিনটি মিনিয়েচার ক্যামেরা ও হাতে লেখা ১৬ পৃষ্ঠার নোট সরবরাহ করেন। আর কেস অফিসার তাকে আরো পাঁচটি মিনিয়েচার ক্যামেরা দেয়। পাশাপাশি কিছু গোয়েন্দা সরঞ্জাম, এক লাখ রুবল, রুশ ভাষার তিনটি বই এবং তোলকাচেভের আগে দেওয়া কিছু নোট ফেরত দেওয়া হয়। নোটগুলো তোলকাচেভ নিজেই ফেরত চেয়েছিলেন।

সেই বৈঠকে তোলকাচেভ অনেক ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের চাহিদা দিয়ে দেন। এছাড়া তাকে কেন পেন্টাক্স ক্যামেরা দেওয়া হচ্ছে না সে সম্পর্কে জানতে চান। কারণ তখন তাকে তার অফিসের পাশের ভবনের টয়লেটে গিয়ে ছবি তুলতে হতো। ভবনটি তার প্রতিষ্ঠানের হলেও কাজটি বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

মিনক্স স্পাই ক্যামেরা; Image Source: Shuterbug

সেই বৈঠকে তোলকাচেভ যে ছবিগুলো দিয়েছিলেন তা পুরোপুরি ঝাপসা ছিল। কিন্তু যেসব ডকুমেন্টসের ছবি তুলেছিলেন সেসব খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এ কারণে মার্চে সিআইএ তোলকাচেভের সাথে দেখা করার চেষ্টা করে। এর আগেই তাকে আবারো ডকুমেন্টগুলোর ছবি তুলতে বলা হয়।

কিন্তু এরপর কেস অফিসার ও তোলকাচেভের একাধিক সাক্ষাত বাতিল হয়ে যায়। মার্চে টানা তিনবার তোলকাচেভের সাথে দেখা করার চেষ্টা করে সিআইএ এর কেস অফিসার। কিন্তু বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা সম্ভব হয়নি।

কেজিবির হাতে যেভাবে আটক হন তোলকাচেভ

১৯৮৫ সালের ৫ জুন, মাসের প্রথম সাক্ষাতের দিন ছিল সেদিন। তোলকাচেভও সেদিন দেখা করার জন্য প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু কেজিবির কঠোর নজরদারির কারণে সেদিন কেস অফিসারের আসতে পারেননি। সিআইএ এর পক্ষে সেদিন আরেকজন কেস অফিসার পাঠানোও সম্ভব ছিল না। এ কারণে সেদিন আর সাক্ষাত করা সম্ভব হয়নি।

এরপর ১৩ জুন, আবারো দেখা করার জন্য সময় নির্ধারণ করা ছিল। সেদিন নজরদারি না থাকায় কেস অফিসার আগে থেকে ঠিক করা জায়গায় উপস্থিত হন৷ সেখানে তেমন কেউ ছিলেন না। শুধু দূরে একটি রেডিও ট্যাক্সি ফোনে এক মহিলা জোরে জোরে কথা বলছিলেন। এরপরই হঠাৎ করে ১২-১৩ জন কেজিবি সদস্য কেস অফিসারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তারা সবাই পাশে একটি ঝোপে লুকিয়ে ছিলেন।

এরপর সেখানে কেজিবির আরো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা হাজির হন। সেখা থেকে কেস অফিসারকে কেজিবি প্রধান কার্যালয় লুবিয়াঙ্কায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাকে শারীরিকভাবে আঘাত করা না হলেও তার দেহে ব্যাপকভাবে তল্লাশি করা হয়। তার কাছে থেকে পাঁচটি ক্যামেরা, চার পৃষ্ঠার একটি নোট, যেটি তিনি তোলকাচেভকে ফেরত দিতে চেয়েছিলেন এবং কিছু বই, পেন্সিল ও ঔষধ উদ্ধার করা হয়।

কেস অফিসারকে আটক করার পরই যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে খবর দেওয়া হয়। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে কেস অফিসার মুখ না খোলায় তাকে গভীর রাতে ছেড়ে দেওয়া হয়। এবং তার পরের সপ্তাহেই তাকে মস্কো ছাড়তে বাধ্য করা হয়।

এদিকে কেস অফিসারকে আটকের চার দিন আগেই তোলকাচেভকে আটক করা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালের ৯ জুন, তোলকাচেভ যখন তার বাগানবাড়ি থেকে ফিরছিলেন তখন তাকে আটক করা হয়। আটক করার সাথে সাথে তার সব জামাকাপড় ছিড়ে ফেলা হয়, যাতে আত্মহত্যা করার মতো কোনো সুযোগ না পান। সেদিন তোলকাচেভের কাছে কোনো বিষের বড়িও ছিল না। জুনে আটক করা হলেও সেপ্টেম্বরের আগে তা নিশ্চিত করা হয়নি। 

তোলকাচেভ যেভাবে আটক করা হয়েছিল; Image Source: The Melton Archive 

তোলকাচেভ নিজের কোনো ভুলে ধরা পড়েননি। তাকে কেজিবির হাতে তুলে দেন সিআইএতে কাজ করা সাবেক এক কর্মী। যার নাম এডওয়ার্ড লি হাওয়ার্ড। তিনি তোলকাচেভের বিষয়ে জানতেন। কারণ তাকে এই অপারেশনে কেস অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া কথা ছিল। কিন্তু তার কিছু খারাপ রিপোর্টের কারণে ১৯৮৩ সালের এপ্রিলে তাকে সিআইএ থেকে বরখাস্ত করা হয়।

এরপর তিনি এর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবেন। ১৯৮৫ সালের এপ্রিলে তিনি ভিয়েনায় গিয়ে কেজিবির সাথে দেখা করে তোলকাচেভের বিষয়ে তথ্য দেন। তবে সিআইএ মনে করে লি হাওয়ার্ড তোলকাচেভের সাথে বেঈমানি করেননি। তবে তিনি কেজিবিকে প্রাথমিক কিছু তথ্য দিয়েছিলেন। আর নামধাম জানিয়েছিলেন অলড্রিক এমস, যিনি সিআইএতে কাজ করলেও কেজিবির ডাবল এজেন্ট ছিলেন।

বিচারের কাঠগড়ায় তোলকাচেভ; Image Source: Gary Nevillegasm 

এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা তাস খবর প্রকাশ করে যে অ্যাডলফ তোলকাচেভের বিচার সম্পন্ন হয়েছে। তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং ২৪ সেপ্টেম্বর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

তোলকাচেভকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলেও তার স্ত্রী ও সন্তানকে কখনো আটক করে জেলে রাখার মতো খবর পাওয়া যায়নি। তোলকাচেভ শুরু থেকেই চেষ্টা করেছেন তার কৃতকর্মের জন্য তার পরিবারের সদস্যদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়। এদিকেও তিনি পুরোপুরি সফল। তার ছেলে ওলেগ তোলকাচেভ বর্তমানে রাশিয়ার একজন খ্যাতিমান স্থাপতি।

তোলকাচেভের ভূমিকা সিআইএ কতটুকু মূল্যায়ন করে?

অ্যাডলফ তোলকাচেভ সিআইএকে সোভিয়েত ইউনিয়নের মিসাইল, যুদ্ধবিমান এবং বিভিন্ন রাডার সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিলেন, যে তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আগে কখনোই ছিল না। তোলকাচেভ যুক্তরাষ্ট্রকে সোভিয়েত ইউনিয়নের আর-২৩, আর-২৪, আর-৩৩, আর-২৭, আর-৬০ এবং এস-৩০০ মিসাইল সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দিয়েছিলেন। আর যুদ্ধবিমানের তালিকায় ছিল মিগ-২৯, মিগ-৩১, মিগ-২৫ এবং সুখোই এসইউ-২৭।

ইউএস এয়ার ফোর্সের ভাষ্যমতে, তোলকাচেভ তাদের যেসব তথ্য দিয়েছিলেন সেসবের আর্থিক মূল্য দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি। যেখানে তার পেছনে খরচ হয়েছিল এক মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কিছু বেশি। যদিও তার সবই তোলকাচেভ পাননি। তোলকাচেভকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর স্ত্রী নাতাশা সিআইএকে বাকি পারিশ্রমিক পরিশোধ করার জন্য চিঠি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই চিঠির উত্তর তিনি কখনোই পাননি।  

তবে শুরু থেকেই সিআইএ এর কর্তাব্যক্তিরা তোলকাচেভের দেওয়া তথ্যের প্রশংসা করেছেন। কারণ তার দেওয়া তথ্যগুলো ছিল অনন্য। তোলকাচেভের দেওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করেই ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বরে ইউএস এয়ার ফোর্স তাদের একটি যুদ্ধবিমানের ডিজাইন পুরোপুরি পাল্টে ফেলে।

তখন সিআইএ থেকে বলা হয়েছিল যদি কোনো সোভিয়েত সরকার জেনেও যায় যে তাদের যুদ্ধবিমানের সব তথ্য আমাদের হাতে, তখন তাদের পক্ষে জরুরি ভিত্তিতে তেমন কিছুই করার থাকবে না। কারণ সেসব যুদ্ধবিমান ও মিসাইলগুলোকে নতুনভাবে গড়ে তুলতে তাদের কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগবে। এ থেকে ধারণা করা হয় স্নায়ু যুদ্ধের সময় যদি যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সরাসরি যুদ্ধ জড়িয়ে পড়তো, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র অনেকাংশে এগিয়ে থাকতো। তোলকাচেভের কাজকে সিআইএ এখনও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। সোভিয়েত এজেন্টের কাজের প্রতি সম্মান জানিয়ে সিআইএ হেডকোয়ার্টারে তার একটি ছবি টানিয়ে রাখা হয়েছে।

সিআইএ’র সদরদপ্তরে তোলকাচেভের এই ছবিটি ঝোলানো আছে; Image Source: KATHY KRANTZ FIERAMOSCA

তোলকাচেভের কাজের প্রশংসা শুধু সিআইএ করেনি। তাদের প্রতিপক্ষ কেজিবিও করেছে। কারণ তারা কখনো ভাবতেই পারেনি তাদের নাকের ডগায় বসে এমন দুঃসাহসী কাজ করার সামর্থ্য কারো আছে৷ কিংবা তারা কখনো বুঝতেই পারেনি মার্কিন দূতাবাসের জানালায় জ্বালানো কোনো বাতিও কোনো গোয়েন্দা সংকেত হতে পারে।

একুশে বইমেলা ‘২০ উপলক্ষে রোর বাংলা থেকে প্রকাশিত বইগুলো কিনতে এখনই ক্লিক করুন নিচের লিঙ্কে-

১) ইহুদী জাতির ইতিহাস
২) সাচিকো – নাগাসাকির পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এক শিশুর সত্য ঘটনা
৩) অতিপ্রাকৃতের সন্ধানে

This article is in Bangla language. It is about CIA agent Adolf Tolkachev.

Necessary references have been hyperlinked.

Featured Image Source: Gary Nevillegasm  

Related Articles