Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অ্যাগনডাইস: পুরুষের ছদ্মবেশী এক নারী চিকিৎসক

প্রাচীন এথেন্সে চিকিৎসাবিদ্যাকে পেশা হিসেবে বেছে নেবার অধিকার ছিল না নারীদের। একেবারে আইন করেই নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছিল বিষয়টি। এতে করে নারী রোগীদের যে বিভিন্ন রকমের সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো তা তো না বললেও চলে।

তো নারীদের এমন দুরবস্থা দেখে মনে মনে প্রতিবাদী হয়ে উঠলেন আরেক নারী, নাম তার অ্যাগনডাইস। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন, ডাক্তার তিনি হয়েই ছাড়বেন, সেটা আইন ভঙ্গ করেও যদি হতে হয়, তবে সেটা করেই। শেষপর্যন্ত এক ফন্দি আটলেন অ্যাগনডাইস। মাথার চুল কেটে ছেলেদের ছাট দিয়ে রওয়ানা হয়ে গেলেন মিশরের উদ্দেশ্যে, যেখানে নারীদের বেলায় এমন কোনো বিধিনিষেধ ছিল না। সেখানে গিয়ে বিদ্যার্জন করে আবার ফেরত আসেন তিনি, তবে কেবল অ্যাগনডাইস হয়ে না, বরং ‘ডাক্তার অ্যাগনডাইস’ হয়েই।

Image Courtesy: Amazon

এথেন্সে নাহয় ফিরে আসা হলো, কিন্তু সেখানে আইন তো আর পাল্টায়নি। ওদিকে নিজের স্ত্রীরোগ বিষয়ক বিদ্যাকেও তো আর অলস পড়ে থাকতে দেয়া যায় না। তাই আবারও দুটো অভিনব উপায় বের করলেন তিনি। প্রথমত, পুরুষের ছদ্মবেশেই চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যেতে লাগলেন তিনি। কিন্তু এরপরও যদি কোনো মহিলা রোগী এসে তার কাছে সমস্যা খুলে বলতে বা তার হাতে অপারেশন করাতে রাজি না হতো, তাহলে আস্তে করে জামাটা উঠিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিতেন, পুরুষের ছদ্মবেশ নিয়ে থাকলেও তিনি আসলে একজন নারী!

এতে করে মানসিকভাবে বেশ প্রশান্তি পেত সেই মহিলা রোগী। অ্যাগনডাইসের হাতে চিকিৎসা নিত নির্দ্বিধায়। এভাবেই আস্তে আস্তে পসার বাড়তে থাকে অ্যাগনডাইসের, বিশেষত মহিলা রোগীদের মাঝে।

ওদিকে সমকালীন অন্যান্য ডাক্তারদের তো তখন মাথায় হাত। “হায়, হায়! এ কী অবস্থা! কোথা থেকে এক নতুন চিকিৎসক এসে কি না আমাদের সব মহিলা রোগীদের নিয়ে নিচ্ছে!” বলা বাহুল্য, এই চিকিৎসকদের সকলেই ছিলেন পুরুষ। তারা অ্যাগনডাইসের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিলেন। অ্যাগনডাইসের অপরাধ, তিনি নারী রোগীদের প্রলুব্ধ করেন তার কাছে চিকিৎসা নিতে, যা মহান এই পেশার জন্য নিঃসন্দেহে অবমাননাকর।

নিজের পেশার মানুষদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ শুনে অ্যাগনডাইস যেন আকাশ থেকে পড়লেন। যথাসময়ে বিচারকের দরবারে হাজির হলেন তিনি। সেখানে যখন বুঝতে পারলেন শাস্তি এড়ানোর আর কোনো উপায় নেই, যেখানে তাকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে মহিলা রোগীদের সাথে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত হবার, যা আসলে তিনি একদমই করেননি, তখন তিনি আরেকবার নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করলেন। অর্থাৎ উপস্থিত সবাইকেই নিজের শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গ দেখিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তারা যা ভাবছে তা একেবারেই ভুল; তিনি নারী, পুরুষ না।

Image Courtesy: Rejected Princesses

যাক, একদিকে তো মিথ্যা অপবাদ থেকে বাঁচা গেল। কিন্তু শাস্তি এড়ানো গেল না। কারণ, তখন কথা উঠলো- আইন ভঙ্গ করে একজন নারী কেন চিকিৎসাসেবা দেবে? এর শাস্তি তো মৃত্যুদণ্ড!

এবার আর অ্যাগনডাইসের মুখে কোনো কথা ছিল না। অবশ্য তার আর কথা বলার দরকারও পড়েনি। এতদিন তার কাছ থেকে কম মহিলা চিকিৎসা নেয়নি। তারাই এবার ছুটে এলো বিচারকার্য চলাকালে। সরাসরিই বলে বসলো অ্যাগনডাইসের পাকা হাত ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে তার কৃতিত্বের কথা। বিচারক সব কিছু বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিলেন, অ্যাগনডাইসকে ছেড়ে দেয়া হবে। শুধু তা-ই না, এরপর থেকে এথেন্সে নারীদের উপর ডাক্তার হওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল সেই আইনও চিরতরে বিলুপ্ত করা হয়। আর এভাবেই সকলের জন্য এক অনুপ্রেরণা, চিরাচরিত প্রথা ভাঙার প্রতিশব্দ হয়ে ওঠেন অ্যাগনডাইস।

গল্প তো শেষ হলো। এবার আর দুটো লাইন। অ্যাগনডাইসের এই কাহিনী সত্য না হবার ব্যাপারেই অধিকাংশ ইতিহাসবিদ মতামত দেন। এর পেছনে নানা যুক্তিও আছে, যেগুলো মোটেও ফেলনা না। যেমন-

১) অ্যাগনডাইসের ব্যাপারে জানা যায় রোমান লেখক গাইয়াস জুলিয়াস হাইজিনাসের লেখা থেকে। তিনি কাহিনীটি লিপিবদ্ধ করেছিলেন ‘Fabulae’ নামক এক গল্পগ্রন্থে। সেখানে তিনি অ্যাগনডাইসের আগে এথেন্সে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ‘নারী’ কেউ ছিল না বললেও ইতিহাস বলে ভিন্ন কথা। বরং সেখানে এই পেশার সাথে নিয়োজিত নারীদের ব্যাপারে ঠিকই জানা যায় যাদের সময়কাল তারও আগে।

২) প্রাচীন বিভিন্ন সভ্যতাতেও এমন কাহিনী খুঁজে পাওয়া যায়।

৩) অ্যাগনডাইসের সমসাময়িক বিভিন্ন কাহিনীতেই এভাবে পোশাক তুলে নিজের লিঙ্গ পরিচয় প্রকাশের কাহিনী উঠে এসেছিল। ফলে এই কাহিনীকে সেসবেরই আরেকটি সংস্করণ বলে মনে করেন অনেক ইতিহাসবিদ।

৪) প্রত্নতত্ত্ববিদগণ গ্রীক উপকথায় বর্ণিত বাউবো নামক এক নারী চরিত্রের ক্ষুদ্র প্রস্তরমূর্তি খুঁজে পেয়েছেন বিভিন্ন সময়, যে কি না দেবী দিমিতারকে মুগ্ধ করতে প্রায়ই নিজের কাপড় তুলে জননাঙ্গ প্রদর্শন করত। ফলে অনেকের মতে, এমন একটি ঘটনাকে বাস্তব জগতের সাথে তুলনা করতেই হয়তো অ্যাগনডাইস চরিত্রের আগমন।

Image Courtesy: Un periodista en el Bolsillo

তবে কাহিনী এটা না। অ্যাগনডাইস নামে কেউ ছিল কি না সেটা আসলে মুখ্য বিষয় না। মুখ্য বিষয় হলো, অ্যাগনডাইস এক অনুপ্রেরণাদায়ক চরিত্র, যে চরিত্র নারীদেরকে চিকিৎসাপেশায় এগিয়ে আসার কথা বলে আসছে সেই সুপ্রাচীনকাল থেকে, সাহস যোগাচ্ছে সমাজের চোখরাঙানিকে উপেক্ষা করে নিজের স্বপ্নকে সত্যি করার সংগ্রামে ব্রতী হতে।

অ্যাগনডাইসের মতো এমনই আরেক হার-না-মানা নারী ছিলেন ‘সাচিকো’, ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় পারমাণবিক বোমা হামলায় পরিবারের সবাইকে একে একে হারিয়েও যিনি জীবনযুদ্ধ ঠিকই চালিয়ে নিয়েছেন, হয়েছেন সফল। তার সম্পর্কে জানতে পড়তে ক্লিক করতে পারেন এই লিঙ্কে:

– সাচিকো : নাগাসাকির পারমাণবিক বোমার হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া এক শিশুর জীবন সংগ্রামের সত্য ঘটনা

Related Articles