Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বিশ্বের প্রাচীন নানা বাদ্যযন্ত্র

প্রাচীনতম পরিচিত বাদ্যযন্ত্রগুলো প্রাগৈতিহাসিক যুগের, এবং সেসবের অনেকগুলো বিশ্বের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে। এই যন্ত্রগুলো প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গীত ও সংস্কৃতিকে ফুটিয়ে তোলে এবং ইতিহাস জুড়ে সঙ্গীতের বিকাশ কীভাবে ঘটেছিল তার আভাস দেয়। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থেকে জানা যায়, সঙ্গীত হাজার হাজার বছর ধরে মানব সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। প্রাচীন মিশর, গ্রীস এবং চীনের মতো সভ্যতায় সঙ্গীত ধর্মের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল এবং প্রায়শই আনুষ্ঠানিক ও আচার-অনুষ্ঠানের প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হতো।

প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রগুলো মূলত হাড়, কাঠ এবং পশুর চামড়ার মতো উপকরণ দিয়ে তৈরি বলে মনে করা হয়। এই যন্ত্রগুলো, যেমন- হাড়ের বাঁশি ও লায়ার, সঙ্গীতের সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং যুগে যুগে মানবসমাজে এগুলো যে ভূমিকা পালন করেছে তার একটি আভাস দেয়। মানুষের হাতে তৈরি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রগুলো দেখে বোঝা যায় যে সঙ্গীতের ব্যবহার একটি অতি প্রাচীন মানব আচরণ।

ইতিহাসের প্রাচীনতম বাদ্যযন্ত্রগুলোর মধ্যে দিভজে বাবে বাঁশি (Divje Babe flute) অন্যতম। এটি ১৯৯৫ সালে স্লোভেনিয়ার একটি গুহায় আবিষ্কৃত হয়। প্রায় ৬০,০০০-৮০,০০০ বছরের পুরনো এই বাঁশি ভাল্লুকের হাড়ের (ফিমার) একটি অংশ। এই বাঁশিকে বিশ্বের প্রাচীনতম বাদ্যযন্ত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে সমান দূরত্বে খোদাই করা চারটি গর্ত রয়েছে। হাড়টিও মসৃণ, এবং একে পালিশ করা হয়েছে। এটি একটি উল্লেখযোগ্য সময়ের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল। বাঁশিটি নিয়ান্ডারথাল মানবরা এটি তৈরি করেছিল বলে মনে করা হয়, এবং এর আবিষ্কার এই প্রাচীন মানব পূর্বপুরুষদের সঙ্গীত সংস্কৃতির ধারণা প্রদান করে

দিভজে বাবে বাঁশি; Image source: National Geographic

গাইসিনক্লসটার্ল গুহা (Geisenklösterle Cave) নামে এক প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান থেকে পাওয়া তিনটি বাঁশির মাঝে দুটি রাজহাঁসের হাড় থেকে তৈরি, এবং অন্যটি ম্যামথের দাঁত থেকে তৈরি। গবেষকরা অনুমান করছেন, বাঁশিগুলো ৪২,০০০-৪৩,০০০ বছরের পুরনো। এগুলো অরিগনাসীয়ের সাথে সম্পর্কিত। এটি একটি প্রত্নতাত্ত্বিক সংস্কৃতি যা ইউরোপের প্রাচীনতম আধুনিক মানুষের সাথে যুক্ত

প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রগুলোর মধ্যে একটি হলো হাড়ের তৈরি বাঁশি, যা ২০০৮ সালে দক্ষিণ জার্মানির বাভারিয়ার এক গুহায় পাওয়া যায়। হোহেল ফেলস গুহা থেকে পাওয়া গিয়েছিল বলে বাঁশিটির নাম রাখা হয় হোহেল ফেলস বাঁশি। এটি প্রায় ৩৫,০০০ বছরের পুরানো; একটি শকুনের ডানার হাড় থেকে এটি তৈরি করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। এতে পাঁচটি আঙুলের ছিদ্র রয়েছে, এবং মনে করা হয় এটি আচার ও বিনোদন উভয় উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হয়েছিল। এই আবিষ্কার ইঙ্গিত করে যে সঙ্গীত দীর্ঘকাল ধরে মানব সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করছে

হোহেল ফেলস বাঁশি; Image source: The San Diego Union-Tribune

প্রাচীন মিশরে বীণা একটি জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল। প্রাচীনতম বীণাটি রানী নিথহোটেপের সমাধিতে আবিষ্কৃত। এটি প্রায় ৩,৫০০ বছর পুরনো বলে মনে করা হয়। বীণাটি একটি প্লেকট্রাম দিয়ে বাজানো হতো। এটি একটি ছোট যন্ত্র যা তার ছিঁড়ে ফেলার জন্য ব্যবহৃত হত।

প্রাচীন মিশরের বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে বীণা (যেমন- হার্প, লায়ার) এবং ডবল ক্লারিনেট অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাচীন গ্রীসে লায়ার, কিথারা এবং আউলসের মতো বাদ্যযন্ত্রগুলো জনপ্রিয় ছিল। চীনে জুন, গুকিন ও অন্য যন্ত্রগুলো আদালত ও ধর্মীয় সঙ্গীতে ব্যবহৃত হতো।

দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের ইস্তুরিৎজ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে পাওয়া বাঁশিগুলোর বয়স প্রায় ২০,০০০-৩৫,০০০ বছর। সেখানে ২০টিরও বেশি পৃথক বাঁশির টুকরো পাওয়া গিয়েছে। এই বাঁশিগুলো বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষেরা তৈরি করেছিল, যা অরিগনাসীয়, গ্রেভটিয়ান এবং ম্যাগডালেনিয়ানদের সাথে সম্পর্কিত।

Image source: Musée Archéologie Nationale

প্রাচীন চীনাদেরও নিজস্ব বাদ্যযন্ত্র ছিল। এর নাম গুকিন, যা একটি সাত তারের জিথার। এটি প্রাচীনতম চীনা যন্ত্রগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত। এটি প্রায় ৩,০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। গুকিন শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য নয়, বরং শিক্ষা ও আধ্যাত্মিক উদ্দেশ্যেও বাজানো হতো।

জিয়াহু প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে আবিষ্কৃত হাড়ের বাঁশিগুলো চীনের বেশ পুরনো বাদ্যযন্ত্র যেগুলোর বয়স প্রায় ৯,০০০ বছর। বিভিন্ন রাজ্যের ৩৩টি বাঁশি এই স্থানে আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলোর মাঝে প্রায় ২০টি অক্ষত রয়েছে। বাকিগুলো টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। বাঁশিগুলোর মধ্যে ছয়টি সম্পূর্ণ, এবং এটি এখন পর্যন্ত পাওয়া প্রাচীনতম সচল বাদ্যযন্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়

ফেরাউন তুতেনখামুনের সমাধি থেকে যে দুটি ট্রাম্পেট পাওয়া গিয়েছে, সেগুলোও বেশ পুরনো। এগুলো ৩,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। ১৯২২ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার তুতেনখামুনের সমাধি খননের সময় এগুলো আবিষ্কার করেন।

ফারাও তুতেনখামুনের ট্রাম্পেট; Image source: Wikimedia Commons

আরেকটি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র হলো লায়ার (Lyre), যা প্রাচীন গ্রীস ও মেসোপটেমিয়ায় জনপ্রিয় ছিল। এটি একটি তারযুক্ত যন্ত্র যার একটি সাউন্ডবক্স ও একটি জোয়াল রয়েছে, যা তারগুলোকে ধরে রাখে। প্রাচীনতম পরিচিত লায়ারটি উরে পাওয়া গেছে, যা বর্তমান ইরাকে অবস্থিত। এটি প্রায় ৪,৫০০ বছরের পুরনো বলে মনে করা হয়।

লায়ার; Image source: Bright Star

আফ্রিকায় প্রাচীনতম বাদ্যযন্ত্রগুলো হলো কালিম্বা এবং এম্বিরা। এগুলো ১,০০০ বছরেরও বেশি পুরনো বলে মনে করা হয়। কালিম্বা হলো একটি থাম্ব পিয়ানো, যাতে একটি কাঠের বোর্ড থাকে, যার মধ্যে ধাতু বা বাঁশের চাবি লাগানো হয়। এম্বিরা হলো একটি প্লাক্‌ড ইডিওফোন, যা একটি কাঠের বোর্ডের সাথে সংযুক্ত ধাতব চাবি নিয়ে গঠিত, যা ঐতিহ্যগতভাবে জিম্বাবুয়ের শোনা সংস্কৃতিতে বাজানো হয়।

ঢোল আরেকটি প্রাচীন বাদ্যযন্ত্র যা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পাওয়া গেছে। প্রাচীনতম ঢোলটি আফ্রিকায় আবিষ্কৃত হয়েছে, এবং অনুমান করা হয় এটি প্রায় ৫,০০০ বছরের পুরনো। ঢোলটি একটি কাঠের ফ্রেমের উপর প্রসারিত পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি। এটি ধর্মীয় এবং আনুষ্ঠানিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো বলে মনে করা হয়

প্রাচীন ভারতে বীণা একটি জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র ছিল, এবং বর্তমানেও এর ব্যবহার দেখা যায়। বীণা মূলত একটি কাঠের বাদ্যযন্ত্র যা প্রায় ৩.৫-৪ ফুট লম্বা। প্রাচীনতম বীণাটি সিন্ধু উপত্যকায় খননকালে আবিষ্কৃত হয়, এবং এটি প্রায় ৪,৫০০ বছরের পুরনো বলে মনে করা হয়

ভারতীয় বীণা; Image source: Metropolitan Meseum of Art

এই প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রগুলোর আবিষ্কার গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রাচীন সভ্যতার সঙ্গীত-সংস্কৃতি এবং ইতিহাস জুড়ে সঙ্গীতের বিকাশের ব্যাপারে ধারণা দেয় আমাদের। এগুলো আমাদের জানায় যে সঙ্গীত হাজার হাজার বছর ধরে মানব সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এবং সময়ের সাথে সাথে বিকশিত হয়েছে। তদুপরি, এই প্রাচীন বাদ্যযন্ত্রগুলোর আবিষ্কার অতীতের নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ এবং অধ্যয়নের গুরুত্বও তুলে ধরে। এগুলো আমাদেরকে ইতিহাস এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য প্রদান করে।

Topic: Some of the ancient musical instruments and their history
Language: Bangla
References: Hyperlinked inside

Related Articles