Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোমান বাহিনীর সৈন্য সাজানোর যত কৌশল

এককালের পরাক্রমশালী রোমান সাম্রাজ্যের সফলতার এবং দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকার মূল কারিগর ছিলো তাদের সেনাবাহিনী। তৎকালে বিভিন্ন সাম্রাজ্য যখন রাজ্য জয়ের জন্য সেনাবাহিনীর সংখ্যা, দক্ষতা ও ভাগ্যের ছোঁয়ার উপর নির্ভর করতো, তখন রোমানরা এর সাথে যোগ করেছিলো আরেকটি জিনিস- ‘নিয়মানুবর্তিতা ও কৌশল’।

প্রতিটি যুদ্ধের আগে তারা শত্রুপক্ষ এবং যুদ্ধক্ষেত্র নিয়ে ঠিকমতো তথ্য সংগ্রহ করে এরপরই যুদ্ধের ময়দানে নামতো। সেই সাথে নিজেদের বাহিনীর সার্বিক অবস্থা সম্পর্কেও সদা সজাগ দৃষ্টি রাখতো তারা। এভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ফ্লেক্সিবল ওয়ার স্ট্রাটেজি তাদের যুদ্ধজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

আজ অবশ্য রোমান বাহিনীর বিস্তারিত যুদ্ধ কৌশল নিয়ে আলোচনা করতে বসিনি। বরং যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের সৈন্যদের পরিস্থিতি অনুযায়ী বিন্যস্ত করার চমৎকার কৌশল নিয়ে একটু গল্পগুজব করতে এ লেখার অবতারণা।

এখানে যে ছবিটি দেখা যাচ্ছে, এটা ছিলো তাদের সৈন্য সাজানোর সবচেয়ে সাধারণ নিয়ম। অশ্বারোহী বাহিনী থাকতো সম্মুখভাগে এবং দুই পাশে। পার্শ্ববর্তী ও সম্মুখভাগের আক্রমণ থেকে নিজ বাহিনীকে রক্ষা করার জন্যই এমনটা করা হতো। দুই পাশের অশ্বারোহী বাহিনীর মাঝে থাকতো দুই সারিতে পাঁচটি করে মোট দশটি দল। এর মাঝে সবচেয়ে ডানের দলে থাকতো প্রায় ১১০০ জন পদাতিক ও ৩০ জন অশ্বারোহী সেনা। বাকি দলগুলোতে প্রায় ৫৫০ জন পদাতিক ও ৬৫ জন অশ্বারোহী সেনা থাকতো। তাদের পেছনে থাকতো হালকা অস্ত্রে সজ্জিত সাতটি দল। সবার শেষে থাকতো রিজার্ভ বাহিনী।

উপরে যে সজ্জার কথা বললাম, এটা হতো তাদের নিশ্চলাবস্থার বিন্যাস। কিন্তু তারাই যখন কোনো যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতো, তখন এটা পাল্টে যেত ঠিক নিচের ছবির মতো।

সবার সামনে থাকতো অশ্বারোহী বাহিনী। আগের মতো এবারও তাদের কাজ হতো সামনে থেকে কোনো বিপদ আসলে তার মোকাবেলা করা। তাদের পেছনেই থাকতো পদাতিক সেনাদের বিশাল বড় এক কলাম। সেই কলামের পেছনে থাকতো রোমান বাহিনীর যাবতীয় রসদ, চাকর ও যুদ্ধযানগুলো। পশ্চাদভাগে অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণ রোধে সেখানেও থাকতো পদাতিক ও অশ্বারোহী সেনারা। আর আশেপাশে পুরো অংশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকতো হালকা অস্ত্রে সজ্জিত সেনারা। তারা মূলত স্কাউটের কাজ করতো।

নিশ্চলাবস্থা ও যুদ্ধের উদ্দেশ্যে যাত্রার পর এবার আসা যাক যুদ্ধক্ষেত্রে পরিস্থিতি অনুযায়ী কেমনভাবে রোমান বাহিনী নিজেদের সাজাতো সেই গল্পে। প্রতিটি বিন্যাসই ছবি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ফলে ইতিহাসের আগ্রহী পাঠকেরা ‘যুদ্ধ যুদ্ধ’ মুডে চলে গেলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই!

প্রথম বিন্যাস

“যদি আপনার বাহিনী শক্তি-সামর্থ্য ও সৈন্য সংখ্যা উভয় দিক থেকেই প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে থাকে, তাহলে বেছে নিন আয়তাকার বিন্যাস কৌশল।”

সমতল ভূমিতে কাজে লাগানো হতো এমন কৌশল। তবে এখানে ধরে নেয়া হতো যে, আপনার বাহিনীর ডান ও বাম ভাগ প্রতিপক্ষের চেয়ে শক্তিশালী। যদি কোনোভাবে প্রতিপক্ষ পাশে দিয়ে এগিয়ে আসতে পারে, তাহলে তাদের ঠেকানোর কাজ করবে রিজার্ভ বাহিনী। যদি দু’পাশের বাহিনী পরাস্ত হয়, তাহলে এগিয়ে যাবে মাঝখানের দলটি।

দ্বিতীয় বিন্যাস

“কেউ যদি নিজের সৈন্য সংখ্যা কম মনে করে, তবে সে যেন তার বাহিনীর ডান ভাগ দিয়ে আক্রমণ করে প্রতিপক্ষের বাম অংশকে।”

সাধারণত একজন সৈন্যের বাম হাতে ঢাল আর ডান হাতে অস্ত্র ধরা থাকতো। ঠিক এদিকে মনোযোগ দিয়ে বেছে নেয়া হয়েছিলো সৈন্য সাজানোর দ্বিতীয় এ কৌশলটি। অনেকে একে সেরা কৌশলও বলে থাকেন। রোম বাহিনীর ডানপাশের সেনারা দ্রুত বেগে এগিয়ে গিয়ে তুমুল আঘাত হানতো প্রতিপক্ষের বাম ভাগে। রোমানদের বাম অংশের সেনারা তখনও যুদ্ধে জড়াতো না। অন্যদিকে বাম ভাগ কিংবা মাঝের অংশটিকে সাপোর্ট দিতো রিজার্ভ বাহিনী।

তৃতীয় বিন্যাস

“যদি আপনার বামদিকের বাহিনীই সবচেয়ে শক্তিশালী হয়, তবে তাদের দিয়েই আক্রমণ করুন।”

অনেকটা কোণঠাসা অবস্থায় এ পন্থা বেছে নিতে বাধ্য হতো রোমান সেনাবাহিনী। যদি ডান ভাগের চেয়ে বাম ভাগের বাহিনীর শক্তি তুলনামূলক বেশি হতো, কেবলমাত্র তাহলেই এ কৌশলটি বেছে নিতো তারা। এমতাবস্থায় ডান দিকের বাহিনী কিছুটা নিরাপদ দূরত্বই বজায় রাখতো।

চতুর্থ বিন্যাস

“একজন জেনারেল যদি তার বাহিনীর শৃঙ্খলাবোধ নিয়ে সম্যক অবগত থাকেন, তাহলে তিনি যেন তার দুই পাশের বাহিনী নিয়ে একইসাথে প্রতিপক্ষের দুই অংশে আক্রমণ করেন।”

এই কৌশলের সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিলো এর আকস্মিকতা। বিশাল বাহিনী নিয়ে এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ায় প্রতিপক্ষ প্রায় সময়ই হতবুদ্ধি হয়ে যেত। তবে যদি কোনোভাবে প্রতিপক্ষ সেই আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারতো, তাহলে আবার সমস্যায় পড়তো রোমান বাহিনী। কারণ তখন প্রতিপক্ষের সমস্ত আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতো মাঝখানের বাহিনী।

পঞ্চম বিন্যাস

“যদি কোনো জেনারেলের হালকা অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী দক্ষ হয়, তবে তার উচিত হবে তাদেরকে মাঝখানের বাহিনীর সামনে নিযুক্ত করা এবং শত্রুপক্ষকে উভয় দিক থেকে আক্রমণ করা।”

যদি রোম বাহিনীর হালকা অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী এবং তীরন্দাজরা বেশ দক্ষ হতো, তাহলে এ পন্থা অবলম্বন করা হতো। এটা চতুর্থ বিন্যাসেরই কিছুটা বর্ধিত রুপ। এক্ষেত্রে মধ্যভাগের সামনে দাঁড়িয়ে তারা যেমন মাঝখানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো, তেমনি তাদের আক্রমণের তীব্রতায় পিছু হটতো প্রতিপক্ষের অগ্রগামী বাহিনী। অন্যদিকে দুই পাশের বাহিনী তো প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হতোই, যা আগে বলেছিলাম চতুর্থ বিন্যাসের বেলায়।

ষষ্ঠ বিন্যাস

“যদি কেউ তার বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা, মনোবল ও শক্তি-সামর্থ্যের উপর ভরসা করতে না পারে, তবে তিনি যেন বিপুল বিক্রমে তার ডানদিকের বাহিনী নিয়ে শত্রুর বামদিকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধন নিশ্চিত করেন।”

এ বিন্যাস অনেকটা দ্বিতীয় বিন্যাসের মতোই। কারণ এখানেও ডানদিকের বাহিনী নিয়ে আক্রমণের কথা বলা হয়েছে। তবে দুই ক্ষেত্রে রোমানদের নিজেদের বিন্যাস যে কৌশল আলাদা ছিলো তা ছবি দেখলেই বোঝা যাবে। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষ তাদের বাম অংশে সৈন্য সংখ্যা বৃদ্ধি করার সুযোগ কম পেত। কারণ তাহলে ফাঁকা জায়গায় রোমানরা আক্রমণের সুযোগ পেয়ে যেত।

সপ্তম বিন্যাস

“যদি প্রতিপক্ষের চেয়ে আপনার বাহিনীর সৈন্য সংখ্যা ও মনোবল দুই-ই কম হয়, তাহলে অবশ্যই আপনাকে এ কৌশলটি বেছে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অন্তত বাহিনীর এক অংশকে নদী, সমুদ্র, শহর কিংবা এমন কোনোকিছুর আড়ালে রাখতে হবে।”

শত্রুর সংখ্যা অত্যাধিক বেড়ে গেলে কেবলমাত্র তখনই রোম বাহিনী এ কৌশলের দ্বারস্থ হতো। তখন তাদের বাহিনীর বাম অংশকে প্রাকৃতিক কোনো প্রতিরক্ষার আশ্রয় নিতে হতো। অন্যদিকে ডান দিকের বাহিনীর সহায়তায় এগিয়ে আসতো অশ্বারোহী ও হালকা অস্ত্রে সজ্জিত বাহিনী।

এতক্ষণ ধরে তো বিশাল বাহিনী নিয়ে কথা বললাম, এবার একটু এই বিশাল বাহিনীর ভেতরে সৈন্যদলগুলো কীভাবে সাজানো থাকতো সেই আলাপে আসা যাক।

টেস্ট্যুডো (Testudo)

কচ্ছপের খোলস কতটা শক্ত হতে পারে সেই সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা আছে। এই কচ্ছপ তথা Tortoise এর ল্যাটিনই হলো Testudo। এ ফর্মেশনে সৈন্যরা নিজেদের এমনভাবে সাজাতো যে, সেটাকে কচ্ছপের খোলসের সাথে তুলনা করা মোটেও অযৌক্তিক না। কেন?


এটা বুঝতে হলে প্রথমে ছবিটায় নজর বুলিয়ে নিন। সামনে এবং পাশে থাকা সৈন্যরা তাদের ঢালগুলো এমনভাবে একের পর এক সাজিয়ে নিতো যে তাতে এক দুর্ভেদ্য দেয়াল তৈরি হয়ে যেত। ভেতরে থাকা অন্যান্য সৈন্যরা তাদের ঢালগুলো মাথার উপরে তুলে ধরতো। এভাবে সবদিক থেকেই শত্রুর নিক্ষেপ করা বিভিন্ন অস্ত্রের কাছে নিজেদের অনেকটাই অপ্রতিরোধ্য করে তুলতো রোমানরা।

বিভিন্ন দুর্গে আক্রমণের সময় শক্ত এ বিন্যাসের আশ্রয় নিতো রোমান সেনারা। বলা হয়, এই টেস্ট্যুডো ফর্মেশন এতটাই শক্তিশালী হতো যে, এর উপর দিয়ে পায়ে হাঁটা, এমনকি ঘোড়া কিংবা ঘোড়ার গাড়ি চালিয়ে নেয়াও সম্ভব ছিলো!

ওয়েজ (Wedge)

শত্রুপক্ষের প্রতিরক্ষা ব্যূহে ভাঙন ধরাতে এবং অশ্বারোহী সেনাদের বিভ্রান্ত করতে বেশ চমৎকার ছিলো ত্রিভূজাকৃতির এ ওয়েজ বিন্যাস। এখানে থাকা সৈন্যদের সাথে থাকতো ৬০-৮৫ সেন্টিমিটার লম্বা ও ০.৭-১ কেজি ভরের তলোয়ার গ্ল্যাডিয়াস (Gladius)।

গ্ল্যাডিয়াস

এ নিয়েই শত্রুর উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো তারা। সৈন্যরা খুব কাছাকাছি থাকায় দরকার পড়লেই একে অপরের সাহায্যার্থে এগিয়ে যাবার সুযোগ ছিলো।

স (Saw)

গৃহযুদ্ধের সময় মূলত এ ফর্মেশনের আশ্রয় নিয়েছিলো রোমান বাহিনী। ওয়েজ ফর্মেশনকে প্রতিরোধ করতেই এর উদ্ভব। এখানে প্রথমে একদল সৈন্যের প্রত্যেককে তিন ফুট দূরে দূরে সাজানো হতো। পরের সারিতে মাঝের ফাঁকা জায়গাগুলো আবার পূরণ করা হতো। এভাবেই তৈরি হতো স ফর্মেশন। এখানে থাকা সৈন্যরাও মূলত গ্ল্যাডিয়াস বহন করতো। তবে সেই সাথে কেউ কেউ পাইলাম (Pilum) নামক ২-৫ কেজি ভর ও প্রায় ৬ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বা একটি বর্শাও সাথে রাখতো।

পাইলাম

স্কার্মিশ (Skirmish)

এ ফর্মেশনে সৈন্যদেরকে বেশ ফাঁকা ফাঁকা করে সাজানো হতো। ফলে সৈন্যরা তাদের চলাচল ও রণকৌশল প্রদর্শনের জন্য যথেষ্ট সু্যোগ পেত। দ্রুতবেগে কোনো যুদ্ধক্ষেত্র দিয়ে এগিয়ে যাওয়া, ঝটিকা আক্রমণ চালানো এবং যুদ্ধের পর বিজয়ী রোমান বাহিনী যুদ্ধক্ষেত্র পুনঃপরিদর্শনে এ ফর্মেশনটি বেছে নিত।

অশ্বারোহী বাহিনী প্রতিরোধ

প্রতিপক্ষের অশ্বারোহী বাহিনী প্রতিরোধের জন্য রোমানদের এ কৌশল ছিলো বেশ কার্যকর। এজন্য তারা নিজেদের সামনে ঢাল আর বর্শাগুলো ধরে ছবির মতোই আত্মরক্ষামূলক ভঙ্গিতে থাকতো। এমন প্রতিরোধের সামনে এসে স্বাভাবিকভাবেই ঘোড়া থেমে যেতে চেষ্টা করতো। ঐ মুহূর্তের জন্যই আসলে অপেক্ষা করতো রোমান সেনারা। প্রতিপক্ষের অমন টালমাটাল অবস্থাতেই তারা ছুঁড়ে মারতো হাতে থাকা বর্শাটি। তাদের সাথে যদি তীরন্দাজ বাহিনী থাকতো, তাহলে তা প্রতিপক্ষের জন্য হয়ে উঠতো দুঃস্বপ্নের নামান্তর।

গোলক

যদি একটি ছোটখাট বাহিনী কোনো কারণে মূল বাহিনী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো কিংবা চারদিকে শত্রুপক্ষের ঘেরাওয়ের মাঝে পড়ে যেত- শুধুমাত্র তখনই তারা এমন গোলকাকৃতির ফর্মেশনের আশ্রয় নিত। কোনো অফিসার কিংবা তীরন্দাজ থাকতো এই গোলকের কেন্দ্রবিন্দুতে তথা মাঝের জায়গাটিতে। এটা তাদের খড়কুটো ধরে বাঁচবার শেষ প্রচেষ্টা ছিলো বলে সর্বস্ব উজাড় করে ভয়ঙ্কর রুপে আবির্ভূত হতো সেই গোলকের সেনারা।

তথ্যসূত্র

১) en.wikipedia.org/wiki/Pilum

২) en.wikipedia.org/wiki/Gladius

৩) unitedstatesmilitaryvsromanarmy.weebly.com/the-skirmishing-formation.html

৪) johnschultzproject.weebly.com/saw.html

৫) johnschultzproject.weebly.com/wedge.html

৬) roman-empire.net/army/tactics.html

৭) roman-empire.net/army/orb.html

৮) roman-empire.net/army/repel-cavalry.html

৯) primaryhomeworkhelp.co.uk/romans/formation.html

১০) historylink101.com/2/Rome/roman-army-formations.htm

১১) romanmilitary.net/strategy/legform/

Related Articles