Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

পশু-পাখিরাও যখন যুদ্ধ করেছিল মানুষের পাশাপাশি

আচ্ছা, বলুন তো, একসময় মানুষের পাশাপাশি কোন প্রাণীগুলো যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল? শুরুতেই নিঃসন্দেহে আসবে ঘোড়ার নাম। এরপর আসবে হাতি, উট, এবং কারো কারো মাথায় কবুতরের নামও ঘুরপাক খাবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়; ভালুক, বিচ্ছু, বাদুড়সহ আরো বেশ কিছু প্রাণীও মানুষের পাশাপাশি সামিল হয়েছিল যুদ্ধে। এদের মাঝে কোনোটি তো আবার অসাধারণ বীরত্বের জন্য পুরস্কারও লাভ করেছিল।

আজকের লেখায় আমরা এমনই কিছু পশু-পাখির সাথে পরিচিত হতে যাচ্ছি, যারাও মানুষের পাশাপাশি যুদ্ধে অংশ নিয়ে বহুবার নিজেদের প্রমাণ করেছে মানুষের অন্যতম যোগ্য সঙ্গী, সাহসী সহযোদ্ধা হিসেবে!

১. কবুতর

যুদ্ধক্ষেত্রে কবুতর ব্যবহারের ইতিহাস বেশ প্রাচীন। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতক থেকেই তাদের দিয়ে বার্তা আদান-প্রদান করানো হতো।

রাজ্যের দূরবর্তী অংশসমূহে শাসনকার্য ঠিকভাবে পরিচালনা করতে কবুতরের মাধ্যমে বিভিন্ন বার্তা পাঠাতেন পারস্যের রাজা সাইরাস। দিক চিনে লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারার বিষয়টি কবুতরের সহজাত একটি প্রবৃত্তি, যা পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্রের দিকের সাথে সম্পর্কিত বলে ধারণা করা হয়।

Image Source: All That’s Interesting

এই ক্ষমতার জন্যই ইতিহাসের বিভিন্ন বিখ্যাত বিজেতা, জেনারেলসহ সবারই বার্তা আদান-প্রদানের একমাত্র মাধ্যম ছিল এই পাখিটি। তবে এখানে একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। কবুতরের মাধ্যমে যোগাযোগের এই পদ্ধতিটি কিন্তু একমুখী ছিল। সাধারণত, যেখানে একে ব্যবহার করা হবে সেখানে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হতো মানুষের তত্ত্বাবধানেই। পরবর্তীতে দরকারি বার্তা নিয়ে কবুতরগুলো তাদের বাড়িতে ফিরে আসতো।

১৮৭০-৭১ সালে প্রুসিয়ান বাহিনীর হাতে প্যারিস প্রায় চার মাসের মতো অবরুদ্ধ ছিল। তখন স্বদেশবাসীর সাথে যোগাযোগ করতে প্যারিসের নাগরিকেরা এই কবুতরের উপরই নির্ভরশীল ছিল। যুদ্ধক্ষেত্রে কবুতরের ব্যবহার অতীতের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়। তখন কেবলমাত্র মিত্রপক্ষই ২ লাখের মতো কবুতর কাজে লাগিয়েছিল।

প্রশিক্ষিত এই কবুতরগুলোর মাঝে বিখ্যাত হয়ে আছে ‘চের আমি’ নামের এক কবুতর। উত্তর ফ্রান্সের ভার্দুন অঞ্চলের বিভিন্ন দুর্গের মাঝে ১২ বার বিভিন্ন বার্তা আদান-প্রদান করে সে অর্জন করেছিল ফ্রান্সের Croix de Guerre পদক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডি-ডে’র সময় সাহসিকতার সাথে বার্তা আদান-প্রদানের জন্য ৩২টি কবুতরকে ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে ডিকিন পদক দেয়া হয়েছিল।

২. ভালুক

যুদ্ধের ইতিহাসে ভালুকের ব্যবহারের কথা খুব একটা শোনা যায় না। তবে একটি ভালুকের কথা বিশেষ করে বলতেই হয়, যার নাম ভয়তেক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানদের বিরুদ্ধে বেশ সাহসীকতা প্রদর্শন করেছিল সে।

বাদামী রঙের সিরীয় এই ভালুকটিকে ইরানে দায়িত্ব পালনকালে নিজেদের সাথে নিয়ে নেয় একদল পোলিশ সেনা। ভদকার বোতল থেকে কনডেন্সড মিল্ক পান করে আর বিয়ার গিলতে গিলতে বড় হতে থাকে ভয়তেক। পরবর্তীতে এই পোলিশ সেনাদের সাথেই ভয়তেক ইরাক, ফিলিস্তিন, মিশর আর ইতালিতেও গিয়েছিল।

সৈন্যদের সাথে ভয়তেক; Image Source: Otso Cycles

বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকলো ভয়তেকের আকার আর ওজনও। একটা সময় গিয়ে তার উচ্চতা ৬ ফুট ছাড়িয়ে যায়, ওজন চারশো কেজিরও বেশি। একসময় ভয়তেককে সাপ্লাই কোম্পানিতে একজন সৈন্য হিসেবেই নিয়োগ দেয়া হয়। ভালুকটির ছিল নিজস্ব পেবুক, র‍্যাঙ্ক এবং সিরিয়াল নাম্বার। একপর্যায়ে সে পোলিশ আর্মিতে কর্পোরাল পদেও উন্নীত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ সালে দলের অন্যান্য সদস্যদের সাথে ভয়তেক ইতালির মন্টে ক্যাসিনোতে গিয়েছিল। বেশ ভয়াবহ যুদ্ধ চলছিলো সেখানে। সেই যুদ্ধে গোলাবারুদ বহনের ভার পড়েছিল তার কাঁধে।

ভয়তেকের যুদ্ধ পরবর্তী জীবন অবশ্য সেনাবাহিনীতে না, বরং স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ চিড়িয়াখানাতেই কেটেছে। যুক্তরাজ্যে সে ছিল বেশ জনপ্রিয় এক চরিত্র। ১৯৬৩ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত শিশুদের জন্য নির্মিত বিভিন্ন টেলিভিশন শোতেও দেখা গিয়েছে তাকে।

৩. হাতি

এককালে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের সুশৃঙ্খল সেনাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে স্থলভাগের সর্ববৃহৎ এই স্তন্যপায়ী প্রাণীদের কোনো জুড়ি ছিল না। শত্রুপক্ষের সেনাদের পায়ের নিচে পিষে ফেলা, দীর্ঘ দাঁতে তাদেরকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দেয়া কিংবা শুঁড় দিয়ে তুলে ছুড়ে মারা- কী করতো না এই প্রাণীটি! প্রতিপক্ষ যেন সহজে তাদের কিছু করতে না পারে, সেজন্য হাতিদের দেহে বর্ম পরানো হতো। কখনো আবার দাঁতের অগ্রভাগে লাগিয়ে দেয়া হতো ধারালো বর্শা। কিছু কিছু হাতির পিঠে আবার সওয়ার হতো তীরন্দাজ ও বল্লমবাহী সেনারা।

আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতকে এই ভারতবর্ষেই হাতি প্রথম যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল বলে জানা যায়। বুনো পুরুষ হাতিদের আটক করে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যুদ্ধে অংশগ্রহণের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা হতো। ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী গগামেলার যুদ্ধে পারস্য সাম্রাজ্যের হস্তিবাহিনীর মুখোমুখি হয়। শুরুতে আলেকজান্ডারের সেনারা ভড়কে গেলেও পরবর্তীতে জয় হয়েছিল তাদেরই। শীঘ্রই পারস্যের হস্তিবাহিনীকে নিজ বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত করে নেন দিগ্বিজয়ী এ বীর।

Image Source: Ancient Origins

কালে কালে আরও অনেক সম্রাটই তাদের বাহিনীতে যুক্ত করেছিলেন বিশালদেহী এই প্রাণীদের। কিন্তু একটা সময় এসে এই হাতিদেরও বড় কিছু সমস্যা নজরে আসে। শক্তিশালী অস্ত্র দিয়ে এদের কাবু করা কোনো ব্যাপার ছিল না। আবার খুব সহজেই এদেরকে ভয় পাইয়ে দেয়া যেত। ভয় পেয়ে পালানোর সময় হাতি শত্রুপক্ষের যতটা ক্ষতি করতো, স্বপক্ষেরও এর চেয়ে কোনো অংশে কম হতো না!

৪. উট

মরুভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলের মতো জায়গায় পর্যবেক্ষণের কাজে উটকে আজও ব্যবহার করে চলেছে বিভিন্ন দেশের সেনাবাহিনী। ঘোড়ার মতো অতটা জোরে দৌড়াতে না পারলেও প্রতিকূল পরিবেশে দীর্ঘ সময় ধরে একটানা হেঁটে চলা এবং প্রায় পানিশূন্য পরিবেশেও অস্বাভাবিক পরিশ্রম করতে উটের জুড়ি মেলা ভার।

যুদ্ধক্ষেত্রে উটের ব্যবহারের কথা প্রথম জানা যায় ৮৫৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে। আরব রাজা গিন্দিবু অ্যাসিরিয়ানদের বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে ১,০০০ উটের সমাবেশ ঘটিয়েছিলেন। যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল আজকের সিরিয়ায়। পরবর্তীকালে পার্থিয়ান এবং সাসানীদ পার্সিয়ানরাও উটকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করেছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে বীরশেবায় উটের উপর ওসমানীয় বাহিনীর সেনারা; Image Source: Wikimedia Commons

৭ম শতাব্দী থেকে মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা এবং দক্ষিণ স্পেনজয়ী মুসলিম সেনাবাহিনীর এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো এই উটরাই। ১৮ ও ১৯ শতকে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও ভারতে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকরাও তাদের সেনাবাহিনীতে উটকে অন্তর্ভুক্ত করেছিল।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ওসমানীয় বাহিনী ও মিত্রপক্ষেও উট ব্যবহৃত হয়েছিল। আবার হেজাজ অঞ্চলে ওসমানীয় শাসনের বিরুদ্ধে আরবদের বিদ্রোহেও এই প্রাণীর উপস্থিতি ছিল।

৫. কুকুর

প্রভুভক্ত প্রাণী হিসেবে খ্যাত কুকুর যুদ্ধক্ষেত্রেও বেশ সফলতার পরিচয় দিয়েছে। ধারণা করা হয়, এ ধরনের উদ্দেশ্যে প্রথম ব্যবহার করা হয়েছিল শিকারী কুকুরদের, যারা তাদের মনিবদের সাথে প্রতিপক্ষ সম্প্রদায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এভাবেই প্রাচীন মিশরীয়দের থেকে শুরু করে আমেরিকার আদিবাসীরাও কুকুরদেরকে শত্রুপক্ষের গতিবিধির উপর নজরদারিসহ নানাবিধ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে এসেছে।

খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতকে এশিয়া মাইনরের লিডিয়া সাম্রাজ্যে প্রথমবারের মতো কুকুরদের ব্যবহারের কথা শোনা যায়। রোমান সেনাবাহিনীতেও কুকুর ব্যবহার করা হতো। মূলত শত্রুপক্ষের উপর নজর রাখা উদ্দেশ্য হলেও কখনও কখনও এদের কাঁটাযুক্ত কলার ও বর্ম পরিয়ে দলবদ্ধভাবে যুদ্ধের প্রশিক্ষণও দেয়া হতো।

২য় বিশ্বযুদ্ধে প্রাণীদের ব্যবহারের এক অদ্ভুত উদাহরণ ছিলো এন্টি-ট্যাংক ডগ। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর দিয়ে শত্রুপক্ষের ট্যাংক ঠেকানোর এই আইডিয়া এসেছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের মাথায়।

Image Source: Wikimedia Commons

কুকুরগুলোকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল যেন তারা শত্রুপক্ষের ট্যাংকের কাছে গিয়ে ট্যাংক বিধ্বংসী বোমা রেখে আসে। কিন্তু এই পরিকল্পনা কাজ করেনি। পরে তারা কুকুরদের গায়েই বোম বেঁধে দিত, যাতে কুকুরগুলো ট্যাংকের কাছে গেলেই ট্রিগার চেপে সেগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটানো যায়।

১৯৪১-৪২ সালে কুকুরদের দিয়ে এমন পরীক্ষা চালানোও হয়, কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই তেমন একটা সফল হয়নি। বেশ কিছু কুকুর ট্যাংকের কাছে যাবার আগেই মারা পড়ে, কিছু কুকুর সোভিয়েত সেনাদের কাছে ফিরে আসার সময় বিস্ফোরিত হয়ে মারা যায়, আবার কিছু কুকুর শত্রুপক্ষের ট্যাংকের কাছে না গিয়ে ছুটে গিয়েছিল সোভিয়েত ট্যাংকের দিকে, কারণ সেগুলোকে সোভিয়েত ট্যাংক দিয়েই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিলো!

আজকের দিনে অবশ্য কোনো বার্তা বহন করা, কোনোকিছু শনাক্ত করা, শত্রুপক্ষের উপর নজরদারি কিংবা প্রহরারত সৈনিকের সঙ্গী হিসেবেই থাকে কুকুর। সেই সাথে গন্ধ শুঁকে বোমা খুঁজে বের করার কাজেও এদের ব্যবহার করা হয়।

৬. ঘোড়া

ঘোড়ার মতো আর কোনো প্রাণীই বোধহয় যুদ্ধক্ষেত্রে এতটা ব্যবহৃত হয়নি। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ আজ থেকে প্রায় ৫ হাজার বছর আগেও মধ্য এশিয়ার তৃণপ্রধান বৃক্ষহীন প্রান্তর ও ইউরোপের পূর্বাঞ্চলে যাযাবর জাতিগুলো ঘোড়া ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছেন। ইউক্রেন থেকে কাজাখস্তানের অনেক জায়গাতেই হাজার হাজার বছর আগে মনিবের সাথে তাদের ঘোড়াকেও সমাধিস্থ করা হয়েছে। এককভাবে ব্যবহারের পাশাপাশি যুদ্ধক্ষেত্রে রথ টানার কাজেও ব্যবহার করা হতো এই প্রাণীগুলোকে।

কালে কালে উদ্ভাবিত হলো উন্নত ধরনের জিন ও রেকাব, জন্ম নিলো উন্নত প্রজাতির ঘোড়া। এর ফলে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত অশ্বারোহী সেনারা যুদ্ধক্ষেত্রে দারুণ সব সুবিধা পেত। আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকেই ভারত ও চীনে সাধারণ মানের রেকাব ব্যবহৃত হতো। ওদিকে প্রায় একই সময়ে মিডিয়ান ও পার্সিয়ান রাজ্যগুলোতে ঘোড়াগুলো বেশ উত্তমরুপে যুদ্ধের জন্য সাজানো হতো।

Image Source: fabriquespinoza.fr

ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অজস্র যুদ্ধে দৃশ্যপট পাল্টে দেয়ার মূল কারিগর ছিলো ভারী অস্ত্রে সজ্জিত অশ্বারোহী সেনারা। রোমানদের পরবর্তী সময়, হান ও মঙ্গোলদের আক্রমণ, মুসলিমদের বিশ্বজয়, ক্রুসেড, নেপোলিয়নের সময়কাল, ক্রিমিয়ার যুদ্ধসহ আরো অগণিত ক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে এই প্রাণীটির নাম।

যুদ্ধকৌশল আধুনিক যুগে প্রবেশের পর থেকেই মূলত যুদ্ধক্ষেত্রে ঘোড়ার ব্যবহার কমতে শুরু করে। তাদের জায়গা দখল করে নিতে থাকে ট্রাক, ট্যাংকের মতো নানা যান। আধুনিক অস্ত্রের সামনেও অসহায় হয়ে পড়ে প্রাণীগুলো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কিছুটা দেখা গেলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এদের ব্যবহার আরো অনেক কমে যায়।

৭. ডলফিন

গত শতকের ষাটের দশক থেকেই মার্কিন নৌবাহিনী সমুদ্রের বুকে শত্রুর গতিবিধি নজরে রাখতে বটলনোজ ডলফিনদের কাজে লাগিয়ে আসছে। প্রখর ইকোলোকেশন অনুভূতি কাজে লাগিয়ে সমুদ্রের তলদেশে বিভিন্ন বস্তু খুঁজে পেতে সাহায্য করে ডলফিন, যা একজন মানব সাঁতারুর পক্ষে অসম্ভব।

Image Source: U.S. Navy

এই ডলফিনগুলোর তদারকের দায়িত্বে থাকে নৌবাহিনীরই লোকজন। প্রাণীগুলোকে প্রশিক্ষণ দিয়ে সমুদ্রের তলদেশে মাইন পর্যন্ত শনাক্ত করা শেখানো সম্ভব। পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধ এবং ইরাক যুদ্ধের সময় ডলফিনের মাইন শনাক্তকারী এই বৈশিষ্ট্যটি বেশ কাজে এসেছিলো মার্কিন বাহিনীর।

৮. মৌমাছি

শুনতে অদ্ভুত লাগলেও সত্যি যে, প্রাচীন গ্রিক এবং রোমানরা মৌমাছিকেই তাদের যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে এককালে। খ্রিস্টপূর্ব ৭২ অব্দে প্রাচীন গ্রিক শহর থেমিস্কাইরা রোমান সেনাদের দ্বারা অবরুদ্ধ হয়ে ছিল। শহরটি আবার মধুর জন্য বিখ্যাত ছিল। থেমিস্কাইরার সেনারা তাই বিচিত্র এক কাজ করলো। দেয়ালের নিচে দিয়ে সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তারা অবরোধকারী রোমান সেনাদের উপর ছেড়ে দিলো ঝাঁকে ঝাঁকে মৌমাছি। বলা বাহুল্য, মানুষের আক্রমণ ঠেকাতে পারলেও মৌমাছির আক্রমণ ঠেকানোর সাধ্য রোমানদের ছিলো না। তাই পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে বাধ্য হয় তারা।

Image Source: dailymail.co.uk

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ট্যাঙ্গার যুদ্ধে জার্মান ইস্ট আফ্রিকায় (বর্তমানে কেনিয়া) যুদ্ধে লিপ্ত ছিলো আক্রমণকারী ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এবং প্রতিরোধকারী জার্মান বাহিনী। এমন সময় দু’পক্ষের উপরই ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্ষ্যাপাটে মৌমাছির দল। ফলে শেষমেশ জান নিয়ে পালাতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সেনারা। ব্রিটিশরা অবশ্য দাবি করে, এটা আসলে জার্মানদেরই নিষ্ঠুর এক রণকৌশল ছিলো, যেখানে ট্রিপ ওয়্যারের মাধ্যমে মৌচাকে থাকা মৌমাছিগুলোকে উত্তেজিত করে তোলা হয়েছিল।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় ভিয়েত কং গেরিলারা এশিয়ান জায়ান্ট হানিবী (Apis dorsata) এর মৌচাক শত্রুদের গতিপথে রেখে দিতো। এরপর তাদেরই একজন কাছাকাছি কোথাও লুকিয়ে থাকতো। যখন সেনারা সেখান দিয়ে হেঁটে যেত, তখন তাতে আগুন ধরিয়ে ক্ষ্যাপা মৌমাছিগুলোকে তাদের উপর লেলিয়ে দিত গেরিলারা।

৯. বিচ্ছু

খ্রিস্টপূর্ব ১৯৮ অব্দের কথা। হাত্রা শহরে (বর্তমান ইরাকের মসুলের নিকটবর্তী এলাকা) এত্রেনীয়দের অবরোধ করেছিল রোমান সেনারা। কিন্তু এত্রেনীয়রা এমন এক কৌশল জানতো যার সামনে রোমানদের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করা ছাড়া কোনো উপায়ই ছিলো না।

Image Source: European Pharmaceutical Review

এত্রেনীয়রা কাদামাটির পাত্রে ডজনের পর ডজন বিচ্ছু ভরে সেগুলো ছুড়ে মারতো রোমানদের উপর। বিষাক্ত এ প্রাণীগুলো তখন রোমান সেনাদের চোখসহ শরীরের অন্যান্য অরক্ষিত অংশে ক্রমাগত আক্রমণ করতে থাকতো। এহেন অদ্ভুত আর অজেয় শত্রুর মুখোমুখি হয়ে রোমানদের শেষপর্যন্ত হাত্রার অবরোধ ত্যাগ করে বাড়ি ফিরে যেতে হয়।

১০. খচ্চর

খাদ্য, পানি, তাঁবু, যুদ্ধাস্ত্র, গোলাবারুদসহ সৈনিকদের হেন কোনো জিনিস নেই যা বহন করেনি খচ্চর নামক এ প্রাণীটি। তবু কেন যেন তাকে নিয়ে কেউ এতটা আলাপ করে না। কেন যেন পর্দার আড়ালেই রয়ে যায় সে।

পুরুষ গাধা এবং নারী ঘোড়া থেকে উদ্ভূত এই প্রাণীটিকে মালামাল বহনের কাজেই মূলত ব্যবহার করা হয়। কেন ঘোড়ার বদলে এরা? কারণ, প্রাণীগুলোর সহ্যক্ষমতা যেমন অত্যধিক, তেমনই তারা বেশ শান্ত স্বভাবেরও।

Image Source: visitcarsonvalley.org

প্রাচীন রোমান লিজিয়নে (৩-৬ হাজার রোমান সেনার একেকটি বাহিনী) প্রতি আটজন সৈন্যের জন্য একটি করে খচ্চর বরাদ্দ থাকতো। খ্রিস্টপূর্ব ৪৯ অব্দে এই খচ্চর টানা গাড়িতে করেই রুবিকন নদী পার হয়ে জুলিয়াস সিজার রোমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুরু করেন। ১৮০০ সালে খচ্চরের পিঠে চড়ে আল্পস পর্বতমালা পেরিয়েই ফরাসি বাহিনীকে নিয়ে ইতালিতে প্রবেশ করেছিলেন নেপোলিয়ন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী প্রায় ৫,৭১,০০০ ঘোড়া ও খচ্চর ব্যবহার করেছিল। এর মাঝে প্রায় ৬৮,০০০-ই দায়িত্বরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

This is a Bangla article that discusses about animals that has been used in warfare. Necessary references have been hyperlinked.

Feature Image: GameCrate

Related Articles