Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আর্মিনিয়াস: রোম থেকে জার্মানিকে মুক্ত করা বীর

রোম- প্রাচীন পৃথিবীর এক শক্তিশালী সাম্রাজ্যের কথা। ইতালির টাইবার নদীর তীরের ছোট্ট গ্রাম থেকে শুরু হওয়া রোমের বিস্তার ঘটে ইউরোপ, আফ্রিকা আর এশিয়ায়। এককথায় বলতে গেলে, তখনকার জানা পৃথিবীর অর্ধেকটাই ছিল রোমানদের শাসনাধীন। নিজেদের অনেক বেশি উন্নত আর সভ্য মনে করা রোমান অন্যদের মনে করত বর্বর, বিশেষ করে ইউরোপের ছোট ছোট জাতিকে। জার্মানরা ছিল তেমনই এক ‘বর্বর’ জাতি। কিন্তু বিশাল রোমান সাম্রাজ্যের ইতিহাসে এক লজ্জার জন্ম দিয়েছে এই জার্মানরাই। আর্মিনিয়াস নামের এক সাহসী যোদ্ধার নেতৃত্বে রোমানদের পরাজিত করে জার্মানরা। আর সেই পরাজয় লেখা হয়েছিল টিটুবার্গ জঙ্গলের যুদ্ধে। আর্মিনিয়াস আর টিটুবার্গের যুদ্ধের কথাই আজ পাঠকদের সামনে তুলে ধরছি।

শুরুর কথা

জনবল, শক্তি কিংবা অস্ত্র সবদিক থেকেই পিছিয়ে থাকা জার্মান গোত্রগুলো রোমানদের সাথে শান্তিচুক্তি করে অর্থ আর সম্পদের বিনিময়ে। জার্মানরা যেন কখনো নিজেরা উঠে দাঁড়াতে না পারে, তার ব্যবস্থাও করে রেখেছিল চতুর রোমানরা। শান্তিচুক্তি করা গোত্র প্রধানদের সন্তানদের তারা রোমে ধরে নিয়ে যেত, বড় করত রোমান হিসেবে। রোমান সেনাবাহিনীর অফিসার হিসেবে বিভিন্ন যুদ্ধে নেতৃত্ব দিত ‘বর্বরদের’ সন্তানরা। রোমান সংস্কৃতি তাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়া হতো একেবারে ছোটবেলা থেকেই। ফলে নিজের জন্মভূমি জার্মানির থেকে রোমের প্রতি আনুগত্য বেশি থাকাটাই তাদের জন্য স্বাভাবিক ছিল।

এই আবক্ষ মূর্তিটি আর্মিনিয়াসের বলেই ধারণা করা হয়; Source: Wikimedia Commons

আর্মিনিয়াস ছিলেন সেরকমই এক জার্মান, যিনি বড় হয়েছিলেন রোমানদের তত্ত্বাবধানে। জার্মানদের এক গোত্রপ্রধানের ছেলে আর্মিনিয়াসের জন্ম হয় খুব সম্ভবত খ্রিষ্টপূর্ব ১৭ কিংবা ১৮ সালে। কিন্তু অল্প বয়সেই তাকে পরিবার আর জার্মানি ছেড়ে চলে যেতে হয় রোমানদের তত্ত্বাবধানে। সাথে তার ছোট ভাই ফ্লাভাসও বড় হয় রোমানদের তত্ত্বাবধানে। সময়ের সাথে দুজনই বড় হয়, যুদ্ধক্ষেত্রে বীরত্ব দেখিয়ে রোমান সেনাবাহিনীর উপরের দিকে উঠতে থাকে দুজনই। সম্রাট অগাস্টাসের সৎ ছেলে নিরোর অধীনে তারা দুই ভাই প্যানোনিয়ান ও ইলোরিয়ানের বিদ্রোহ দমন করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। ৮ খ্রিস্টাব্দে পদোন্নতি দিয়ে আর্মিনিয়াসকে বদলি করা হয় তারই জন্মভূমি জার্মানিতে, যেখানে আগে থেকেই রোমানরা শক্ত ঘাঁটি গেড়ে রেখেছিল।

জার্মানিতে আর্মিনিয়াস

রাইন নদীর পূর্বের গোত্রগুলোকে রোমানদের নতুন প্রদেশ ‘জার্মানিয়া’ গঠনের জন্য জার্মানিতে ছিলেন প্যাবলিয়াস ভারাস। মূলত গভর্নর হিসেবেই কাজ করতেন তিনি আর তার অধীনেই কাজ করার জন্য পাঠানো হয় আর্মিনিয়াসকে। জার্মানিতে রোমান সেনা থাকলেও জার্মানি পুরোপুরি দখল করতে পারেনি রোমানরা। ফলে স্থানীয় গোত্রগুলোকে বিভিন্ন লোভ দেখিয়ে রোম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা চলছিল তখন। ৮ খ্রিস্টাব্দে সেখানে গিয়ে আর্মিনিয়াস আবিষ্কার করেন ভারাস জার্মান গোত্রগুলোকে দাসের মতো ব্যবহার করছে, অথচ রোমানদের সাথে তাদের শান্তিচুক্তি ছিল। জোর করে তাদের থেকে কর আদায় করত, বিনা কারণে জার্মান গোত্রগুলোর উপরে অত্যাচার করা হতো।

জার্মানিতে আর্মিনিয়াস সুযোগ পায় তার বাবা আর পরিবারের অন্যান্যদের সাথে দেখা করার। দীর্ঘদিন রোমের আনুগত্যে থাকলেও জন্মভূমিতে ফিরে আর্মিনিয়াসের স্বজাতিপ্রেম জেগে ওঠে, বিশেষ করে রোমানদের অত্যাচার আর শোষণ দেখার পরে। আর্মিনিয়াস মনে মনে ফন্দি আঁটতে থাকেন রোমানদের জার্মানি থেকে তাড়ানোর। বলকান অঞ্চলে বিদ্রোহের কারণে জার্মানির এগারোটি লিজিয়নের মধ্যে আটটিকেই বিদ্রোহ দমনে যেতে হয়। ফলে জার্মানিতে থাকে মাত্র তিনটি। আর শক্তিশালী রোমানদের পরাজিত করার জন্য সেটাকেই মোক্ষম সুযোগ হিসেবে নেন আর্মেনিয়াস।

ভারাসের নামে অঙ্কিত মুদ্রা; Source: Wikimedia Commons

রোমানদের ভেতরে থাকায় আর ভারাসের বিশ্বস্ত হওয়াতে আর্মিনিয়াসের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। তিনি তার বাবার সাহায্যে জার্মানদের বিভিন্ন গোত্র প্রধানদের সাথে দেখা করতে থাকেন। জার্মানদের ঐক্যবদ্ধ করে রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সংগঠিত করতে থাকেন। যারা তার সাথে একমত হয়নি, তাদের হত্যা করে ভারাসের সামনে বিদ্রোহী হিসেবে উপস্থাপন করেন। ফলে ভারাসের ভরসা যেমন ঠিক রাখতে পেরেছিলেন, তেমনি নিজের আসল কাজটাও গুছিয়ে নিচ্ছিলেন সুন্দরভাবে।

সকল সতর্কতার পরেও ভারাসের কানে যায় সম্ভাব্য জার্মান বিদ্রোহের কথা। সেগেস্টেস নামের এক গোত্র প্রধান আর্মিনিয়াসের নামে অভিযোগ জানায় ভারাসের কাছে। কিন্তু ভাগ্য ছিল তার পক্ষে। সেগেস্টেসের মেয়ের সাথে আর্মিনিয়াসের সম্পর্ক থাকায় সেগেস্টেস তাকে মোটেও পছন্দ করত না। আর সে কথা ভারাস বেশ আগে থেকেই জানতেন। ফলে বিশ্বস্ত অফিসার আর্মিনিয়াসকে ফাঁসানোর চাল ভেবে সেগেস্টেসের কথা পাত্তা দেননি ভারাস।

রোমান সাম্রাজ্য আর জার্মান গোত্রগুলোর সীমারেখা; Source: Villa Rustica Hechingen-Stein

তবে জার্মানদের জন্য রোমানদের হারানো মোটেও সহজ কোনো কাজ ছিল না। রোমান সেনাবাহিনী সেসময়ের সবচেয়ে সুসংগঠিত বাহিনী, অন্যদিকে জার্মানদের বেশিরভাগই কৃষক। অস্ত্র, শক্তি বা প্রশিক্ষণ সব কিছুতেই পিছিয়ে ছিল জার্মানরা। ফলে আর্মিনিয়াসকে অপেক্ষা করতে হয় মোক্ষম সুযোগের, যখন  কোণঠাসা করে রোমানদের শক্তিকেই রোমানদের দুর্বলতা বানিয়ে হারানো যাবে। শীতের আগে সেপ্টেম্বরে ভারাস আর রোমান সেনাবাহিনী তাদের শীতকালীন ক্যাম্প রাইনে যাত্রার প্রস্তুতি নিতে থাকে। আর সে যাত্রাকেই রোমানদের শেষ যাত্রায় পরিণত করার চাল চালেন আর্মিনিয়াস।

সাধারণত রাইনে যাবার সময় সেনাবাহিনী যেত লিপ্পে হয়ে। কিন্তু আর্মিনিয়াস ভারাসকে পরামর্শ দেন উত্তরের ওয়েসের পাহাড় হয়ে ঘুরে যেতে, যেখানে সম্ভাব্য বিদ্রোহের কথা শোনা যাচ্ছিল। এর ফলে রাইনেও যাওয়া হবে আবার যাবার পথে বিদ্রোহ দমনও হয়ে যাবে। তবে এই বিদ্রোহ বাস্তবে ছিল না, ছিল আর্মিনিয়াসের পরিকল্পনার অংশ। বিদ্রোহের নাম করে ভারাস আর সেনাবাহিনীকে নিজেদের সুবিধাজনক নিয়ে জায়গার জন্য একটি চাল। চতুর আর বিশ্বস্ত আর্মিনিয়াসের কথা ফেলতে পারেননি ভারাস। ফলে তিন লিজিয়ন রোমান সেনাবাহিনী রওয়ানা হয় সেদিকে।

টিটুবার্গ জঙ্গলের যুদ্ধ

তিন লিজিয়ন সেনাবাহিনীর জন্য যাবার পথটা মোটেও সুখকর ছিল না। একদিকে ছিল রাস্তা অনেক সরু, অন্যদিকে সেসময় প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছিল আর তার ফলে মাটির রাস্তায় ছিল কর্দমাক্ত। ভারি অস্ত্রে সজ্জিত রোমান সেনাবাহিনীর জন্য ঘন জঙ্গল আর কর্দমাক্ত রাস্তা পেরিয়ে যাওয়াটাই ছিল যেন এক যুদ্ধ। এরই মধ্যে তারা এমন এক জায়গায় উপস্থিত হয় যেখানে রাস্তার দু’পাশে দুটি উঁচু পাহাড়, রাস্তা পার করতে হলে একটি জলাভূমি পার হতে হবে অথবা ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পাহাড়কে পাশ কাটিয়ে যেতে হবে। বিশাল সেনাবাহিনীর জন্য জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যাওয়া কোনো সমাধান ছিল না। ফলে জলাভূমির সরু রাস্তাই বেছে নেন ভারাস।

বর্তমান সময়ে টিটুবার্গের জঙ্গল; Source: Wikimedia Commons

তখনও পর্যন্ত আর্মিনিয়াস এক বিশ্বস্ত রোমান অফিসার হিসেবেই ছিলেন। কিন্তু সরু পথে রোমানদের আক্রমণ করাটাই ছিল আর্মিনিয়াসের মূল লক্ষ্য। রোমান সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ আর রোমান সেনাবাহিনীতে যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা তাকে যেমন অভিজ্ঞ করেছিল, ঠিক তেমনি রোমান সেনাবাহিনীর প্রধান দুর্বলতাও তিনি ভালোমতোই জানতেন। আর সেই দুর্বলতা ছিল সুশৃঙ্খল আর সুসংগঠিত যুদ্ধ!

রোমের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে রোমানরা ফাঁকা জায়গায় যুদ্ধ করতে বেশি পছন্দ করে। কেননা তাদের যুদ্ধ পদ্ধতির জন্য সেটাই সেরা উপায়। ফাঁকা জায়গায় নিজেদের সুবিধামতো অবস্থান নিয়ে যুদ্ধের ফলে রোমানদের সাফল্য ছিল অনেক বেশি। কিন্তু টিটুবার্গ জঙ্গলে তাদের অবস্থান ছিল পুরোপুরি উল্টো। ফলে সরু রাস্তায় জার্মানরা আক্রমণ করলে দিশেহারা হয়ে যায় রোমানরা। পাহাড়ে থাকা জার্মানরা উচ্চতার সুবিধা পাচ্ছিল শুরু থেকেই। ভারাসের নির্দেশে পাহাড়ের জার্মানদের কোনোমতে আটকে রেখে একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করে সেনাবাহিনী। আর রাতটা সেখানেই কাটায় কোনো আক্রমণ ছাড়াই।

যুদ্ধের শেষ পর্যায়ের ম্যাপ; Source: Wikimedia Commons

ভারাসের পরামর্শকরা তাকে বিদ্রোহ দমন বাদ দিয়ে উল্টো পথে রাইনে ফিরে যেতে বলে। কিন্তু দিনের আক্রমণকে বিদ্রোহ ভেবেই সে উত্তরে যেতে চায়। ততোক্ষণে ভারাস বুঝে গিয়েছেন আর্মিনিয়াসই এর পেছনে রয়েছেন। ভোরের দিকে অন্ধকারের সুবিধা নিয়ে সামনে এগিয়ে যায় ভারাস আর তার সেনাবাহিনী। যদিও আগের দিনেই প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে সংখ্যার দিক দিয়ে। দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নিজেদের বেশিরভাগ রসদ রেখে আসতে বাধ্য হয় তারা।

ভারাস আর তার সেনাবাহিনী সবচেয়ে বড় সমস্যায় পড়ে বৃষ্টির কারণে। টানা বৃষ্টিতে একে রাস্তা যেমন খারাপ ছিল তেমন নিজেদের পোশাক আর অস্ত্রের অবস্থাও খারাপের দিকে ছিল। কাপড়, কাঠের ঢাল ভিজে ভারি হয়ে গিয়েছিল, বৃষ্টির কারণে তীর ছোঁড়াও অসম্ভব হয়ে গিয়েছিল। ফলে একপ্রকার প্রতিরক্ষাহীন অবস্থাতে থাকতে হয়েছে পুরো সেনাবাহিনীকে। আর প্রতি পদে আর্মিনিয়াসের সাজানো ফাঁদ তো ছিলোই। ঘন জঙ্গল, বৃষ্টি, জলাভূমির কাছে হার মানতে বাধ্য হয় ভারাস আর তিন লিজিয়ন রোমান সেনা। ভারাস ও অন্যান্য অফিসারদের বেশিরভাগকেই হত্যা করা হয়, অনেকে নিজে থেকে আত্মহত্যাও করে। জীবিতদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয় দাস হিসেবে। যে জার্মানকে রোম প্রশিক্ষণ দিয়ে যুদ্ধ করা শিখিয়েছিল সেই জার্মানের নেতৃত্বেই ৯ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে জার্মানিতে রোম হারায় তাদের রাজত্ব করার স্বপ্ন।

যুদ্ধ পরবর্তী জার্মানি

খুব স্বাভাবিকভাবেই জার্মানির পরাজয় নাড়া দেয় পুরো রোমান সাম্রাজ্যকে। জার্মানিতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য রোম পরবর্তী সাত বছর অনেক চেষ্টা চালায়। কিন্তু বারবার আক্রমণ করেও আর্মিনিয়ার আর জার্মান গোত্রগুলোকে পুরোপুরি দমন করতে পারেনি রোম। এর মধ্যে আর্মিনিয়াসের শ্বশুর সেগেস্টেস রোমের বশ্যতা স্বীকার করে রোমে পালিয়ে যায়। যাবার সময় সেগেস্টেস আর্মিনিয়াসের স্ত্রী অর্থাৎ তার মেয়েকেও জোর করে ধরে নিয়ে। আর্মিনিয়াসের স্ত্রী সেসময় ছিলেন গর্ভবতী।

Rome II: Total War গেমে টিটুবার্গ যুদ্ধের একটি দৃশ্য; Source: GeoPOI

জার্মানিতে দুটি যুদ্ধে জয়লাভ করলেও রোমানরা রাইন নদীর পূর্বে রাজ্য বিস্তারের আশা বাদ দিয়ে দেয়। ফলে আর্মিনিয়াস আর জার্মানরা রোমানদের আক্রমণের হাত থেকে নিস্তার পায়। কিন্তু সেটাই শেষ ছিল না। আশেপাশে বিভিন্ন রাজার সাথে যুদ্ধ চলে আর্মিনিয়াসের, জয় হতে থাকে বিশাল এলাকা। জার্মানদের নতুন ইতিহাসের সূচনা হয়েছিল আর্মিনিয়াসের হাত দিয়েই।

মৃত্যু

১৯ খ্রিষ্টাব্দে আর্মিনিয়াসকে বিষ খাইয়ে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়। ভাগ্য ভাল থাকায় সে যাত্রায় বেঁচে যান তিমি। কিন্তু দু’বছর বাদেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় তাকে। ২১ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান তার নিজের গোত্রের লোকদের হাতেই! রোমানদের হাত থেকে যাদের রক্ষা করলেন, তারাই তাকে হত্যা করে অতিরিক্ত ক্ষমতার অধিকারী হয়ে যাচ্ছিলেন- এ অভিযোগে! আর্মিনিয়াস মারা যাবার পরেও রোমানরা আর কখনোই জার্মানি দখল করার চেষ্টা করেনি। আধুনিক ইতিহাসে আর্মিনিয়াসের বিজয়কে রোমের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয় হিসেবে বলা হয়।

আর্মিনিয়াস ও তার রেখে যাওয়া প্রভাব

আর্মিনিয়াসের হাতে পরাজয় ঘটলেও রোমানরা তার প্রাপ্য সম্মান তাকে ঠিকই দিয়েছিল। রোমান ইতিহাসবিদ ট্যাকিটাস তাকে রোমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করা অন্যতম সেরা যোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর্মিনিয়াসের বিশ্বাসঘাতকতা রোমান সেনাবাহিনীকে ঢেলে সাজানোতেও ভূমিকা রেখেছিল। বিশাল সাম্রাজ্য আর সেনাবাহিনীর জন্য বিশ্বস্ততা একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়ায়।

তবে আর্মিনিয়াসের সবচেয়ে বড় প্রভাব রয়েছে জার্মানদের উপর। জার্মান জাতীয়তাবাদীরা আর্মিনিয়াসকে জার্মানির অন্যতম সেরা বীর হিসেবে উপস্থাপন করে। বাস্তবেই আর্মিনিয়াস ছিলেন জার্মান স্বাধীনতার কারিগর। রোমানদের দাসত্ব থেকে মুক্তি আর সব গোত্রকে এক করে জার্মানদের ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন তিনি। আর্মিনিয়াসের নাম আধুনিক জার্মান ভাষায় হয়েছে ‘হারমান’ (Hermann)। তার সম্মানে টিটুবার্গ জঙ্গলে রয়েছে একটি বিশাল স্ট্যাচু। ১৮৩৯ সালে নির্মাণ শুরু হওয়া স্ট্যাচুটির নির্মাণ শেষ হয় ১৮৭০ সালের দিকে। তার নামে আমেরিকার মিসৌরিতে একটি শহর পর্যন্ত আছে!

আর্মিনিয়াসের স্ট্যাচু; Source: Imgur

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে পশ্চিম জার্মানিতে আর্মিনিয়াসের গুরুত্ব কমতে থাকে। আর্মিনিয়াসকে দীর্ঘদিন জার্মান জাতীয়তাবাদের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। আর জার্মান জাতীয়তাবাদকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা নাৎজি বাহিনীর কর্মকান্ডের কারণেই মূলত এই পদক্ষেপ নেয়া হয় যেন জাতীয়তাবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে না ওঠে। বর্তমানে জার্মানির অনেকেই দু’হাজার বছর আগের তাদের এই বীরের সম্পর্কে জানেই না! পূর্ব জার্মানিতে আবার ছিল পুরো উল্টো দৃশ্য। সেখানে আর্মিনিয়াসকে সমাজতন্ত্রের এক প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। রোমান সাম্রাজ্য ছিল ধনতন্ত্রের প্রতীক, আর আর্মিনিয়াস সেই ধনতন্ত্রকে পরাজিত করে জার্মানদের স্বাধীন করেছিলেন। দুই জার্মানি এক হলেও আর্মিনিয়াসের গুরুত্ব আগের মতো আর নেই। ২০০৯ সালে টিটুবার্গ যুদ্ধের দু’হাজার বছর পূর্তিতে জার্মান সরকার কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় এই জার্মান বীরের গুরুত্বহীনতার কথাই যেন মনে করিয়ে দেয়।

ফিচার ইমেজ- Spielkritiker.com

Related Articles