Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আনহোলি মার্ডার্স (পর্ব–২): যে মার্কিন রাষ্ট্রদূতরা দায়িত্ব পালনকালে খুন হয়েছেন

আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী, রাষ্ট্রদূতকে হত্যা করা অত্যন্ত নেতিবাচক একটি কাজ। কিন্তু ইতিহাসের সকল পর্যায়ে এই রীতিটি মানা হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সাত জন রাষ্ট্রদূত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় বিভিন্ন দেশে খুন হয়েছেন। কেন এবং কীভাবে এই রাষ্ট্রদূতরা খুন হয়েছিলেন? চলুন, সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।

জন মেইন 

জন গর্ডন মেইন ছিলেন গুয়াতেমালায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ১৯১৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণকারী মেইন ছিলেন একজন পেশাদার কূটনীতিক। তিনি তরুণ বয়সে দীর্ঘদিন ল্যাটিন আমেরিকায় অবস্থান করেন এবং অঞ্চলটি সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠেন। ১৯৪১ সালে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে (আনুষ্ঠানিকভাবে, United States Department of State) যোগদান করেন। তিনি ক্রমান্বয়ে ব্রাজিল, ইতালি, নরওয়ে, ফিলিপাইন্স ও ইন্দোনেশিয়ায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলোতে বিভিন্ন পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে তিনি গুয়াতেমালায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হন।

এসময় মধ্য আমেরিকার দেশ গুয়াতেমালায় এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলছিল। ১৯৫৪ সালে মার্কিন–সমর্থিত একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি ডানপন্থী সরকার দেশটির ক্ষমতায় আসে, এবং এরপর থেকে ডানপন্থী সামরিক একনায়করা দেশটি শাসন করতে শুরু করেন। গুয়াতেমালার বিভিন্ন বামপন্থী দল তাদের বিরোধিতা করে এবং ১৯৬০ সালে দেশটির ডানপন্থী সামরিক সরকার ও বামপন্থী গেরিলা দলগুলোর মধ্যে গৃহযুদ্ধ আরম্ভ হয়ে যায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুয়াতেমালান সরকারকে সমর্থন করে, অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও কিউবা গুয়াতেমালান গেরিলাদের সহায়তা করে। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত এই রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ চলে।

গুয়াতেমালায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন মেইন গুয়াতেমালান বামপন্থী মিলিট্যান্টদের হাতে খুন হন; Source: The Commentator

এমতাবস্থায় মেইনের দায়িত্ব ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। গুয়াতেমালান গেরিলারা গুয়াতেমালান সরকারের পাশাপাশি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদেরও তীব্র বিরোধী ছিল, এবং মেইন রাষ্ট্রদূত থাকাকালে তারা গুয়াতেমালায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের দুইজন কর্মচারীকে খুনও করেছিল। ১৯৬৮ সালের ২৮ আগস্ট মেইন গুয়াতেমালার রাজধানী গুয়াতেমালা সিটিতে গুয়াতেমালান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে যোগদান করে দূতাবাসে ফিরছিলেন। দূতাবাসের সন্নিকটে একটি গাড়ি মেইনের গাড়িকে থামায় এবং গাড়িটি থেকে দুইজন ব্যক্তি নেমে মেইনকে তার গাড়ি থেকে নামতে বাধ্য করে। উক্ত দুই ব্যক্তি ছিল গুয়াতেমালার একটি বামপন্থী গেরিলা দল ‘এফএআর’–এর (স্প্যানিশ: Fuerzas Armadas Rebeldes, ‘বিদ্রোহী সশস্ত্রবাহিনী’) সদস্য।

এফএআর মিলিট্যান্টরা মেইনকে অপহরণ করতে চেয়েছিল, যাতে তারা মেইনের বিনিময়ে গুয়াতেমালান সরকারি বাহিনীর হাতে বন্দি সহযোদ্ধাদের মুক্ত করতে পারে। কিন্তু মেইন পালানোর চেষ্টা করেন এবং মিলিট্যান্টরা তার ওপর গুলি চালায়। মেইনের শরীরে আটটি গুলি বিদ্ধ হয় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। মার্কিন সরকার এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তেমন কোনো প্রতিক্রয়া দেখায়নি। তারা গুয়াতেমালায় নতুন একজন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করে এবং গুয়াতেমালান সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন অব্যাহত রাখে।

ক্লিও নোয়েল

ক্লিও অ্যালেন নোয়েল জুনিয়র ছিলেন সুদানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ১৯১৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা সিটিতে জন্মগ্রহণকারী নোয়েল ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ ও কূটনীতিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। তিনি ইতালি, ফ্রান্স, সৌদি আরব, লেবানন ও সুদানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলোতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ এবং আরবি ভাষায় পারদর্শী। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বরে তাকে সুদানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করা হয়।

এসময় সুদান ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের একনিষ্ঠ সমর্থক ছিল এবং সুদানে ফিলিস্তিনি গেরিলাদের অবাধ চলাচল ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব সাধারণভাবে ইসরায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ায় ফিলিস্তিনি গেরিলারা তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। ১৯৭৩ সালের ১ মার্চ নোয়েল সুদানের রাজধানী খার্তুমে অবস্থিত সৌদি দূতাবাসে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। নোয়েলের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হওয়ার আগে সুদানে মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ছিলেন জর্জ মুর এবং নোয়েল রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত হওয়ার পর তিনি তার ডেপুটি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মুরের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল এবং এই উপলক্ষে সৌদি দূতাবাসে একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছিল।

পার্টি চলাকালে ফিলিস্তিনি মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর অর্গানাইজেশনে’র ৮ জন সদস্য সৌদি দূতাবাসে ঢুকে পড়ে এবং নোয়েলসহ ১০ জনকে জিম্মি করে। নোয়েল বাদে জিম্মি হওয়া বাকি ব্যক্তিরা ছিলেন– জর্জ মুর, গাই ইদ (সুদানে নিযুক্ত বেলজীয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স), আদলি আল–নাসের (সুদানে নিযুক্ত জর্দানীয় চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স), শেখ আব্দুল্লাহ আল–মালহুক (সুদানে নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত) এবং মালহুকের স্ত্রী ও চার সন্তান।

সুদানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্লিও নোয়েল ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর মিলিট্যান্টদের হাতে খুন হন; Source: Find A Grave

ফিলিস্তিনি মিলিট্যান্টরা উক্ত জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলে বন্দি সকল ফিলিস্তিনি, পশ্চিম জার্মান বামপন্থী মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘আরএএফ’–এর (জার্মান: Rote Armee Fraktion) সকল বন্দি সদস্য এবং ফিলিস্তিনি খ্রিস্টান মিলিট্যান্ট সিরহান সিরহানের (যে মার্কিন সিনেটর রবার্ট কেনেডিকে খুন করেছিল) মুক্তি দাবি করে। পরবর্তীতে মিলিট্যান্টরা তাদের দাবি পরিবর্তন করে এবং জর্দানে বন্দি সমস্ত আরব মিলিট্যান্টের মুক্তির দাবি জানায়। কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন জানান যে, মার্কিন সরকার ‘সন্ত্রাসবাদী’দের সঙ্গে আলোচনা করবে না এবং তাদের কোনো দাবি মেনে নেবে না। ফলে পরবর্তী দিন অর্থাৎ ২ মার্চ ব্ল্যাক সেপ্টেম্বর সদস্যরা নোয়েল, মুর এবং ইদকে খুন করে। সুদানি সরকার মিলিট্যান্টদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যায় এবং অবশেষে তারা বাকি সাতজন জিম্মিকে মুক্তি প্রদান করে।

একটি সুদানি আদালতে গ্রেপ্তারকৃত মিলিট্যান্টদের বিচার অনুষ্ঠিত হয়। বিচারে দুইজন মিলিট্যান্টকে প্রমাণের অভাবে মুক্তি দেয়া হয় এবং বাকি ছয়জনকে আজীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়, যে শাস্তি পরবর্তীতে কমিয়ে এনে ৭ বছরের কারাদণ্ডে নিয়ে আসা হয়। সুদান পিএলও–এর মাধ্যমে বন্দি মিলিট্যান্টদের মিসরের কাছে হস্তান্তর করে, এবং সেখানে তিনজন মিলিট্যান্ট নিখোঁজ হয়ে যায় ও বাকি তিনজন তাদের কারাদণ্ডের মেয়াদ পূর্ণ করে। মার্কিন সরকার এই বিচারে সন্তুষ্ট ছিল না। তারা বন্দি মিলিট্যান্টদের মৃত্যুদণ্ড প্রদানের জন্য সুদানকে চাপ দিচ্ছিল, কিন্তু সুদান তাতে সম্মত না হওয়ায় তারা সুদানকে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান বন্ধ রাখে এবং কয়েক বছরের জন্য সুদানে নতুন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করা থেকে বিরত থাকে।

রজার ডেভিস

রজার পল ডেভিস ছিলেন সাইপ্রাসে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ১৯২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলিতে জন্মগ্রহণকারী ডেভিস ছিলেন একজন সৈনিক ও পেশাদার কূটনীতিক। তিনি ছিলেন একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ এবং আরবি ভাষায় বিশেষভাবে পারদর্শী। ১৯৬০–এর দশকে তিনি প্রথমে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ব্যুরো অফ নিয়ার ইস্টার্ন অ্যাফেয়ার্স’–এর পরিচালক এবং পরবর্তীতে মার্কিন ‘ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ফর নিয়ার ইস্টার্ন অ্যান্ড সাউথ এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে তিনি সাইপ্রাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।

এসময় সাইপ্রাসের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। সাইপ্রাসের অভ্যন্তরে সংখ্যাগরিষ্ঠ গ্রিক সাইপ্রিয়ট ও সংখ্যালঘু তুর্কি সাইপ্রিয়টদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করেছিল। উগ্র গ্রিক সাইপ্রিয়ট জাতীয়তাবাদীরা গ্রিসের সঙ্গে সাইপ্রাসের সংযুক্তি বা ‘ইনোসিস’–এর দাবি জানাচ্ছিল, অন্যদিকে উগ্র তুর্কি সাইপ্রিয়ট জাতীয়তাবাদীরা সাইপ্রাসকে গ্রিক ও তুর্কি সাইপ্রিয়টদের মধ্যে দুইভাগে বিভক্ত করা বা ‘তাকসিম’–এর দাবি জানাচ্ছিল। ১৯৭৪ সালের ১৫ জুলাই গ্রিক সরকারের প্রত্যক্ষ সমর্থনপুষ্ট একটি সামরিক অভ্যুত্থানে সাইপ্রাসের রাষ্ট্রপতি আর্চবিশপ মাকারিওস ক্ষমতাচ্যুত হন এবং একটি ইনোসিসপন্থী সরকার ক্ষমতাসীন হয়। ২০ জুলাই তুরস্ক সাইপ্রাস আক্রমণ করে, সাইপ্রাসের ৩৬.২% ভূমি দখল করে নেয় এবং তুর্কি সাইপ্রিয়টদের সমর্থনে ‘তাকসিম’ বাস্তবায়ন করে।

সাইপ্রাসে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রজার ডেভিড ও তার মেয়ে। ডেভিস গ্রিক সাইপ্রিয়ট মিলিট্যান্টদের হাতে খুন হন; Source: International Policy Digest

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে নিষ্ক্রিয় অবস্থান গ্রহণ করে এবং গ্রিক সাইপ্রিয়টদের মতে, এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছিল তুরস্কের পক্ষে। এজন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। ১৯৭৪ সালের ১৯ আগস্ট প্রায় ৩০০ থেকে ৬০০ গ্রিক সাইপ্রিয়ট সাইপ্রাসের রাজধানী নিকোশিয়ায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে এবং যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিস বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হন। এসময় নিকটবর্তী একটি ভবন থেকে বন্দুকধারীরা তাকে উদ্দেশ্য করে গুলি চালায়। ডেভিসের বুকে গুলিবিদ্ধ হয় এবং তিনি ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। তার পাশাপাশি মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মচারী এবং একজন গ্রিক সাইপ্রিয়ট নাগরিকও বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়।

উক্ত বন্দুকধারীরা উগ্র ডানপন্থী জাতীয়তবাদী গ্রিক সাইপ্রিয়ট মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘ইওকেএ বি’–এর সদস্য ছিল। মার্কিন সরকার এই হত্যাকাণ্ডের জন্য সাইপ্রিয়ট সরকারকে দোষারোপ করা থেকে বিরত থাকে এবং সাইপ্রাসের প্রতি তাদের সমর্থনের নিদর্শনস্বরূপ দ্রুত সাইপ্রাসে আরেকজন রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করে।

ফ্রান্সিস মেলয়

ফ্রান্সিস এডওয়ার্ড মেলয় জুনিয়র ছিলেন লেবাননে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ১৯১৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে জন্মগ্রহণকারী মেলয় ছিলেন একজন সৈনিক ও পেশাদার কূটনীতিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ফ্রান্স, ইতালি, সৌদি আরব ও দক্ষিণ ভিয়েতনামে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলোতে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও গুয়াতেমালায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালের ১ জুন তিনি লেবাননে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।

১৯৭৫ সাল থেকে লেবাননে গৃহযুদ্ধ চলছিল এবং এই জটিল যুদ্ধটি ছিল বহুপাক্ষিক। মুসলিম–খ্রিস্টান দ্বন্দ্ব, সুন্নি–শিয়া দ্বন্দ্ব ও বামপন্থী–ডানপন্থী দ্বন্দ্বসহ বহুমাত্রিক এই গৃহযুদ্ধে পিএলও, ইসরায়েল, সিরিয়া এবং অন্যান্য বিভিন্ন রাষ্ট্র জড়িত ছিল। এমতাবস্থায় লেবানন হয়ে উঠেছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি স্থান।

১৯৭৬ সালের ১৬ জুন মেলয় লেবাননের রাজধানী বৈরুতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস থেকে বের হন এবং লেবাননের প্রেসিডেন্ট–ইলেক্ট এলিয়াস সার্কিসের নিকট নিজের পরিচয়পত্র পেশ করার জন্য যাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে ছিলেন মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা রবার্ট ওয়ারিং এবং গাড়িচালক জুহাইর মোঘরাবি। বৈরুতের গ্রিন লাইনের নিকটে পৌঁছানোর পর একদল ব্যক্তি তাদের গাড়িটিকে থামায় এবং তাদেরকে অপহরণ করে। উল্লেখ্য, গ্রিন লাইন ছিল গৃহযুদ্ধের সময় বৈরুতের খ্রিস্টান–অধিকৃত ও মুসলিম–অধিকৃত অঞ্চলগুলোকে বিভক্তকারী রেখা।

লেবাননে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ফ্রান্সিস মেলয় লেবানিজ বামপন্থী মিলিট্যান্টদের হাতে খুন হন; Source: peoplewill.com

ফিলিস্তিনি মার্ক্সবাদী মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অফ প্যালেস্টাইন’–এর (পিএফএলপি) সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি উগ্র বামপন্থী লেবানিজ মিলিশিয়া এই অপহরণের জন্য দায়ী ছিল। অপহরণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তারা মেলয় ও অন্য দুই অপহৃত ব্যক্তিকে খুন করে। বৈরুতের সমুদ্রসৈকতের নিকটবর্তী একটি অঞ্চলে মেলয় ও অপর দুই ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ–র একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, পিএফএলপির অনুমোদন ছাড়াই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। পিএলও সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ৫ জন ব্যক্তিতে গ্রেপ্তার করেছিল, কিন্তু প্রমাণের অভাবে তাদেরকে ছেড়ে দেয়। পরবর্তীতে তারা এই খুনের সঙ্গে জড়িত দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয় এবং পিএফএলপির কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করে। পিএফএলপি সদস্যরা তাদেরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে।

অ্যাডলফ ডাবস

অ্যাডলফ ডাবস ছিলেন আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ১৯২০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোয় জন্মগ্রহণকারী ডাবস ছিলেন একজন নাবিক ও পেশাদার কূটনীতিক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পশ্চিম জার্মানি, লাইবেরিয়া, কানাডা, যুগোস্লাভিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসগুলোতে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন, এবং তিনি ছিলেন সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে একজন বিশেষজ্ঞ। ১৯৭৮ সালে তিনি আফগানিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন।

এসময় আফগানিস্তানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল টালমাটাল। ১৯৭৮ সালের এপ্রিলে আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি মুহাম্মদ দাউদ একটি সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন এবং আফগান কমিউনিস্টরা দেশটির শাসনক্ষমতা দখল করে। দাউদের শাসনামল থেকেই ইসলামপন্থীদের সঙ্গে আফগান সরকারের সংঘাত চলছিল, এবং কমিউনিস্টদের ক্ষমতা দখলের পর এটি ক্রমশ পূর্ণ গৃহযুদ্ধে রূপ নেয়। তদুপরি, উগ্র বামপন্থীদের সঙ্গেও আফগান সরকারের সংঘাত চলছিল, এবং আফগান কমিউনিস্টদের নিজেদের মধ্যেও তীব্র অন্তর্দ্বন্দ্ব চলছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগান সরকারকে সমর্থন দিচ্ছিল, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারের বিরোধীদের সহায়তা করছিল।

এমতাবস্থায় ১৯৭৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ডাবস আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে তার বাসা থেকে মার্কিন দূতাবাসে যাচ্ছিলেন। কাবুলের মার্কিন কালচারাল সেন্টারের সামনে পৌঁছানোর পর চারজন ব্যক্তি তার গাড়ি থামিয়ে তাকে অপহরণ করে। অপহরণকারীদের সকলেই (মতান্তরে একজন) আফগান পুলিশের উর্দি পরিহিত অবস্থায় ছিল, এবং তারা ডাবসকে জিম্মি করে কাবুল সেনেরা হোটেলে নিয়ে যায়। অপহরণকারীরা উগ্র বামপন্থী ও পশতুনবিরোধী মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘সেত্তাম–এ–মিল্লি’র সদস্য ছিল বলে ধারণা করা হয়। তারা আফগান সরকারের কাছে ডাবসের মুক্তির বিনিময়ে নিজেদের বন্দি নেতাদের মুক্তি দাবি করে।

আফগানিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত অ্যাডলফ ডাবস সেত্তাম–এ–মিল্লি মিলিট্যান্টদের হাতে নিহত হন; Source: Wikimedia Commons

মার্কিন সরকার শান্তিপূর্ণভাবে এই সঙ্কটের সমাধান করার জন্য আফগান সরকারকে পরামর্শ দেয়, কিন্তু আফগান সরকার এই পরামর্শ উপেক্ষা করে। সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবির প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আফগান পুলিশ ডাবসকে উদ্ধারের জন্য হোটেলটিতে অভিযান চালায় এবং গোলাগুলিতে ডাবসসহ দুইজন মিলিট্যান্ট নিহত হয়। ডাবসের মাথায় গুলি লেগেছিল, কিন্তু গুলিটা কারা চালিয়েছিল সেটি স্পষ্ট নয়। কাকতালীয়ভাবে, যেদিন ডাবস কাবুলে খুন হন, সেদিনই ইরানি মিলিট্যান্টরা তেহরানে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস আক্রমণ করে মার্কিন কূটনীতিকদের জিম্মি করে।

মার্কিন সরকার ডাবসের হত্যাকাণ্ডের জন্য আফগান সরকারকে দায়ী করে এবং আফগান ও সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করে, যদিও তারা এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। ডাবসের খুনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানকে প্রদত্ত অর্থনৈতিক সহায়তার পরিমাণ ব্যাপকভাবে হ্রাস করে এবং আফগানিস্তানের মার্কিন দূতাবাস থেকে সকল অতিরিক্ত কর্মীকে সরিয়ে নেয়। এই খুনের ফলে মার্কিন–আফগান সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদী তিক্ততার সৃষ্টি হয়। ২০০২ সালের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর আফগানিস্তানে কোনো রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত করেনি।

আর্নল্ড র‍্যাফেল

আর্নল্ড লুইস র‍্যাফেল ছিলেন পাকিস্তানি নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ১৯৪৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণকারী র‍্যাফেল ছিলেন একজন পেশাদার কূটনীতিক। ১৯৬৬ সালে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি পাকিস্তানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন।

এসময় পাকিস্তান ছিল সামরিক শাসনাধীনে, এবং আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও আফগান সরকার আফগান ও অন্যান্য জাতির মিলিট্যান্টদের বিরুদ্ধে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং পশ্চিমা বিশ্ব ও মধ্যপ্রাচ্যের বহু রাষ্ট্র আফগান মিলিট্যান্টদের সক্রিয়ভাবে সহায়তা করছিল, এবং পাকিস্তান ছিল আফগান মিলিট্যান্টদের (যারা নিজেদেরকে ‘মুজাহিদিন’ নামে আখ্যায়িত করত) মূল ঘাঁটি। র‍্যাফেল যখন পাকিস্তানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হয়ে আসেন, তখন এটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগান মিলিট্যান্টদের পরাজিত করতে পারবে না এবং তাদেরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সেখানে অবস্থান করতে হবে। এমতাবস্থায় সোভিয়েতরা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের প্রক্রিয়া আরম্ভ করেছিল।

মার্কিন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যানের সঙ্গে আর্নল্ড র‍্যাফেল; Source: Wikimedia Commons

১৯৮৮ সালের ১৭ আগস্ট র‍্যাফেল পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউল হকের সঙ্গে বাহাওয়ালপুরে একটি সফরে গিয়েছিলেন। সফর শেষে পাকিস্তানি রাষ্ট্রপতির বিমানে করে তারা বাহাওয়ালপুর বিমানবন্দর থেকে ইসলামাবাদের দিকে রওনা হন। কিন্তু বাহাওয়ালপুর বিমানবন্দর থেকে ৭ কি.মি. দূরে বিমানটি বিধ্বস্ত হয় এবং র‍্যাফেলসহ বিমানটির সকল যাত্রী নিহত হন। র‍্যাফেল এবং জিয়াউল হক ছাড়া বিমানটিতে ছিলেন পাকিস্তানে নিযুক্ত মার্কিন সামরিক অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হার্বার্ট ওয়াসসোম, পাকিস্তানি সশস্ত্রবাহিনীর জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের সভাপতি জেনারেল আখতার আব্দুর রহমান খান এবং অন্যান্য শীর্ষ পাকিস্তানি সামরিক কর্মকর্তারা।

পাকিস্তানি ও মার্কিন কর্মকর্তারা এই ঘটনাটিকে একটি দুর্ঘটনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু অনেকেই এই ব্যাখ্যা মেনে নিতে পারেননি। অনেকের মতে, বিমানটিতে নার্ভ গ্যাস ছড়িয়ে দিয়ে বৈমানিকদের অচেতন করে ফেলা হয়েছিল, এজন্যই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। কোনো কোনো পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তা দাবি করেন, আফগান যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়ন এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। অনুরূপভাবে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ভারত, ইসরায়েল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা জিয়াউল হকের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু ঘটনাটি এখনো অস্পষ্টই রয়ে গেছে।

ক্রিস্টোফার স্টিভেন্স

জন ক্রিস্টোফার স্টিভেন্স ছিলেন লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত। ১৯৬০ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রাস ভ্যালিতে জন্মগ্রহণকারী স্টিভেন্স ছিলেন একজন আইনজীবী ও কূটনীতিক। প্রাথমিক জীবনে তিনি আইনজীবী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করেন এবং ১৯৯১ সালে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। তখন থেকে তিনি বিভিন্ন কূটনৈতিক দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। ২০১২ সালের জুনে তিনি লিবিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিযুক্ত হন।

২০১১ সাল থেকে লিবিয়া গৃহযুদ্ধে লিপ্ত এবং এখন পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলমান। ২০১১ সালে মার্কিন–নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের প্রত্যক্ষ সহায়তায় লিবীয় মিলিট্যান্টরা মুয়াম্মার গাদ্দাফির নেতৃত্বাধীন লিবীয় সরকারকে উৎখাত করে, কিন্তু লিবিয়া জুড়ে চূড়ান্ত নৈরাজ্য দেখা দেয়। স্টিভেন্স লিবীয় মিলিট্যান্টদের সঙ্গে মার্কিন সরকারের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করছিলেন। লিবিয়ায় বিরাজমান নৈরাজ্যের প্রেক্ষাপটে স্টিভেন্স লিবিয়ায় মার্কিন কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন, কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটি আমলে নেয়নি।

লিবিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন্স আনসাল আল–শরিয়া মিলিট্যান্টদের হাতে খুন হন; Source: The New York Times

২০১২ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সকালে লিবিয়ার বেনগাজি শহরে অবস্থিত মার্কিন কূটনৈতিক মিশনের ওপর একদল সশস্ত্র লিবীয় আক্রমণ চালায়। তারা গ্রেনেড, অটোমেটিক রাইফেল, আরপিজি ও অন্যান্য ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এই আক্রমণ পরিচালনা করে। এই আক্রমণের ফলে স্টিভেন্স এবং মার্কিন তথ্য কর্মকর্তা সিয়ান স্মিথ নিহত হন। একই দিন বিকেলে বেনগাজিতে অবস্থিত মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর ঘাঁটিতে মিলিট্যান্টরা মর্টার নিক্ষেপ করে। এই আক্রমণের ফলে গ্লেন ডোহার্টি ও টাইরন উডস নামক দুইজন সিআইএ অপারেটিভ নিহত হয় এবং আরো ১০ জন আহত হয়। কাকতালীয়ভাবে, ঠিক ১১ বছর আগে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে আল–কায়েদা মিলিট্যান্টদের আক্রমণে টুইন টাওয়ার ধ্বংস হয়েছিল।

এই আক্রমণের জন্য লিবীয় সালাফি মিলিট্যান্ট গ্রুপ ‘আনসার আল–শরিয়া’কে দায়ী করা হয়, যেটি আল–কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ২০১৪ সালে মার্কিন স্পেশাল ফোর্স সদস্যরা আহমেদ আবু খাত্তালাকে গ্রেপ্তার করে। খাত্তালা ছিল আনসার আল–শরিয়ার বেনগাজি শাখার প্রধান, এবং স্টিভেন্স ও অন্যান্য মার্কিন নাগরিকদের খুনের সঙ্গে সে জড়িত ছিল। ২০১৭ সালে মুস্তাফা আল–ইমাম নামক আরেক ব্যক্তি উক্ত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে গ্রেপ্তার হয়।

স্টিভেন্সের হত্যাকাণ্ডটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির একটি ইস্যুতে পরিণত হয়। রিপাবলিকান দল মার্কিন কূটনীতিকদের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য ক্ষমতাসীন ডেমোক্র‍্যাট দলকে দায়ী করে। এই ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েকটি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু সেগুলো থেকে কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। স্টিভেন্সের খুনের পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চারজন কর্মকর্তাকে লিবিয়ায় মার্কিন কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তার প্রতি অবহেলার জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সমালোচনা করা হয় এবং তাদের মধ্যে একজন পদত্যাগ করেন। স্টিভেন্স এখন পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে খুন হওয়া সর্বশেষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত।

Related Articles