Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ইরাকের কুয়েত আক্রমণ এবং পার্সিয়ান গাল্‌ফ যুদ্ধের সূচনা

১৯৯০ সালের ২ আগস্ট স্থানীয় সময় রাত দুইটার দিকে ইরাক তার তেলসমৃদ্ধ প্রতিবেশী দেশ কুয়েতে আক্রমণ করে। হঠাৎ এই হামলার ফলে কুয়েতের সেনাবাহিনী হতচকিত হয়ে যায় এবং যেসব সেনা বেঁচে যায় তারা কোনোক্রমে সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ রক্ষা করে। কুয়েতের আমির তার পরিবার সমেত সৌদি আরবে পালিয়ে যান। হামলা শুরুর দুই দিনের মধ্যে কুয়েতি প্রতিরক্ষা বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসাইন কুয়েতকে ইরাকের ঊনিশতম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করেন। ইরাকের এই আগ্রাসন স্থায়ী ছিল সাত মাস।

ইরাক কেন হঠাৎ করে কুয়েত আক্রমণ করে বসলো সেই সম্পর্কে ধারণা পেতে হলে আমাদের কয়েক বছর পিছিয়ে যেতে হবে। ১৯৮০-৮৮ সাল পর্যন্ত ইরাক তার অপর প্রতিবেশী দেশ ইরানের সাথে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে লিপ্ত ছিল। যুদ্ধের প্রথম দুই বছর কুয়েত কোনো পক্ষকেই সমর্থন করেনি। তারা নিরপেক্ষ অবস্থানে ছিল। তবে ইরানের মদদে নিজ দেশেও ইসলামী বিপ্লবের আশঙ্কা কুয়েতকে বেশিদিন নিরপেক্ষ থাকতে দেয়নি। দ্রুতই তারা ইরাকের পক্ষাবলম্বন করে। ১৯৮২ সাল থেকে কুয়েত ইরাককে আর্থিকভাবে সহায়তা করা শুরু করে। সমগ্র যুদ্ধ জুড়ে ইরাককে কুয়েত সর্বমোট ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তা দেয়। যখন বসরাতে অবস্থিত ইরাকের অন্যতম প্রধান সমুদ্র বন্দর ইরানের হামলায় বিধ্বস্ত হয়, তখন কুয়েত তাদের সমুদ্রবন্দর ইরাককে ব্যবহার করতে দেয়।

আট বছরব্যাপী চলা ইরাক-ইরান যুদ্ধ শেষ হলে এই বিশাল ঋণের বোঝা ইরাকের অর্থনীতির ওপর চেপে বসে। ঋণ শোধ করার জন্য ইরাক বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়িয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এজন্য তারা কুয়েতকে বাজারে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেয়ার অনুরোধ করে। অনুরোধ উপেক্ষা করে কুয়েত তেল উত্তোলন বাড়িয়ে দেয়, ফলে সরবরাহ বেশি থাকায় দাম বৃদ্ধি পাবার পরিবর্তে বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যায়।

ইরানের সাথে আট বছরব্যাপী চলা যুদ্ধ ইরাককে বিশাল ঋণের জালে আবদ্ধ করে ফেলে; Image Source: Weapons and Warfare

কুয়েতের এই ধরনের আচরণ ইরাক ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। এরই মধ্যে ইরাকি প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসাইন দাবি করেন, কুয়েত উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইরাকের রুমালিয়া তেল ক্ষেত্র থেকে অবৈধভাবে তেল উত্তোলন করছে। এতে করে ইরাক ২.৪ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, ইরানের সাথে তার দেশ যে ভায়াবহ যুদ্ধে লিপ্ত ছিল, তার ফলে কুয়েত এবং সৌদি আরব যথেষ্ট লাভবান হয়েছে। এই যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি ইরানের হাত থেকে মধ্যপ্রাচ্যকে রক্ষা করেছেন। তাই কুয়েত এবং সৌদি আরবের কাছে ইরাকের যে ঋণ আছে তা মওকুফ করা উচিত। তবে কুয়েত অবৈধ উত্তোলনের অভিযোগ অস্বীকার করে এবং ঋণ মওকুফ করতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে কুয়েত-ইরাক সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে পৌঁছায়।

১৯৯০ সালের জুলাই মাসে সাদ্দাম হুসাইন সরাসরি কুয়েতে সামরিক অভিযানের হুমকি দেন। একইসাথে কুয়েতের সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ শুরু করেন। ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে ইরাক-কুয়েত সীমান্তে ইরাক ৩০,০০০ সেনা মোতায়ন করে। ইরাকের এ ধরনের শত্রুভাবাপন্ন আচরণ দেখে মিশরের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক দুই দেশের মধ্যে শান্তি আলোচনার উদ্যোগ নেন। এ লক্ষ্যে ৩১ জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দায় আরব লিগের বৈঠক বসে। তবে কোনো ধরনের মীমাংসা ছাড়াই ঐ আলোচনা ভেস্তে যায় এবং পরবর্তীতে ২ আগস্ট সাদ্দাম হুসাইন তার সেনাবাহিনীকে কুয়েত আক্রমণের নির্দেশ দেন।

১৯৮৯ সালে কুয়েতি আমির শেখ জাবের আল আহমেদ আল সাবাহর সাথে সাদ্দাম হুসাইন; Image Source: gulfnews.com

১৯৯০ সালের ২ আগস্ট রাত দুটোর দিকে অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ইরাকি বাহিনী বর্ডার পার হয়ে কুয়েতে ঢুকে পড়ে। কুয়েতি আর্মি মধ্যরাতের এই তীব্র আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। সেই সুযোগে খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে ইরাকি সেনারা গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা এবং কুয়েতের আমিরের বাসভবন দখল করে নেয়, যদিও আমির সপরিবারে বিমানে করে সৌদি আরবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। যেসব কুয়েতি নাগরিক এই হামলার প্রতিবাদ করেছিল তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। অনেককে হত্যা করা হয়। ১২ ঘন্টার মধ্যে কুয়েতের যাবতীয় প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে যায় এবং সাদ্দাম হুসাইন কুয়েতকে ইরাকের ১৯তম প্রদেশ হিসেবে ঘোষণা করেন।

ইরাকের এই আগ্রাসন প্রায় ১০০০ কুয়েতি নাগরিকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রায় চার লক্ষ মানুষ কুয়েত ছেড়ে চলে যায়। তাদের অনেকেই সৌদি আরব সহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়। ভারতীয় সরকার কুয়েতে অবস্থানরত তাদের এক লক্ষ সত্তর হাজার নাগরিককে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে দেশে ফিরিয়ে আনে। তবে এই হামলার মাধ্যমে আপাতভাবে ইরাক যথেষ্ট লাভবান হয়। সমগ্র পৃথিবীর তেল সরবরাহের ২০ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের একটি বড় অংশ তখন তাদের নিয়ন্ত্রণে।

কুয়েতগামী ইরাকি সৈন্যের একটি দল; Image Source: Raven Tribune

তবে কুয়েতে ইরাকের এই মধুচন্দ্রিমা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ইরাকি আগ্রাসনের কয়েকঘন্টার মধ্যে জাতিসংঘে নিয়োজিত কুয়েত ও আমেরিকার সদস্যদের অনুরোধে নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে এবং নিরাপত্তা পরিষদ ইরাকের এই আগ্রাসনকে পুরোপুরি অবৈধ ঘোষণা করে ও ইরাককে কুয়েত থেকে সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানায়। তবে ইরাক তা নাকচ করে দেয়।

৩ আগস্ট আরব লিগের জরুরি বৈঠক বসে এবং আরব লিগও ইরাককে কুয়েত থেকে সৈন্য অপসারণের আহ্বান জানায়। ইরাক তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকে। চারদিন পর নিরাপত্তা পরিষদ ইরাকের ওপর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তাতেও ইরাকের সিদ্ধান্তের কোনো হেরফের হয় না। ফলে ৭ আগস্ট থেকে আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের সামরিক উপস্থিতি বৃদ্ধি করতে থাকে। তারা পার্সিয়ান গালফে চারটি যুদ্ধ জাহাজ ইউএসএস আইজেনহাওয়ার, ইউএসএস ইন্ডিপেন্ডেন্স, ইউএসএস মিসৌরি এবং ইউএসএস মিসকনসিন মোতায়ন করে। সাদ্দাম হুসাইনও কম যান না। আমেরিকাকে তোয়াক্কা না করে তিনি কুয়েতে সৈন্য সংখ্যা ৩,০০,০০০ এ উন্নীত করেন। মধ্যপ্রাচ্যে আরও একবার বেজে ওঠে যুদ্ধের দামামা।

ইরাকের এরূপ একরোখা মনোভাব দেখে জাতিসংঘ ইরাককে কুয়েত থেকে সেনা অপসারণের জন্য একটি সময়সীমা বেঁধে দেয়। ২৯ নভেম্বর নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশনে ‘রেজল্যুশন ৬৭৮’ পাস হয় এবং এতে বলা হয়, ইরাককে ১৫ জানুয়ারি, ১৯৯১ তারিখের মধ্যেই কুয়েত থেকে সকল সৈন্য অপসারণ করতে হবে। তা না হলে জাতিসংঘ ইরাকের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চালাতে বাধ্য হবে।

নভেম্বর ২৯, ১৯৯১ তারিখে বসা নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে ইরাক আক্রমণের বৈধতা দেয়া হয়; Image Source: Gulf News

আমেরিকা এই সময়ের মধ্যে ইরাকের বিরুদ্ধে মিত্র বাহিনী দাঁড় করিয়ে ফেলে। ৩৪টি দেশ নিয়ে মিত্র বাহিনী গঠিত হয়, যাদের মধ্যে ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্স, মিশর, তুরস্ক ইত্যাদি দেশ উল্লেখযোগ্য। সর্বমোট ছয় লক্ষ ষাট হাজার সৈন্যের মিত্রবাহিনীর মধ্যে আমেরিকার সৈন্যই ছিল ৭৪ শতাংশ। এই সময়ের মধ্যে ইরাক এবং পশ্চিমা মোড়লদের মধ্যে শান্তি আলোচনাও চলতে থাকে। আমেরিকার ভাষ্য ছিল, শান্তি প্রক্রিয়া তখনই শুরু হবে যখন ইরাক সম্পূর্ণভাবে কুয়েত থেকে সৈন্য অপসারণ করবে। আর ইরাক বলছিলো, তারা তখনই কুয়েত থেকে সৈন্য অপসারণ করবে যখন সিরিয়া লেবানন থেকে এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর, গাজা উপত্যকা এবং সিরিয়ার গোলান মালভূমি থেকে সেনাবাহিনী অপসারণ করে নেবে। দুই দেশের এই অনড় মনোভাবের কারণে কোনো আলোচনাই শেষপর্যন্ত সফলতার মুখ দেখেনি।

নিরাপত্তা পরিষদের বেঁধে দেয়া সময়সীমা অতিক্রমের একদিন পর ১৭ জানুয়ারি মিত্রবাহিনী ইরাকের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম’ শুরু করার মাধ্যমে সূচনা করে পার্সিয়ান গালফ যুদ্ধের। ঐদিন সকাল থেকে শুরু করে পরবর্তী দিনগুলোতে ইরাকের মাটিতে প্রতিদিন প্রায় ১,০০০ এর বেশি বিমান  হামলা শুরু হয়। মিত্রবাহিনীর প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল ইরাকের বিমানবাহিনীর ধ্বংস নিশ্চিত করা, যা তারা খুব দ্রুতই অর্জন করে ফেলে। মিত্রবাহিনীর আধুনিক যুদ্ধবিমানগুলোর সামনে ইরাকের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ফলে যুদ্ধের প্রথমদিন ইরাক মাত্র একটি মিত্রবাহিনীর বিমান ভূপাতিত করতে সক্ষম হয়। মিত্রবাহিনীর বিমান এবং মিসাইল হামলাগুলোর অধিকাংশই পরিচালিত হয় সৌদি আরবের মাটি থেকে।

১৮ জানুয়ারি, ১৯৯১ তারিখ রাতে মিত্রবাহিনীর বিমান লক্ষ্য করে ছোড়া ইরাকের মিসাইল; Image Source: theatlantic.com

মিত্রবাহিনীর দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল ইরাকের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দেয়া, যাতে করে সাদ্দাম হুসাইন এবং তার সরকারের কোনো নির্দেশ যুদ্ধরত সৈন্যদের কাছে না পৌঁছে। মিত্রবাহিনীর কমান্ডোরা আশা করছিলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করতে পারলে ইরাকের প্রতিরোধ খুব দ্রুতই গুঁড়িয়ে যাবে। এক্ষেত্রেও মিত্রবাহিনী খুব দ্রুতই সফলতা অর্জন করে। যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহে ইরাকের ৩৮টি মিগ বিমান ভূপাতিত করা হয়।

মিত্রবাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত একটি ইরাকি স্যাটেলাইট; Image Source: theatlantic.com

ইরাকের বিমানবাহিনী এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ধংসের পর মিত্রবাহিনী ইরাক এবং কুয়েতে অবস্থিত সামরিক স্থাপনাগুলোর দিকে নজর দেয়। একের পর এক বিমান হামলায় ইরাকের সামরিক স্থাপনাগুলো বিধ্বস্ত হতে থাকে। মিত্রবাহিনী একইসাথে বিমান হামলা চালাতে থাকে ইরাকের পাওয়ার প্ল্যান্ট, নৌ-বন্দর, তেল শোধনাগার, রেলওয়ে স্টেশন, ব্রিজ ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে। ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে বাগদাদে পরিচালিত এক বোমা হামলায় অসংখ্য ইরাকি নাগরিক মৃত্যুবরণ করে।

মিত্রবাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত একটি ইরাকি ট্যাঙ্ক; Image Source: theatlantic.com

মিত্রবাহিনীর একের পর এক হামলার মধ্যে ইরাকি সেনাবাহিনী যে হাত গুটিয়ে বসে ছিল তা-ও না। তবে তারা সৌদি আরব এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে যেসব মিসাইল হামলা করছিল তা সহজেই মিত্রবাহিনী রুখে দিতে সক্ষম ছিল। ফলে ইরাক মিত্রবাহিনীর তেমন কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারেনি। এরই মধ্যে ইরাক পার্শ্ববর্তী দেশ ইসরায়েলে মিসাইল হামলা চালায় এই আশায় যে, এর ফলে হয়তো ইসরায়েলকে যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলা যাবে। ফলে অন্যান্য আরব দেশগুলোর সহানুভূতি পাওয়া যাবে। তবে ইরাকের এই কৌশলও ব্যর্থ হয়। ইসরায়েল মিত্রবাহিনীতে যোগ দেয়নি এবং জর্ডান ব্যতীত অন্যান্য আরব রাষ্ট্র অর্থনৈতিক এবং সামরিকভাবে মিত্রবাহিনীকেই সমর্থন দিয়ে যায়।

২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯১ তারিখে আমেরিকান সৈন্যদের হাতে বন্দী ইরাকি সেনাদের একাংশ; Image Source: theatlantic.com

চারদিক থেকে পর্যুদস্ত ইরাক এই যুদ্ধ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছিলো। অবশেষে ২২ ফেব্রুয়ারি সোভিয়েত ইউনিয়নের দেয়া অস্ত্রবিরতীর চুক্তিতে ইরাক সম্মত হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ইরাক কুয়েত থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করে। ইরাকে ফিরে আসার পূর্বে এসব সৈন্যরা কুয়েতের বেশ কিছু তেলক্ষেত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। ২৭ ফেব্রুয়ারি কুয়েত-ইরাক হাইওয়ে দিয়ে ফেরতরত ইরাকি সৈন্যের বিশাল বহর লক্ষ্য করে মিত্রবাহিনী পুনরায় বিমান হামলা শুরু করে। এই বিমান হামলা এতটাই তীব্র ছিল যে তাতে বিপুল পরিমাণ ইরাকির প্রাণহানি ঘটে এবং তারপর থেকে ঐ রাস্তা মানুষের কাছে ‘হাইওয়ে অব ডেথ’ নামে পরিচিত হয়। ঐ দিনই তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ কুয়েতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয়  ইরাকের ওপর চালানো মিত্রবাহিনীর প্রায় ছয় সপ্তাহব্যাপী অভিজান।

‘হাইওয়ে অব ডেথ’ এ ধ্বংসপ্রাপ্ত ইরাকি বাহিনীর একাংশ; Image Source: Foxtrot Alpha – Jalopnik

১৫ মার্চ কুয়েতের আমির সপরিবারে দেশে ফিরে আসেন, যিনি সমগ্র যুদ্ধ জুড়ে সৌদি আরবে নির্বাসিত ছিলেন। এই যুদ্ধে ১৪৮ জন মার্কিন সেনা, ১০০ জন মিত্রবাহিনীর সেনা এবং ২৫,০০০ ইরাকি সৈন্য মৃত্যুবরণ করে। মিত্রবাহিনী পরিচালিত অপেরাশন ডেজার্ট স্টর্মের ফলে প্রায় ১,০০,০০০ ইরাকি নাগরিক মৃত্যুবরণ করেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে সাদ্দাম হুসাইন ইরাকের কুয়েত আগ্রাসনকে বড় ভুল ছিল বলে স্বীকার করেন।

এখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় যে ইরাকের ইরান আক্রমণ এবং কুয়েত আক্রমণ প্রায় একই ধাচের ছিল। অথচ বিশ্ব মোড়লরা ইরান আক্রমণকে সমর্থন করলেও কুয়েত আক্রমণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। এর কারণ ছিল কুয়েতে প্রাপ্ত ইরাকের বিশাল সাফল্য তাদেরকে সৌদি আরবে হামলা করার মতো কাছাকাছি দূরত্বে নিয়ে যায়। বিশেষ করে সৌদি আরবের হামা তেলক্ষেত্র, যা কি না তাদের অন্যতম প্রধান তেলক্ষেত্র, তা ইরাকের নাগালের মধ্যে চলে আসে। আর তা যদি ইরাক দখল করে নিত তাহলে তারা হয়ে যেত পৃথিবীর তেল সম্পদের প্রধান নিয়ন্ত্রক। তেলের ওপর ইরাকের এই একক নিয়ন্ত্রণ পৃথিবীর শিল্পোন্নত রাষ্ট্র, বিশেষ করে আমেরিকা, ইউরোপ এবং জাপানের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই তারা সর্বশক্তি দিয়ে একসময়ের মিত্র ইরাকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। এর মধ্য দিয়ে তারা আরও একবার প্রমাণ করে দেয় যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দিন শেষে স্বার্থই সব। স্বার্থই আপনকে করে পর এবং পরকে করে আপন।

আগামী পর্বে সাদ্দাম হুসাইনের সন্তানদের সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

This article is in Bangla language. It discusses about the whole scenario of persian gulf war.

Feature Image Source: middleeastmonitor.com

Related Articles