Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রিদ্দার যুদ্ধ: ইসলামের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই || পর্ব-১

৬৩২ খ্রিস্টাব্দ; ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইন্তেকাল করেছেন। এরপর ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন নবীরই (সা.) দীর্ঘদিনের সহচর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.)। মুসলিম বিশ্বের নেতা নির্বাচিত হওয়ার পর আবু বকর (রা.) এক বিরাট চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন। এ সময় আরবদের বিভিন্ন গোত্র বিদ্রোহ ঘোষণা করে, এবং কেউ কেউ নিজেকে নবী বলে দাবি করে। একপর্যায়ে আবু বকর (রা.) এদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেন। ইতিহাসে এটি রিদ্দার যুদ্ধ নামে পরিচিত। 

মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর অনেকগুলো আরব গোত্র আবু বকরের নেতৃত্ব মেনে নেয়নি। শুধু তা-ই নয়, আরব গোত্রগুলো দলে দলে ইসলাম ত্যাগ করতে শুরু করে। এসব বিদ্রোহী গোত্র যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। উপরন্তু, কয়েকজন বিদ্রোহী নেতা নিজেদের নবী বলে দাবি করে। তখন মক্কা ও মদিনা ছাড়া প্রায় সমগ্র আরব উপদ্বীপ আবু বকরের শাসন মানতে অস্বীকার করে। 

খলিফা হওয়ার পর আবু বকর (রা.) আরব গোত্রগুলো থেকে বিদ্রোহের সম্মুখীন হন (চিত্রে তাঁর নামের ক্যালিগ্রাফি); Image Courtesy: Wikimedia Commons 

তবে সবাই যে ইসলাম ত্যাগ করেছিল এমন নয়। তৎকালীন আরব সমাজ ছিল গোত্রভিত্তিক। তারা নিজেদের গোত্রের প্রতি অতিমাত্রায় অনুগত ছিল। গোত্রপতিই ছিলেন সমগ্র গোত্রের প্রতিনিধি। অর্থাৎ গোত্রপ্রধানের ধর্মগ্রহণ বা ধর্মত্যাগ করাকে গোটা গোত্রের সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত হতো। তখন আরবের অধিকাংশ গোত্রপ্রধানই বিভিন্ন স্বার্থ হাসিলের জন্য ইসলাম ত্যাগ করে যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জানায়। গোত্রের যেসব লোক ইসলামের প্রতি অনুগত ছিল, তারাও বহিষ্কারের ভয়ে মুসলিমদের পক্ষ নিতে পারেনি। তবে অনেকেই এসব বিদ্রোহীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। 

তখন মূলত চার ধরনের বিদ্রোহীর আবির্ভাব ঘটে। প্রথমত, যারা ইসলামের একত্ববাদ ছেড়ে ইসলামপূর্ব পৌত্তলিকতায় ফিরে যায়। তারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস হারিয়ে পুনরায় মূর্তিপূজা শুরু করে। তবে, তাদের সংখ্যা ছিল কম। দ্বিতীয়ত, সেসব লোক যারা মুহাম্মদ (সা.)-এর মর্যাদা ও সম্মান দেখে সেই লোভে নিজেদের নবী বলে দাবি করে। মিথ্যা নবুয়তের এই দাবিদারদের অনুসারী ছিল তাদেরই গোত্রের লোকেরা। এ সময় যারা নিজেদের নবী বলে দাবি করেছিল, তারা সবাই ছিল তাদের গোত্রের অত্যন্ত প্রভাবশালী মানুষ। সুতরাং গোত্রের খাতিরে ও এসব প্রভাবশালী লোকের প্ররোচনায় অনেকেই সেসব নবী দাবিকারীদের অনুসরণ শুরু করে। 

তৃতীয়ত, সেসব লোক যারা ইসলাম ত্যাগ করেনি, কিন্তু যাকাত দিতে অস্বীকার করে। এরা যাকাত দেওয়া ছাড়া ইসলামের সকল বিধান ঠিকমতো মেনে চলত। এই শ্রেণীর লোকেরা মনে করত, যাকাত মুহাম্মদ (সা.)-এর যুগের জন্য প্রযোজ্য ছিল। এখন যেহেতু তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন, তাই যাকাত আর বাধ্যতামূলক নয়। চতুর্থত, সেই সকল লোক যারা যাকাতকে অস্বীকার করেনি, কিন্তু যাকাতের সেসব অর্থ মদিনায় পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। এরা মূলত মদিনার শাসনকে মেনে নিতে পারেনি। নিজেদের গোত্রীয় আভিজাত্য থেকে এরা মদিনার প্রাধান্যের বিরোধীতা করে। 

বিদ্রোহীদের একটি অংশ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ যাকাত দিতে অস্বীকার করে; Image Courtesy: Islam Online 

আরবদের গোত্রপ্রীতি ও পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ছিল এই বিদ্রোহের অন্যতম প্রধান কারণ। আরব উপদ্বীপ ছিল গোত্রভিত্তিক একটি অঞ্চল। মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক গঠিত রাষ্ট্রের আগে আরবরা কোনো সুসংগঠিত রাষ্ট্র কিংবা সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল না। এসব কারণে আরবরা গোত্রের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে রাষ্ট্রীয় চিন্তাভাবনা গ্রহণ করতে পারেনি। ফলে তাদের মধ্যে আরব জাতীয়তাবাদের চেয়ে গোত্রপ্রীতি ছিল বেশি। তখন আরব গোত্রসমূহের মধ্যে সম্পর্কও ছিল বেশ উত্তেজনাপূর্ণ। দক্ষিণ আরব ও উত্তর আরবের মধ্যে অনেক আগে থেকেই কঠোর শত্রুতা বিদ্যমান ছিল। আরবের এক গোত্র অন্য গোত্রের কর্তৃত্ব মেনে নিতে পারত না। 

স্বাভাবিকভাবেই আরবের অন্যান্য অঞ্চল মদিনার কর্তৃত্ব মেনে নিতে পারেনি। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে- তারা কেন মদিনাবাসীদের শাসন মেনে নেবে? আরবদের গোত্রপ্রীতি ও অন্য গোত্রের প্রতি বিদ্বেষ যে কতটা প্রকট ছিল তা একটি মন্তব্য থেকেই বোঝা যায়। মুসাইলিমা যখন নিজেকে নবী দাবি করে, তখন তালহা আন-নামরী নামক তার গোত্রের এক লোক মন্তব্য করে,

“আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুসাইলিমা একজন বড় মিথ্যাবাদী, আর মুহাম্মদ হলেন সত্যবাদী। কিন্তু রাবী’আহ গোত্রের মিথ্যাবাদী আমাদের কাছে মুদার গোত্রের সত্যবাদীর চেয়ে অধিক প্রিয়।” 

এই বিদ্রোহ বেগবান হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে রোমান বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ও সাসানীয় পারস্য সাম্রাজ্য কর্তৃক বিদ্রোহীদের সমর্থন দান। বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের সীমান্তবর্তী আরব অঞ্চলগুলোকে তারা মদিনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে উদ্বুদ্ধ করে। এছাড়া ঘাসসানীদ রাজ্যকেও বাইজান্টাইনরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়। বাহরাইনের গোত্রগুলো যখন আবু বকরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তখন পারসিকরা তাদের সাহায্য করে। এই দুই সাম্রাজ্য অনেক আরব গোত্রকে আবু বকরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে অনুপ্রাণিত করে। 

তৎকালীন বিশ্বের দুই পরাশক্তি রোমান বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য ও সাসানীদ পারস্য সাম্রাজ্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের সহযোগিতা করে; Image Courtesy: Wikimedia Commons 

নবুয়তের দাবিদারদের দৌরাত্ম্য বিদ্রোহকে আরো প্রকট করে তোলে। মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পূর্বেই কতিপয় নবুয়তের দাবিদারের আগমন ঘটে। তারা যখন দেখল মুহাম্মদ (সা.) প্রায় সমগ্র আরবকে একত্রিত করে ফেলেছেন, এবং ইসলাম ক্রমেই প্রভাবশালী হয়ে উঠছে, তখন এর সুফল পাওয়ার লোভে কয়েকজন নিজেদের নবী বলে দাবি করে। তারা ছিল ইয়েমেনের আসওয়াদ আল আনসী, ইয়ামামার মুসাইলিমা, গাতফান গোত্রের তুলাইহা এবং সাজাহ বিনতে হারিস নাম্নী এক মহিলা। 

ইয়েমেনের আসওয়াদ আল আনসী মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর প্রায় চার মাস আগেই ইসলাম ত্যাগ করে। তার মূল নাম আবহালাহ ইবনে কাব। আসওয়াদ শব্দে অর্থ কালো। তার গায়ের রং কালো হওয়ায় তাকে আসওয়াদ নামে ডাকা হতো। সে ছিল আনস গোত্রের নেতা। কথিত আছে, আসওয়াদ ছিলেন জাদুবিদ্যায় বেশ পারদর্শী। সে জাদুর বিভিন্ন কেরামতি দেখিয়ে মানুষকে তার প্রতি প্রভাবিত করে ফেলে। আসওয়াদ তার গোত্র এবং তার অনুসারীদের নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করে ইয়েমেনের মুসলিমদের উপর আক্রমণ করে সেখানে ত্রাস সৃষ্টি করে। এমতাবস্থায় ইয়েমেনের মুসলিমরা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। শেষপর্যন্ত মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পাঁচ দিন পূর্বে ফায়রূয আল-দায়লামি নামক এক মুসলিম তাকে গুপ্তহত্যা করে। মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর কয়েকদিন পর এই খবর মদিনায় পৌঁছে। 

হিজরি নবম বর্ষে তুলাইহা আল আসাদী নামক এক ব্যক্তি নিজ গোত্রের সঙ্গে মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে এসে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। তুলাইহা ছিল একজন গণক ও জাদুকর। সে উপস্থিত কবিতা রচনা করতে ও বক্তব্য দিতে পারত। মদিনা থেকে ফিরে যাওয়ার পর সে নিজেকে নবী দাবি করে। তখন তার গোত্রের অনেক লোক তার অনুসারী হয়ে যায়। মুহাম্মদ (সা.) তুলাইহাকে দমনের জন্য দিরার ইবনুল আযওয়ার (রা.)-কে প্রেরণ করেন। কিছুদিন পর মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করলে আযওয়ার মদিনায় ফিরে আসেন। এই সুযোগে তুলাইহা শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে, এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুকে নিজের পক্ষে প্রচারণা চালাতে থাকে। 

মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর আরবের বিভিন্ন অঞ্চলে নবী দাবিকারীদের আবির্ভাব ঘটে; Image Courtesy: Engaging with Islam

মুহাম্মদ (সা.)-এর মৃত্যুর পর পুরুষদের পাশাপাশি সাজাহ বিনতে হারিস নাম্নী এক মহিলাও নিজেকে নবী দাবি করে। সে ছিল মধ্য আরবের বনু ইয়ারবূ গোত্রের সদস্য। তাগলিব ও তামীম গোত্রের অনেক লোকই তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে। 

নবী দাবিকারীদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ছিল মুসাইলিমা। সে ছিল ইয়ামামার হানিফা গোত্রের নেতা। নবম হিজরিতে হানিফা গোত্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সে-ও মদিনায় যায়। কিন্তু মদিনায় এসে মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতিপত্তি দেখে সে আকৃষ্ট হয়ে নিজেও এমন প্রভাব-প্রতিপত্তির মালিক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে পড়ে। ইয়ামামায় ফিরে গিয়ে সে নিজেকে নবী দাবি করে, এবং প্রচারণা চালাতে থাকে যে মুহাম্মদ (সা.) তাকে নিজের অংশীদার হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। 

মুসাইলিমার এহেন প্রচারণার ফলে নিজ গোত্রসহ ইয়ামামার আরো অনেক গোত্র তার অনুসারী হয়ে পড়ে। মুসাইলিমা খুব সুন্দর করে কথা বলতে পারত, এবং সে খুব সুন্দর চেহারার অধিকারী ছিল। তার বিভিন্ন গুণের ফলে শীঘ্রই তার অনুসারীর সংখ্যা বেড়ে যায়। সে আরো প্রচারণা চালায় যে নামাজ ও যাকাতের কোনো প্রয়োজন নেই, এবং মদপান নিষিদ্ধ নয়। ফলে তার দল আরো বেশি ভারি হয়ে ওঠে। মুসাইলিমার অনেক অনুসারী তাকে মিথ্যাবাদী ও খারাপ লোক বলে জানার পরেও শুধুমাত্র গোত্রপ্রীতির জন্য তার অনুসরণ করতে থাকে। 

৬২৯ সালে সংঘটিত মুতার যুদ্ধে শহীদ হওয়া মুসলিমদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে মুহাম্মদ (সা.) অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। তাই মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে তিনি মুতার যুদ্ধে শহীদ হওয়া তার পালিত সন্তান জায়েদের পুত্র উসামার নেতৃত্বে বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে এক অভিযানের নির্দেশ দেন। কিছুদিন পর মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুবরণ করলে নতুন খলিফা আবু বকর (রা.) তার বাহিনীকে বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে অভিযানের জন্য প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দেন। 

কিন্তু সমস্যা হলো তখন বিদ্রোহী আরব গোত্রগুলো সামরিক প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ফলে মুসলিমরা যদি বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, তবে মদিনায় বিদ্রোহীদের আক্রমণ চালানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়। তারা চেয়েছিলেন এই সংকটময় মুহূর্তে মুসলিমরা যেন একে অপরের থেকে আলাদা হয়ে না পড়ে। এজন্য উসামাসহ অনেক নেতা খলিফাকে আপাতত বাইজান্টাইন অভিযান স্থগিতের পরামর্শ দেন। কিন্তু আবু বকর ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি যেকোনো মূল্যে মুহাম্মদ (সা.) এর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চেয়েছিলেন। খলিফার নির্দেশে শেষপর্যন্ত উসামার নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী বাইজান্টাইন অভিমুখে যাত্রা করে। 

তখন ইসলামী খিলাফতের রাজধানী ছিল মদিনা (ছবিতে মদিনার বর্তমান চিত্র); Image Courtesy: Saudi News

এ সময় আরবের কয়েকটি গোত্র মদিনায় তাদের প্রতিনিধিদল পাঠায় খলিফার সঙ্গে সমঝোতা করার জন্য। তারা ইসলামের সকল বিধান মেনে চললেও মদিনায় যাকাত পাঠাতে অস্বীকার করে। কিন্তু আবু বকর (রা.) তাদের প্রস্তাব মেনে নেননি। তিনি তাদেরকে রাষ্ট্রের জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করেন। এসব প্রতিনিধি দল সমঝোতা করতে না পেরে শেষপর্যন্ত ফিরে যায়। কিন্তু তারা দেখে যায় যে আবু বকর (রা.) এক বিশাল বাহিনী সিরিয়ার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছেন এবং মদিনা অরক্ষিত। তারা এই সময়কে মদিনা আক্রমণের জন্য আদর্শ হিসেবে মনে করেন। আবু বকর (রা.)-ও এ সময় বিদ্রোহীদের দ্বারা মদিনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করছিলেন। তাই তিনি মদিনাকে রক্ষার ব্যবস্থা করতে থাকেন। তিনি কয়েকজন সাহাবীর নেতৃত্বে মদিনার আশেপাশে ছোট ছোট নিরাপত্তা বাহিনী নিযুক্ত করেন এবং মদিনার সবাইকে সর্বদা প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন। 

শেষপর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্য হলো। কিছুদিন পর কয়েকটি বিদ্রোহী গোত্র মদিনা আক্রমণের জন্য এগিয়ে আসে। বিদ্রোহীদের একটি অংশ যু-হুসা নামক জায়গায় অবস্থান নেয়। অন্য অংশটি মদিনার দিকে আসতে থাকে। এই খবর জানতে পেরে আবু বকর নিরাপত্তা বাহিনীকে যেকোনো মূল্যে তাদের অবস্থান ধরে রাখার নির্দেশ দেন। মদিনা থেকে একটি বাহিনী নিয়ে স্বয়ং আবু বকর বিদ্রোহীদের প্রতিরোধে এগিয়ে যায়। মুসলিমদের তীব্র আক্রমণের প্রেক্ষিতে বিদ্রোহীরা দিশেহারা হয়ে পড়ে। বিদ্রোহীরা ভাবতেও পারেনি যে মুসলিমরা এমন কঠোর আক্রমণ করতে পারে। তারা হতভম্ব হয়ে পশ্চাদপসরণ শুরু করে। 

আবু বকর তার বাহিনী নিয়ে মদিনায় ফিরে মুসলিম বাহিনীকে আরো সুসংগঠিত করেন। তিনি আশঙ্কা করছিলেন যে বিদ্রোহীরা পুনরায় মদিনা আক্রমণ করতে পারে। বিদ্রোহীদের মদিনা আক্রমণের সুযোগ না দিয়ে আগেই আক্রমণ করে তাদেরকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা ভাবেন তিনি। হঠাৎ আক্রমণ করে আবারো বিদ্রোহীদের অবাক করে দেয় মুসলিমরা। এবারও বিদ্রোহীরা প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়। মুসলিমরা বিদ্রোহীদের যুল-কাসসা পর্যন্ত তাড়া করে। আবু বকর মুসলিম বাহিনীর একটি অংশকে সেখানে রেখে মদিনায় ফিরে আসেন। তখন সেখানকার আবস ও যুবইয়ান গোত্রের লোকজন মুসলিমদের ধোঁকা দিয়ে হত্যা করে এবং আশেপাশের মুসলিমদের উপর অতর্কিত আক্রমণ করে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। মুসলিমদের উপর এমন অত্যাচারের কথা শুনে খলিফা আবু বকর (রা.) অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। 

[২য় পর্ব পড়ুন]

This Bangla Content is about the Ridda Wars, where the Medina-centric Islamic Caliphate fought against the rebellious Arab tribes. This is the First part of the Two parts series. The Featured Image is taken from pixabay.com 

Information Sources 

1) Ridda Wars- World History Encyclopedia 

2) Ridda wars Islam, Politics and Arab Elites- Research Gate 

3) History of the Arabs- Philip K Hitti 

4) আবূ বাকর আছছিদ্দীক- ড. আহমদ আলী 

5) আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া; ষষ্ঠ খন্ড- মূল: ইবনে কাসির, অনুবাদ ও সম্পাদনা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ 

Related Articles