Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

যৌনতা নিয়ে বিভিন্ন প্রাচীন সভ্যতায় প্রচলিত অদ্ভুত যত বিশ্বাস

  • প্রাচীন গ্রিসে একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের সঙ্গী হতো একটি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে
  • প্রাচীন রোমানরা লেসবিয়ানদের অস্তিত্বই স্বীকার করতে চাইতো না
  • প্রাচীন চীনে দুজন পুরুষ একে অপরকে ভালোবাসলেও বিয়েটা তারা একজন নারীকেই করতো বংশরক্ষার উদ্দেশ্যে

যৌনতা এমনই একটি বিষয়, যা নিয়ে মানুষের আগ্রহের কোনো শেষ নেই, কোনোদিন হবেও না। বিশেষ করে আজকের দিনে অবসর সময়ে বসে আমরা যখন ‘ভালোবাসা’ নামক অনুভূতিটি নিয়ে চিন্তা করি, তখন কখনও কখনও অবচেতন মনে কেউ কেউ ভেবেও থাকেন, “আচ্ছা, আজ থেকে কয়েকশ বছর আগেও কি মানুষ এভাবেই মনের মানুষের প্রতি তাদের অনুভূতি প্রকাশ করতো? এভাবেই কি তারা একে অপরের সাথে আজীবন থাকার প্রতিশ্রুতি দিত?”

তাদের সেই অনুভূতি কেমন ছিল, তা আজ আর জানবার উপায় নেই। তবে আজকের ডিজিটাল যুগের ‘এই আছে-এই নেই’ সম্পর্কের চেয়ে তাদের সম্পর্কের ভিত্তি যে অনেক বেশি মজবুত ছিল, তা বোধহয় না বললেও চলে।

সে যা-ই হোক। সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপারটি ছিল যৌনতা নিয়ে। নারী-পুরুষের মধ্যকার সম্পর্ককেই আমরা সবসময় স্বাভাবিক বলে থাকি। কিন্তু প্রাচীন গ্রিস, রোম, চীনের মতো জায়গাগুলোতে এই স্বাভাবিক সম্পর্ককেই দেখা হতো অস্বাভাবিক হিসেবে। কোনো কোনো জায়গায় তো নারী-পুরুষের ভালোবাসা অনেকের কাছে বিষফোঁড়ার মতোই ঠেকতো! সত্যিই অদ্ভুত, তা-ই না?

চলুন তাহলে আজ একটু ইতিহাসের পাতা থেকে ঘুরে আসা যাক। জেনে নেয়া যাক প্রাচীন নানা সভ্যতায় যৌনতা নিয়ে তাদের ধ্যান-ধারণা কেমন ছিল, সে সম্পর্কেই।

১. প্রাচীন গ্রিস

বলা হয়ে থাকে যে, সমকামিতা বলতে আসলে কী বোঝায় সেই ধারণাই নাকি প্রাচীন গ্রিসের মানুষজনের ছিল না। তবে আসল কথা হলো, সমলিঙ্গের দুজন মানুষের মাঝে আকর্ষণকে যে সমকামিতা বলা যেতে পারে, এ ব্যাপারটিকে যে খারাপ চোখে দেখা হতে পারে- এ অনুভূতিটাও আসলে প্রাচীন গ্রিকদের মাঝে অনুপস্থিত ছিল!

Source: gti travel

কীভাবে? একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের সাথে একটি অল্পবয়স্ক ছেলের সম্পর্ককে খুব স্বাভাবিকভাবেই দেখতো প্রাচীন গ্রিক সমাজ। নিত্যনৈমিত্তিক আর আট-দশটি ঘটনার মতো এটাও তাদের কাছে খুব সাধারণ ব্যাপার ছিল। এমনকি কারো কারো মতে, এটাই নাকি তৎকালীন গ্রিক সংস্কৃতির ভিত্তি বলে বিবেচিত হতো! এ সম্পর্ক যদি একজন পুরুষ ও একটি বালকের মাঝে হতো, তাহলে তাদের কোনো আপত্তি থাকতো না। কিন্তু যদি সেটা দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মাঝে হতো, তাহলেই শুরু হয়ে যেত কানাঘুষা। বিশেষ করে শারীরিক সম্পর্কের সময় নারীর ভূমিকা পালন করা পুরুষকে নিয়েই তারা সবচেয়ে বেশি কথা বলতো।

২. প্রাচীন রোম

যৌনতা নিয়ে প্রাচীন রোমানদের বিশ্বাস ছিল অনেকটা গ্রিকদের মতোই। একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ যদি তার খরিদকৃত অল্পবয়স্ক ক্রীতদাস কিংবা দেহব্যবসায় রত কোনো কিশোরের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে যেত, তাহলে রোমানরা সেটাকে কিছুই মনে করতো না। কেবলমাত্র নারীর ভূমিকা পালন করা পুরুষ সদস্যটিকে তারা মেয়েলী কিংবা শারীরিকভাবে অসুস্থ বলে মনে করতো।

Source: Colosseum Night

পুরুষদের মাঝে সমকামিতাকে সহজভাবে মেনে নিলেও নারীদের মাঝে একই সম্পর্কের ব্যাপারে তাদের ছিল পুরোই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি। লেসবিয়ান তথা সমকামে লিপ্ত নারীদের অস্তিত্বই স্বীকার করতে চাইত না। কবি ওভিড তাই বলেছিলেন, “(এটি এমন এক) চাহিদা যার সম্পর্কে কারোরই কোনো ধারণা নেই।” তিনি আরো যোগ করেন, “প্রাণীজগতে কোনো নারীই অন্য নারীর প্রতি আসক্ত হতে পারে না!” একসময় যখন সত্যি সত্যিই লেসবিয়ানদের সন্ধান পাওয়া গেলো, তখন রোমান সমাজ যারপরনাই বিস্মিত হয়েছিল। রোমান লেখকেরা একে ‘প্রকৃতিবিরুদ্ধ’ এবং ‘যৌনক্ষমতার অপব্যবহার’ বলে ঘোষণা করেছিলেন। এমনকি লেসবিয়ানিজমকে মৃত প্রাণীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার মতো ঘৃণ্যও মনে করা হতো।

৩. প্রাচীন চীন

প্রাচীন গ্রিস আর রোমে তো অনেক ঘোরাঘুরি হলো, এবার একটু আমাদের এশিয়া মহাদেশের চীন দেশেরই প্রাচীনকাল থেকে ঘুরে আসা যাক।

আদিকালে চীনে উপপত্নীর ভূমিকায় যেমন পুরুষদের দেখা যেত, তেমনই দেহব্যবসার কাজেও তারা লিপ্ত ছিল নারীদের মতোই। পুরুষদের মূল্য নির্ধারিত হতো তাদের চেহারার সৌন্দর্যের উপর ভিত্তি করে। যেমন- ওয়েই অঞ্চলের রাজার মিজি জিয়া নামক এক পুরুষ শয্যাসঙ্গী ছিল। যতদিন পর্যন্ত জিয়ার চেহারায় মাধুর্য ছিল, ততদিনই রাজার কাছে তার কদর ছিল। সেটা হারাতে শুরু করার পরপর রাজাও যেন আর তার প্রতি তেমন আকর্ষণ বোধ করতেন না।

Source: clipartpig.com

অবশ্য চীনের সাথে গ্রিস আর রোমের পার্থক্য রয়েছে। আগের বর্ণিত দেশ দুটোতে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ও একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলের মাঝে সম্পর্ককে উৎসাহিত করা হলেও প্রাপ্তবয়স্ক দুজন পুরুষের মাঝে সম্পর্ককে একটু অন্যভাবে দেখা হতো। কিন্তু চীনে আবার তেমনটা ছিল না। প্রাপ্তবয়স্ক দুজন পুরুষের মাঝে সম্পর্ককেও তারা স্বাভাবিকভাবেই নিত।

উদাহরণস্বরূপ, রাজা আই ও তার প্রেমিক ডং জিয়ানের মাঝে সম্পর্ক নিয়ে প্রচলিত একটি কাহিনীই শোনানো যাক। একবার জিয়ান নাকি রাজার পরনের কাপড়ের হাতার মাঝেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাজা চাননি জিয়ানকে জাগাতে। তাই তিনি নিজের জামার হাতাটাই কেটে ফেলেন! এরপর আস্তে আস্তে সেই জায়গা থেকে সরে যান যাতে জিয়ানের ঘুম না ভাঙে। এই কাহিনী সভাসদদের এতটাই আবেগাপ্লুত করে তুলেছিল যে, সেই ঘটনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে তারাও নিজেদের জামার হাতা কেটে ফেলেছিলেন।

সে যা-ই হোক, চীনের পুরুষেরা একে অপরের সাথে সম্পর্কে জড়ালেও বিয়েটা তারা একজন নারীকেই করতো। কারণ বংশ তো রক্ষা করা লাগবে!

৪. অ্যাসিরিয়া

প্রাচীনকালে অ্যাসিরীয় সমাজে নিয়ম ছিল যে, কোনো পুরুষ যদি তার প্রতিবেশী অন্য কোনো পুরুষকে শয্যাসঙ্গী হিসেবে বেছে নেয়, তাহলে তাকে খোজা করে দেয়া হবে। নিয়মটি একদিক থেকে সমকামিতা বিরোধী হলেও আসলে তারা আইনের মাঝে এমন সব ফাঁকফোকর রেখেছিল যে, ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে তারা ঠিকই সমকামিতার পক্ষেই কথা বলেছিল।

পুরুষ প্রতিবেশীর সাথে মিলিত না হলেও তৎকালে অ্যাসিরীয় সমাজে পুরুষ দেহব্যবসায়ীর কোনো অভাব ছিল না। কোনো পুরুষ যদি সেসব দেহব্যবসায়ীর দ্বারস্থ হতো, তাহলে আইন তাদের কোনো বাধাই দিত না। এমনকি নারীদের পোশাক পরা পুরুষেরাও ঘুরে বেড়াত, যাদের পেশাই ছিল অপর পুরুষের শয্যাসঙ্গী হওয়া, আর সমাজও এটাকে অন্যরকম কিছু বলে মনে করতো না।

তাদের সমাজে সমকামিতাকে সমর্থন করা হতো। তবে কোনো পুরুষ যদি অন্য কোনো পুরুষকে তার জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে চাইতো, তাহলে তারা মনে করতো লোকটির উপর শয়তান ভর করেছে!

৫. মধ্যযুগীয় জাপান

জাপানের কথা মনে হলে আমাদের মাথায় অল্প যে কয়টি শব্দ চলে আসে, ‘সামুরাই’ তার মাঝে একটি। এখন তাহলে এই সামুরাই যোদ্ধাদের দিকেই নজর ফেরানো যাক।

চতুর্দশ শতকে জাপানে সামুরাই সম্প্রদায়ের অনেকে তাদের গৃহে আশ্রিত বালকদেরকে শয্যাসঙ্গী হিসেবে নিতে শুরু করে দিয়েছিল। আজকের লেখার একেবারে শুরুতে গ্রিসের সম্পর্কে যেমনটা বলা হয়েছে, জাপানের বেলাতেও ব্যাপারটা অনেকটা তেমনই ছিল। একজন বয়স্ক লোকের ভালোবাসার মানুষটি হতো একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলে। তাদের মাঝে এতটাই প্রচলিত ছিল যে, একবার এক সামুরাই বলেছিলেন, “একজন আশ্রিত, অল্পবয়স্ক ভালোবাসার বালক ছাড়া একজন পুরুষ যেন বাগদত্তবিহীন এক তরুণীরই মতো।”

অবশ্য গ্রিকদের মতো দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মাঝে ভালোবাসাকে জাপানীরা অন্যভাবে দেখতো না। তাদের এটা বরঞ্চ ছিল ‘দুটো বৃদ্ধ চেরিগাছের এখনও ফুল দিয়ে যাওয়া’র মতো পরিস্থিতি।

Source: Archaeological Tours

আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, স্বাভাবিক যৌন সম্পর্কের চেয়ে সমকামিতার বিষয়ে তৎকালীন জাপানী সমাজ কিছু ক্ষেত্রে বেশি সহনশীল ছিল। কোনো কোনো জাপানী পুরুষ তো নারী-পুরুষের ভালোবাসাকে একেবারেই অসহ্য বলে মনে করতো। চীনাদের মতো জাপানীরা সমকামিতায় লিপ্ত হলেও বংশরক্ষার্থে বিয়ে করতো একজন নারীকেই। তবে কারো কারো কাছে সেটা ছিল বেশ বড়সড় এক বোঝা।

ভালোবাসা কি পুরুষে-পুরুষে হওয়া উচিত নাকি নারী-পুরুষে, তা নিয়ে প্রায় সময়ই তর্ক জমে উঠতো। একেক পক্ষ সেখানে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির পক্ষে একেকরকম যুক্তি উপস্থাপন করতো। কেউ কেউ এতটাই নারীবিদ্বেষী থাকতো যে, সমকামিতার পক্ষে সাফাই গাইতে বলে উঠতো, “নারী এমনই এক সৃষ্টি, যার আসলে কোনো প্রয়োজনীয়তাই নেই (!), অপরপক্ষে সমকামিতাই হলো প্রকৃত ভালোবাসা।”

Featured image: Funnyjunk

Related Articles