Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বোট মেইল: ভারত-শ্রীলঙ্কা সংযুক্ত করা ট্রেন-স্টিমার সার্ভিস

১৯৭০-এর দশকে মধ্যপ্রাচ্য সারাবিশ্বের কাছে যা হয়ে উঠেছিল, উনবিংশ থেকে বিংশ শতাব্দীর মধ্যে শ্রীলঙ্কাও (তৎকালীন সিলন) ঠিক তা-ই হয়ে উঠেছিল। সুযোগের দেশ, যেখানে অর্থ-সম্পদ ওড়ে। পুরো বিশ্বের চায়ের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য ব্রিটিশরা দ্বীপটিতে বেশ কয়েকটি চা বাগান স্থাপন করে, তবে সেগুলো চালানোর মতো পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রমিক ছিল না সেখানে। সেজন্য দুই উপনিবেশের মধ্যে মানুষ এবং পণ্য পরিবহনের সুবিধার জন্য ইংরেজ প্রশাসকরা তাদের দুই উপনিবেশের মধ্যে রেল সংযোগ তৈরির কথা ভাবতে থাকে।

উনবিংশ শতাব্দীর শ্রীলঙ্কান চা বাগান; Image Source: Lankapura

দেশ দুটোকে সংযোগ দেওয়ার প্রথম ধাপ ছিল চেন্নাই (তৎকালীন মাদ্রাজ) থেকে তুতিকোরিন পর্যন্ত রেললাইন তৈরি, যেখানে যাত্রীরা নেমে একটি বাষ্পীয় জাহাজে চেপে কলম্বো পৌঁছাবেন। উনবিংশ শতকের শেষের দিকে চালু হওয়া এই দীর্ঘ ক্লান্তিকর ভ্রমণ শেষ হতে সময় লাগবে প্রায় দুই দিন। কারণ ৭০৯ কিলোমিটারের ট্রেন যাত্রা করতেই সময় লেগে যায় ২১ ঘন্টা ৫০ মিনিট, তার সাথে দুই বন্দরকে সংযোগ দেওয়া জাহাজটি মানুষ এবং পণ্য পরিবহন করতে সময় নেবে ২১ ঘণ্টা থেকে ২৪ ঘণ্টা।

ইংরেজরা অবশ্য ১৮৭০-এর দশকের শুরু থেকেই ভারত ও সিলনকে সংযুক্ত করার জন্য পাল্ক স্ট্রেইটের ওপর দিয়ে সেতু নির্মাণ করার পরিকল্পনা ছিল। পরিকল্পনাটি ছিল অ্যাডামস ব্রিজ বা রাম সেতুর ওপর একাধিক সেতু নির্মাণ করা, যা ভারতের দক্ষিণ প্রান্তের সাথে পাম্বান (রামেশ্বরম) দ্বীপ, মান্নার দ্বীপ এবং বাকি শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্ত করবে। অর্থাৎ, কলম্বো এবং ভারতের মধ্যে একটি অবিচ্ছিন্ন রেল সংযোগ তৈরি হবে।

ভারতের দক্ষিণ প্রান্ত পাম্বান দ্বীপের ধনুষ্কোদি থেকে শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপের তালাইমান্নার পর্যন্ত সাগরের ওপর দিয়ে রেললাইন তৈরির পরিকল্পনা ছিল ইংরেজদের; Image Source: Google Maps

ডেলফিন প্রেমা ধানাসিলি এক গবেষণাপত্রে উল্লেখ করেন,

“রেল সেতু নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চালানোর পর মন্ডপম থেকে পামবান এবং ধনুষ্কোদি থেকে তালাইমান্নার পর্যন্ত আনুমানিক ২৯৯ লক্ষ রুপি ব্যয়ে একটি রেল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাব ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পেশ করা হয়েছিল। এই ধারাবাহিক রেললাইনের দীর্ঘতম সেতুটি প্রায় ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ হবে, যা সিলনের মান্নার দ্বীপের প্রান্তে থাকা তালাইমান্নার থেকে পামবান দ্বীপের প্রান্তে থাকা ধনুষ্কোদিকে সংযুক্ত করবে। লন্ডন প্রস্তাবের বেশিরভাগ অংশকে প্রত্যাখ্যান করলেও পামবান সেতু নির্মাণের জন্য ৭০ লক্ষ রুপি মঞ্জুর করেছিল, যা মূল ভূখণ্ডের মণ্ডপমকে রামেশ্বরমের সাথে সংযুক্ত করবে।

রোলিং লিফট ব্রিজ আবিষ্কারের জন্য বিখ্যাত আমেরিকান প্রকৌশলী উইলিয়াম শেরজারের ডিজাইন করা সেতুটির কাজ শুরু হয় ১৯০২ সালে। সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রয়োজন হওয়া ২ হাজার টন স্টিল নিয়ে আসা হয় ইংল্যান্ড থেকে। ধানিসিলি তার গবেষনাপত্রে উল্লেখ করেন, “যেহেতু প্রকৌশলীরা ফেরি সার্ভিসে বাধা না দিয়ে রেললাইনের সংযোগ দিতে চেয়েছিলেন, তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ শেরজারের সাথে যোগাযোগ করে। ফেরি বা জাহাজ নিচ দিয়ে যাওয়ার সময় সেতুটির ৬৫ মিটার দীর্ঘ রোলিং টাইপ লিফট স্প্যানটিকে আলাদা করে উঁচু করে ফেলা যেত, যাতে সেতুর গায়ে জাহাজের ধাক্কা না লাগে।

ওপরে তুলতে সক্ষম স্প্যান; Image Source: Wikimedia Commons

তবে ঘূর্ণিঝড় এবং কলেরার প্রাদুর্ভাবের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সেতু নির্মাণের কাজ ধীর হয়ে পড়ে। ২,০৬৫ দীর্ঘ সেতুটি অবশেষে ১৯১৩ সালে প্রস্তুত হয়। ১৯১৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন হওয়া সেতুটি ভারতের প্রথম সমুদ্র সেতু এবং একবিংশ শতাব্দীতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা-ওরলি সি-লিংক তৈরি না হওয়া পর্যন্ত দেশের দীর্ঘতম সেতু ছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের জন্য বিশাল এই অর্জনকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অনুষ্ঠানের সভাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মাদ্রাজের গভর্নর জন সিনক্লেয়ার, সাথে উপস্থিত ছিল সিলনের গভর্নর রবার্ট চালমারস এবং সাউথ ইন্ডিয়ান রেলওয়েজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নেভিল প্রিস্টলি।

বোট মেইলের জন্ম

বোট মেইল নামে পরিচিত ইন্দো-সিলন এক্সপ্রেস প্রচুর ধুমধামের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে, লাভ করে আন্তর্জাতিক প্রচারও। ১৯১৪ সালের ৪ এপ্রিল দ্য বোস্টন ইভনিং ট্রান্সক্রিপ্টে লেখা হয়, “কলম্বো থেকে তুতিকোরিন পর্যন্ত দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রার দুর্দশা এবং সী-সিকনেসের অবসান ঘটবে।

কলম্বো থেকে তুতিকোরিন (বর্তমান থুথুকোডি) পর্যন্ত সমুদ্র যাত্রার রুট; Image Source: Wikimedia Commons

ঔপনিবেশিক প্রশাসকরা এরপরও ধনুষ্কোদিকে তালাইমান্নারের সাথে সংযুক্ত করার স্বপ্ন দেখছিলো। সংবাদপত্রে লেখা হয়,

ছোট ছোট চ্যানেল দিয়ে ভাগ করা প্রবাল এবং বালির তীর দিয়ে বানানো এই দেয়ালের ওপর দিয়ে একটি রেলপথ তৈরি করা যায় কিনা সেই সম্পর্কে দুজন দক্ষ প্রকৌশলীকে কাজে লাগানো হয়। একজন ভারতীয় সরকারের পক্ষে কাজ করছিল, অন্যজন সিলন সরকারের জন্য। এবং দুইজনই সিদ্ধান্ত নেয় এটি করা সম্ভব।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়। তবে রেল এবং ফেরির যুগ্ম সার্ভিসটি এক বাণিজ্যিক সাফল্য ছিল।

বোট মেইলটি এগমোর থেকে ছেড়ে গিয়ে ধনুষ্কোদির বন্দরে গিয়ে শেষ হবে। যাত্রীরা ট্রেন থেকে নামার সাথে সাথে ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা চালানো হয়। এরপর ভারতীয় এবং শ্রীলঙ্কান যাত্রীদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর স্টিমারে ভ্রমণের জন্য একটি পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। তালাইমান্নার থেকে ভারতে ভ্রমণকারীদের জন্য একইরকম আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন ছিল।

ধনুষ্কোদি থেকে তালাইমান্নার পর্যন্ত যাওয়া স্টিমার (আনুমানিক ১৯৫০); Image Source: Scroll.in

স্টিমার সার্ভিসে প্রথমদিকে ইংরেজদের একচেটিয়া আধিপত্য ছিল। প্রথমে আরউইনের মতো ভাইসরয়ের নামে জাহাজের নামকরণ করা হয়েছিল। অবশেষে ১৯৪০ এবং ১৯৫০-এর দশকে ভারতীয়রা বাজারে প্রবেশ করে, সাথে শ্রীলঙ্কানরাও।

১৯১৪ সালে চালু হওয়ার সময় ট্রেনটির ১২টি বগিতে ৩০০ জন যাত্রী নেওয়ার ধারণক্ষমতা ছিল। ট্রেন যাত্রার ভারতীয় অংশ ছিল মিটারগেজ রেলপথে, অন্যদিকে তালাইমান্নার থেকে কলম্বো অংশটি ছিল ব্রডগেজে। টিকিট ইংরেজি, তামিল এবং সিংহলী ভাষায় ছাপা হতো। এছাড়াও উপমহাদেশে ট্রেন ভ্রমণের তিন-শ্রেণি ব্যবস্থার পাশাপাশি বোট মেইলে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য আলাদা বিশেষ ওয়াগনও ছিল। সময়ের সাথে সাথে সিংহলী বৌদ্ধ তীর্থযাত্রীরা ট্রেনে চেপে মাদ্রাজ পর্যন্ত গিয়ে সেখান থেকে বোধগয়া, সারনাথ এবং বুদ্ধের জীবনের সাথে জড়িত অন্যান্য স্থানগুলোতে তীর্থভ্রমণ করতে শুরু করে। উভয় দেশের তামিল তীর্থযাত্রীরাই রামেশ্বরমে যাওয়ার জন্য ট্রেনে উঠতো, যেটি দীর্ঘকাল ধরে ভারতের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।

বোধগয়ার দ্য গ্রেট বুদ্ধ স্ট্যাচু; Image Source: Getty Images/Andrea Pistolesi

বোট মেইলের প্রথম শ্রেণির বগিতে ভ্রমণের জন্য কেবল ইউরোপীয়দের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কানসহ অন্যান্যরা যতই ধনী ব্যবসায়ী হোক না কেন, দ্বিতীয় শ্রেণির ব্যবহার করতে পারত।

শ্রীলঙ্কায় ভাগ্যের অন্বেষণে

ডাল, শাকসবজি, ফলমূলসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রেনটি ব্যবহার করতো ব্যবসায়ীরা, যেগুলোর জন্য শ্রীলঙ্কা সম্পূর্ণ ভারতের ওপর নির্ভরশীল ছিল। যখন শ্রীলঙ্কার পার্বত্য দেশের চা বাগানে কাজ করার জন্য ইংরেজরা তামিলনাড়ু থেকে শ্রমিক পাঠাতে থাকে, তখন সিংহল-সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রীলঙ্কায় জনসংখ্যার ভারসাম্য সংখ্যালঘু তামিলদের দিকে ঝুঁকে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

শ্রীলঙ্কায় অঞ্চলভেদে তামিল ও সিংহলীদের আনুপাতিক মানচিত্র; Image Source: Reddit

দুই ইংরেজ উপনিবেশের মধ্যে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের ওপর তেমন বাধানিষেধ ছিল না। ফলে দক্ষিণ ভারতরা সহজেই শ্রীলঙ্কায় তাদের ভাগ্য ফেরানোর জন্য শ্রীলঙ্কায় ভিড়তে থাকে। এরই সুযোগ নেয় প্রচুর তামিল এমং মালয়ালিরা। ফলে দ্বীপের সিংহলীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ভারত সরকারের হিসাব অনুসারে, ১৯৪৪ সালে শ্রীলঙ্কার ৯০% পাইকারি বিক্রেতা, ৬০% মাঝারি ব্যবসায়ী এবং ৪০% খুচরা বিক্রেতা ছিলেন ভারতীয়রা। অর্থনীতির ওপর ভারতীয়দের এই আধিপত্য সলোমন বন্দরনায়েকেকে শঙ্কিত করে তুলেছিল, যিনি ১৯৫৬ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪১ সালে স্থানীয় গণয়ামধ্যমের কাছে মন্তব্য করতে গিয়ে তিনি বলেন,

সকল ব্যবসা-বাণিজ্য, গ্রামের ক্ষুদ্রতম বুটিক, গ্রামের দোকান থেকে শুরু করে আমাদের শহরগুলোর সবচেয়ে বড় ব্যবসাটি পর্যন্ত বহিরাগতদের নিয়ন্ত্রিত। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতীয়রা। জমিগুলোও দ্রুত বড় ভারতীয় পুঁজিপতিদের হাতে চলে যাচ্ছে। আমাদের মধ্যে বেকারত্ব ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এটা আসলেই এখন বেঁচে থাকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সলোমন বন্দরনায়েকে; Image Source: Next Travel Sri Lanka

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুই দেশই যখন স্বাধীনতা অর্জন করে, তখন শ্রীলঙ্কানদের নির্দেশে ভিসা চালু করা হয়। উন্নত জীবনের খোঁজে পাল্ক প্রণালী পেরিয়ে যাওয়া আর সহজ হবে না।

তবে দক্ষিণ এশিয়ায় ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পরও ট্রেন সার্ভিসটি চালু ছিল। ১৯৫০-এর দশকে, এগমোর থেকে ধনুষ্কোদি পর্যন্ত ৬৭৫ কিলোমিটার যাত্রার সময় ১৯ ঘণ্টায় নেমে আসে। ট্রেনটি মাদ্রাজ থেকে রাত ৮টায় ছেড়ে পরদিন বিকেল ৩টায় পৌঁছাতো। ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা এক ঘন্টার মধ্যে শেষ হতো এবং তারপর তালাইমান্নার পর্যন্ত সাড়ে তিন ঘন্টার যাত্রা শুরু হতো। যারা কলম্বোতে যাবেন তারা তালাইমান্নার ফোর্ট নাইট মেইলটি দিয়ে চলে যেত। রুটটি শুরু হয়েছিল তালাইমান্নার ঘাট থেকে কজওয়ে পেরিয়ে মধ্য ও দক্ষিণ শ্রীলঙ্কার দেদুরু ওয়া এবং মাহা ওয়ার মতো সুন্দর জলাশয়ের উপর দিয়ে কলম্বো পর্যন্ত।

অতঃপর দুর্ঘটনা

১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত ইন্দো-সিলন এক্সপ্রেস স্বাভাবিকভাবেই চলছিল, তবে এক প্রাকৃতিক দুর্যোগে সব বদলে যায়। ১৯৬৪ সালের ২২ ডিসেম্বর রাতে ঘন্টায় ২৮০ কিলোমিটার গতিবেগে এবং ২৩ ফুট উঁচু জোয়ারের ঢেউয়ের এক ঘূর্ণিঝড় ধনুষ্কোদিতে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ভেঙে পড়া ট্রেনের লোকোমোটিভের ধ্বংসাবশেষ (B Class 4-6-0 No. 31376); Image Source: The Indian Railways Fan Club (IRFCA)

ঐ রাতেই ৬৫৩ নম্বর প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি রামেশ্বরম থেকে ধনুষ্কোদির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনটির লোকো পাইলটের ধারণা ছিল না যে, ঘূর্ণিঝড় শহরটিকে ইতিমধ্যেই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। ধনুষ্কোদি রেলওয়ে স্টেশনের কাছে আসার সাথে সাথে ১১০ জন যাত্রী এবং ৫ জন রেলকর্মীসহ পুরো ট্রেনটি বিশাল জোয়ারের ঢেউয়ের আঘাতে সমুদ্রে তলিয়ে যায়। বেঁচে ফেরেনি একজনও।

ঘূর্ণিঝড়টি মান্নার এবং ধনুষ্কোদি উভয় পাশেই ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। সরকারি উপাত্ত অনুযায়ী, প্রায় ১,৮০০ জন মারা যায়। ধনুষ্কোদি রেললাইনসহ রেলওয়ের স্থাপনা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়, অনেকখানি ডুবে যায় সমুদ্রে। একসময় ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট শহর ধনুষ্কোদি রূপ নেয় ভুতুড়ে শহরে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে মাদ্রাজ এবং কলম্বোর মধ্যে যাত্রীদের পথ পরিবর্তন হয়ে যায়। তামিলনাড়ু এবং উত্তর শ্রীলঙ্কার মধ্যে যাতায়াতকারী যাত্রীরা রামেশ্বরম-তালাইমান্নার ফেরির মাধ্যমে যাতায়াত শুরু করে, যা ১৯৮৩ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়া পর্যন্ত জনপ্রিয় ছিল।

ধনুষ্কোদির ধ্বংস হয়ে যাওয়া রেলওয়ে স্টেশনের ধ্বংসাবশেষ; Image Source: Wikimedia Commons

বোট মেইলটি এখনও চেন্নাই থেকে রামেশ্বরম পর্যন্ত চলে। ২০১৯ সালে, ভারত সরকার রামেশ্বরম এবং ধনুষ্কোদির মধ্যে ১৭.২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন পুনর্নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল। সাম্প্রতিক গণমাধ্যম রিপোর্ট থেকে জানা যায়, নরেন্দ্র মোদি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও এই প্রকল্পের জরিপ ছাড়া আর কিছুই হয়নি।

গত কয়েক বছর ধরে শ্রীলঙ্কা এবং ভারত উভয় পক্ষই অ্যাডাম ব্রিজের ওপর দিয়ে দুই দেশকে সংযুক্ত করার জন্য একটি রেল ও সড়ক সেতু তৈরির পরিকল্পনার চেষ্টা করলেও দুই দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঝামেলার কারণে তা থেকে কিছুই বেরিয়ে আসেনি। তবে পাল্ক প্রণালীর সাথে ভাগ করে নেওয়া ইতিহাস এবং শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সম্পর্ক যে এখনও টিকে রয়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

This article is in Bangla. It is about the Rail and Steamer Service that linked India and Sri Lanka.

References:
1. Boat Mail: Remembering the train and steamer service from India to Ceylon - Ajay Kamalakaran - Scroll.in
2. The Ceylon Boat Mail - Maddy - Historic Alleys

Related Articles