সভ্যতার বিকাশের অনেক আগে থেকেই মানুষ তার অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সচেষ্ট। নিজের প্রতিভা কাজে লাগিয়ে পাথর ও কাঠে আগুন জ্বালিয়ে, চাকা আবিষ্কার করে, বন্য পশুপাখি পোষ মানিয়ে প্রকৃতির বৈরী পরিবেশকে নিজেদের বসবাসোপযোগী করে তুলেছে। এরপর সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে নিজেরাই নিজেদের অধিকার কুক্ষিগত করতে শুরু করে। এক দল অপর দলের সাথে বৈষম্য সৃষ্টি করতে থাকে। কিন্তু অধিকার আদায়ের স্পৃহাটা যে মানুষের রক্তে প্রবাহিত হচ্ছিলো সৃষ্টির শুরু থেকেই। ফলে যুগে যুগে সৃষ্টি হয়েছে বিপ্লব।
বৈষম্যের শিকার মানুষগুলো ভেঙে দিয়েছে বৈষম্যের প্রাচীর। আর অধিকার বঞ্চিতরা বুঝে নিয়েছে তাদের ন্যায্য হিস্যা। কিন্তু তবুও সভ্য পৃথিবীতে সভ্যতার হাতে হাত রেখে এখনো বাস করছে অধিকার বঞ্চিতদের গল্প। এই অধিকার আদায়ের গল্প নারীদের। এই বৈষম্যের গল্প লিঙ্গ বৈষম্যের। বর্তমান বিশ্বে আলোচিত ও সমালোচিত বিষয়গুলোর তালিকা তৈরি করতে গেলে প্রথমেই যে বিষয়টি শীর্ষস্থানে চলে আসবে, তার নাম নারী-পুরুষের সম অধিকারের দাবি তথা সম অধিকার সংশোধনের দাবি।
নারীবাদীদের এই আন্দোলনকে আধুনিক পৃথিবীর চাহিদা বলে মনে হলেও বিষয়টি কিন্তু মোটেও তা নয়। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার এই সংগ্রাম চলছে প্রায় এক শতাব্দী ধরে। পাশ্চাত্যের নারীবাদী সংগঠনগুলো প্রায় এক শতাব্দী সময় ধরে এ সমাজে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লড়াই করে যাচ্ছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, আজ অবধি নারীবাদীদের এই সম অধিকার সংশোধনের দাবি সফলতার মুখ দেখেনি। এখনো এই সংশোধনী সোনার হরিণ কিংবা নীলগাইয়ের মতোই অধরা হয়ে আছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক সেই সম অধিকার সংশোধনীর আদ্যোপান্ত।
মূলত পশ্চিমা দেশগুলো থেকেই নারীর অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। পশ্চিমা দুনিয়ার নারীবাদীরা নারীর অধিকার কিংবা সম অধিকার চেয়ে প্রথম আন্দোলনে নামেন অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে। সেসময় এই আন্দোলনটি ঘুণে ধরা এই সমাজের ভিত্তিতে প্রথম আঘাত হিসেবে পরিচিতি পায়। তবে অষ্টাদশ শতাব্দীতে এই আন্দোলনের সূত্রপাত হলেও এটি সফলতার মুখ দেখে উনবিংশ শতাব্দীতে। কারণ পশ্চিম তথা যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা ১৯২০ সালে প্রথম ভোটাধিকার অর্জন করেন। তখন নারীদের এই ভোটাধিকার প্রাপ্তিকে শুধুমাত্র একটি অর্জন বললে ভুল হবে, বরং বলা যায়, নারীবাদীদের নিকট এটি ছিল একটি আশা জাগানিয়া গান। কেননা এই অর্জনই সেদিন নারীবাদীদের উসকে দিয়েছিল আরো এক ধাপ সামনে এগিয়ে যেতে।
আর এই ধাপটি ছিল সম অধিকার আইনটির সাংবিধানিক সংশোধন প্রস্তাব। এরই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ওমেন্স পার্টি ১৯২৩ সালের কংগ্রেস অধিবেশনে প্রথম সম অধিকার সংশোধনের প্রস্তাবনা রাখেন। এতে বলা হয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে পুরুষ এবং নারীর সমান অধিকার থাকবে এবং প্রতিটি স্থানেই এই আইনটি বলবৎ থাকবে। এভাবেই উৎপত্তি ঘটে সম অধিকার সংশোধন প্রস্তাবনার।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, এই সহজ সরল বাক্য সংবলিত সমাধিকার সংশোধনীর প্রস্তাবনাটি ১৯২৩ সালে কংগ্রেসে প্রস্তাবিত হলেও, এটি গৃহীত হতে প্রায় অর্ধ শতাব্দী লেগে যায়। আর এই পুরো সময়টা জুড়ে আমেরিকান নারীবাদীদের দ্বারা রচিত হয়েছে এক সংগ্রামী গল্প। যে গল্পের একটি উল্লেখযোগ্য চরিত্রের নাম এলিস পল। এলিস পল ছিলেন ন্যাশনাল ওমেন্স পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান।
অ্যালিস পলের উদ্যোগে ন্যাশনাল উইমেন্স পার্টি ১৯২৩ সালে কংগ্রেসের অধিবেশনে সর্বপ্রথম নারী পুরুষের সমাধিকার আইনটির সাংবিধানিক সংশোধনী প্রস্তাবনাটি উত্থাপন করেন। এতে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও লিঙ্গের ভিত্তিতে সম অধিকার লঙ্ঘিত হবে না। কিন্তু কংগ্রেসের অধিবেশনে কোনো প্রস্তাবনা তো আর আপনা আপনিই গৃহীত হয় না। সেজন্য প্রয়োজন হাউসের দুই-তৃতীয়াংশ সিনেটরদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন। আর বিপত্তিটি বাঁধে ঠিক এখানেই। ১৯২৩ থেকে ১৯৪২ পর্যন্ত কংগ্রেসের কোনো অধিবেশনেই এই প্রস্তাবনা সংখ্যাগরিষ্ঠের মন কাড়তে সক্ষম হয়নি।
অবশেষে এই সংকটময় পরিস্থিতি এড়াতে ন্যাশনাল ওমেন্স পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান পল সংশোধনী প্রস্তাবনাটির মূল বক্তব্যে কিছুটা কৌশলগত পরিবর্তন আনেন। এবার তাদের সংশোধনী প্রস্তাবনার মূল বক্তব্যে তারা বলেন, "সম অধিকার আইনের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রের কোথাও লিঙ্গের ভিত্তিতে নারী পুরুষের অধিকার সংক্ষেপিত এবং এড়িয়ে চলা হবে না"।
এরপরও এই সংশোধনী প্রস্তাবনাটি নিয়ে তাদের পাড়ি দিতে হয় আরো ৩০টি বছর। কিন্ত হাল ছাড়েননি নারীবাদীরা। তারা আগের মতোই কংগ্রেসের প্রতিটি অধিবেশনে নতুন প্রস্তাবনাটি উপস্থাপন করতে থাকেন। অবশেষে ১৯৭২ সালের কংগ্রেসের অধিবেশন যেন তাদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনে। কেননা সে বছর হাউজ ও সিনেটের দুই তৃতীয়াংশ সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে সম অধিকার সংশোধনী প্রস্তাবনাটি কংগ্রেসের অধিবেশনে গৃহীত হয়।
এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের নেপথ্যে কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে আমেরিকায় পুনরায় জেগে উঠেছিল নারীবাদীদের দ্বিতীয় আন্দোলন। এটিই মূলত হাউজ ও সিনেটে সম অধিকার সংশোধনী প্রস্তাবনার পথ সুগম করে দেয়। ১৯৬৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে জেগে ওঠা নারীবাদীদের দ্বিতীয় এই আন্দোলনটি কংগ্রেসের হাউজ ও সিনেটে মুখ থুবড়ে পড়া প্রস্তাবনাটিকে আবার জিইয়ে তোলে। এই আন্দোলনের পরপর নারীবাদের ইতিহাসে আরো একটি অর্জন লিপিবদ্ধ হয়।
আর তা হলো ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে লিঙ্গ বৈষম্য নিষিদ্ধকরণ। এই নিষিদ্ধাদেশ নারীবাদীদের মনে কিছুটা স্বস্তি এনে দিলেও তাদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কেননা শুধু লিঙ্গ বৈষম্য নয়, নারী-পুরুষের অধিকারের সর্বক্ষেত্রে সমতা আনাটাই ছিল তাদের বিপ্লবের মূল লক্ষ্য। আর তাদের এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নারীবাদীদের দ্বিতীয় আন্দোলনের প্রভাব ভীষণ রকম সহায়ক ছিল।
আন্দোলন তখন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বস্তরের জনগণকে এতটাই সম্মোহিত করে রেখেছিল যে, সবাই এই সংশোধনীর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিল। ফলে ঐ সময়টাই পরিচিত হয়ে উঠেছিল সম অধিকার সংশোধনের সময় হিসেবে। ফলস্বরূপ, ১৯৭২ সালে প্রস্তাবনাটি হাউজে ৯৩.৪ শতাংশ এবং সিনেটে ৯১.৩ শতাংশ সমর্থন লাভ করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু অর্ধশতাব্দী ধরে চলমান দীর্ঘ সংগ্রামের এই অর্জন নারীবাদীদের জন্য স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার মতো কোনো ঘটনা ছিল না। কেননা, কংগ্রেসে কোনো আইন পাশ হতে হলে তাকে দু'টি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। যার প্রথম ধাপ সংখ্যাগরিষ্ঠতা।
এবার দ্বিতীয় ধাপ অতিক্রমের পালা। প্রস্তাবটির পক্ষে জনমত যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে একে রাজ্যগুলোতে প্রয়োগ করতে বলা হয়। আর গৃহীত প্রস্তাবনাটিকে ৩৮টি রাজ্যের সমর্থন লাভ করতে হবে। এজন্য কংগ্রেস একে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়। প্রাথমিক পর্যায়ে এই বৈতরণী পার হতে গিয়ে নারীবাদীরা বেশ সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত দেখতে পান। কারণ নারীবাদীর দ্বিতীয় আন্দোলনটি সেসময় এতটাই বেগবান ছিল যে সমস্ত আমেরিকানই নারী পুরুষের সমান অধিকারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন।
তারই ফলাফল হিসেবে, ১৯৭৭ সালের মধ্যে আমেরিকার ৩৫টি রাজ্য এই প্রস্তাবনার পক্ষে সমর্থন দিয়েছিল। কিন্তু সে বছরই ছিল এই প্রস্তাবনার পক্ষে রাজ্যগুলোর মতামত জানানোর শেষ বছর। তবে এটিও প্রস্তাবনাটির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। কেননা নারীবাদীদের ভাগ্য তখন এতটাই সুপ্রসন্ন ছিল যে, কংগ্রেস সেটির মেয়াদকাল আরো ৫ বছর বাড়িয়ে ১৯৭৭ থেকে ৮২ তে নিয়ে যায়।
সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর সংশোধনীটি যখন রাজ্যগুলোতেও প্রায় পূর্ণ সমর্থনের (৩৮টি প্রদেশ পূর্ণ সমর্থন জানায়) দিকে, ঠিক তখনই হঠাৎ থমকে যায় সব। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংশোধনীর এমন সর্বনাশের জন্য দায়ী ফিলিস শ্ল্যাফলি নামক এক নারী। পাঠকদের আশ্চর্য হয়ে ভাবার কথা যে, পৃথিবীতে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত যদি কেউ হয়, তবে সেটি হওয়ার কথা পুরুষজাতির। কিন্তু পুরুষজাতি যেখানে নিশ্চুপ ছিল, সেখানে একজন নারীই হয়ে উঠলো নারীদের একমাত্র এবং শক্তিশালী প্রতিবন্ধক?
শ্ল্যাফলি একজন আইনজীবী, রক্ষণশীল রাজনৈতিক দলের কর্মী ও একজন গৃহিণী। ধারণা করা হয়, রক্ষণশীল ক্যাথলিক পরিবারে বড়ে ওঠা নারী শ্ল্যাফলির রক্ষণশীল মনোভাবই ছিল নারীবাদীদের সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির মূল কারণ। ১৯৭২ সালে সমাধিকার সংশোধনী প্রস্তাবনাটি গৃহীত হওয়ার পরপরই শ্ল্যাফলি এর বিরুদ্ধে প্রচারণা শুরু করেন। তিনি এই আন্দোলনকে রুখে দিতে প্রথমেই একটি সংগঠন গড়ে তোলেন, যা ‘স্টপ ইরা’ নামে পরিচিতি পায়।
শ্ল্যাফলির এই প্রচারণার প্রথম ও প্রধান হাতিয়ার ছিল নারী পুরুষের সমাধিকারের সম্ভব্য নেতিবাচক দিকগুলো আমেরিকানদের সামনে তুলে ধরা। আর তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৪ সালে সোসাইটি ম্যাগাজিনে এই নারী লিখেন, "সমাধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে এটি নারীদের বিবাহ দাসত্বের পরিবর্তে অবাধ যৌনাচারের দিকে ঠেলে দেবে"।
শ্ল্যাফলি শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ থাকেননি। তিনি আমেরিকানদের মনে আরো যে ভয় ঢুকিয়ে দেন যে এটি সমাজ সংসারকে উচ্ছন্নে নিয়ে যাবে। এর মাধ্যমে নারীদের সংসার বিমুখ করার প্ররোচনা চালানো হচ্ছে। এটি শিশুদের মাতৃস্নেহ হতে বঞ্চিত করতে নারীবাদীদের একটি অপচেষ্টা মাত্র। কারণ এই নারীবাদীরা শিশুকে ঘরে পরম যত্নে লালন পালনের মতো একটি নিরাপদ ও মমত্বমাখা প্রথার পরিবর্তে ডে-কেয়ারে শিশু পালন প্রথার দিকেই বেশি মনোযোগী। শ্ল্যাফলির এমন প্রচারণা তৃণমূল আমেরিকানদের মনে নারীর অধিকারের প্রতি একধরনের নেতিবাচক ধারণা সৃষ্টি করে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, সম অধিকার সংশোধনের বিরুদ্ধে শ্ল্যাফলির এই প্রচারণা ছিল মিথ্যা ও অতিরঞ্জিত। এ বিষয়ে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক জেন ম্যাগব্রিজ বিবিসিকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, "তখনকার ভয়-ভীতিগুলো ছিল মিথ্যা এবং ক্ষতিকারক"। শ্ল্যাফলির ‘স্টপ ইরা’ যে জনসাধারণকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করেছিল, সেটিও এই প্রফেসরের বিবৃতিতে উঠে এসেছে। জেন বিবিসিকে আরো বলেন, এই বিতর্কগুলো এতেটাই উদ্দীপ্ত ছিল যে, অনেকেই ইরার ভুল ব্যাখ্যা বিশ্বাস করেছিল। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক আরো বলেন, "মিসেস শ্ল্যাফলি সেসময় সারা দেশে রক্ষণশীল নারীদের ‘স্ত্রী অধিকার’ শিরোনামে সমাবেশ করতে অনুপ্রাণিত করেন"।
জেনের এই কথা স্পষ্ট বলে দেয়, শ্ল্যাফলি তার এই প্ররোচনায় শক্তিশালী টোপ হিসেবে ব্যবহার করেন আমেরিকার রক্ষণশীল ও মৌলবাদী গোষ্ঠীকে। আর এর সত্যতা পাওয়া যায় সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মার্জরি স্প্রুলের বিবৃতিতে। অধ্যাপক মার্জরি স্প্রুল বলেন, "ইআরএর বিরুদ্ধে কার্যকর জোট গঠনের উদ্দেশ্যে মিসেস শ্ল্যাফলি ধর্মকে ব্যবহার করেন"।
শ্ল্যাফলি তার স্টপ ইরা সফল করতে ইরার বিরুদ্ধে আরো যেসব অপপ্রচার চালান, সেগুলো হলো- এই আন্দোলন নারীদের যুদ্ধে য়েতে বাধ্য করবে, যা তাদের সন্তান, পরিবার ও সমাজ বিমুখ করে তুলবে। স্ক্যালি এই নারীবাদীদের বিদেশী অপশক্তির মতোই ভয়াবহ বিপজ্জন হিসেবে আখ্যায়িত করেন, যা জনমনে এই আন্দোলনের প্রতি একটি বিরূপ মনোভাব সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
শ্ল্যাফলির এই স্টপ ইরা প্রচারণাটি নারীবাদী আন্দোলনের জন্য ছিল একটি বিষস্বরূপ, যার প্রভাবে প্রথম বছর সমাধিকার সংশোধন প্রস্তাবনাটি ২২টি রাজ্যে দ্রুতগতিতে সমর্থন লাভ করলেও পরবর্তী বছর থেকেই তা খুঁড়িয়ে চলা শুরু করে। সমাধিকার আন্দোলনের বিরুদ্ধে শ্ল্যাফলির উপস্থাপিত নেতিবাচক দিকগুলো এতটাই প্রভাবক ছিল যে আমেরিকান তৃণমূলে এটি ব্যাপকভাবে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে থাকে। যার ফলে আমেরিকান জনসাধারণও প্রস্তাবনাটির উপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে থাকে।
ফলে রাজ্যগুলো এই প্রস্তাবনার বিপক্ষে মত প্রকাশ করা শুরু করে এবং সমর্থন দেয়া থেকে বিরত থাকে। আর এভাবেই মুখ থুবড়ে পরে নারীবাদীদের সম অধিকার আদায়ের প্রচেষ্টা। এর মধ্যে কংগ্রেসের বেঁধে দেয়া সময়ও শেষ হয়ে আসে। ফলে নারীবাদীদের নিকট আশার আলো বলে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না।
এরপর বহুদিন চলে গিয়েছে, শ্ল্যাফলি গত হয়েছেন, উনবিংশ শতাব্দীরও ঘটেছে সমাপ্তি। কিন্তু শ্ল্যাফলি যেন খোঁড়া করে দিয়ে গিয়েছেন ঐ প্রস্তাবনাটিকে। আর তারই ফলস্বরূপ এই বিংশ শতাব্দীতে এসেও নারীবাদীদের প্রস্তাবনাটি সেই, সেখানেই থমকে রয়েছে যেখানে ১৯৮২ সালে থেমে গিয়েছিল। আজো সেই ৩৫টি রাজ্যের সমর্থনই তাদের অবলম্বন হয়ে আছে। আজো তাদের নিকট অধরাই হয়ে আছে বাকি রাজ্যগুলোর সমর্থন লাভ। তবে সম্প্রতি নারীবাদীদের জন্য একটি আশা জাগানিয়া গান হলো, ২০১৭ সালে আমেরিকার নেভাডা রাজ্য এই প্রস্তাবনাটির প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছে। আর নেভাডার এই সমর্থন এই প্রস্তাবনাটির ঝুলিতে শুধুমাত্র একটি ভোট বললে ভুল হবে। বরং একে বলা যায় একটি পুনরুজ্জীবনকারী ঔষধ, যা দীর্ঘদিন পর আবার জাগিয়ে তুলেছে নারীবাদীদের এবং তারা আশা করছে আমেরিকার ভার্জিনিয়া নামক রাজ্যটির সমর্থন ও তাদের পক্ষেই যাবে। কিন্তু তবুও যেন আশার ঘর অমানিশার আঁধারে ভরপুর।
কেননা এখনও এটা অপরিষ্কার যে, ৩৮টি রাজ্যের সমর্থন পাওয়ার পরও এই প্রস্তাবনাটি আইন হিসেবে পাস হবে কিনা। কেননা তৃণমূলের সমর্থন লাভের জন্য বেঁধে দেয়া মেয়াদ চলে গিয়েছে সেই ১৯৮২ সালে। এরপর কেটে গিয়েছে কয়েক দশক। এখন যদি কেউ আবার সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকে কংগ্রেস থেকে নতুন করে শুরু করতে বলে, তবুও কিছু করার নেই। সেক্ষেত্রে একে আবার ১৯২৩ সালে যে সফরটা শুরু হয়েছিল সেটাই শুরু করতে হবে। কিংবা ৩৮টি রাষ্ট্রের সমর্থনও যদি আদায় হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ৮২ সালে শেষ হওয়া সময়সীমা বৃদ্ধির জন্য আরেকটি আইন প্রস্তুত করতে হবে। এরপরও নারীর অধিকার কিংবা সম অধিকার আইনটি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা, সেটাও ভাবার বিষয়। তবুও নারীবাদী সংগঠনগুলো আজো তাদের দাবি আদায়ে সচেষ্ট, তারা তাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত সম অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে আদায়ে ক্ষেত্র এখনো আপোষহীন। তারা প্রয়োজনে অপেক্ষা করে যেতে চান আরো বসন্ত, আরো যুগ, আরো শতাব্দী- তবুও একটাই আকাঙ্ক্ষা, সাংবিধানিক সংশোধন আসুক সম অধিকারের।
This article is written in bengali langauage.It describes, "Why the fight over the equal rights amendment has lasted nearly a century". Sources of information are hyperlinked inside the article.
Featured Image: NBC12.com