Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website. The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

টয়লেটে বাস করা দেব-দেবী আর প্রেতাত্মাদের কাহিনী

‘প্রকৃতির ডাক’ এমনই এক ডাক, যে ডাককে অগ্রাহ্য করার সাধ্য নেই কারোরই। তাই তো যার যখন ডাক পড়ে, সে তখনই ভদ্র মানুষটির মতো কাজ সেরে আসে। টয়লেটে বসে অলস সময় কাটাতে গিয়ে অনেকে হয়ে যায় সাময়িক বিরাট দার্শনিক। হাল আমলে স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের সহজলভ্যতার দরুন অনেকে সেখানে বসেই দীর্ঘ সময় ধরে ঘুরে বেড়ায় ইন্টারনেটের অলি-গলিতে।

মজার ব্যাপার হলো, প্রাচীনকালে বিভিন্ন সভ্যতার মানুষজন বিশ্বাস করতো টয়লেটে থাকে ভয়ঙ্কর সব প্রেতাত্মা। আর সেসব প্রেতাত্মাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে তারা টয়লেট সংক্রান্ত নানা দেব-দেবীর দ্বারস্থও হতো। টয়লেটে বাস করা এমনই কিছু দেব-দেবী আর প্রেতাত্মাদের কাহিনী নিয়ে সাজানো হয়েছে এ লেখা।

১. ক্লোয়াসিনা, স্টারকুটিয়াস ও ক্রেপিটাস

প্রথমেই ঘুরে আসা যাক প্রাচীন রোমান সাম্রাজ্য থেকে। তৎকালীন রোমের মানুষজন বিশ্বাস করতো ক্লোয়াসিনা নর্দমার দেবী এবং স্টারকুটিয়াস মলের দেবতা। তবে টয়লেট সংক্রান্ত এ দেব-দেবী ত্রয়ীর মাঝে প্রধান ছিলো ক্রেপিটাস। তাকে টয়লেটের পাশাপাশি পেট ফাঁপার দেবতা হিসেবেও মেনে চলতো রোমান জনগণ।

Source: unbelievable-facts.com

উপকথা অনুযায়ী, জনগণ যখন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতো কিংবা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হতো, তখনই ক্রেপিটাসকে স্মরণ করতো মানুষজন। ফলে এই দেবতা যতই উপকারী হোক না কেন, তার সাক্ষাৎ যে পারতপক্ষে কেউই কামনা করতো না, তা তো সহজেই বোধগম্য। নর্দমার পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালীতে যদি সমস্যা দেখা দিতো, তখন ডাকা হতো ক্লোয়াসিনাকে। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকে স্যাবাইন রাজা টিটাস ট্যাটিয়াস ক্লোয়াসিনার সম্মানার্থে একটি প্রার্থনালয় পর্যন্ত তৈরি করেছিলেন। মলকে যতই অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দেখা হোক না কেন, এ ত্রয়ীর মাঝে মলের দেবতা স্টারকুটিয়াসও বেশ সম্মানের সাথেই জনগণের হৃদয়ে ঠাই পেয়েছিলো। কারণ মল থেকে তৈরি হয় সার, যা গাছপালার সঠিক বৃদ্ধি ও কাঙ্ক্ষিত ফলনের জন্য অত্যন্ত দরকারি।

প্রশ্ন হলো, প্রাচীন রোমের মানুষজন শুধুমাত্র টয়লেট নিয়েই তিনজন দেব-দেবীর দ্বারস্থ হয়েছিলো কেন? এর পেছনের ব্যাখ্যাটা কিন্তু বেশ মজার। তৎকালে সেখানকার অধিবাসীরা শান্তির স্থান টয়লেটকেই সবচেয়ে বেশি ভয় পেত, কারণ তারা মনে করতো পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালীতে ঘুরে বেড়ায় নানা প্রেতাত্মা ও শয়তান। আর কেউ যখন টয়লেটে বসে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে থাকতো, তখনই তারা সবচেয়ে বেশি উন্মুক্ত থাকতো, ফলে তাদের জানের ভয় তখনই ছিলো সবচেয়ে বেশি। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণ থেকে সাধের জীবনটাকে বাঁচাতেই তারা হরেক রকম দেব-দেবীর অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো, যাদের কাজ ছিলো মূলত টয়লেটকে ঘিরেই। এই দেব-দেবীরা তাদের পৈটিক কার্যাবলী ঠিকঠাক রেখে সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা দেবে, পয়ঃনিষ্কাশন প্রণালীতে যাতে কোনো সমস্যা দেখা না দেয় সেদিকে খেয়াল রাখবে, প্রকৃতির ‘বড়’ ডাকে সাড়া দেয়ার পর নির্গত মলকে গাছের জন্য দরকারি সারে রুপান্তরিত করবে এবং সর্বোপরি টয়লেটের চিপায়-চাপায় লুকনো প্রেতাত্মাদের হাত থেকে তাদের রক্ষা করবে বলেই এ ত্রয়ীর পূজা করতো তারা।

২. কাশিমা রেইকো

কাশিমা রেইকোর দেখা মেলে জাপানের ফোকলোরে। মেয়েটির কাহিনী অবশ্য খুব করুণ। কিংবদন্তী আছে, একবার একদল নরপশু হামলা চালায় কাশিমার উপর। মেয়েটিকে পিটিয়ে একেবারে আধমরা করে ফেলে তারা। এরপর তার মৃত্যু হয়েছে ভেবে সেখানেই ফেলে রেখে যায়। তবে প্রাণপাখীটি তখনও খাঁচায় আটকে ছিলো কাশিমার। কিছু সময় পর সাহায্যের আশায় শরীরটাকে টেনেহিচড়ে সামনে এগোতে শুরু করে সে। সামনেই ছিলো একটি রেললাইন। এর উপরে ওঠার পরই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মেয়েটি। তারপরের কাহিনী আরো মর্মান্তিক। অজ্ঞান কাশিমার উপর দিয়ে চলে যায় একটি ট্রেন। এভাবেই মৃত্যু ঘটে মেয়েটির।

Source: theghostinmymachine.wordpress.com

এরপরই প্রতিশোধস্পৃহায় উন্মত্ত হয়ে ওঠে কাশিমার আত্মা। নিজের হারানো পায়ের সন্ধানে সে গোপনে ঘুরে বেড়াতে শুরু বিভিন্ন স্কুলের টয়লেটে, মাঝে মাঝে বাড়িঘরের টয়লেটেও।

জনশ্রুতি অনুযায়ী, কেউ যদি কাশিমার করুণ এ কাহিনী শোনে, তবে এর এক মাসের ভেতরেই মেয়েটির প্রেতাত্মা সেই ব্যক্তিকে দেখা দেবে, জানতে চাইবে তার হারানো পায়ের সন্ধান। নিজের পা বাঁচাতে চাইলে তখন উত্তর দিতে হবে, “তোমার পা আছে মেইশিন এক্সপ্রেসওয়েতে”। এরপর সেই প্রেতাত্মা যখন জিজ্ঞেস করবে, “তোমাকে এটা কে বলেছে?”, তখন উত্তর হবে, “কাশিমা রেইকো আমাকে বলেছে।” এরপর সে জানতে চাইতে পারে, তার (মেয়েটির) নাম তাহলে কী? তখন বলতে হবে, “মুখোশ মৃত্যু প্রেতাত্মা”!

৩. বেলফেগর

Source: listverse.com

জুডিও-খ্রিস্টান প্রেতাত্মা বেলফেগর আসে মিষ্টি বাচ্চা মেয়ের রুপ ধরে। মানুষকে সে ধন-সম্পদের লোভ দেখায়। যদি কেউ সেই লোভের ফাঁদে পা না দেয়, তাহলে তো কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু ভুল করে একবার তাতে জড়িয়ে গেলেই সমস্যা। তখনই নাকি এই প্রেতাত্মা তার আসল রূপ ধারণ করে। মাথায় এক জোড়া শিং এবং দাড়িওয়ালা বেলফেগরের মুখটি সবসময় খোলা থাকে। তার হাত-পায়ের নখগুলোও বেশ বড় বড়। আর উদ্ভট এই প্রেতাত্মা বসে থাকে একটি টয়লেটের প্যানের উপর, ওটাই নাকি তার সিংহাসন! মধ্যপ্রাচ্যের ফেগর পর্বতে বসবাসরত মোবাইট জনগোষ্ঠী এককালে তার আরাধনা করতো।

৪. আকানামি

প্রেতাত্মা শব্দটা শুনলে আমাদের মনে যেমন ভয়াবহ কোনো সত্ত্বার প্রতিমূর্তি ভেসে ওঠে, আকানামি অনেকটা তেমনই। তার শরীরটা মানুষের মতো হলেও মাথাটা কল্পনার সেই ভূতের মতোই। বেলফেগরের মতো আকানামির নখগুলোও বেশ বড় বড়। তার চুলগুলো বেশ আঠালো, যেন সেসবের যত্ন নেয়ার সময় পায় না। আরো বিশ্রী ব্যাপার হলো, তার জিহ্বাটা বেশ সরু ও লম্বা। বের হয়ে থাকা সেই জিহ্বা থেকে সবসময় পড়তে থাকে বিষাক্ত লালা।

Source: gitoku.deviantart.com

কিম্ভুতকিমাকার এ প্রেতাত্মার বিশ্বাস প্রচলিত ছিলো জাপানে। তার দেহাবয়বের বর্ণনা যতই ভয়ঙ্কর হোক না কেন, কর্মকান্ড ছিলো নিতান্তই সাধারণ। টয়লেট পরিষ্কার করে একে জীবাণুমুক্ত রাখাই ছিলো আকানামির কাজ। শুধু খেয়াল রাখতে হতো তার বিষাক্ত লালাতে যেন কোনোভাবে স্পর্শ করা না হয়। মূলত আকানামির গল্প শুনিয়ে জাপানের ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে টয়লেট পরিষ্কারে উৎসাহিত করা হয়।

৫. সুলাক

প্রাচীন ব্যাবিলনে বিভিন্ন রোগব্যাধির কারণ হিসেবে ধরা হতো প্রেতাত্মার অশুভ প্রভাবকে। আর সেই অশুভ প্রভাব কাটাতে ওষুধ হিসেবে তারা দ্বারস্থ হতো জাদুবিদ্যা তথা জাদুকরদের কাছে। তাদের বিশ্বাসানুযায়ী রোগে আক্রান্ত হবার প্রধান উৎসস্থল ছিলো টয়লেট! তৎকালে ব্যাবিলনে চিকিৎসা সংক্রান্ত সর্বাধিক ব্যবহৃত গ্রন্থটির রচয়িতা ছিলেন চিফ স্কলার এসাগিল-কিন-আপ্লি। তিনি মানুষের রোগের জন্য যে প্রেতাত্মাকে দায়ী করেছিলেন, তার নাম সুলাক

Source: tapnewswire.com

আপ্লির মতে, মানুষ যখন সবচেয়ে বেশী একাকী থাকে, তখনই সে সুলাকের আক্রমণের শিকার হয়। এখন বলুন তো, কোন জায়গায় আপনি সবচেয়ে বেশি একা থাকেন টয়লেট ছাড়া? ব্যাবিলনের মানুষজন বিশ্বাস করতো, মানুষ যখন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ব্যস্ত, তখনই সুলাকের হাতে তার আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকতো সবচেয়ে বেশি। এজন্য যেকোনো অসুখের বেলায় তারা বলতো তাতে সুলাকের হাত রয়েছে।

৬. কাওয়াইয়া নো-কামি

Source: Pinterest

এই টয়লেট দেবতার কথাও জানা যায় জাপানের কিংবদন্তী থেকে। বলা হয়, ভূমি ও অন্ধকারের দেবী ইযানামির মল থেকে জন্ম হয়েছিলো কাওয়াইয়া নো-কামির। প্রাচীনকালের টয়লেটগুলো তো আমাদের এখনকার টয়লেটের মতো এত আলোকোজ্জ্বল ও জীবাণুমুক্ত থাকতো না। তখন জাপানের মানুষকে টয়লেটে কাওয়াইয়াই সুরক্ষা দিতো বলে বিশ্বাস ছিলো জাপানীদের। এমনকি তার সম্মানে মানুষজন তাদের টয়লেটকেও সাজিয়ে রাখতো কখনো কখনো, টয়লেট হতো তাদের প্রার্থনালয়। তবে কেউ যদি তার টয়লেটটি পরিষ্কার না রাখতো, তাহলে তার সন্তানটি হতো কুৎসিত, থাকতো চিরদুখী।

ফিচার ইমেজ- steamcardexchange.net

Related Articles