Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

আলু মেরে সাবমেরিন ডুবিয়ে দেয়ার গল্প!

আপনি জানেন কি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মার্কিন নাবিকেরা আক্ষরিক অর্থেই আলু (!) মেরে একটি জাপানি সাবমেরিন ডুবিয়ে দিয়েছিল?

সাবমেরিন আধুনিক নৌযুদ্ধের সংজ্ঞা বদলে দেয়া একটি দুর্দান্ত যুদ্ধজাহাজ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তো বটেই, আজকের দিনেও সাবমেরিন শত্রুর জন্য এক আতঙ্কের নাম। সম্প্রতি বাংলাদেশ নৌবাহিনী চীন থেকে ক্রয় করা দুটো সাবমেরিন কমিশন করার মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।

কিন্তু শিকারি অনেক সময় নিজেও শিকারে পরিণত হয়। সাবমেরিনও এর ব্যতিক্রম নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ মানবজাতির জীবনে একটি অভিশাপ হলেও ইতিহাস হিসেবে এটি বর্তমানে অনন্য উৎস। আর যুদ্ধ অনেক সময় আপাতদৃষ্টিতে মজার ঘটনা আমাদের উপহার দেয়। টয়লেট ফ্লাশের ভুলে সাবমেরিন ডুবে যাওয়ার গল্প আপনারা হয়তো পড়েছেন।

আজকে জানব ‘আলু’ নামক গোলগাল সাইজের সবজির কাতারে থাকা এই নিরীহ খাদ্যটি দিয়ে মার্কিন নাবিকদের সাবমেরিন ডোবানোর মতো অসাধ্য সাধনের গল্প। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি মজার কাহিনীর মূল নায়ক ইউএসএস ও’ব্যানন নামের একটি ফ্লেচার ক্লাস ডেস্ট্রয়ার। প্রথমেই এই ডেস্ট্রয়ার শ্রেণীর যুদ্ধজাহাজ নিয়ে দু-চারটি কথা বলতে চাই।

ফ্লেচার ক্লাস ডেস্ট্রয়ারকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ডেস্ট্রয়ার ফ্লিটের মেরুদণ্ড বললেও ভুল হবে না। ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত মোট ১৭৫টি ডেস্ট্রয়ার সার্ভিসে আনে যুক্তরাষ্ট্র।

সেই মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ও'ব্যানন
সেই মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ও’ব্যানন; Image Source: Wikimedia Commons

এসব জাহাজ আটলান্টিক, প্রশান্ত মহাসাগরে জার্মানি, জাপানের নৌবাহিনীর সাথে পাল্লা দিয়ে যুদ্ধ করেছে। যুদ্ধে মাত্র ১৯টি ফ্লেচার ক্লাস ডেস্ট্রয়ার হারায় মার্কিন নৌবাহিনী। জাহাজগুলো তার শক্তিমত্তার পাশাপাশি নকশার দিক দিয়ে খুবই বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত ছিল। ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ মহাসাগরগুলোতে বিশাল বিশাল ঢেউয়ের সাথে লড়াই করে অনায়াসে টিকে থাকতে পারত। ২,০৫০ টনের জাহাজগুলো সম্পূর্ণ লোডেড অবস্থায় ছিল আড়াই হাজার টন। ৬০ হাজার হর্সপাওয়ারের দুটো শক্তিশালী ইঞ্জিন থাকায় ৩২৯ জন নাবিক নিয়ে ৩৫ নট বা ঘণ্টায় ৬৫ কিলোমিটার গতিতে একটানা ১২ হাজার কিলোমিটার টহল দিতে পারত।

মূল অস্ত্র হিসেবে এতে ছিল ৫টি ১২৭ মিলিমিটার বা ৫ ইঞ্চি ব্যাসের নেভাল গান। জেনে রাখা ভালো, ইউএসএস ও’ব্যাননের মত ফ্লেচার ক্লাস ডেস্ট্রয়ারগুলো মূলত শত্রুবিমান এবং সাবমেরিন ঠেকানোর জন্যই তৈরি হয়েছিল। এজন্য এসব জাহাজে ১০টি ৪০ এমএম ও ৭টি ২০ এমএম অ্যান্টি-এয়ারক্রাফট গান ছিল। সাবমেরিনকে আপ্যায়নের জন্য ১০টি ৫৩৩ এমএম টর্পেডো ছাড়াও ৬টি ডেপথ চার্জ প্রজেক্টর ও দুটি ডেপথ চার্জ র্যাক ছিল।

এবার চলুন মূল ঘটনায় চলে যাই।

প্রশান্ত মহাসাগরের বিখ্যাত ব্রিটিশ সলোমন দ্বীপপুঞ্জের একটি হলো গুয়াডাল ক্যানাল। এর আরেক নাম হচ্ছে ইশটাবু। ১৯৪২ সালে এই দ্বীপ ও আশেপাশের দ্বীপ এবং তার এলাকা জুড়ে প্রায় ছ’মাস ধরে মার্কিন-জাপান আর্মি ছাড়াও নেভির মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধ হয়েছিল। এটিই ইতিহাসে বিখ্যাত গুয়াডাল ক্যাম্পেইন নামে পরিচিত।

গুয়াডাল ক্যানাল নৌ-যুদ্ধে মার্কিন ব্যাটলশিপের ফায়ারিং।
গুয়াডাল ক্যানাল নৌ-যুদ্ধে মার্কিন ব্যাটলশিপের ফায়ারিং।

এ যুদ্ধে নিযুক্ত রসদ সাপ্লাই শিপগুলোকে এসকর্ট বা নিরাপত্তা দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল ইউএসএস ও’ব্যানন নামের ফ্লেচার ক্লাস ডেস্ট্রয়ারটি। ১৯৪২ সালের ১২ নভেম্বর, একটি জাপানি সাবমেরিন কর্তৃক তার সাপ্লাই কনভয় হামলার শিকার হয়। ইউএসএস ও’ব্যানন ক্রমাগত ডেপথ চার্জ নিক্ষেপ করায় সাবমেরিনটি পালিয়ে যায়। এছাড়া ১১টি ভূপাতিত জাপানি বিমানের চারটি ইউএসএস ও’ব্যাননের হাতে ধ্বংস হয়। এ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল জাপানি ইম্পেরিয়াল নেভির ক্যারিয়ার ফ্লিট। তাদের যারা এসকর্ট করছিল, তাদের মধ্যে ছিল কঙ্গো ক্লাস ব্যাটলক্রুজার Hiei

১২-১৫ নভেম্বর, ১৯৪২ সালে হওয়া গুয়াডাল ক্যানাল প্রথম নৌযুদ্ধ ছিল সংক্ষিপ্ত, কিন্তু ধ্বংসাত্মক। মার্কিন নৌবাহিনী ৪টি ডেস্ট্রয়ার, ২টি লাইট ক্রুজারসহ এডমিরাল নোরম্যান স্কটকে হারায়। যুদ্ধ শেষে ঘাঁটিতে ফেরার পথে জাপানি ব্যাটলক্রুজার Hiei পেয়ে গেল মার্কিন নেভির ডেস্ট্রয়ার ইউএসএস ও’ব্যাননকে, যেটি কিনা প্যাসিফিক ফ্লিটে ট্রান্সপোর্ট এন্ড রিএনফোর্সমেন্ট কার্গো শিপদের এসকর্ট বা নিরাপত্তা দেয়ার কাজে নিয়োজিত ছিল।

তৎকালীন কঙ্গো ক্লাস ব্যাটলক্রুজার Hiei ৩-৪টি ফ্লেচার ক্লাসকে অনায়াসে ডুবিয়ে দেয়ার মত যথেষ্ট শক্তি রাখত। তারপরও ইউএসএস ও’ব্যানন অসীম সাহস নিয়ে জাপানি ব্যাটলক্রুজারের উপর আচমকা হামলা চালিয়ে একপাশে বেশ ক্ষয়ক্ষতি করেছিলো। Hiei পাল্টা হামলা শুরু করতেই পলায়ন করা ছাড়া ইউএসএস ও’ব্যানন এর কোনো উপায় ছিল না।

জাপানি ব্যাটলক্রুজার Hiei
জাপানি ব্যাটলক্রুজার Hiei

১৯৪৪ সালে এমনই এক এসকর্ট মিশন শেষে ঘাঁটিতে ফিরে যাওয়ার পথে অন্ধকার রাতে নাটকীয়ভাবে শনাক্ত  হলো একটি Kaichū VI ক্লাস সাবমেরিন! নাটকীয় বলা হচ্ছে এজন্য যে, ঐ অঞ্চলে তখন অনেকগুলো শক্তিশালী মার্কিন যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি ছিল। সেখানে জাপানি সাবমেরিনের উপস্থিতির কোনো আশঙ্কাই ছিল না।

জাপানি সাবমেরিন RO-34 সারফেস অবস্থায় অর্থাৎ পানির উপরে ছিল। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন সংগ্রহ ও ব্যাটারি চার্জ করার জন্য এটি পানির উপরে উঠে আসতে বাধ্য হয়েছিল। মার্কিন যুদ্ধজাহাজের হাতে ধরা পড়া এড়াতে এটি ইঞ্জিন বন্ধ করে ক্রুজিং করছিল। তাই ডেস্ট্রয়ার ও’ব্যানন এর সাবমেরিন শনাক্তকারী সোনার সিস্টেম প্রথমে একে অনেকগুলো নেভাল মাইনের লেয়ার হিসেবে খুবই অল্প দূরত্ব থেকে শনাক্ত করে। শত্রুর যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করার জন্য সাগরে অল্প গভীর পানিতে মাইন পেতে রাখা ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার।

জাপানি সাবমেরিন RO-33, RO-34 এর ছবি ইন্টারনেটে নেই।
জাপানি সাবমেরিন RO-33, RO-34 এর ছবি ইন্টারনেটে নেই।

সার্চলাইট জ্বালিয়ে যখন ডেস্ট্রয়ারটি বুঝতে পারে, এটি একটি স্থির ভাসমান সাবমেরিন, তখনই সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য ডিফেন্সিভ ম্যানুভার হিসেবে তড়িঘড়ি করে হার্ডশিপ টার্ন নিতে শুরু করে। কিন্তু তারপরও সাবমেরিনের সাথে জাহাজের মৃদু সংঘর্ষ ঘটে যায়। দুটি নৌযান পরস্পরের সাথে ঘষা খায় এবং সমান্তরালভাবে একই দিকে চলতে থাকে।

সাবমেরিনের বদ্ধ অবস্থা থেকে সাময়িক মুক্তি পেয়ে সেদিন ডেকের উপর বেশ কয়েকজন জাপানি নাবিক ক্লান্তিতে গা এলিয়ে দিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। অন্যদিকে জাপানি আক্রমণ থেকে বাঁচতে ইউএসএস ও’ব্যানন নেভিগেশন লাইট বন্ধ করে চলতে থাকায় সাবমেরিনের অন্য ক্রুরা মার্কিন যুদ্ধজাহাজের আগমন টের পায়নি।

দুটো নৌযান পরস্পরের সঙ্গে ধাক্কা খেতেই শত্রু বধ করতে দুই দল মানুষ লড়াই শুরু করে। জাপানি সাবমেরিনের ডেকের উপর ছিল একটি ৩ ইঞ্চি ব্যাসের কামান। জেনে রাখা ভালো, ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের সাবমেরিনে টর্পেডো, নেভাল মাইন ছাড়াও ‘ডেক গান’ নামে পরিচিত এসব সারফেস ওয়েপন থাকতো। ফলে, এসব সাবমেরিনের উপকূলীয় এলাকা, অন্যান্য জাহাজ বা যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার ক্ষমতা ছিল। সাবমেরিন পানির উপর থাকা অবস্থায় বিশেষত বেসামরিক ও রসদ সরবরাহকারী জাহাজকে আক্রমণের জন্য ক্রুরা এসব কামান ব্যবহার করত।

ইতালিয়ান সাবমেরিনের ৪ ইঞ্চি ডেক গান ও তার ক্রু।
কোনো এক ইতালিয়ান সাবমেরিনের ৪ ইঞ্চি ডেক গান ও তার ক্রু।

হঠাৎ জাপানি সাবমেরিনের কামান থেকে ফায়ারিং শুরু হলো। কিন্তু সেটা ডেস্ট্রয়ার শ্রেণির যুদ্ধজাহাজ ডোবানোর জন্য যথেষ্ট নয়। দূরত্ব খুবই কাছাকাছি হওয়ায় ইউএসএস ও’ব্যানন নিজের শক্তিশালী ৫ ইঞ্চি ব্যাসের কামান ব্যবহার করতে পারছিল না। আবার নিজেদের জাহাজের ক্ষতির আশঙ্কায় সাবমেরিন বিধ্বংসী টর্পেডো বা ডেপথ চার্জ ও ফায়ার করতে পারছিল না। একই অবস্থা ছিল সাবমেরিনের, তারাও নিজেদের মূল অস্ত্র টর্পেডো ফায়ার করতে পারছিল না।

তাই সাবমেরিনটি মাইন নিক্ষেপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কারণ, ইউএসএস ও’ব্যাননের কোর্স এমন ছিল যে, সাবমেরিন থেকে মাইন নিক্ষেপ করলে সেটির ফাঁদে মার্কিন যুদ্ধজাহাজটি পড়বে, তা একদম নিশ্চিত। এমন সময় একজন জাপানি অফিসার তার রিভলবার দিয়ে গুলি শুরু করেন। মার্কিন নাবিকদের সাথে তখন স্বাভাবিকভাবেই অস্ত্র ছিল না (নৌ সদস্যরা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে জাহাজ কাজ করেন না, তবে অস্ত্রাগারে পর্যাপ্ত আগ্নেয়াস্ত্র মজুদ থাকে)।

এমন অবস্থায় ডেস্ট্রয়ারের একজন ক্রু, যিনি কি না জাহাজের রান্নাঘরের রাঁধুনি ছিলেন- তিনি হঠাৎ ভেসে থাকা জাপানি সাবমেরিনের ডেকের উপর থাকা ক্রুদের দিকে আলু নিক্ষেপ শুরু করেন!

যুদ্ধের পাশাপাশি পার্টটাইম শ্রমিকের কাজ করতো এই ডেস্ট্রয়ার। যখন তারা সাবমেরিন কর্তৃক আক্রান্ত হয়, তখন টনে টনে আলু ছিল ডেস্ট্রয়ারে। রাঁধুনির দেখাদেখি অন্যান্য ক্রুরা সাবমেরিনের ডেকের ফায়ারিংরত ক্রুদের উদ্দেশ্যে আলু নিক্ষেপ করতে শুরু করে। সাবমেরিনের ক্রুরা রাতের অন্ধকারে মার্কিন জাহাজের অপর্যাপ্ত আলোতে ও লড়াইয়ের উত্তেজনাবশত আলুকে গ্রেনেড মনে করে।

জাপানি নাবিকদের কেউ কেউ স্বাভাবিক রিফ্লেক্সের বশে আলু ধরে ধরে পানিতে ফেলছিল, কেউ কেউ সাহস করে ডেস্ট্রয়ারের উদ্দেশে অন্ধকারে গ্রেনেড ভেবে আলুকেই নিক্ষেপ করছিল। এরই মধ্যে জাপানি ক্যাপ্টেন ইমারজেন্সি ডাইভ দেন পানির গভীরে। এই সাবমেরিনটি পানির সর্বোচ্চ ৭৫ মিটার গভীরে যেতে পারত।

এবার মার্কিন যুদ্ধজাহাকের ক্যাপ্টেন সত্যিকারের গ্রেনেড তথা অ্যান্টি সাবমেরিন ডেপথ চার্জ নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেন। পানির নিচে সাবমেরিনকে প্রচণ্ড পানির চাপ সহ্য করতে হয় এবং সাবমেরিন ধীরে ধীরে চাপ সহ্য করে পানির গভীরে যায়। প্যাসকেলের সূত্র অনুযায়ী, গভীরতা বাড়লে চাপ বাড়ে। অন্যদিকে সাবমেরিনের বডি/খোল নির্দিষ্ট পরিমাণ চাপ সহ্যক্ষমতা সম্পন্ন করে বানানো। তাই এরা নির্দিষ্ট গভীরতার বেশি গভীরে যেতে পারে না। কোনো কারণে যদি এই চাপের পরিমাণ হঠাৎ বাড়িয়ে-কমিয়ে দেয়া যায়, তবে সাবমেরিন পানির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাবে। আর সে কাজটি করে ডেপথ চার্জ। এটি পানির নিচে গিয়ে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটায়, বাকি কাজ করে দেয় পানির চাপ।

ডেপথ চার্জ ফায়ারিং ও বিস্ফোরণের দৃশ্য।
ডেপথ চার্জ ফায়ারিং ও বিস্ফোরণের দৃশ্য।

সেদিন মার্কিন যুদ্ধজাহাজের ছোড়া এসব ডেপথ চার্জের প্রচণ্ড বিস্ফোরণের সাবমেরিনের সলিল সমাধি ঘটেছিল। নিহত হয়েছিল ৬৬ জন জাপানি নাবিক, কাউকেই জীবিত উদ্ধার করা যায়নি।

এভাবেই আলু দিয়ে সাবমেরিন ডোবানো সম্ভব হয়েছিল। কেননা আলুকে গ্রেনেড না মনে করে সাবমেরিনের ক্যাপ্টেন যদি পানির গভীরে ডাইভ না দিতেন, তবে ডেপথ চার্জ ফায়ার করা সম্ভব হতো না।

এ ঘটনায় ইউএসএস ও’ব্যাননের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। আলু দিয়ে সাবমেরিন বধের গল্পটি মুখরোচক গল্পটি নাবিকদের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইউএসএস ও’ব্যানন তার আলু খ্যাতি ছাড়াও যুদ্ধে বেশ কৃতিত্ব দেখানোর স্বীকৃতি হিসেবে ১৭টি ব্যাটল স্টার এবং ১টি প্রেসিডেন্সিয়াল ইউনিট সাইটেশন পদক জিতে নেয়। ১৯৭০ সালে জাহাজটিকে স্ক্র্যাপ করে ফেলা হয়।

(আলু যুদ্ধের স্বীকৃতি ফলক।
আলু যুদ্ধের স্বীকৃতি ফলক!
নিজেদের স্বীকৃতি ফলক দেখছেন ক্রুরা।
 স্বীকৃতি ফলক দেখছেন ক্রুরা।

তবে গুরুতর ব্যাপার হলো, ইউএসএস ও’ব্যাননের কমান্ডার পরবর্তী সাক্ষাৎকারে দাবি করেন যে, আলু নিক্ষেপের কোনো ঘটনা ঘটেনি! তবে জাপানি সাবমেরিনটি খুবই কাছে ছিল, সেটি স্বীকার করেন তিনি। অন্যদিকে জাহাজটির বেশ কয়েকজন ক্রু দাবি করেন, তারা নিজেরা আলু নিক্ষেপ করেছিলেন।

আলু যুদ্ধে অংশ নেয়া তিনজন নাবিকের স্মৃতিচারণা।
আলু যুদ্ধে অংশ নেয়া তিনজন নাবিকের স্মৃতিচারণা।

ঘটনা যা-ই হোক না কেন, আমরা চেন্নাই এক্সপ্রেস মুভির শাহরুখ খানের মতো বলতেই পারি যে,

“Don’t underestimate the power of Potato.”

জয়তু আলু!

[দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে জানতে সাহায্যকারী বইগুলো দেখতে লিংকে ক্লিক করুন।]

Related Articles